আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘোরাঘুরি ব্লগ: উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ/ সমুদ্র যেখানে মা (৯ম অংশ)

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

১১. সকাল ঠিক নয়টার সময় তপনদা এসে হাজির, আমরাও রেডী হয়ে নিচে গিয়ে বসে আছি। সব ঠিকঠাক, আমরা তখুনি রওয়ানা দিতে পারি, তবে সমস্যা সেই বৃষ্টি। একটুও থামার লক্ষণ নেই। তপনদা বললেন "সাইপানে তো এমন কখনও দেখিনাই, হ্যাঁ" কিছু বলার পরই হ্যাঁ বলে একটা মৃদু টান দেয় তপনদা। তারপর আবার বলা শুরু করে, "আইজকে যেই অবস্থা, হ্যাঁ, এই বৃষ্টি সারাদিনই পড়বে বইলা মনে হয়।

তবে সাইপানের ওয়েদার কেউ কইতে পারেনা। দেখবেন টিনিয়ানে পৌঁছাইতে পোঁছাইতে রইদ উইঠা গেছে"। আমি বলি, "তাইলে চলেন, কি আর করা! দেখি কি আছে কপালে?" তপনদার গাড়ীতে উঠে বসি, গাড়ী ছুটে চলে সাইপান সমুদ্রবন্দরের দিকে। আগের দিন গাড়ীটে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়েছি, আজ গাড়ীর জানালার কাঁচ আর বৃষ্টির ছাঁটের ফাঁক দিয়ে সাইপানের প্যানোরমিক ভইুটা দেখলাম। অসম্ভব সুন্দর এই দেশ, বিশেষ করে যখন বৃষ্টি এভাবে ধুয়ে দিচ্ছে চারদিক।

বিশেষ করে পূবদিকটায় সারাপথের সমান্তরালে চলে গেছে পাহাড়, পাহাড়ে নানারকমের সবুজ রঙের গাছ। আগে রৌদ্র ঝলমলে দিনে এই সবুজে সবুজের পার্থক্যটা চোখে পড়েনি, আজ গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে সেই শৈল্পিক সৌন্দর্যটা পুরোপুরি চোখে পড়ল। বন্দরে যাওয়া নিয়ে তাড়া ছিল, টিকেটের লম্বা লাইন পড়ে, তাই গাড়ী থামিয়ে ছবি নিতে পারিনি। দশ মিনিটের মধ্যেই একেবারে বন্দরে গিয়ে পৌঁছাই, সেটা যতটানা তপনদার দ্রুত গাড়ী চালানোর ফলে, তারচেয়ে অনেকবেশী রাস্তা ফাঁকা থাকার কারণে। এ এক অদ্ভুত লেইজার আইল্যান্ড, রাস্তাও ব্যস্ততাহীন, মানুষের চলাফেরাও সেরকম, গা ছেড়ে দেয়া ভাব।

বন্দরে এসে দেখি, টিকেটের জন্য অনেক মানুষ জমে গেছে। বন্দর বললেও খুব ছোট একটা জায়গা, মূলতঃ আশেপাশের দ্বীপ থেকে কিছু আনা নেয়ার জন্য ছোট সাইজের লঞ্চ এখানে আসা যাওয়া করে। পাশেই অবশ্য আছে আমেরিকান নেভীর ছোটখাট একটা প্ল্যাটফর্ম। সেটার সামনেই সাবমেরিনটা ডুবানো, আরো কিছু নৌকোর মতো জিনিস দেখা যাচ্ছিল। আমরা পোর্টের যেদিকে সেদিকে ছাউনীর নীচে টিকেটবিক্রী হচ্ছে, একগাদা লোক সবাই দুহাতে নিজের বাহু ক্রস করে ধরে যেন বৃষ্টির থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।

সমুদ্রের পাশে বৃষ্টি, বাতাসের কোন দিগ্বিদিক জ্ঞান নেই, সমানে চারদিক থেকে বৃষ্টির ছাঁট এসে লাগছে, প্রায় সবার গায়েই। আমরা টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়াই। টিকিটের দাম প্রতিজন পনের ডলার। যেতে যময় লাগে চল্লিশ/পঞ্চাশ মিনিট। প্রথমে লঞ্চে উঠানো হয় সাইপান থেকে টিনিয়ানে যাওয়া খাদ্যরাশি, বেনতো, ফল, বিস্কুট আরো এটা সেটা।

