আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যে ঘেরা সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা : বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক নাকি একটি বৈশ্বিক প্রতারণা ?

আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছো বসি আমার ব্লগখানি কৌতুহল ভরে

৩/৪ বছর আগে পত্রিকার পাতায় প্রথম সংস্থাটির নাম দেখি । মিডিয়ার প্রদীপের আলোয় চলে আসা সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা র নাম কারও চোখ এড়িয়ে গেছে , বোধকরি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে ডেইলি স্টার পত্রিকার শুক্রবারের নিয়মিত ম্যাগাজিন "স্টার উইকেন্ড ম্যাগাজিনে" সিধুলাই সংস্থার উপর কাভার প্রতিবেদন প্রকাশ করে । রিপোর্টটি এখানে দেখুন চলনবিল এলাকার দুর্গম পল্লীতে সিধুলাইয়ের ছড়িয়ে দেয়া আলোর কথা শুনে যে কোন বাঙালী গর্বিত বোধ করতে পারে । রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় "চলনবিল এলাকা যেখানে বর্ষা মৌসুমে বন্যা অবশ্যাম্ভাবী , সেখানে একটি এনজিও তাদের প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র এবং বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে আশার আলো জ্বালিয়ে তুলছে"।

বিশেষভাবে তৈরি সৌরশক্তি চালিত ৮০ টিরও বেশি নৌকায় রয়েছে : স্কুল , লাইব্রেরি , ল্যাপটপে ইন্টারনেট , চিকিৎসা সুবিধা , অস্থায়ী হাসপাতাল । নৌকাগুলো বিস্তৃত চলনবিল অঞ্চলের সর্বত্র উপস্থিতির মাধ্যমে তাদের নিত্যদিনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে । ক্লকওয়াইজ :১। সৌরশক্তিচালিত বিশেষ বোট (এমন ৮৮ টি বোটের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হয়) ২। পাঠদান করছেন একজন শিক্ষিকা ৩।

বোটের লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করছে কিছু শিশু চলনবিলের বুকে ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষাদান স্টার রিপোর্টাররা সরেজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করে তাদের কার্যক্রমের উপর রিপোর্টটি তৈরি করেন। সিধুলাইয়ের এ অবিস্মরনীয় গল্প সাড়া ফেলে দেয় সারা বিশ্বেও । অন্তত ১১ টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি । বিল গেটস এবং মেলিন্ডা গেটস পরিচালিত গেটস ফাউন্ডেশন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে সংস্থাটিকে মর্যাদাপূর্ণ Access to Learning Award এ ভূষিত করে । পুরস্কারের সাথে যোগ হয় বিশাল আর্থিক অনুদান।

সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি আসে ২০০৭ সালের অক্টোবর । জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা তাদের বার্ষিক পুরস্কার UNEP Sasakawa Prize এর জন্য সারা বিশ্বের মাঝে দু'টি সংস্থাকে বেছে নেয় , যার একটি হলো সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা । পুরস্কারের নগদ অর্থমূল্য ছিল আনুমানিক ২ লাখ ডলার । পুরস্কারের কথা প্রচারিত হয় ওয়াশিংটন পোস্ট , সিয়াটল টাইমস , গার্ডিয়ান , গালফ নিউজ সহ বিশ্বের বড় সমস্ত প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়। পুরস্কার পাবার ব্যাপারটি যতটা বেশি আলোচিত হওয়ার কথা ছিল , রহস্যময় কারণে তার চাইতে অনেক কম পাবলিসিটি পায় ।

সংস্থাটির লুকোছাপার ব্যাপারটি পরিস্কার হয়ে পড়ে । আগস্ট থেকে নভেম্বরের মাঝে চাঞ্চল্যকর যেসব ঘটনা বেরিয়ে আসতে থাকে : আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ডেইলি স্টারে সিধুলাইয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমের উপর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্টার উইকেন্ড ম্যাগাজিনের ৩১ আগস্ট সংখ্যায় একটি প্রতিবাদ পাঠান বাংলাদেশ আইটি জার্নালিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট এম এ হক্ব অনু । চিঠিতে তিনি সিধুলাই সংস্থার প্রতারণার বিষয়টি সর্বপ্রথম সবার সামনে তুলে আনেন। ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেন তারা ব্যাপারটি দেখবেন । অক্টোবরের কোন এক সময় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের না জানিয়ে ডেইলি স্টারের টিম চলনবিল সফর করে ।

সেখানে গিয়ে যা তারা দেখেন তার রীতিমত অবিশ্বাস্য । ইতোপূর্বে দেখে যাওয়া সব নৌকা তালা দেয়া অবস্থায় পাওয়া যায় । সাংবাদিকদের চাপের মুখে সংস্থার লোকেরা একটি নৌকা খুলে দিলে সেখানে কোন ল্যাপটপ , চিকিৎসাকার্যক্রম , শিক্ষার্থী , শিক্ষক , চিকৎসক থাকার প্রমাণ মেলেনি । ৩/৪ টি ছাড়া জাতিসংঘ এবং গেটস ফাউন্ডেশনের কাছে উল্লেখিত ৮৮ বোটের কোন অস্তিত্বও তারা পাননি । কথিত ৮৮ মাঝে কেবল ৩/৪ টি এমন বোটের দেখা মেলে , সেগুলোও তালাবদ্ধ তালাবদ্ধ লাইব্রেরি পাওয়া যায় শুন্য এবং অব্যবহৃত অবস্থায় সংবাদ টিমটি ঢাকায় আসার পর সংস্থাটির পরিচালক রেজওয়ান , ডেইলি স্টারকে এক সপ্তাহের মাঝে অন্তত ৩৫ টি বোট দেখাবেন বলে অঙ্গীকার করেন ।

কিন্তু সপ্তাহ শেষে তাদের কারও দেখা মেলেনি । চলনবিল এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে সংস্থাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কখনও এর নাম শোনেননি বলে জানান । বিস্তারিত ফলোআপ রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে স্টার উইকেন্ড ম্যাগাজিনে এই ডামাডোলের মাঝেই সিধুলাইয়ের জাতিসংঘ অ্যাওয়ার্ড অর্জনের ঘোষণাটি আসে । ঘটনা যদি সত্যিকার নাটক বলে প্রমাণিত হয় ,এত বড় প্রতারণার ঘটনায় পুরো বিশ্ব অংগনে বাংলাদেশের অবস্থান কলংকিত হয়ে পড়বে । বিঃদ্রঃ যতদূর শুনেছি সিধুলাই সংস্থা বিপুল অর্থ ছড়িয়ে ব্যাপারটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়া রোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল ।

এরপর কি হয়েছে ,কারও জানা থাকলে বিস্তারিত আপডেট জানাবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.