আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ আফাজ মিয়ার ধানী ক্ষেত

mahbub-sumon.com

'বোরোর ফসল এইবার ভালোই হইছে, দরও ভালো হবে, কি কন ব্যাপারি সাব?' 'সফিয়ার মিলার আরেকটা চাতাল দিছে চৌধুরিহাটে, ১ টা ট্রাকও নাকি কিনছে। ' 'কোল্ড স্টোরেজে বলে ২০ বস্তা আলু রাখছি। জিতেন বাবু ভালো মানুষ। ১২০০ টাকা দিতেই বস্তা কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখলো। ১২০০ টাকা জিতেন বাবুর চা-পানের টাকা।

' আশে পাশের কথাগুলো যেনো কানেই ঢুকছে না আফাজ মিয়ার। রুহিয়া হাটের মহেশ রায়ের মোবাইলের দোকানে বসে আছে ২ ঘন্টা। ছেলে মালয়েশিয়া থেকে মোবাইল করবে। - আফাজ মিয়া, তোমারে না কইছি তোমার ছেলে মোবাইল করবে না। ক্যান যে প্রতি দিন আইসা একটা চেয়ার দখল করে রাখো।

অন্য কাস্টমাররা বসার জায়গা পায় না। আফাজ মিয়া হাসে। মহেশ রায় তার ছোট বেলার বন্ধু। -এক কাপ চা খাওয়াও মহেশ, আল্লাহ তোমার ব্যবসা ভালো করবে। -আর ব্যাবসা, মাইনশের হাতে হাতে মোবাইল, কয়জনই বা আর মোবাইল করতে আসে।

সামনের দোকান থেকে ৪ টাকার চা নিয়ে এসে দুই কাপে ভাগ করে এক কাপ আফাজের দিকে বাড়িয়ে দেয়। -নেও চা খাও বলে নিজেও সুরুৎ করে এক টান মারে মহেশ। -তোমার ছেলেতো ২ বছর হইলো মালয়েশিয়া গেলো, টাকা টুকা পাঠাইছে কিছু ? -পাঠাইছে কিছু, সেই টাকা দিয়াই ভাবতাছি কিছু করুম। আফাজের এই মিথ্যা কথাটা অনেকবারই শুনেছে মহেশ। -তুমি আর করবা ! -এইবারতো বোরো ভালোই হইছে, ও মহেশ তুমি এইবার কি লাগাইছিলা? - ২ বিঘা জমিতে স্বর্না ধান আর ১ বিঘায় আলু করছিলাম।

ভগবানের কৃপায় দুইটাই ফলন ভালো হইছে। কথাগুলো শুনে আফাজ মিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। - যাই গা আইজ, কাইল আবার আসুমনে। সুর্য ঢুবু ঢুবু। বাড়ীর দিকে হাঁটা দেয় আফাজ মিয়া।

-ও বাজান কি করো? আফাজ মিয়া বুঝতেই পারে নাই সে বাড়ীর পাশে চলে এসেছে। মেয়ের ডাকে একটু চমকে উঠে। - দ্যাখছোস কি সুন্দর ধান হইছে আমার জমিত। শীষগুলান থেইকা যেন ধান ফাইটা বাড়াইবো। - ধান ভালো হইলে আমরার কি ? জমি আমাগো কিন্তু ধানতো আমাগো না।

ছেলে মালয়েশীয়া যাবার সময় শেষ সম্বল ৫ বিঘা জমি বন্ধক দিয়া আদম ব্যাপারিকে টাকা দিয়েছিলো রমিজ মিয়া। ছেলে মালয়েশীয়া গেলো ২ বছর হলো। একবারো টাকা পাঠায়নি, জমির বন্ধকও ছাড়ানো হয়নি। মাইয়াটার বিয়ার বয়স হইছে। বিয়ায় অনেক খরচ।

কাইল সফিয়ার মিলারের বাড়ী যাইতে হইবো। সফিয়ার মিলার ভিটার জন্য ১ লাখ টাকা দিবে কইছে। সফিয়ার মিলারের খুব শখ একটা কাঁঠাল বাগান করবো। অন্ধকারে হাঁটছে আফাজ মিয়া। রাস্তা ছেড়ে ধানী জমির মাঝ দিয়ে।

যাচ্ছেতো যাচ্ছেই। এবার আসলেই বোরো ভালো হয়েছে, শুধু তার জন্যই ধান নাই। -ও বাপজান কই যাও ? আফাজ মিয়া শুনতে পাচ্ছে না। অন্ধকারে আস্তে আস্তে হাড়িয়ে যেতে থাকে আফাজের ছোট্ট শরীরটা। ধান ক্ষেতের মাঝ খান দিয়ে হাঁটতেই থাকে আফাজ মিয়া।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।