আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশুর বুড়ো আঙ্গুল চোষার অভ্যাস দূর করা যেতে পারে যেভাবে

নতুন পৃথিবীতে সবাইকে স্বাগমতম!

শিশু তার হাতের বুড়ো আঙ্গুল মুখে দিয়ে চুষছে বা কামড়াচ্ছে, এটি আমাদের অত্যন্ত পরিচিত একটি দৃশ্য। বেশিরভাগ শিশুর মধ্যেই এই প্রবণতাটি লক্ষ্য করা যায়। এই সময়টিতে আমরা সাধারণত, তাকে বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি যে, এই আঙ্গুল চুষতে হয় না অথবা মুখে হাত দিতে হয় না ইত্যাদি। হয়তো এর চেয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে তার মুখ থেকে তার অনিচ্ছা সত্তেও আঙ্গুলটি টেনে বের করে আনি, হয়তো পরপর চার-পাঁচ বারও। কিন্তু, বিষয়টি যেন অটো-প্রোগামড কোন কিছু, নইলে তবুও শিশু কেন আবারো সেই বুড়ো আঙ্গুলটি মুখে দেবে! আঙ্গুল চোষা তেমন একটি বাজে অভ্যাস যেটি শিশুর জন্য সমস্যা হতে পারে শারীরিক ও মানসিক, দু’ভাবেই।

শারীরিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে দাঁত বাকা হয়ে যাওয়া, দাঁতে ইনফেকশন হওয়া, আঙ্গুলের চামড়া ক্ষয় হয়ে যাওয়া, নখের নিচে ইনফেকশন হওয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে আত্মবিশ্বাসের অভাব, নার্ভাসনেস, অন্য শিশুদের কাছ থেকে টিজিং ইত্যাদি। যদিও মূলত নার্ভাসনেস, উদ্বিগ্নতা এবং একঘেয়েমি-জনিত বিরক্তির কারণে শিশুর মধ্যে এই অভ্যাসটির জন্ম হয়, তবুও এই অভ্যাসটি দূর করা সম্ভব এবং উচিৎও। এবং বিশেষ ভাবে বলা হচ্ছে যে, স্কুলে যাওয়ার আগেই শিশুদের এই অভ্যাসটি দূর করে দেয়া উচিৎ। এখন দেখে নেয়া যাক কীকরে শিশুর নাছোড়বান্দা এই অভ্যাসটিকে দূর করা যেতে পারে।

সবার প্রথমেই যেটি করা উচিৎ সেটি হলো, বিষয়টি করতে মানা করে শিশুকে ঘনঘন বিরক্ত করা অথবা ক্রমাগত দোষারোপ করা ঠিক হবে না। এটি তার মধ্যে এক ধরণের অপরাধবোধ এবং নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, ফলে তার বুড়ো আঙ্গুল কমার অভ্যাসটি কমার বদলে বরং আরো বেড়ে যেতে পারে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, তারা শিশু এবং তারা নিজে নিজে ইচ্ছা করে আঙ্গুল চুষছে না, কিংবা তারা যে নিজের অজান্তেই আঙ্গুল চুষছে, এটাও তারা বুঝতে পারছে না। তারা বিষয়টি বুঝতে পারলে তো আর এতো সমস্যা থাকতো না! তাই তাকে যদি নিষেধ করা হয়ও, তবে সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে তাকে নিষেধ করার বিষয়ে নিষেধকারীর অ্যাপ্রোচের দিকে। এরপর দেখতে হবে যে, শিশু ঠিক কখন কখন আঙ্গুল চোষে; যখন সে নার্ভাস, ভীত, রাগন্বিত, নাকি বোরড।

তাকে এই নার্ভাসনেস, ভয়, রাগ, বা বোরিং শব্দগুলো সাথে প্রাকটিকালি পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, যাতে সে বুঝতে পারে এই বিষয়গুলির মধ্যে প্রবেশ করলেই সে আঙ্গুল চুষতে শুরু করে। তাতে তার জন্য সহজ হয়ে আঙ্গুল চোষা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াটা; এমনকি একটা সময় শুরু হওয়ার আগেই সে হয়তো তা থামিয়ে দিতে পারবে। শিশুকে আঙ্গুল চোষার বিকল্প কিছু দেওয়া ঠিক হবে না। অনেক সময় শিশুকে বালিশ, কম্বল, কিংবা ছোট ছোট খেলনা দেয়া হয়, যাতে সে সেগুলি নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং আঙ্গুল না চোষে। কিন্তু তাতে হতে পারে হিতে বিপরীত।

