আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোলস দেখেই ভুলে গেলে বন্ধু-

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

১১ই মে ১৯৮১ ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছিলো বব মার্লের। মৃত এই শিল্পীর সম্মানে প্রথম আলোর শুক্রবারের অন্য আলোর পাতায় লিখেছেন উৎপল শুভ্র। বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতায় তার অবদানের প্রসংশা শুনেছি। তবে তার ক্রীড়া বিষয়ক লেখার মুগ্ধ পাঠক হতে পারি নি। ইত্তেফাকে এক চিলতে সংক্ষিপ্ত স্কোর বোর্ডের তালিকার বাইরে এসে সম্পূর্ণ স্কোরবোর্ড তুলে দেওয়া খেলার পাতায় এই অবদানের বাইরে খেলার অনুপম বর্ণনা হয়তো উৎপল শুভ্রের কলমে আসে না।

বাংলাদেশের সকল খেলার বিশেষজ্ঞ আব্দুল হামিদ কিংবা চৌধুরি জাফরুল্লাহ শারাফতের মতোই তার যোগ্যতা কিংবা অযোগ্যতা- ক্রীড়া সাংবাদিকতার বাইরে এসে তার নতুন লেখার ক্ষেত্র ছিলো রস রচনা, সেখানে সফলকাম হতে পেরেছেন কি না আমি জানি না, তার রস আলোতে লেখা কৌতুকময় জীবনের গল্প আমার পছন্দ হয় নি তেমন। তবে আগুণ জ্বালানো লেখা হয়েছে এই বর্তমানের বব মার্লের স্মৃতিযাদুঘর ঘুরে এসে লেখা উৎপল শুভ্রের বব মার্লের মৃত্যু দিবস উপলক্ষে রচিত বব মার্লির বাড়ী। বব মার্লের যাদুঘর ঘুরে এসে তার মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া জাদুঘরে যারা ঘুরতে আসে তারা সবাই বব মার্লের জীবনের ঘটনাগুলো সম্পর্কে অবগত। তার কোন গান কি ঘটনার প্রেক্ষিতে লেখা, তার জীবনের কোথায় কখন কি ঘটেছে, বব মার্লে কখন কোথায় কনসার্ট করেছেন, কখন কোথায় গিয়েছেন। আমি অবশ্য তার অবাক হওয়াকে দোষারোপ করতে পারি না।

বব মার্লের স্মৃতিযাদুঘর দেখতে যাবে তার গানের মুগ্ধ শ্রোতারা, তার ভক্তেরা যেহেতু স্মৃতিযাদুঘর ভ্রমনে যায়, যায় একটু বব মার্লের সান্নিধ্য পেতে- তাদের ভেতরে বব মার্লের জন্য যে অনুভুতি- তাদের এই ভক্তিরসের প্রাবল্যেই তারা সবাই পড়েই জেনেছে বব মার্লের জীবনের ইতিহাস। এদের অনেকের বব মার্লে শিরোনামের খাতাও আছ- সেখানে একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে বব মার্লেকে নিয়ে রচিত সকল সংবাদের ক্লিপিংস। গান গাওয়া কিংবা শিল্পচর্চার সাথে যুক্ত মানুষের অন্ধভক্ত- ফলোয়ার্স কিংবা গ্যাং পিপলদের এই আচরণ নতুন খলিফা খুঁজে ফেরা মানুষের জন্য দরকার। বন জভির একটা গান আছে- দিজ ডেস এলব্যামের- দিন ডেস শিরোনামের এই গানটিতে মানুষের নায়ক খুঁজে বেড়ানো শেষ হয়ে যাওয়ার বেদনার কথা কিছুটা বর্ণিত আছে- কিংবা বন জভির সর্বশেষ শোনা গানের এলব্যামের একটা গানের কথা মনে পড়ছে- লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং- পশ্চিমে গানের ভক্তরা এমন পাগলামি করে তার সামান্য কিছু চিত্রায়িত হয়েছে অলমোস্ট ফেমাস সিনেমায়- হিপ্পি মুভমেন্ট কিংবা এন্টি ভিয়েতমান এরা নিয়ে অনেক কিছুই বলা যায়- উডস্টক ফেস্টিভল না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন , মানুষ সঙ্গীতকে ভালোবেসে কতটা পাগলামি করতে পারে। বব মার্লের তেমন ভক্ত আমি না।

সর্বসাকুল্যে একটা এলবাম শুনে তেমন ভক্তের দাবিদার আমি হতেও পারবো না। পশ্চিমে সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের জীবন নিয়ে ছবি হয়, তাদের ভক্তরা সেসব ছবি দেখে আনন্দিত হয়, বিষন্ন হয়, হিরো ওরশিপের নতুন ধারণা কিংবা নতুন ধরণের ভক্তিবাদের সূচনা ঘটে যায় হয়তো। বব মার্লেকে নিয়ে এমন ঘটলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই- তার সঙ্গীতের মূল বিষয় ছিলো মানুষ। মানুষের অধিকার নিয়ে গান রচনা করা, মানুষের আবেগ আর মানুষের একান্ত চাওয়া নিয়ে রচিত গানগুলো সবসময়ই মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তার গানের বাক্য বিন্যাস অনুবাদ যতটুকু আমার হৃদয়ে প্রবেশ করে ঠিক ততটুকুই বব মার্লের অবদান আমার জীবনে।

