আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রেমিকারা-২

নিজেরে হারায়ে খুজি..... bohurupi.mohajon@gmail.com

ত্যান্দর নিকে আমার প্রেমিকারা-১ লিখেছিলাম। ইচ্ছা ছিল এই জীবনে যাদের দেখে পিছলা খেয়েছি, অথবা যাদের পিছলা খাইয়েছি তাদের নিয়ে সিরিজ লিখবো। অনেকদিন পর সেই ইচ্ছাটা আবার বুদবুদের মত উঠে আসছে। মনে হচ্ছে না লিখলে এ্যাসিডিটি হয়ে যাবে, তাই রিস্ক নিতে চাইনা। প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হবার পর আমার মনে দ্বিতীয়বারের মত প্রেমের হাওয়া দোলা দিয়ে গেল।

তবে ঘটনাটার শুরু ভুল বুঝাবুঝি দিয়ে। একদিন সকালে বাসার বাইরে বের হয়ে দেখি পাশের বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া উঠছে। অনেক মালপত্র বাসার বাইরের রাস্তায় রাখা, এখনো ভিতরে নেয়া হয়নি। কিন্তু আমাদের বাসার টিচারের যে চৌকিটা ছিল সেটা ও সেখানে মালপত্রের সাথে রাখা এবং তার ওপর আমারই বয়সী একটা মেয়ে খালি গায়ে বসে আছে, অবশ্য আমিও খালি গায়েই ছিলাম যাইহোক, আমি কাল বিলম্ব না করে সেই মেয়ের কাছে তেড়ে গেলাম, "তুই আমার স্যারের খাট নিসোস ক্যান?" মেয়েটি ভ্যাবদার মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার এম্নিতে মাথা গরম, ধাক্কা দিয়ে মেয়েটিকে খাট থেকে ফেলেদিলাম, আর সাথে সাথে সে ভ্যাএএএএ করে কান্না জুড়ে দিল! ইচ্ছা ছিল চৌকিটা বাসায় নিয়ে আসবো কিন্তু ওজন অনেক বেশি, আমার ওই বয়সে সেটা একচুল নড়ানোও অসম্ভব ছিল; এর মধ্যে মেয়েটা কাদছে - তাই সেখান থেকে চলে আসলাম।

কিছুক্ষণ পর বাসায় আসতেই মা জিজ্ঞেস করলো, "কিরে তুই ডালিয়াদের নতুন ভাড়াটিয়ার মেয়েটাকে মেরেছিস কেন?" -" ও তো স্যারের খাট চুরি করে নিয়ে গেছে!" - "কই!! সারের খাটতো ঘরেই আছে! ফাজিল ছেলে!" এদিকে শুনি আব্বার গলা "কই!! বান্দরটা বাসায় আসছে? ওরে আমার কাছে নিয়ে আসো" তারপর কি আর বাসায় থাকা চলে!? মা ধরার আগেই আমি হাওয়া। সবকিছু ঠান্ডা হবার পর বাসায় আসবো। আসল ঘটনা হল চৌকি দুইটা দেখতে কাছাকাছি হওয়ায় আমি মনে করেছি ওরা স্যারের চৌকি নিয়ে গেছে। যা হোক, প্রথম দিনেই অন্যায় ভাবে মারার জন্য আমি মেয়েটার কাছে একটু ভাল হবার চেষ্টায় ছিলাম। প্রথম প্রথম সে আমাকে দেখলেই পালায়, কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা! তার জন্য বড়ই পেড়ে আনি, তেতুল কিনে তাকেও ভাগ দেই, দু জন মিলে আচার কিনে খাই, এই করতে করতে আমাদের মধ্যে মিলমহব্বত হয়ে গেল।