কারণ তখন সে আঙ্গুলের বদলে ওইগুলিই চোষা শুরু করে দিতে পারে। এটা নিশ্চয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে না যে, একটি বাজে অভ্যাস দূর করার জন্য আরেকটি খারাপ বাজে অভ্যাস ধরিয়ে দেওয়া। শিশুর সাথে আলোচনায় বসা এবং তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে। শিশুকে জানাতে হবে যে, কী কারণে আঙ্গুল চোষা বিষয়টি থামানো তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাকে বোঝাতে হবে যে, এটা তার দাঁত ও আঙ্গুলের ক্ষতি করতে পারে, এবং তার বন্ধুরা তাকে এই বিষয়ে খেপাতেও পারে।

তাকে ভালোভাবে ধীরে সুস্থে ধৈর্যের সাথে সুন্দর করে বোঝাতে যাতে সে এই বিষয়টি বন্ধ করার বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারে। কেননা, শিশুর নিজেকেই এই অভ্যাসটি বন্ধ করার কাজটি করতে হবে, অন্যরা কেবল তাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করে যেতে পারবে। শিশুর আনন্দ কিংবা স্ট্রেসের সময়ে এই বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। যদি এটা হলিডে সিজন হয়, বা এমন কোন সময় যাচ্ছে যে সে খুব আনন্দিত, সে সময় তাকে এই বিষয়টি বলে তার আনন্দে ভাটা আনাটা ঠিক হবে না; এতে তার মনে বিপরীত প্রভাব পড়তে পারে। আবার যদি বাবা-মার ডিভোর্স, কিংবা তাদের কারো মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে উচিৎ হবে তার মনকে যতটা সম্ভব রিলাক্সে রাখা, মোটেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা নয়।

একটি ডেডলাইন ঠিক করা দরকার যে আগামী এক মাস, তিন মাস, বা ছয় মাসের মধ্যে অভ্যাসটি বর্জন করতে হবে। শিশুকেও বলতে দেয় উচিত ডেডলাইনটি কত দিনের হতে পারে। শিশুর দেয়া ডেডলাইনকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে, কিন্তু যদি সে বলে, ডেডলাইন তিন বছর, তবে, সেটিকে সিলেক্ট না করাই উত্তম, সেটি বলাই বাহুল্য। পুরস্কার ঘোষণা করা যেতে পারে। তাকে বলা যেতে পারে যে, যদি সে এক ঘন্টা বা পুরো সকাল বা এক দিন আঙ্গুল না চোষে তবে তার জন্য রয়েছে চকলেট, আইসক্রিম, অথবা খেলনা।

হতে পারে, তার মানসিক অবস্থার ওপরও পুরস্কার ঘোষণা করা যেতে পারে; যেমন- যদি সে তার আঙ্গুল চোষা বিষয়টি ফিল করে বলে, আমি আঙ্গুল চুষতে ইচ্ছা করেছে, কিন্তু আমি চুষিনি, তাহলে তার জন্য রয়েছে পুরস্কার। শিশুকাল হোক আর বড়কালই হোক, অভ্যাস এমনই একটি ফ্যাক্টর যেটিকে বর্জন করা কঠিন। হয়তো শিশুকালে অনেকেরই এমন কোন অভ্যাস ছিলো বা তাদের অনেকেই হয়তো তা থেকে বেড়িয়ে আসতে পেরেছিলো। বিষয়টি শিশুকে জানানো যেতে পারে, কিন্তু এই বিষয়ে শর্ত আরোপ করা যাবে না যে, তাই তাকেও পারতে হবে। বরং তাকে বলতে হবে উৎসাহমূলক অনেক অনেক ভালো কথা, দিতে হবে আন্তরিক আলিঙ্গন ও অফুরন্ত ভালোবাসা।

খুব কম বিষয়ই রয়েছে যা নিরলস চেষ্টা, নিস্বার্থ ভালোবাসা এবং নিখাঁদ আন্তরিকতার কাছে পরাজয় স্বীকার করে না। তাই আর দেরি না করে শিশুর এই বাজে অভ্যাসটি বর্জন করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার সময় এখনই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.