তারপর আমরা দলবেঁধে উঠি। প্রত্যেক যাত্রীর হাতে একটি করে প্লাস্টিকের ছোট ব্যাগ দেয়া হলো, যেটার মুখ প্লাস্টিকের চেইন দিয়ে বন্ধ। জাহাজে নাকি প্রচন্ড ঝাঁকুনি হয়, সেই ঝাঁকুনীতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে, বেশীরভাগ যাত্রীরই পাকস্থলী শূন্য হয়ে পড়ে, এবং বমি হয়। সাইপান পোর্ট থেকে যেমন লঞ্চে চড়ে টিনিয়ান দ্বীপে যাওয়া যায়, তেমনি সাইপান এয়ারপোর্ট থেকে ছোট চার্টার প্লেনেও টিনিয়ানে যাওয়া যায়। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সকালে লঞ্চে করে টিমিয়াম চলে যাব, সৈকত, ক্যাসিনো হোটেল আর বোমা লোড করার জয়গাটা দেখে বিকেলের দিকে চার্টার প্লেনে করে ফিরব।

প্লেনের ভাড়া লঞ্চের চেয়ে আড়াই গুনের মতো, লঞ্চে ওয়ান ওয়ে মাথাপিছু পনের ডলার, প্লেনে চল্লিশ। দামবেশীর এই ব্যাপারটাতো আছেই, তার সাথে আবার এয়ারপোর্ট হোটেল থেকে অনেকদূরে, তাই সবমিলিয়ে ভেবেছিলাম লঞ্চে একটা ট্রিপ নিই। তাছাড়া গভীর সমুদ্রে লঞ্চে চড়ব, এটাও একটা অভিজ্ঞতার ব্যাপার। এদিকে যেরকম বৃষ্টি, লঞ্চে উঠেও ভয় পাচ্ছিলাম -- যদি ডুবে যায়! তবে পুরো লঞ্চটাই প্রায় যাত্রীতে ভরে গিয়েছিল, যেটা দেখে আশ্বাস পেলাম। এত লোক নিশ্চয়ই মরার রিস্ক নেবেনা! ছাউনীর নীচে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম জাপানীজ এক ট্যুরিস্ট গাইড তার কাস্টমারদের অভয় দিচ্ছে, এমন টিপটিপ বৃষ্টি কিছুইনা।

যাত্রীরা সব লঞ্চে উঠে পড়েছে, কথাবার্তা বলছে, লঞ্চ ছাড়বে একটু পরেই। লোকজনের কথাবার্তার শব্দ থেকে বুঝলাম টিনিয়ান যাত্রীর অধিকাংশই চাইনীজ। মিনিট পঞ্চাশের মতো লাগল টিনিয়ানে পৌঁছাতে। প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে নিয়ে আমাদের চেহারায় যে চিন্তার ছাপ পড়েছিল, লঞ্চ চলতে শুরু করার দশ মিনিটের মাথায়ই সেটা ধীরে ধীরে কেটে গেল, কারণ তেমন ভয়ংকর কোন জার্কিংই টের পাইনি। সারাটা পথ খুব ভালোভাবেই চলল লঞ্চ, যাকে বলে একশোভাগ ভালোছেলে।

খুব আরামেই খানিকটা ঘুমিয়ে, খানিকটা কথাবার্তা বলে পৌঁছে যাই টিনিয়ানে। লঞ্চ থেকে নেমে আসতেই দেখি ক্যাসিনো হোটেলের দুটো বাস দাঁড়িয়ে। আর আছে কয়েকটি গাড়ী, যেখানে আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবরা যাত্রীদের নিতে এসেছে। প্রতিদিন এই একবারই লঞ্চ আসে সাইপান থেকে টিনিয়ানে, ক্যাসিনো হোটেলের বাস এসে একেবারে রেডী থাকে যাত্রীদের নিয়ে যাবার জন্য। যদিও ক্যাসিনো খেলার কোন প্ল্যান নেই, ক্যাসিনো হোটেলে থাকরও কোন প্ল্যান নেই, তাও নির্বিকারভাবে গিয়ে বাসে উঠে বসি।

এটাই নিয়ম। বাস ছাড়ার পর টিনিয়ানের দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা এগুতে থাকি হোটেলের দিকে, কেমন জনমানবশূন্য একটা দ্বীপ, অনেক দূরে দূরে একেকটা বাড়ি, প্রচুর ফসলের ক্ষেত, পুরোপুরি সমতল জায়গা, মাঝে মাঝে একটা দুটা টিলার মতো ডেখা যায়। তবে সাইপানের মতো অত উঁচু আর ব্যাপক পাহাড় নেই বলেই মনে হলো। দেখে মনে হলো যেন আমাদের লক্ষ্মীপুরের কোন গ্রাম। বাসের অন্যপাশের জানালা দিয়ে তাকালে সমুদ্র দেখা যায়, মনমরা হয়ে আছে।

