আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাচীন সাতটি প্রযুক্তি :আজও যা রহস্যে ঘেরা

টেকনোলজির চরম উৎকর্ষে বাস করছি আমরা এখন। দিন যত যাচ্ছে টেকনোলজিও উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে। তার মানে কিন্তু আবার এটাও না যে প্রাচীন আমলে টেকনোলজি বলে কিছু ছিলনা। তখনকার যুগেও এমন কিছু টেকনোলজি বা প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল যার অনেক কিছু এখনকার প্রযুক্তিবিদদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ছাড়িয়েছে কিন্তু কোন সমাধানে আসতে দেয়নি। চলুন হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন এমন কিছু টেকনোলজি বা প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনে নেই যা এখনও রহস্যের আধারে ঘেরা... 7. Stradivari Violins ১৭শতকের খুব বিখ্যাত ছিল Stradivari violins।

আর এর নির্মাতা ছিল ইটালির Stradivari family। ভায়োলিন ছাড়াও গিটার ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রও বানাত তারা। এটা ছিল ১৬৫০-১৭৫০ সাল পর্যন্ত। তখনকার যুগে Stradivari Violins ছিল অনেক দামী এবং আভিজাত্যের প্রতীক। কারণ ঐ সময়ে পৃথিবীর অন্য কেউ এত সুন্দর সাউন্ড কোয়ালিটির ভায়োলিন বানাতে পারতনা।

এক কথায় আনপ্যারারাল । এখন দুনিয়া জুড়ে ৬০০টির মত ভায়োলিন রয়েছে যা অমূল্য। কিনতে গেলে হয়ত নিলামে যেতে হবে। Stradivari instruments বানানোর কৌশল ছিল Stradivari পরিবারের গোপন বিষয় যা একমাত্র জানত Antonio Stradivari এবং তার দুই ছেলে Omobono এবং Francesco... তারা তিনজন মারা গেলে বন্ধ হয়ে যায় সব উৎপাদন। অনেক বাদ্যযন্ত্র বিশারদ চেষ্টা করেছে নতুন করে Stradivari Violins বানাতে কিন্তু সবাই ব্যর্থ।

কেউ পারেনি সেই Strdivari Violin এর ধারে কাছে যেতে। আজকের দিন পর্যন্ত Stradivari Violins বানানোর কৌশল এক রহস্যের আধার হয়ে আছে যা হারিয়ে গেছে Stradivari পরিবারের তিন পুরুষ সদস্য মারা যাবার সাথে সাথে। 6. Nepenthe প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্য ছিল শিক্ষা,সংস্কৃত ও প্রযুক্তিতে ছিল অনেক এগিয়ে। তাদের অনেক কিছু ছিল ঈর্ষা করার মত। চিকিৎসা বিদ্যায়ও ছিল তাদের অনেক অগ্রগতি।

প্রাচিন গ্রীক সাম্রাজ্যের একটি বিস্ময়কর ঔষধ ছিল Nepenthe,যাকে বলা হত anti-depressant বা “chase away sorrow.”যার উল্লেখ পাওয়া যায় হোমারের অডেসিতেও। অনেকে বলে এটা কল্পনার বা fictional,কিন্তু ইতিহাসবিদদের কথা এটা ছিল। মিসরেও এর প্রচলন ছিল, যাকে বলা হত “a drug of forgetfulness” এখনকার দিনে যা opium বা laudanum এর মত কাজ করে। Nepenthe তৈরির কৌশল নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু ঐ সময়ে কি উপাদন দিয়ে Nepenthe তৈরি করা হত তা এক অজানা রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে। 5. The Antikythera Mechanism আর্কেওলজির এক বিস্ময় হল The Antikythera Mechanism, যা ব্রোঞ্জের তৈরি আর উদ্ধার করা হয় ১৯০০ সালের দিকে গ্রীসের সমুদ্র উপকূল থেকে।

এটি ৩০ টি গিয়ার,ডায়াল এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি। একটি ডুবন্ত প্রাচীন জাহাজের মধ্যে পাওয়া যায় এটি। বিজ্ঞানীদের ধারনা এটির তৈরি করা 1st বা 2nd century BCতে। এটির কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীদের অনুমান এটা এক ধরনের ঘড়ি জাতীয় যন্ত্র যা দিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান এবং আলোক বছর গণনা করা হত। ১৪ শতকের কিছু লেখায় এই The Antikythera Mechanism সম্পর্কে জানা যায়।

কিন্তু কোথাও এর গঠন পক্রিয়া নিয়ে কিছু লেখা নেই। ফলে The Antikythera Mechanism থাকলেও বের করা যায়নি এর তৈরি রহস্য। 4. The Telharmonium The Telharmonium ধরা হয় দুনিয়ার প্রথম ইলেক্ট্রনিক মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট এটার টোনহুইল দিয়ে সিন্তেথিক মিউজিক্যাল নোট তৈরি করা যেত যা তারের মাধ্যমে লাউডস্পিকারে শোনা যেত। ১৮৯৭ সালে এটি তৈরি করেন Thaddeus Cahill,এটা ছিল ঐ পর্যন্ত দুনিয়ার সবথেকে বড় বাদ্যযন্ত্র যার ওজন ছিল ২০০টন আর রাখার জন্য বড় রুমের দরকার হত। এটার ছিল একগাদা বাটন সহ কীবোর্ড এবং পায়ের প্যাডেল।

