আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভয়ঙ্কর ১০ সাপ

“If a man hasn’t discovered something he will die for, he isn’t fit to live.” – Martin Luther King Jr. সাপ চেনেন না পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। হাত-পাবিহীন এ সরীসৃপটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে এক ভয়ঙ্কর বিষাক্ত প্রাণী হিসেবে। তবে মজার ব্যাপার হল,সব সাপই ভয়ঙ্কর বা বিষাক্ত নয়। বেশির ভাগ সময়ই এরা আত্মরক্ষার্থে আক্রমন করে। আবার কোন কোন সাপ পথচারীদের ভয় দেখিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথ খোঁজে।

সব সাপ ভয়ঙ্কর না হলেও পৃথিবীতে অন্তত এমন ১০ সাপ আছে যাদের ছোবলে মৃত্যু অনিবার্য। কোন কোন সাপের কামড়ে পচে যায় শরীরের মাংস। কোন কোন সাপ গিলে খেতে পারে আস্ত মানুষ। সম্প্রতি এমনই ভয়ঙ্কর ও বিষাক্ত ১০ সাপ নির্বাচন করেছেন প্রানিবিদরা। ১০।

ডেথ এডার ডেথ এডারও সাপ শিকার করে। মূলত অস্ট্রেলিয়া ও নিউ ঘানায় এদের সদলবল বসবাস। ডেথ এডার আকারে ছোট হলেও এর মাথার ভিন্নতার কারনে এটি দেখতে অনেকটা ভয়ঙ্কর। এদের মাথা অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির। এদের শরীরও বেশ মোটাসোটা।

প্রানিবিদরা জানান, এক ছোবলে এডার ৪০-১০০ গ্রাম পর্যন্ত বিষ ঢালতে পারে। কেউ কেউ এর বিষকেই সবচেয়ে বিষাক্ত বিষ বলে মনে করে থাকেন। এই সাপের বিষ মানুষের স্নায়ুতে আক্রমন করে। এর কামড়ে মানুষের দেহ প্যারালাইসিস হতে পারে, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যে কেউ সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টার মধ্যে মারা যেতে পারেন। তবে সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছে এর ছোবল দেওয়ার ক্ষমতা।

এটি ০.১৩ সেকেন্ডের মধ্যে কামড় দিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। ৯। ইস্টার্ন ব্রাউন স্নেক ধরুন, আপনি একটা ইস্টার্ন ব্রাউন স্নেকের সামনে পড়লেন। সাপটি আপনাকে দেখে ফণা তুলে নাচতে লাগল। সে চাইছে আপনি তার দিকে এগিয়ে যান, আর তারপরই সে চোখের পলক পড়ার আগেই কাজ সেরে নেবে।

আপনি ভুলেও সে কাজ করবেন না। এমন সাপের সামনে পড়লে নড়াচড়া না করে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকবেন। কারন, এরা শুধু চলমান মানুষ বা বস্তুকেই আক্রমন করে। আর এর বিষ এতটাই বিপজ্জনক যে, এর এক ছোবল একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। ব্রাউন স্নেকের মধ্যে পুর্বাঞ্চলিও বাদামী সাপই বেশি বিষধর।

এটি অস্ট্রেলিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। এরা যেমন দ্রুত চলাফেরা করতে পারে তেমনি উপযুক্ত পরিবেশে হরহামেশাই আক্রমন করে বসতে পারে। আরও ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এদের বিষ স্নায়ু ও রক্তে একসঙ্গে আক্রমন করে। তবে এরা প্রতি দুই ছোবলে একবার বিষ প্রয়োগ করতে পারে। আর পারতপক্ষে এরা কামড়ায় না।

৮। ব্লু ক্রেইট ব্লু ক্রেইট এমনই হিংস্র যে, শিকার ছাড়াও নিজ প্রজাতির সাপও এদের হাত থেকে রেহাই পায় না। দক্ষিন পূর্ব-এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এ সাপ বেশি পাওয়া যায়। এদের ছোবলে মৃত্যু অবধারিত। তবে সঙ্গে সঙ্গে সুচিকিৎসা দিলে মাঝে মধ্যে কেউ কেউ বেঁচেও যেতে পারেন।

এই সাপের বিষ স্নায়ুকে আক্রান্ত করে। এর একটি কামড় কোবরার ১৬ টি কামড়ের সমান বিষাক্ত। এদের বিষ খুব দ্রুত পেশিগুলোকে দুর্বল করে দেয় এবং নার্ভের গতি কমিয়ে দেয়। তবে লড়াইয়ের মাঝপথে এসব সাপের পালিয়ে যাওয়ার রেকর্ড আছে। এরা রাতে চলাচল ও শিকার করতে বেশি পছন্দ করে।

৭। স্পিটিং কোবরা বলতে পারেন পৃথিবির সবচেয়ে সুন্দর সাপ কোনটি? এখন যার কথা বলছি, নিঃসন্দেহে এটি পৃথিবির সবচেয়ে সুন্দর সাপ। স্পিটিং কোবরা । দেখতে এরা যেমন সুন্দর, এদের আচরণও অন্যদের তুলনায় শান্ত। স্পিটিং কোবরার স্বর্গরাজ্য সাউথ আফ্রিকা।