মেঘ আর বৃষ্টির আড়ালে সেই চোখধাঁধানো রূপ তার আর নেই; ধূসর, জৌলুসহীন মনমরা সাগর কোনভাবেই কাছে টানেনা, বরং অজানা এক আশংকা তৈরী করে দূরে সরিয়ে রাখে। আগি বুঝলাম, আজ আর সমুদ্রে যাওয়া হচ্ছেনা। হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা, এই যে সমুদ্রের একটা সুনাম আছে যে তার কাছে গেলে তার ডাক উপেক্ষা করা যায়না, তার সৌন্দর্য মানবকে চুম্বকের মতো টানে -- এতে কি শুধুই সমুদ্রের নিজের অবদান? আর কারো কোন ভূমিকা নেই? মনে হলো আরো একজনের ভুমিকা আছে, অলক্ষ্যে সমুদ্রকে প্রাণবন্ত করে তোলে, সবার অগোচরেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে যায়। হ্যাঁ, সেটা সূর্য্য। সূর্য্যের আলোর খেলা না থাকলে সাগর কাছে তো টানেইনা, বরং কুয়াশার আবরণে শুধুই ভীত করে তোলে।

সূর্য্যের কাজটা এখানে অনেকটা বাবার ভুমিকার মতো, যিনি কখনো সামনাসামনি আবেগটা দেখাননা। কঠোর মুখে গম্ভীরভাবে কথা শোনেন, জবাব দেন আরো বেশী গম্ভীর স্বরে। অথচ দেখা যায়, চোখের আড়ালে হয়ত বারান্দার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে সন্ধ্যার আকাশ দেখতে দেখতে একমনে ভেবে যান সন্তানের কথা, কি করলে তাদের জন্য আরেকটু ভালো থাকার ব্যবস্থা করা যাবে, কি করলে সন্তান আরেকটু ভালোভাবে বড় হয়ে উঠতে পারবে। সে ভালোবাসাটা চোখে দেখা যায়না, হয়ত অনেকক্ষেত্রেই অনুভবও করা যায়না; হঠাৎ একদিন এরকম কোন মনমরা মুহূর্তে হঠাৎ টের পাওয়া যায়। আচ্ছা, সমুদ্র যদি মা হয়, তাহলে কি সূর্য্য বাবা? তখনই আবার মনে হয়, সমুদ্রকে কবিসাহিত্যিকরা নারী না ভেবে পুরুষ ভাবেন কেন, এত বড় আধার, এত কিছু ধারন করেও সে নারী নয়? এলোমেলো হয়ে যায় চিন্তাভাবনা, সকালে ভরপেট খেয়েছি, তাই এখন উচ্চমার্গের অর্থহীন দর্শন কিলবিল করে মাথার আশপাশে, টের পাই।

এসবের ভীড়েই দেখতে না দেখতেই পৌঁছে যাই টিনিয়ানের সেই বিখ্যাত ক্যাসিনো হোটেলে। হোটেলের নামটাও সেরকম বনেদী, "ডাইনাস্টি হোটেল"। ডাইনাস্টি হোটেলের ভেতরটা আসলেই গর্জিয়াস। দেখেই আমাদের গরীবি প্লুমেরিয়ার কথা মনে পড়ে খারাপ লাগল, ভাবলাম ইস্ এখানে একদিন থাকা যেত। হোটেলের একতলার কাউন্টারের সামনে যে লবি, সেটা বিশাল! পুরোপুরি ভারী কার্পেটে মোড়া লবি জুড়ে অসম্ভব চমৎকার সব সোফার সমাহার, দেখেই বললাম, "একটা খানদানী নাকডাকা ঘুম দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।

" আর লবির মাঝামাঝি সিলিংয়ে ঝোলানো বিশাল আকৃতির একটা ঝাড়বাতি, সেটা বরাবর নীচে রাখা চমৎকার একটা ফুলের গাছ টাইপের অবজেক্ট, সম্ভবতঃ কৃত্রিমভাবে তৈরী। দেখেই একটা রাজকীয় রাজকীয় ভাব চলে আসে মনে, নিজেকে মনে হয় গ্রাম থেকে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ এসে যেন বাদশা আকবরের বৈঠকখানায় এসে ঢুকে গেছি। আমি মনে মনে বলি, "ভালোই তো ইনকাম হয় ক্যাসিনো থেকে!" জীবনে কখনও ক্যাসিনো দেখিনি, আমার মাথার ভেতর ক্যাসিনোর ইমেজ বলতে ওশানস ইলেভেন-টুয়ালভ-থার্টিনের সেই জমজমাট লাস-ভেগাসের ক্যাসিনো। তার ওপর হোটেলের এরকম আলীশান দশা! আমি ভাবলাম এখানেও নিশ্চয়ই ক্যাসিনো সেরকমই হবে, প্রচুর হৈহল্লা, স্লট মেশিনের "টিংডিং, ডিংডিংডিং" টাইপের নানান আওয়াজ পাওয়া যাবে। তবে, তখন লবিতে বসে এসব আওয়াজের কিছুই পেলাম না, যেটা থেকে ধারনা হলো ক্যাসিনো হয়ত আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরে কোথাও হবে।

