আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্যের যৌক্তিক ব্যাখ্যা

নিউক্লিয়ার সন্ত্রাস মুক্ত বিশ্ব চাই

ভাগ্য নিয়ে মানুষের মধ্যে মতভেদ এবং তর্ক-বিতর্ক বেশ পুরোন। এ'ব্যাপারে আমার একান্ত নিজের কিছু ভাবনা দিয়েই বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ ব্লগের প্রথম পাতায় প্রথমবারেরমত উপস্থিত হতে চাচ্ছি। এই ব্যাখ্যার সাথে যেকেউ সহমত-দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন-তবে সেগুলো দয়াকরে জানালে উপকৃত হব। প্রথম কথা ভাগ্যকি? ভাগ্যকি লিখিত?ভাগ্যে কি জীবনের সবকিছু পুর্বনির্ধারিত? আবার প্রধান সকল ধর্মেই মৃত্যু পরবর্তী জীবন এবং সেই জীবনের সাস্তি পুরোস্কারের কথা বলা আছে। জীবনের সবকিছু যদি পুর্ব নির্ধারিতই হয় তাহলে কিসের ভিত্তিতে সেই সাস্তি পুরোষ্কার হবে? এ'সব জটিল প্রশ্নের উত্তর হয়ত বিভিন্ন ধর্মের জ্ঞানী লোকেরা বিভিন্ন ভাবে দেবেন।

একজন মুসলমান হিসেবে আমি ইসলাম ধর্মে বর্নিত ভাগ্যের যৌক্তিক ব্যাখ্যা উপস্থাপনের চেস্টা করছি-অন্য ধর্ম এটা সমর্থন করে কিনা জানি না। কেউ জানালে উপকৃত হব। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের একটি হচ্ছে ভাগ্য। যার মুল কথা হচ্ছে শুধুমাত্র মানুষই নয় বরং এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড তৈরীরও বহু আগেথেকে এখানে যাকিছু ঘটবে তার সব লিখিত আছে। একই সাথে মানুষের ভাল ও মন্দ কজের পরকালী সাস্তি ও পুরোস্কারের বিষয়টিও ইসলামের অন্যতম প্রধান মৌলিক ভিত্তি।

তার সাথে আল্লাহর একটি ঘোষনাও যুক্ত হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে-"আল্লাহ সেই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেস্টা করে না। " তার মানে চেস্টা করলে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। এই জটিল অস্থায় আস্তিকদের অধিকাংশ কিছু নাবুঝেই সবকিছু বিশ্বাস করে আর নাস্তিকরা এই জটিলতার সুযোগ নিয়ে ধর্মপ্রান স্বাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেস্টা করে। আসুন প্রথমেই দেখি - নির্ধারিত এবং অনির্ধারিত বলতে আমরা কি বুঝি। আসলে কোন ঘটনা নির্ধারিত না অনির্ধারিত তা মুলত নির্ভর করে সময়ের উপর।

যাকিছু অতীত তার সবই আমাদের কাছে নির্ধারিত-কারণ তা ঘটে গেছে। আর যা কিছু ভবিষ্যত তাই আমাদের কাছে অনির্ধারিত। এর কারণ আমরা অতীত জানি কিন্তু ভবিষ্যৎ জানি না। ইসলামে মানুষের ক্ষমতা বিষয়ক মুল কথা হচ্ছে-মানুষ একটি নির্দিস্ট সময়ের জন্য কিছু নির্দিস্ট বিষয়ে স্বাধীনতা ভোগ করে এবং স্বাধীন ভাবে ভাল বা মন্দ যেকোন দিকে যেতে পারে। সে এই সময়ে নিজের ইচ্ছামত কোন দিকে যাবে তার ভিত্তিতেই পরকালে তার বিচার হবে।

মানুষের এই ঐচ্ছিক বিষয়াদি কখনই পুর্ব নির্ধারিত নয়-কারণ তাহলে বিচাররে কোন অর্থ থাকে না। কিন্তু মানুষের এই অনির্ধারিত কাজগুলিও আল্লাহর কাছে লিখিত আছে। এখানেই আমাদের জ্ঞানের স্বীমাবদ্ধতা। আমরা কল্পনাও করতে পারিনা যে একটা অনির্ধারিত বিষয় একজন কিভাবে জানে। যেহেতু আমরা সময়ের পরিক্রমায় বন্দি এবং যেহেতু আমরা সময়ের শুধুমাত্র একটি দিক জানি এজন্য আমাদের এই সীমাবদ্ধতার সৃস্টি হয়েছে।