এরা কামড় দেওয়া থেকে বিষ ছুড়তেই বেশি পছন্দ করে। এমনকি ফণা না তুলে শুয়ে শুয়েই এরা আট ফুট দুরের শিকারকে বিষ ছুড়ে কাবু করতে পারে। এরা সাধারণত বিষ ছোড়ে মানুষের চোখ লক্ষ্য করে। এ বিষ চোখে গেলে অন্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। তবে ত্বকে বা মুখের ভেতরে এ বিষ গেলে তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

এরা যদি দাঁত ফুটিয়ে রক্তে বিষ প্রবেশ করিয়ে দেয় তাতে পঙ্গুত্তবরন এমনকি হার্ট বন্ধ হয়ে যে কেউ মারাও যেতে পারে। গবেষকদের মতে, অত্যন্ত বিষধর হলেও স্পিটিং কোবরা শুধু আত্মরক্ষার জন্যই বিষ ছোড়ে। কাউকে চমকে দিয়ে পালানোর পথ করে নেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। এদের দৈর্ঘ্য ৬ ফুটের বেশি হয় না। ৬।

বেলচার সি স্নেক ভয়ঙ্কর সাপের তালিকায় থাকা বেলচার সি স্নেককেও কেউ কেউ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সাপ বলে মনে করে থাকেন। এই সাপের মাত্র কয়েক মিলিগ্রাম বিষই ১০০০ মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এদের বিষের পরিমাণও বেশি। সাগরের গভীরে এদের বিচরন থাকায় সাধারণত জেলেরা এই সাপের কামড়ের শিকার বেশি হন। জেলেরা যখন জাল তোলেন তখন সমুদ্রের তলদেশ থেকে এরা জালের সঙ্গে উঠে আসে।

বেলচার উত্তর-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সাগরে বেশি দেখা যায়। তবে মজার ব্যাপার হল একটু আদর পেলে এরা সহজেই বশ মানে। ৫। ভাইপার পৃথিবিতে মাত্র এক প্রজাতির সাপই আছে, যাদের বিষ মাংসকে গলিয়ে দিতে পারে। এর নাম ভাইপার।

ভারতসহ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এদের নানা প্রজাতি বাস করে। অপরিচ্ছন্ন বাড়ির আশপাশে বা নারকেল গাছের পাতার ভাঁজে চুপচাপ বসে থাকতে ভালোবাসে। তবে ভাইপারের মধ্যে র‍্যুসেল ভাইপার সবচেয়ে মারাত্মক। পৃথিবিতে বছরে এদের কামড়ে যত মানুষ মারা যায়, বাকি সব মিলেও এত মানুষ কামড়ায় না। এদের কামড়েই এশিয়ার সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

গবেষকদের মতে, এদের বিষ খুবই তীব্র হিমোলেটিভ ধরনের। রক্ত এবং টিস্যুকে সরাসরি আক্রমন করে। এরা নিশাচর প্রকৃতির সাপ। বৃষ্টির পরে রেইন ফরেস্টে এরা একা একা ঘুরে বেরাতে পছন্দ করে। এদের অনুভব শক্তি বেশ শক্তিশালী আর এরা ক্ষিপ্ত গতিরও হয়।

সাধারণতও ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে এরাও পৃথিবির ভয়ঙ্কর প্রজাতির সাপ। ৪। কালকেউটে ভাবুন তো, যদি একটা ১৪-১৫ ফুট লম্বা কালকেউটে ৩-৪ ফুট উঁচু তুলে মস্ত হাঁ করে আপনার দিকে তেড়ে আসে। কেমন লাগবে তখন? হুম, এখন যার কথা বলছি, সে এমনই প্রকৃতির সাপ।

কালকেউটে ১৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আর ওরা শরীরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাটির ওপরে ফণা তুলতে পারে। আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার হল ওই ফণা তোলা অবস্থায়ই এগিয়ে যেতে পারে। কালকেউটে পানির মধ্যেও দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে। এদের শ্বাসনালীতে একটা ছিদ্র থাকে।

তাতে কম্পনের ফলে ভয়ঙ্কর গর্জনের আওয়াজ হয়। পৃথিবিতে হাতেগোনা কয়েকটি সাপই এমন গর্জন করতে পারে। গর্জনের জন্য বিশাল প্রাণীটিকে আরও ভয়ঙ্কর লাগে। এ গর্জন সম্ভব হয় শক্তিশালী মাংসপেশির কারনে। ইন্ডিয়ান র‍্যাট স্নেক এদের প্রিয় খাবার।

প্রানিবিদদের মতে, কালকেউটের বিষ উৎপাদনের ক্ষমতাও অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, সব সাপের থেকে এদের বিষের থলি বড়। এক ছোবলে এরা দুই চা চামচ পরিমান বিষ ছোড়তে পারে। যা ২০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এদের বিষ যখন শরীরে ঢোকে তা নার্ভাস সিস্টেমের নিউরনগুলোর মধ্যে ইলেকট্রিকাল ইমপালসকে আটকে দেয়।