ভাবলাম পরে যাব ক্যাসিনো দেখতে, তার আগে এই আলীশান হোটেলটা একটু ঘুরে ফিরে দেখি। হোটেলের একপাশে বিরাট এক রেস্টুরেন্ট আর তার পাশে ছোটখাট একটা শপিং মল। বেশ চওড়া করিডোরের দুপাশে অন্ততঃ গোটা দশেক বা তার বেশী দোকান, সবগুলোতেই স্যুভেনির, চকোলেট - এরকম টুকটাক জিনিস বিক্রী হচ্ছে। যে ব্যাপারটা দেখে অবাক হলাম, সেটা হলো এখানকার দোকানগুলোতে জিনিসপত্রের দাম সাইপানের চেয়ে অনেক কম; যেমন সাইপানে এ্যামোন্ড চকোলেট বক্সের দাম দশ-বারো ডলার, আর এখানে মাত্র চার ডলার। যদিও ভিন্ন ব্র্যান্ড।

আবার শো-পিসগুলোও বেশ সস্তা। আমার সস্তার প্রতি দূর্বলতা আছে, যথানিয়মেই গিন্নীর নেই; আমি যতই চাচ্ছি বেশ কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে যাই, তিনি ততই বের হয়ে যেতে চাচ্ছেন এই সস্তার আখড়া থেকে। অবশেষে তিন প্যাকেট চকোলেট নেয়া গেল, আর ঘুরে দেখা গেল দোকানগুলো। এরমাঝে একটি দোকানঘর নিয়েছে ব্যাংক অভ সাইপান, তাদের ডায়নাস্টি হোটেল শাখা। সেখানে ঢুকেছিলাম কিছু ইয়েন ভাঙিয়ে ডলার করতে, ঢুকতেই দেখা হয়ে গেল এক নেপালী ভদ্রলোকের সাথে।

বয়েস পঞ্চাশের মতো হবে, আমাদের পরিচয় পেয়েই বাংলায় কথা বলা শুরু করে দিলেন। ভদ্রলোক সদালাপী, বাঙালীদের মতোই সিকিউরিটি জবে এসেছিলেন। এব্যাপারটা আমি আগেও বেশ দেখেছি, প্রচুর নেপালী আছেন যারা জীবনের কোন একটা সময় পশ্চিমবঙ্গে কাটিয়েছেন, ফলে বাংলা একদম আমাদের মতই বলতে পারেন। আর তাছাড়া, সম্ভবতঃ বাংলার সাথে সবচেয়ে বেশী মিল হচ্ছে এই নেপালী ভাষারই, নেপালীরা দেখি খুব দ্রুত বাংলা শিখে ফেলে। আমরাও হয়ত চাইলেই নেপালী শিখে ফেলতে পারব।

কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আমরা হোটেলের বাইরের বারান্দা টাইপের উন্মুক্ত জায়গাটায় গিয়ে দাঁড়ালাম। বারান্দা বললে কম হয়, বেশ উন্মুক্ত একটি স্থান, শুধু মেঝেটি হোটেলের সাথে লাগানো। বারান্দার রেলিংয়ের কাছে গিয়ে দেখি সামনেই খুব সুন্দর একটা লেক, লেকের চারপাশে গাছ আর মাঠ মিলে তৈরী করেছে ছোট্ট সুন্দর একটা পার্ক। একেবারে আমাদের দেশের পার্কগুলোর মতো। সাইপানে এই একটি ব্যাপার আমি খেয়াল করেছি।

জলবায়ুগত কারণে কিনা জানিনা, তবে ওদের স্টাইলের সাথে আমাদের স্টাইলের মিল আছে। বরং, জাপানীদের সাথেই কম মিল। যেমন, জাপানের পার্কগুলোতে ঘাসের বদলে নুড়িপাথর থাকে, আমি জানিনা এর উপকারিতা কি; বাচ্চারা যাতে হাতপা ছিলে যাবার ভয়ে দৌড়াদৌড়ি কম করে -- এরকম কোন মানসিক অত্যাচার করা ছাড়া আর কোন কারণ দেখিনা। যাহোক, বাইরে এসেই বুঝলাম আজকের দিনটি মাটি। বৃষ্টি আরো বেড়েছে, এবং ভাবেসাবে মনে হচ্ছেনা যে এই বৃষ্টি থামবে।

