আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তর্দহন অতঃপর ...................... (গল্প)

আদর্শটাকে আপাতত তালাবদ্ধ করে রেখেছি...

কি করে যে এতগুলো টাকা খরচ হয়ে গেল ভাবতে গিয়ে হুশ ফিরে পান ওসমান সাহেব। খাঁচাটা হাতে হাটার গতিবাড়িয়ে দেন। ওদের কাছ থেক টাকাটা নেবার পর তিনদিন পেরিয়ে গেছে এখনও তিনি কিছুই করেননি। আজ ভোরেই আবার তাগাদা দিয়ে গেল। তার পক্ষে কাজটা করা কঠিন কিছু না, মফিজ সাহেব তার ৩৫ বছরের পুরনো বন্ধু।

মিথি তার কোলে কোলেই বড় হয়েছে। ওসমান চাচাকে ভালবাসে সে। স্কুলের থেকে মিথিকে নিয়ে এসে বাশেঁর শলার তৈরি ছোট্ট খাচাঁটা তার হাতে তুলে দেন ওসমান সাহেব। খাচাঁ কিনতে মহামূল্য পয়তাল্লিশ টাকা পকেট থেকে বেরিয়ে গেছে তার। পাখিশূন্য খাচাঁটা দেখে একটু ম্লান হয় ছোট্ট মিথি, ` পাখি কোথায় চাচা? ' বলতে যেয়ে একটু থমকে যান ওসমান সাহেব।

যেন বাধা পড়েন বিবেকের টানে, আবারও ঘাম মুছেন তিনি, মনে পড়ে পকেটটা গড়ের মাঠ। সমূহ অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের কথা মনে হতেই সব ঝেড়ে বাজারের দিকে পা বাড়ান। চোখের সামনে এত পাখি দেখে আপ্লুত ছোট্ট মিথি, গভীর আগ্রহে বলে সে, 'কোন পাখিটা আমার হবে চাচা?' কথাট্ বলতে যেয়ে হাসঁফাসঁ করে আবারও নিঃশ্বাস আটকে যাবার উপক্রম হয়, দুই ভূরু বেদনার ভারে কুঁচকে একাত্রীভুত হয়ে যায় প্রায়। তবু শেষপর্যন্ত বলেন তিনি, `পাখিটা তুমিই পছন্দ করবে মা। ' `সত্যি চাচা?' এতক্ষন স্কুলে থাকার ক্লান্তি মুহুর্তে উধাও হয়ে আলোকিত হয় মিথির চেহারা।

নিজের পছন্দে একটা ময়না নেবে সে। আনন্দে তার চোখে পানি এসে যায়। ভাবতে থাকে তার এ সৌভাগ্য দেখে সহপাঠিদের কার কি অবস্থা হবে, ইস্ ওসমান চাচটা এত ভাল কেন? ওসমান সাহেবের হৃদ স্পন্দ বেড়ে যায়। পাতলা সুতি রুমালটা ঘামের ভারে ন্যাতান্যাতা হয়ে গেছে অনেক আগে, তবু ভিজে রুমালটা দিয়ে সারা মুখে জমা ঘাম মুছেন তিনি। মনে মনে অস্থির লাগছে তার।

একটু আগেও যে সিদ্ধান্তে স্থির ছিলেন ক্ষনকাল পরে তা এখন নড়বড়ে। তবু তিনি এক করতে চান মনসংযোগ, কঠিন হতে চান আরও, অথচ সারাজীবন সবাই তাকে নরম মনের বলে জেনেছে। সেই ছেলেবেলা থেকেই, কোন বিড়ালকে কেউ মারচে দেখলেই অস্থির হতের তিনি, কেদে ফেলতেন বিড়ালের দু্ঃখে। এ নিয়ে সবার কত যে হাসাহাসি, তবু শিশুসূলভ অভ্যাসটা কৈশোরেও ছাড়তে পারেননি তিনি। আনন্দঘেরা কৈশোরে তিনি আর মফিজ ছিলেন জানের দোন্ত।

একজনকে ছাড়া আরেকজন থাকতেনই না। দুরন্ত কৈশোরে সংঘাতময় খলায় ডানপিটে মফিজের হাতে কতযে মার খেয়েছেন। মারগুলো ফিরিয়ে দেবার মানসিকতা ফিল না তার। বোকা ওসমান- নাম রেখেছিল মফিজ। সেই ডানপিটে মফিজ আজ বিরাট সম্পদশালী তিনি বিশ্বাস করেন দুরন্তরা সবখানেই দুরন্ত।