কিন্তু আল্লাহ সময়ের স্রস্টা হিসেবে অতিত বর্তমান ভবিষ্যত সবই জানেন। তাই তার পক্ষে অনির্ধারিত ভবিষ্যত লিখে রাখা সম্ভব যা আমরা এখনও কল্পনা করতে পারি না। আল্লাহ সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই বিশ্বাস করি যা আমাদের কল্পনার অতীত - যেমন আমরা জানি মানুষের পক্ষে একই সময় একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয় অথচ আল্লাহর ব্যাপারে আমরা বিশ্বাস করি তিনি পুরো বিশ্বজগতের সর্বত্র সবসময় উপস্থিত আছেন, আমরা চিন্তাও করতে পারি না অসীম অনন্ত সময়ের আদি ও অন্তে কেউ থাকতে পারে - কিন্তু আল্লাহ অবশ্বই আদিতে ছিলেন এবং অন্তেও থাকবেন - এরকম আরো অনেক কিছুই আমরা বিশ্বাস করি। যখন এত কিছু অসম্ভব বিষয় আল্লহর ব্যাপারে সম্ভব হয় তাহলে আমাদের দৃস্টিতে অনির্ধারিত বিষয় আল্লাহর পক্ষে জানা কেন অসম্ভব হবে? যদি মানুষ কখনও ভবিষ্যৎ জানারমত জ্ঞান অর্জন করতে পারে কেবলমাত্র তখনই বুঝতে পারবে অনির্ধারিত ভবিষ্যত কিভাবে লিখে রাখা যায়। তাহলে ভাগ্যে দুই ধরনের লেখা আছে-এক যা মানুষের ইচ্ছা-চেস্টা ছাড়াই শুধুমাত্র আল্লাহর নির্দেশে ঘটবে (এখানে ঘটনা ঘটার জন্য লিখে রাখাটাই একমাত্র কারণ) এবং দুই যা মানুষ তার সীমিত সময়ের সীমিত ক্ষমাতাবলে ঘটাবে তা আল্লাহ আগে থেকই জানেন বলে লিখে রেখেছেন-(এখানে ঘটনা এবং কর্যকারন বা Cause and Effect হবে উল্টো)।

মানুষকে শুধুমাত্র এই দ্বীতিয় প্রকার কাজের জন্যই বিচার করা হবে। কাজেই কোন খারাপ কাজ করার সময় এ'কথা বলার উপায় নাই যে আল্লাহ লিখে রেখেছেন বলেই করছি বরং তা হবে 'আমরা করব বলেই আল্লাহ লিখে রেখেছেন। ' একই কথা ভাল কাজে বেলাও প্রযোজ্য। এই বিষয়ে এরপর যে প্রশ্নটা অবধারিতভাবে আসবে তা'হল-আল্লাহ যদি সবই জানেন তাহলে আর কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার কি? এখনইতো যার যেখানে যাবার (বেহেস্ত বা দোজোখ) সেখানে পাঠিয়ে দিলেই হয়। এর জবাব হচ্ছে- আল্লাহ ন্যয় বিচারক।

আর ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে বিচারক কখনই সাক্ষি হতে পারে না। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল বিচার ব্যাবস্থাই এটা মেনে চলে যে কোন বিচারক কোন ঘটনার সাক্ষি হলে তার এজলাসে সেই বিচার হয় না। তাই ন্যায় বিচারক হিসেবে আল্লাহ কেয়ামতের দিন মানুশের বিচারের জন্য তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পৃথীবি, কোরআন এবং আরো অনেককে সাক্ষি হিসেবে উপস্থাপন করবেন যারা কোউ ভবিষ্যৎ জানে না। কাজেই এখনই সবাইকে যার যার গন্তব্যে পাঠিয়ে দেয়া ন্যায় বিচার নয় বলেই তা করা হচ্ছে না। আশাকরি যারা ভাগ্যনিয়ে চিন্তিত তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

এই বিষয়ে আরকোন প্রশ্ন থাকলে উত্থাপন করতে পারেন। আমার সাধ্যমত উত্তর দেয়ার চেস্টা করব। নবাগত ব্লগার হিসেবে সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.