বুঝলাম টিনিয়ানের সৈকত আর হিরোশিমার বোমা ভরার স্থান দেখার সাধটা জিইয়ে রাখতে হবে। এখন যেহেতু আর কিছু করার নেই, আপাততঃ ক্যাসিনোটা দেখে নিই। লবিতে ফিরে এসে আবারও চেষ্টা করলাম হৈহুল্লোড় বা টিংডিংডিং শব্দ শোনা যায় কিনা খুঁজে বের করতে। নাহ্, কোন শব্দই নেই। সুনসান নীরবতা চারদিকে।

অগত্যা হোটেলের ফ্রন্টে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "ভ্রাতা, ক্যাসিনোটা কোনদিকে?" ফ্রন্টের লোক যেন সাক্ষাৎ গেঁয়ো ভূত দেখলো, ক্যাসিনো কোনদিকে জানেনা! বিস্ময় গোপন করে আবার মুখে সার্ভিস স্মাইল ফিরিয়ে এনে দেখিয়ে দিল ক্যাসিনোর দরজা। ফ্রন্টের অপজিটেই। আমরা হতাশ হয়ে পড়লাম। ভেবেছিলাম ক্যাসিনো হবে সরগরম টাইপের এক জায়গা, লোকে লোকারণ্য থাকবে রূমের দরজার আশপাশটা, অথচ এ কি অবস্থা। ভাবলাম এখন হয়ত বন্ধ।

জিজ্ঞেস করলাম, "তা, কয়টা থেকে শুরু হয়" এবার লোকটা আর ভদ্রতা বজায় রাখতে পারলনা, সবজান্তার হাসি হেসে বলল, "(আরে গাড়ল!) ওটা তো চব্বিশ ঘন্টাই চলে। " আমি কাচুমাচু হয়ে একটা ধন্যবাদ জানাই, তারপর রওয়ানা দিই ক্যাসিনোর দিকে। আমার স্ত্রী আমার তুলনায় অনেক বেশী ধার্মিক, এসব ক্যাসিনো ফ্যাসিনো নিয়ে তার একটু অনীহা ছিল। "কি ছাইপাশ দেখতে যাবে!" এরকম একটা মনোভাব সে দেখালেও, আমার জোরাজুরির জন্য একসময় হাসিমুখে রাজী হলো। এখন লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে ওর ওপর আমি হয়ত কিছুটা পরোক্ষ জোরাজুরি করে ফেলেছি।

গুরুজনেরা একটা প্রাচীনপ্রবাদ বলতেন, যেটা ভীষন নারীবিদ্বেষী, "মেয়রা পানির মতো, যেপাত্রে রাখবে তার আকার ধারন করে। " এটার আধুনিক ভার্সন আমরা শুনি, "স্ত্রীরা স্বামী দ্বারা টিউনড হয়ে যায়, এমনকি চিন্তাভাবনা, রাজনৈতিক সমর্থনও নাকি টিউনড হয়!" আমি নিজেকে সবসময় এসব থেকে দূরে রাখার মতো মানুষ বলেই ভেবেছিলাম, তবে এখন সাইপানের স্মৃতি ঘাঁটতে গিয়ে মনে হলো, ওর অনুভূতিটুকুকে আমি পাত্তা দিতে চাইনি। ক্যাসিনো দেখব বলে ঠিক করে এসেছি, ওর যাওয়া না যাওয়ার ইচ্ছেকে অতটা সম্মান না দিয়েই ওকে নিয়ে ঢুকে পড়েছি। অবশ্য জায়গাটা আহামরি কিছু নয় যে যেখানে ঢুকে মোনা ভেবেছিল যে পাপ হয়েছে, কিন্তু তারপরেও হয়ত অনেকক্ষেত্রে মানুষের ইচ্ছের মূল্য দিতে হয়। নিজেকে শেষমেষ একজন পুরুষবাদীই মনে হচ্ছে এখন।