সে আমার স্কুলেই ভর্তি হয় কিন্তু মেয়েদের আলাদা সেকশন হওয়ায় মনে কিছুটা দুঃখ ছিল। ইচিং বিচিং, চুড়ি ভাঙা, গোল্লাছুট, কুতকুত ইত্যাদি খেলে আমাদের দিন ভালই কাটছিল। কিন্তু অদৃষ্টের ফেড়ে সে সুখ আমার কপালে সইল না! কয়েক বছর পর এই খেলা নিয়ে তার সাথে আমার কাট্টি (ব্রেকআপ) হয়ে গেল। ঘটনাটা এ রকম। আমার নিজের আবিষ্কৃত একটা খেলা ছিল।

নাম "ডাইল-আলু ভর্তা-শুটকি মাছ"। আমাদের বাসার সামনে একটা দেয়াল ঘেরা জায়গা ছিল, তার ভেতরে ঢোকার কোন দরজা ছিল না। দেয়ালের উচ্চতা চারফুটের মত হবে। আমার এই খেলার নিয়ম হল যে চোর হবে সে থাকবে দেয়াল দিয়ে ঘেরা জায়গাটার বাইরে, আর অন্যরা থাকবে তার ভেতরে। চোরের কাজ হল কেউ যাতে দেয়াল টপকে বাইরে না বের হতে পারে সেটা দেখা।

আর বাকি সবাই চেষ্টা করবে চোরকে ফাকি দিয়ে দেয়াল টপকে ঘেরার বাইরে আসা। সবাই বাইরে চলে আসলে চোর গেম খাবে। আর দেয়াল টপকানোর আগেই যদি চোর কাউকে ছোয়া দিতে পারে তবে সে চোর হবে। এবং এই খেলার সময় সবাইকে "ডাইল-আলু ভর্তা-শুটকি মাছ" এই কথাটা বার বার বলতে হবে। এই হল খেলা! কোন একদিন আমি দুর্ভাগ্যক্রমে সেই খেলায় চোর হয়েছি।

আর আমার দ্বিতীয় প্রেমিকা অন্যদের সাথে। খেলা শুরু হবার পর সবাইকে নজরে রেখেছি যাতে কেউ দেয়াল টপকাতে না পারে, টপকাতে গেলেই ছুয়ে দিব! সবাই ঘেরা জায়গাটার এই পাশ থেকে ওইপাশে ছুটছে। এমন সময় দেখি আমর প্রেমিকা দেয়াল টপকানোর জন্য অন্য পাশ দিয়ে দেয়ালের ওপর উঠে দাড়িয়েছে। সে আমাকে হারিয়ে দিবে এই চিন্তায় বাল্য প্রেমের কথা ভুলে গেলাম। দৌড়ে গেলাম তাকে ছোয়া দিতে, সেও আমাকে আসতে দেখেছে, তাই দেয়ালের ওপর থেকেই হঠাৎ লাফ দিল!! এদিকে আমিও চলে এসেছি, আর যায় কোথায়, সে পড়লো আমার ওপর আর আমরা দুজনই মাটিতে চিৎপটাং।

মুহূর্তে মাথায় আগুন ধরে গেল! আমি কিল ঘুসি শুরু করতেই দেখি সেও আমাকে খামচি দিয়ে কামড় দিয়ে পাল্টা জবাব দিচ্ছে! আমি এতটা আশা করিনি!!!!! এলাকায় মারকুটে হিসেবে আমার সুনাম আছে, কিন্তু সেও দেখি কম যায় না, গায়ে বেশ শক্তিও আছে!! ওদিকে অন্য সবাই গোল হয়ে মজা দেখছে। আমি সুনাম রক্ষার্থে তাকে কোন রকম ছাড় দিতে রাজি নই, সেও দেখছি সেই রকম মানসিকতার। সেই দিন দু'জনের মধ্যে তুমুল মারামারি হল। আমি তার চুল কিছু ছিড়ে এনেছি, আর সেও স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে আমার গায়ে খামচি আর কামড়ের দাগ বসিয়ে দিয়েছে। ঠিক করলাম এমন জল্লাদনি মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখা যায় না! তাই পরের দিনই সবার সামনে তার সাথে কাট্টি নিয়ে নিলাম।

আমার দ্বিতীয় প্রেমেরও এভাবেই দি এনড হয়ে গেল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।