প্রথম প্রদর্শনেই মানুষের মন জয় করে নেয় এর ক্লিয়ার সাউন্ডএর জন্য। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় এর খরচ এবং আয়তনের জন্য। তাছাড়া এটি চালনায় মানুষের শক্তিও খরচ হতে থাকে অনেক। আর Thaddeus Cahillও কাউকে এর গঠন সম্পর্কে না জানিয়ে একাই চেষ্টা করতে থাকেন এর থেকে ভাল কিছু করার। মাত্র তিনটি Telharmonium ছিল তখন আর তাই এটার সম্পর্কে অনেক আগ্রহ থাকলেও কেউ জানতে পারেনি এটা বানানোর প্রযুক্তি।

3. Damascus Steel 1100-1700 AD পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে খুব শক্ত একধরনের ধাতু ব্যবহার করা হত। যা পরিচিত ছিল Damascus steel নামে। এটা দিয়ে মুলত ছুরি ও তলোয়ার বানানো হত। Damascus steel দিয়ে বানানো ছুরি বা তলোয়ার যেমন ছিল শক্ত তেমন ধারাল এবং সাথে সাথে ফেলেক্সিবল। আর তাই এর খ্যাতি ছিল বিশ্বব্যাপী।

১৭৫০ সাল পর্যন্ত ছিল এই Damascus steelএর স্বর্নযুগ। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নে তলোয়ার বা ছুরির ব্যবহার যেমন কমতে থাকে তেমনি কমতে থাকে ইন্ডিয়া এবং শ্রীলংকা থেকে এর কাচামালের যোগান। ফলে যারা এর বানানোর পদ্ধতি জানত তারা চলে যায় অন্য পেশায় ফলে তারাও কাউকে আর শেখায়নি বা লিপিবদ্ধ করেনি এর তৈরি করার নিয়ম। আর এভাবে কোথাও লিপিবদ্ধ না থাকার কারনে কালের গর্ভে হারিয়ে যায় Damascus steel এর নির্মাণ প্রণালি অথচ অনেক গবেষণা হয়েছে তা উদ্ধারের জন্য। 2.Roman Cement আধুনিক কংক্রিট ডেভালপ হয় ১৭০০ সালের দিকে,আর এখনত সিমেন্ট,বালি,পানি আর ইট মিশালে কংক্রিট তৈরি হয়।

কিন্তু এটা কংক্রিট তৈরির ইতিহাস নয়। প্রাচীন যুগে পারসিয়ান,মিশরিয়রা আর রোমানরা জানত কংক্রিট তৈরির ফর্মুলা। কিন্তু রোমানদের তৈরি কংক্রিট ছিল সারা দুনিয়ার বিখ্যাত। তারা burnt lime, পানি আর পাথর একসাথে মিশিয়ে তৈরি করত কংক্রিট যার গাথুনি ছিল খুবই মজবুত। আর তাই তারা নির্মাণ করেছিল them the Pantheon, the Colosseum, the aqueducts, আর the Roman Baths. সবথেকে মজার ব্যাপার ছিল এই সিমেন্ট যারা বানাত কেউ লিখে রাখেনি এর প্রস্তুত প্রনালি,যারা জানত তারা মারা গেলে একসময় কোথাও জানা যায়নি সেই প্রযুক্তির কথা।

ইতিহাসবিদদের সবথেকে বড় প্রশ্ন হল কেন হারিয়ে গেল এর উৎপাদন প্রক্রিয়া। আর এর হারান নিয়ে প্রচলিত আছে নানা মিথ। 1.Greek Fire হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তির মধ্যে সবথেকে রহস্যময় বিষয় হল Greek Fire,যা ব্যবহার করত Byzantine Empireএর সইন্যরা। এটা এমন এক “sticky fire” ছিল যা পানির মধ্যেও একটানা জ্বলত। এর সবথেকে বহুল ব্যবহার হয় ১১ শতকে।

প্রথম দিকে এটি বড় জারের মধ্যে ঢুকিয়ে গ্রেনেডের মত শত্রুর দিকে ছুরে মারা হত,তারপর এটি ব্যবহার হয় যুদ্ধ জাহাজে। জাহাজের সামনে ব্রোঞ্জের পাইপ ফিট করে সেই পাইপের মধ্য দিয়ে শত্রুর জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হত। Byzantine Empireএর শাসন আমলের পর কমতে থাকে এর ব্যবহার। এক সময় তা হয়ে যায় ইতিহাস। কিন্তু পড়ে এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু আসলেই কি কি মিশিয়ে এটি তৈরি হত তা এখনও একটি বিস্ময়ের বিষয় হয়ে দাড়িয়ে আছে সবার কাছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।