ক্যাসিনোতে ঢুকে আমি আসলেই হতাশ হলাম। মানুষই নেই! ঢুকে বামদিকে কিছুদূর চলে গিয়ে দেখা গেল কয়েকটি রুলেট বোর্ড আর ডাইস বোর্ডে খেলা হচ্ছে। একজন সুসজ্জিত মাস্টার খেলা পরিচালনা করছেন, সম্ভবতঃ মাস্টার নিজেও খেলছেন। মাস্টাররা সবাই পাকা খেলুড়ে, এরাই সম্ভবতঃ খেলে কাস্টমারদের হারায়, আবার জালিয়াতি করেও হারায়। সে যাই হোক, ক্যাসিনোতে কিভাবে জালিয়াতি হয় সেটা নিয়ে যেহেতু গবেষণা করতে আসিনি, এবং আমার মাথার ভেতর ওশানয ইলেভেনের যে ক্যাসিনো ক্লাবের ইমেজ আছে তারসাথে যেহেতু কোন মিল পাইনি, তাই সব উৎসাহ নিমিষেই উবে গেল।

পেছনদিকে একটেবিলে দেখলাম চারজন কোরিয়ান ব্রিজ খেলছে, একটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে খেলাটা দেখতে লাগলাম। রুলেট, ডাইসবোর্ডের নিয়ম না বুঝলেও, ঢাকা কলেজে পড়ার সুবাদে তাস খেলাটা রপ্ত করা আছে, এখনও কোথাও খেলা হতে দেখলে নিজের অজান্তেই দাঁড়িয়ে যাই, ভ্যাবলাকান্তের মতো খেলাটা ফলো করি। আমার এ আচরণ দেখে মোনাও খানিকটা বিরক্ত, সে অন্যপাশে গিয়ে পায়চারী করছে। এমন সময় দেখতে পেলাম এক ভদ্রলোক, খুব ভালোভাবে স্যুটেড-বুটেড, আমার আশেপাশে এসে গুরঘুর করছে, কয়েকবার আড়চোখে মনে হলো আমাকে চেকও করছে। লোকটাকে দেখে বাঙালী বললে বাঙালীও বলা যায়, ল্যাটিন টাইপের চেহারা বললে সেটাও বলা যায়।

আসলে ক্যাসিনোতে ঢুকে তখন আমার মাথায় একটা বায়াস ইনপুট হয়ে আছে যে এটা তো পশ্চিমা দুনিয়া, তাই লোকটাকে দেখে ল্যাটিনোই ভেবেছিলাম। বোঝা গেল সে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মোনার মাথায় ওড়না, আমারও বাঙালী চেহারা, আরব সন্ত্রাসী হিসেবে ভেবে বসতেই পারে। হয়ত সন্দেহ করছে, সর্বনাশ! একবার ভাবলাম বলি "কিহে বাপু, কি চাই?", আবার ভাবলাম, কি বলতে কি বলে ফেলি, পরে ফেঁসে যাই। যা দিনকাল পড়েছে, বাঘ-মেষের কাহিনী ঘটছে এখানে সেখানে, ঠাকুরদার কল্পিত পাপের কথা মনে করিয়ে ঠাকুরপোকে ঠ্যাঙানো হচ্ছে।

শুধুশুধু ঝামেলা বাড়িয়ে ফায়দা নেই। সে যাই হোক, লোকটার এরকম ঘুরঘুর করার ব্যাপারটা আমার পছন্দ হলোনা, তার ওপর যখন বুঝলাম সে বেশ কয়েকবার টেরিয়ে দেখেছে আমাকে। বিরক্ত হয়েই তাসের টেবিলের কাছ থেকে হাঁটতে হাঁটতে দূরের স্লট মেশিনগুলোর দিকে চলে গেলাম। স্লট মেশিনে পয়সা ঢেলে বোতাম টিপতে হয়, মনিটরে কিছু চিহ্ন আসে, সম্ভবতঃ চিহ্নগুলোর কোন কম্বিনেশন মিলে গেলে বেশ বড় মানের পয়সা ঝনঝন শব্দ করে বেরিয়ে আসে। ধরা যাক একটা মেশিনে দুদিন যাবৎ কেউ কম্বিনেশন মেলাতে পারেনি, আর আরেকটায় একসপ্তাহ যাবৎ।

তখন ঐ একসপ্তাহ যাবৎ মেলাতে না পারাটাতে কম্বিনেশন মেলাতে পারলে বেশী পয়সা পাওয়া যাবে, মানে এই একসপ্তাহ যাবৎ যত পয়সা জমেছে মেশিনের ভেতর, তার একটা শতাংশ -- এরকম কিছু সম্ভবতঃ। এজন্য প্রত্যেকটা মেশিনের পুরস্কারের এ্যামাউন্টটা ভিন্ন, সেটা আবার মেশিনের গায়ে লেখা থাকে। আবার মেশিনভেদে খেলার টাকার পরিমাণও ভিন্ন, যেমন এক ডলারে খেলার মেশিনও আছে, পাঁচ ডলারে খেলার মেশিনও আছে। টাকার অংকগুলো দেখলেই মনে হয়, দেব না কি এক চেষ্টা, আবার সংকোচ বোধ করি। শেষমেষ জুয়া খেলেই ফেলব! খেলতে পারছিনা বলে আফসোসে বুকটা ফেটে যাচ্ছে, এমন সময় দেখি গুটি গুটি পায়ে একলোক এগিয়ে আসছে আমাদেরই দিকে।

