আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধু ভয়ঙ্কর

ব্যারিস্টার হতে চেয়েছিলেন আহমেদ রেজা রিফাত।

স্বপ্ন পূরণে ভর্তি হন ঢাকার নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূর্ণতা পেল না। প্রিয় বন্ধু মাসুদ তার সেই স্বপ্নের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে সেই প্রিয় বন্ধু।

রিফাতকে কৌশলে বাসায় ডেকে অ্যালকোহল পান করায়। রিফাত নিস্তেজ হয়ে পড়লে তার মাথায় আঘাত করে। মাথা ফেটে রক্ত বেরুতে থাকে। বালতিতে করে সেই রক্ত নিয়ে বাইরে ফেলে আসে মাসুদ। এরপর রিফাতকে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে কম্বল চাপা দিয়ে রাখে।

ঘরের মধ্যে লাশ রেখে বাইরে বেরিয়ে পড়ে মাসুদ। রিফাতের বাবা রমিজ আহমেদ বলেন, সহপাঠীরা যে এভাবে সহপাঠীদেরই ঘাতক হয়ে উঠছে, এতে আমরা শঙ্কিত, আতঙ্কিত। বন্ধুর ডাকে বন্ধুই তো যাবে। আর সেই বন্ধু তাকে হত্যা করবে এটা আমরা ভাবতে পারি না।

এদিকে রিফাত হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার মাসুদ রানা ও লিংকন সরকারকে একদিনের রিমান্ডে নিয়েছে কলাবাগান থানা পুলিশ।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রিফাতের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।

র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এম আনিসুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধু লিংকনসহ মাসুদ রানা আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিফাতকে সে একাই খুন করেছে বলে স্বীকার করে। তিনি জানান, ৮ অক্টোবর রিফাতকে কৌশলে বাসায় ডেকে অ্যালকোহল খাওয়ায় মাসুদ রানা। রিফাত নিস্তেজ হয়ে পড়লে রাত ১২টার পর মাথায় আঘাত করে সে। মাথা ফেটে রক্ত বের হলে বালতির ওপরে মাথা রেখে রক্ত বালতিতে ফেলা হয়।

এরপর তাকে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে কম্বল চাপা দিয়ে রাখা হয়। ঘরের মধ্যে লাশ রেখে সে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। এর আগে সে তাকে অপহরণের পরপরই মোবাইল ফোনে রিফাতের ভাই, বাবা ও ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীর কাছে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তিনি আরও জানান, মাসুদ রানা পড়ালেখার জন্য বেশ কিছু দিন আগে ইংল্যান্ডে গিয়েছিল। সেখানে কিছু দিন থাকার পর দেশে ফেরে।

ঢাকায় পড়ালেখা শুরু করে। রিফাতের সহপাঠী ছিল। এ জন্য রিফাতকে ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকে মাসুদ রানা। রিফাত প্রথমে রাজি হলেও পরে 'না' করে দেন। এরপর থেকেই মাসুদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

মাসুদের টাকারও প্রয়োজন ছিল। ওই ক্ষোভ থেকেই রিফাতকে অপহরণ করে মুক্তিপণের টাকা আদায় ও হত্যার পরিকল্পনা করে মাসুদ।

এদিকে রিফাতকে না পেয়ে ৯ অক্টোবর কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রিফাতের মামা সাদেকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাতে মাসুদ রানা ও লিংকন মুক্তিপণের টাকা নিতে গিয়ে পান্থপথে র্যাবের জালে আটকা পড়ে। তাদের স্বীকারোক্তিতে মাসুদের রাজাবাজারের ৭২ নম্বর বাড়ির বাসা থেকে রিফাতের লাশ উদ্ধার করে র্যাব।

এ ব্যাপারে কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এসআই শামীম জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই রিফাত ও লিংকনকে থানায় সোপর্দ করে র্যাব। শুক্রবার তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও মাসুদ রানা একাই খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে।

রিফাতের মামা সাদেকুল ইসলাম জানান, দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে কঙ্বাজারের নতুন অফিসপাড়ার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়।

রিফাতের মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মর্মান্তিক ঘটনায় হতবাক হয়ে গেছেন তার সহপাঠীরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে কথা হয় রিফাতের বাবা রমিজ আহমেদের সঙ্গে। পেশায় তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শক।

মা মনোয়ারা বেগম একজন গৃহিণী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রিফাত সবার বড়। তার গ্রামের বাড়ি কঙ্বাজার জেলা সদরের মলাকৃতখালী এলাকায়।

ছেলের শোকে কাতর রমিজ আহমেদ বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। এইচএসসি পাস করার পর এই স্বপ্ন পূরণেই তাকে ঢাকায় পাঠাই।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করি। তিনি বলেন, রিফাত চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র ছিল। মেধাবী ছাত্র হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিল সে। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছেলের সেই স্বপ্ন তারা পূরণ হতে দিল না। কি অপরাধ করেছিল আমার ছেলে।

এদিকে রিফাতের হত্যার ঘটনায় বাকরুদ্ধ ও মর্মাহত তার সহপাঠীরা। রিফাতের সহপাঠী আইন বিভাগের ছাত্র ইমরান বলেন, আমরা কখনো ভাবতে পারিনি রিফাতের এমন পরিণতি হবে। তিনি বলেন, ওরা ছাত্র ছদ্মবেশী সন্ত্রাসী। বন্ধু হয়ে ডেকে নিয়ে তারা ঘাতক হবে এমনটি কখনো কল্পনা করা যায় না। যদি এমনটি হয় তাহলে বন্ধু বলে কিছু থাকবে না।

তিনি বলেন, পার্টিতে যাওয়ার কথা বলে রিফাতকে ডেকে নিয়ে যায় মাসুদ ও লিংকন। পার্টিতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

এদিকে রিফাত হত্যার ঘটনায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় রিফাতের মামা নিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মাসুদ ও লিংকনকে আসামি করা হয়েছে। কলাবাগান থানার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামিম হোসেন বলেন, র্যাব মাসুদ ও লিংকনকে তাদের থানায় হস্তান্তর করেছে।

মাসুদ ও লিংকনকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ৮ অক্টোবর নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র আহমেদ রেজা রিফাতকে পার্টিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ডেকে নেয় তার সহপাঠী মাসুদ ও লিংকন। এর পর আটকে রেখে তার বাবা-মার কাছে ফোনে মুক্তিপণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরে টাকা না পাওয়ায় হাত-পা বেঁধে নির্যাতন ও চেতনানাশক ট্যাবলেট খাইয়ে রিফাতকে হত্যা করে তারা। পরে অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের আটক করে বৃহস্পতিবার রাতে নিহত রিফাতের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.