আর বোকা ওসমান আজও বোকা ওসমানই রয়ে গেলেন, বোকারা সবখানেই বোকা। ভাবতে ভাবতে মুষ্ঠিবদ্ধ হঢ ওসমান সাহেবের দুহাত, দৃঢ় হয় চোয়াল, কঠোর হয় চোখের দৃষ্টি, বিকৃতভাবে কুচকে যায় গালের পেশি। দীপ্ত উচ্চারণ করেন তিনি, `আর না'। এতক্ষন ধরে দ্বিবাস্বপ্ন দেখা মিথি তার দিকে তাকেতেই দ্রুত স্বাভাবিক হন তিনি, হাসেন। স্বস্তি পায় মিথি।

`চাচা চাচা, দেখেন কী সুন্দর ময়না'। আনন্দে হাততালি দিয়ে লাফায় মিথি, কাধের স্কুলব্যাগের ভারী বোঝার কথা ভুলে হেছে সে। গভীর দৃষ্টিতে মিথির দিকে তাকান ওসমান সাহেব । `চাচা, এটা আমি নেব। ' উত্তর না দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ওসমান সাহেব।

তার অন্তর্জগৎে যে কঠিন যুদ্ধ চলছে তা প্রকাশ পায় না চোখে। মিথি হটাৎ একটু ম্লান হয় যেন, বলে-`এটা নিলে বাবা বকবে না তো চাচা?' কঠিন থেকে কঠিনতর হয় যুদ্ধ, ভেজা রুমাল দিয়ে ঘাম মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করেনওসমান। এদিকসেদিক তাকান উদভ্রান্তের মত, অস্থিরতায় মটকান হাতের, নিজের চুলহীন মাথাটাকে যেস মনে হয় ফুটন্ত সূর্য। মিথি ভয় পেয়ে যায়। একসময় শেষ হয় যুদ্ধ।

কোমল হযে আসে ওসমান সাহেবের দৃষ্টি, যেস জ্বর থেকে সেরে উঠা রোগীর মত স্মিত হাসেন তিনি। অবাক হলেও আবারও প্রান ফিরে পায় মিথি, চঞ্চল হয়ে বলে-`বাবা বিছু বলবে না তো?' `নাহ্ নারে, মফিজ কিচ্ছু বলবে না। ' অন্তরের গভীর থেকে বেরোয় ওসমান সাহেবের আন্তরিক কথামালা। সামনে দাড়ানো পুতুলসাদৃশ মেয়েটির জন্য আদ্র হয় তার দুচোখ, মুখে জমা ঘামের স্রোতে মিশে যায় নোনাজল। মিথি তখন ময়নাকে ঘিরে চঞ্চল, সে দেখে না মুর্তিমান ভালবাসা।

মিথিকে বাড়ি পৌছে দিয়ে ফেরার পথে ভাবনা উদয় হয় ওসমান সাহেবের মনে, বায়নার একহাজার টাকা তো খরচ হয়ে গেল, মিথিকে ওদের হাতে তুলে দিলে আরও চৌদ্দ হাজার টাকা পাওয়া যেত, চৌদ্দ হাচার টাকা ... ভাবনাটা ঝেটিয়ে বিদেয় করতে চান তিনি। এত কঠিন,নিষ্ঠুর,নীচ তিনি হতে পারেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি,স্বস্তির শ্বাস। বিড়বিড় করেন আপন মনে, মফিজের কাছে গেলে এক হাজার টাকা ধার পাওয়া যাবে। পরক্ষনে বিদ্যুতচমকের মত একটা কথা মনে আসে তার, ` নাহ্।

আর না। ' এবার সত্যি সত্যি কঠোর হন তিনি। একে একে মনে করেন ওদের সবার চেহারা। ঘুরে হাটা দেন উল্টোপথে...থানার দিকে। (কদিন ধরে কিছু পোষ্ট করা হচ্ছে না, আরও কদিন হবে বলেও মনে হচ্ছে না।

ব্যস্ততা একটু চেপে ধরেছে। তাই এই গল্পটি রিপোষ্ট করে দিলাম। অনেক আগে এটি পোষ্ট করেছিলাম। কি জানি কেন এটা কারও চোখে পড়ে নি। তাই এটি প্রায় নতুন পোষ্টের মতই লাগবে।

তারপরেও যাদের কাছে এটি পুরনো তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।