ছোটখাট মানুষ, কোঁকড়ানো চুল, গোলগাল নিরীহ চেহারা -- এচেহারা দেখে এক মুহূর্তেই আমি বলে দিতে পারি, এ তো বাঙালী। লোকটিও কাছে এসে নিঃসংকোচে জিজ্ঞেস করল, "ভাই কি বাংলাদেশী?" সম্ভবতঃ আমার আর মোনার বাংলায় কথোপকথন শুনেছে। নাম-পরিচয় হলো, লোকটার নাম রুহুল আমিন। বছর চারেক আগে এসেছে, সেই সিকিউরিটি গার্ড হিসেবেই, এখনও একই কাজ করে। টুকটাক কথা হচ্ছিল, মূলতঃ জাপান নিয়েই, তখনই দেখি একটু আগের ঘুরঘুর করা সেই ল্যাটিনো লোকটিও হাসিমুখে এগিয়ে আসছে।

এতক্ষণে কাহিনী বুঝলাম, খুবই লাজুক একজন মানুষ। মুখফুটে জিজ্ঞেসও করতে পারছিলনা আমি বাংলাদেশী কিনা, তাই অমন ঘুরঘুর করছিল। এই ভদ্রলোকের সাথেও পরিচয় হলো, উনার নামটা কোনভাবেই মনে করতে পারছিনা। বিমল, নাকি বিপিন, নাকি অন্যকিছু। বিমল নামটাই দেয়া যাক।

বিমল এসেছেন বছর পনের আগে, একই কাজ নিয়ে। সিকিউরিটি গার্ড। এখন প্রমোশন পেয়ে সিকিউরিটি অফিসার। বিমল বললেন তার নিজের কথা, বললেন যে অন্যরা এসে কয়েকবছরের মাথায়ই ট্যাক্সি চালায়, তারপর ব্যবসা-ট্যাবসা ধরে, বিদেশী মেয়েদের বিয়ে করে নিজের একটা গতি করে ফেলে। কিন্তু বিমল নিজে অত চালু না, যেখানে এসেছেন সেখানেই পড়ে আছেন, বিয়ে-টিয়েও করেননি।

কবে যে দেশে যাবেন তাও জানেননা। আমিন বললেন অর্থনৈতিক দূর্দশার কথা। সাইপানে এখন মিনিমাম ওয়েজ হলো সাড়ে তিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় বদলালে আড়াইশো টাকা হয় ঠিকই, তবে সাইপানে জিনিসপাতির দাম খুব বেশী। জানালেন যে মাসে দুইশো ঘন্টা কাজ করে আয় হয় সাতশ ডলার। তিনশ'র বেশী যায় ছোটখাট একটা বাসা ভাড়াতেই, বাকীটাতে খেয়ে পরে, দেশে টাকা পাঠিয়ে আর কি জমাবে? কবে দেশে যাবে, কিছু টাকা হাতে না নিয়ে দেশে ফিরলে লাভ কি? এখানে তার যে অভিজ্ঞতা কাজের, সেটা তো দেশে গেলে মূল্য পাবেনা।

একজন সিকিউরিটি গার্ডের আর মূল্য কি আমাদের দেশে? দুজনের হতাশার গল্প শুনতেশুনতে মনে হলো সমস্যাগুলো যেন আমার নিজের গায়েই বিঁধছে। প্রবাসে বাঙালীরা যতটা না শারীরিক কষ্ট করে, তারচেয়ে মানসিক কষ্ট করে আরো বেশী। এই কষ্টগুলো কখনও দেখা যায়না, এই বিমল বা আমিন যখন দেশে ফিরে যাবে, তখন হয়ত আশেপাশের সবাই তাদের আপাতঃ মডার্ণ চলাফেরা দেখে ভাববে, "আহা, কত সুখে আছে?" কতকষ্টের ফসল এই সামান্য সুখ, সেটা বোঝা খুব কঠিন, ওদের জুতোয় পা না রেখে সেটা অনুধাবন করাও কঠিন। এর মাঝে আরেকটি ব্যাপার খেয়াল করলাম। আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে আমিন আর বিমল কথা বলছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাদের দুজনের মাঝে যে একাত্নতাটা আশা করেছিলাম সেটা দেখতে পেলামনা।