তাই জ্যামাইকার কুখ্যাত শহরতলীর বস্তি থেকে উঠে আসা বব মার্লের অবদান বুঝতে চাইলে উৎপল শুভ্রকে বুঝতে হতো জ্যামাইকার রাজনীতিতে সংঘাত নিসরনে বব মার্লের প্রচেষ্টার কথা। জ্যামাইকার মানুষের আবেগ উচ্ছাস এবং বিদ্বেষ নিয়েই বব মার্লের বেড়ে উঠা। শেতাঙ্গ বাবা এবং কৃষ্ণাঙ্গ মাতার সন্তান বব মার্লের জীবনে বর্ণবাদের প্রভাবটাও অস্বীকার করা যায় না। না ঘর কা না ঘাট কা অবস্থানে ছিটকে পড়া বব মার্লে শেতাঙ্গের বর্ণবাদের শিকার এবং কৃষ্ণাঙ্গের বর্ণবাদের শিকার- তাই তাকে ইশ্বরের শরণ নিতে হয়। সেই ইশ্বরই তার অনুপ্রেরণা হয়ে যায়- সেই ইশ্বরের অনুপ্রেরণায় তার মানবিকতার বোধ আরও শাণিত হয়।

উৎপল শুভ্র বব মার্লের গান শুনেন না, তার ভক্ত না এটাতে দোষের কিছু নেই, তবে তার বর্ণনার নিরাসক্ত অবহেলায় শিউরে উঠি। মানুষের প্রতি সম্মানবোধের ঘাটতি এমন ভাবে প্রকাশ করতে হবে? বব মার্লের যাদুঘরে তেমন কিছু নেই- তার বাসস্থানকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়েছে- সেখানে বব মার্লে বসবাস করতেন- তার ব্যবহৃত বিভিন্ন স্মারক সেখানে রাখা- এর বেশী আসলে কি আশা করা যায়? সেখানে স্ট্রিপ টিজারেরা নাচবে? বব মার্লের উদ্দেশ্যে অন্তর্বাস ছুঁড়ে দেওয়া মেয়েদের অন্তর্বাসবিহীন ছবি থাকবে? ডাইনোসরের কঙ্কাল থাকবে? আসলে বব মার্লের বাসায় তার ব্যবহৃত জিনিষপত্র ছাড়া উৎপল শুভ্র আর কি আশা করেছিলেন। আমি জানি না। আমার জানা হয়ে উঠবে না আসলে। তিনি কথার ছলে বলে ফেললেন তিনি ৩ বার জ্যামাইকা গিয়েছেন।

২০০৭ এর বিশ্বকাপ কভার করতে উৎপল শুভ্র জ্যামাইকায় গিয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে তিনি আউট সাইড স্পোর্টস কিছু রচনাও করেছিলেন, সেসব অখাদ্য দীর্ঘ সময় পড়ি নি, ভ্রমনকাহিনী ভ্রমনপিপাসুর কাছে উপভোগ্য এবং উৎপল শুভ্রের লেখার মান এতটা ভালো নয় যে নিখাদ সাহিত্যের খোঁজে সেখানে ঢু মারবো। নিউজিল্যন্ডে গিয়ে তার লিখিত রিপোর্ট সংবাদপত্রে পড়ে মনে হলো আসলে তেমন কিছুই হারাই নি আমি। জ্যামাইকায় গিয়ে ঘটনাচক্রে তার বব মার্লের জাদুঘরে যাওয়ার দুর্ভাগ্য অবশ্য দীর্ঘায়িত হয় নি, উৎপল শুভ্র নেপথ্যে পেয়ে গেলেন বব মার্লের বাসার সামনের রেস্টুরেন্ট, সেখানের সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই চমৎকার স্বাদু। তাই বব মার্লের যাদুঘরের সামনের ফিস ফ্রাইয়ের বর্ননা এবং গুনাগুন বর্ণনা করলেন তিনি। বব মার্লের অবদান উৎপল শুভ্রের জীবনে তেমন নয়, তবে জ্যামাইকার মানুষ তাদের এই হিরো ওরশিপের ধারা বজায় রেখেছিলো , রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তার শেষকৃত্য করা হয়।

নিহত বন্ধু এবং তাদের পরিচিত জনের বেদনা নিয়ে লিখিত নো ওমেন নো ক্রাই গানটির বিষয়ে তার সর্বশেষ অনুমাণ- নারী নেই ক্রন্দন নেই- এটাই নাকি বাংলাদেশের সবাই জানেন। তবে আমার সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ নেই- যাদের সাথে উৎপল শুভ্রের জানাশোনা তাদের প্রতি অনুরোধ তারা যেনো উৎপল শুভ্রকে প্রশ্ন করে আমাকে জানান- উৎপল শুভ্র এই জরপিটা কবে করেছেন, কতজনের উপরে করেছেন। খোলস দেখেই ভুলে গেলে চলবে বন্ধু, খোলসের ভেতরে অনেকের চামড়ায় অতীতের দাসখত, চাবুকের দাগ আঁকা আছে। উৎপল শুভ্র বোধ হয় এই গানের খোলস দেখেই অনুমাণ করেছেন, নো ওমেন নো ক্রাই, মাইয়া মানুষ ঝামেলার জিনিষ, না থাকলে জীবন সুখের, কিংবা মাইয়া মানুষ মানেই প্যানপ্যানানি- থাকলেই শালীরা খালি কান্দন চোদায়- ঠিক কোন অর্থে নারী নেই ক্রন্দন নেই শব্দের উৎপত্তি এটা তার জবানিতে জানলে অশেষ উপকৃত হতাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।