যার ফলে যে কেউ পঙ্গু বা হার্ট বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। এর ছোবলে কয়েক মিনিট থেকে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু অনিবার্য। তবে এর বিষে অন্যান্য বিষাক্ত সাপের পরিমানে টক্সিনের পরিমান কম। ৩। পাইথন সর্প জগতের দৈত্য বলা হয় পাইথনকে।

কারন এটিই পৃথিবির একমাত্র সাপ, যা আস্ত মানুষ অনায়াসেই খেয়ে ফেলতে পারে। কোনো ঘুমন্ত মানুষকে অনায়াসেই গিলে নাচতে নাচতে ঘরে চলে যেতে তার কোনোই সমস্যা হয় না। প্রায় একদিন পরে শিকারের দেহটাকে সে শরীর থেকে বাইরে বের করে দেয়। এ সাপ ২০ ফুটের মতো লম্বা হয়। এরা সাধারণত দুপুরের গরম এড়াতে গর্তে ঢুকে থাকে।

এরা একটু ঠাণ্ডা পেলে পানির মধ্যে শিকারের জন্য অপেক্ষা করে। তবে প্রথমেই এরা শিকারকে গিলে ফেলে না। প্রথমে চেষ্টা করে নিজের শরীরের পাকে পাকে শিকারকে কাবু করার। পাইথনের শরীর এতই শক্ত যে, এটা কাউকে পেঁচিয়ে ধরলে তার হার্ট ও রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে এবং সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবে। এরা যখন মানুষকে গিলে ফেলে তখন তাদের মুখ ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত খুলতে পারে।

আরও ভয়ঙ্কর কথা হচ্ছে, এরা নিজের শরীরের থেকেও বড় শিকারকে অবলীলায় গিলে ফেলতে পারে। তবে এদের কোন বিষ নেই। বিষ না থাকার পরও দৈত্যাকৃতি ও গিলে ফেলার কারনে এ সাপ চলে এসেছে ভয়ঙ্কর সাপের তালিকায়। ২। ব্ল্যাক মাম্বা ভয়ঙ্কর আর বিষের দিক থেকে পৃথিবির দ্বিতীয় সাপ ব্ল্যাক মাম্বা।

এর শরীরের উপরের দিকটা সাদা হলেও এর মুখের ভেতরটা কালো। এই ব্যতিক্রমি চেহারার জন্য এর নাম ব্ল্যাক মাম্বা। বাস আফ্রিকায়। বিদ্যুতের মতো ক্ষিপ্ত ও প্রচণ্ড উত্তেজিত এ সাপের নিউরোটক্সিন বিষের ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ। এ সাপ ছোবল দিলে মাত্র কয়েক মিনিটেই যে কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবেন।

এরা এতই ভীতু যে, কাউকে দেখলেই নিজের উপর আক্রমনের ভয়ে তার তার উপরে আক্রমন চালায়। যে কারনে অন্য সাপ থেকে এ সাপ হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর। প্রানিবিদদের মতে, এটিই পৃথিবির সবচেয়ে দ্রুততম সাপ। যার গতি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার । তাছাড়া এটি একই সারিতে পরপর ১২ বার কামড় দিতে পারে।

১। ইনল্যান্ড তাইপেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ ইনল্যান্ড তাইপেন। এর বিষ এই গ্রহের সবচেয়ে মারাত্মক। এই সাপ সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার প্রান্তদেশে দেখা যায়। লম্বায় এগুলো প্রায় আট ফুটের মতো হয়ে থাকে।

এক ছোবলে তাইপেন এত বিষ ছোড়ে যা ৬০-১০০ লোকের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। অথবা এতে মারা যেতে পারে এক লাখ ইদুর। প্রানিবিদরা জানান,তাইপেনের এক ছোবল অন্তত ৫০ টি কোবরার ছোবলের সমান। এদের বিষে আছে মারাত্মক ধরনের নিউরোটক্সিন। যা মানুষের শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুরোপুরি বিকল করে দিতে পারে।

এর ছোবল পেশি অবশ করে হার্ট বন্ধ করে দেয়। আরেকটি টক্সিন রক্ত জমাট করে ঘন সুপের মতো করে দেয়। এদের বিষের আরেকটি ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে, এ বিষ মানুষের রক্তে মিশলে রক্ত শক্ত হয়ে যায়। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হল, এই সাপের মানুষ মারার কোন রেকর্ড নেই। কারন এগুলো অস্ট্রেলিয়ার এমন প্রান্ত এলাকায় বাস করে যেখানে লোকজন খুব একটা থাকে না।

ভয়ঙ্কর বিষাক্ত হলেও স্বভাবে এরা খুব শান্ত। সব মিলিয়ে তাইপেনকেই সবচেয়ে বিষাক্ত সাপের মর্যাদা দিয়েছেন প্রানিবিদরা। সূত্র- দৈনিক পএিকা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.