যেটা দেখেছিলাম সুকেশদা, বঙ্গদা, তপনদাদের মাঝে। এখন মনে করে দেখলাম, বিমল ছিলেন অফিসার, আর আমিন হলেন সাধারণ গার্ড -- এজন্যই কি? প্রবাসে এসেও এই শ্রেনীভেদটা আমাদের ঠিকই থেকে যাচ্ছে, সেটা শুধু টিনিয়ানের এই কেইসটা না, আরো অনেক জায়গাতেই আমি দেখেছি। আমি নিজে যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম, সেখানে বাঙালীরা সবাই মিলে মাসে একটা খাওয়াদাওয়া করতাম, মান্থলি পার্টি নামে। সেখানে নিয়ম ছিল সকালে এসে সবাই যে যেভাবে পারে রান্নাবান্নায় সাহায্য করবে, খাওয়া দাওয়া হবে, আবার সবাই মিলে সব পরিষ্কার করে বাড়ী ফিরবে। কিন্তু যথারীতিই দেখা যেত কিছু লোক তাদের পদমর্যাদার কারণে একসাথে কাজ করতে পারছেনা, রান্নাবান্না/কাটাকুটির কাজকে তাদের নিতান্তই নিন্মমানের কাজ মনে করছেন।

একজন তো একদিন এক ইউনিভার্সিটির এ্যাসোসিয়েইট প্রফেসরকে বলেই ফেলল, "একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারকে আপনি কিভাবে পেঁয়াজ কাটতে বলেন?" অথচ এটা সে খেয়াল করছেনা যে তার চেয়েও অনেক উঁচু পদমর্যাদার একজন, হয়ত একজন ভিজিটিং প্রফেসর, তিনি ঠিকই পেঁয়াজ কেটে যাচ্ছেন। এই সংকীর্ণতাটা আমাদের মাঝে আছে, আর এটা দূর করাও জরুরী। যেহেতু সাগর দেখা যাচ্ছেনা, ঘুরেফিরে দ্বীপটাও দেখা সম্ভব না, তাই আমরা ঠিক করলাম আর বসে না থেকে একটার লঞ্চেই বাড়ী ফিরি। ফেরার জন্য টিকিট কাটছি, তখন দেখা গেল হন্তদন্ত হয়ে আরেকজন বাঙালী ছুটে আসছে। মাঝারী উচ্চতার, মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, নাম মাহবুব।

মাহবুব খবর পেয়েছেন আমিনের কাছে, তাই দৌড়ে এসেছেন দেখা করতে। মাহবুব তেমন কিছুই বললেনা, শুধু আমাদের দেখলেন আর মিটিমিটি হাসলেন। মনে হলো, তার অনেকদিনের শখ মিটল। আমার কলেজে পড়া মাদার ইন ম্যানভিলের জেরীর কথা মনে পড়ে গেল, যে কিনা একটা চাহনি দিয়ে লেখককে আনফরগেটাবল একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিয়েছিল। মাহবুবের নির্বাক হাসিমুখ দেখে মনে হলো তিনি তার পরিবারের লোকজনকেই যেন দেখছেন।

আমার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠে; একটু আগেই চৌদ্দ বছর ধরে এখানে পড়ে থাকা বিমলকে দেখেছি। না জানি মাহবুব কতদিন তার প্রিয়জনকে দেখেননা। জিজ্ঞেস করার আর সাহস পেলামনা। টুকটাক সৌজন্যতামূলক কথা বলে বিদায় নিতে যাব, তখন ঠিক যেমনটা আমরা বাসায় বেড়াতে আসলে মেহমানকে বলি সেভাবে মাহবুব বলে উঠলেন, "আরো কিছুক্ষণ থাইকা যাইতেন। " আমার প্রচন্ড কষ্ট হতে লাগল, মনে মনে শুধু এই বললাম, "পরম করুণাময়, খুব শীগগিরই এই লোকটার সাথে তার প্রিয়জনদের দেখা করিয়ে দাও।

" এর বেশী আর কিছুই আমাদের কারোরই করার নেই। সৈকত, ঐতিহাসিক স্থান এসব না দেখেই টিনিয়ান ছাড়লাম, তবে একধরনের পূর্ণতা অনুভব করলাম; খুব কাছ থেকে অনেক কিছু দেখতে পেলাম যেন। খুব কম সময়ের মধ্যেই অনেক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে আমাদের টিনিয়ান সফরটা শেষ হয়ে গেল।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.