আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগ চরিত মানস...

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

ওয়ামি'র ব্লগ বাতিল হইলো, আমি উল্লসিত হইলাম অসংখ্য ব্লগারের সাথে...সাধুবাদ-ধন্যবাদ জানাইলাম...ইত্যবসরে ব্রাত্য রাইসু একখান পোস্ট দিলেন ওয়ামি'র ব্লগ বাতিল হওয়া নিয়া প্রশ্ন উত্থাপন কইরা। তার প্রশ্ন সরল, ওয়ামি'র ব্লগ বাতিল যদি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বা মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করনের দায়ে হইয়া থাকে তাইলে সেইটা নিয়ম কইরা সকলের জন্যই করা প্রয়োজন...নিয়ম যদি সকলের লেইগা প্রযোজ্য কিম্বা বাস্তবায়িত না হয় তাইলে সেই নিয়ম আর নিয়ম থাকে না...সেইটা হয় অনিয়ম। ব্রাত্য রাইসু'র মূল কথা ছিলো একব্লগে দুই আইন কেমনে হয় এই প্রসঙ্গে...মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষচারন আর বিরোধীতাকারী, এরা কি সমান জায়েজকৃত বিচার পান? এই প্রশ্নের উত্তরও সরল...না, পান না! কিন্তু তার পরেও আসলে প্রশ্ন থাকে...কথা কওনের অনেক গুলি জায়গা ফাকা হয়। ব্লগের ধোঁয়াটে নীতিমালা মাইনা চললে আসলে কইয়া দেওন যায়...এই ভূমিতে সকল মতাবলম্বীর লেইগাই সমান গুরুত্ব আরোপ করা হইছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগে ঝামেলা আছে। আইনের প্রয়োগের চাইতে পরিস্থিতি সামলানোটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়...আর এই রম প্রক্রিয়ার লেইগাই ব্লগে একটা সংস্কৃতি গইড়া উঠছে...যেই সংস্কৃতি কেবল প্রতিরোধের সংস্কৃতি...যেই সংস্কৃতি অনেকটাই উগ্র জাতীয়তাবাদী...কখনো তা হয় ভূখন্ড-ভাষা ভিত্তিক, কখনো তা হয় ধর্মকেন্দ্রীক।

এই সব জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি-আচরন নিয়া বিরোধ সকল সমাজেই গইড়া উঠে বা উঠতেছে...ট্রান্স-কালচারাল দুনিয়ায় এই তত্ত্ব খুব অপ্রয়োজনীয় তত্ত্বও না। ব্রাত্য রাইসু যেইরম জাতীয়তাবাদের এইসব ঘেরাটোপের ভিতর থাকতে চান না...প্রশ্নের কলেবর উন্মুক্ত করতে চান, আমি নিজেও জাতীয়তাবাদের এইসব প্রকাশ থেইকা দূরে থাকতে চাই। মুক্তির একটা যুদ্ধ আমার কাছে কেবল একটা সময়ের নাম না...চেতনার নাম! কিন্তু এই চেতনা কি যে কোন পবিত্র গ্রন্থের মতো গাইড বই সূলভ আচরনে পর্যবসিত হয়? আমার মনে হয় না...মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হইলো তার থেইকা পাওয়া উপলব্ধি, শিক্ষা। মুক্তিযোদ্ধাগো আবেগ ক্ষোভরে আমি শ্রদ্ধা করি, যেমন শ্রদ্ধা করি তাগো হতাশারেও...আর তাই কোন একজন যদি তাগো ক্ষোভরে কুকুরসূলভ আচরনের লগে তুলনা করবার চায়, তারে আমি প্রতিরোধ করতেও চাই। এইখানে ভূখন্ডভিত্তিক জাতীয়তাবোধ যতোনা কাজ করে তার চাইতে অনেক বেশী কাজ করে এই শ্রদ্ধাবোধের চেতনা...একটা যুদ্ধের চেতনারে আমি উপলব্ধি করি তার প্রত্যাশা দিয়া, কখনোই তার অর্জন দিয়া নয়! সকল মুক্তিযোদ্ধারে নিয়া কথা কওয়া আর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভ্রান্ত একজন যোদ্ধারে নিয়া কথা কওয়া কখনোই এক হইতে পারে না।

মুক্তিযোদ্ধা শব্দের আর্কাইক ভ্যাল্যু তৈরী হয়...আর তাই সার্বিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা শব্দ নিয়া কোন মতামত দেওনটা স্পর্ধা হয় অনেক সময়...আর সেই মন্তব্য যদি একজন আল বদর পুত্র করে যার রাজনৈতিক সহমর্মীতা আছে ৭১'এর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনার প্রতি, তখন আসলেই প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি আমি। এই প্রতিরোধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে না বরং অনেকটাই ব্যক্তিমানসের বিরুদ্ধে...যার মতাদর্শ যতো না মানবসভ্যতার উন্নয়নের পক্ষে তার চাইতে অনেক বেশী মানবিকতার বিরুদ্ধে... এই অবস্থানের প্রয়োজনে আমি ব্রাত্য রাইসুর অবস্থান আমি অনেক বেশি প্রয়োজনীয় মনে করি...যেরম মনে করি মানস চৌধুরীর চিন্তাভঙ্গী...প্রশ্ন কইরা নিজেরে একস্তর থেইকা আরেক স্তরে নিয়া যাইতে পারে এই চিন্তার প‌্যাটার্ন। প্রশ্নহীনতা মানুষরে বরং মুক্তির চেতনা থেইকা দূরে সরায়... এই ব্লগে অনেকরেই দেখি মতের অমিল হইলেই বিরুদ্ধজনরে রাজাকার বা ড়াজাকার অভীধায় অভিহিত করতে কসুর করে না। এইটা হইতে পারে কৌশল...কিন্তু কৌশল হইলেও তা যে কোন ধরনের চিন্তার প‌্যাটার্নের লেইগা হুমকীস্বরূপ দাঁড়ায়...আর এইরম হুমকী কখনোই ভালো কোন পথের খোঁজ দেখায় না...আজকাল সুশীল গালি দেওনের আরেকটা ফ্যাশন শুরু হইছে, এই গালি যারা দেয় তারা নিশ্চিত সুশীলতা কারে কয় সেইটা জানেন না, এইটা আমি হলফ কইরা কইতে পারি। ব্রাত্য রাইসু-মানস চৌধুরীগো আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি...তাগো জীবনযাপন তাগো তর্ক করনের পদ্ধতির লগে আমি পরিচিত বিধায় জানি এই গালি প্রদানকারীগো অনেকের চাইতেই সমাজের সংস্কার আর নিয়মের তোয়াক্কা না কইরা চলা মানুষ এরা...তাগো প্রশ্ন আমাগোও পথ দেখাইতে পারে চিন্তার অবগুন্ঠনমুক্ত করনের প্রক্রিয়ায়... জামায়াতে ইসলামী বা অন্যান্য মৌলবাদী ধর্মভিত্তিক স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিরোধীতা করতে গিয়া যখন আমরা মানস চৌঃ কিম্বা ব্রাত্য রাইসুরে নিয়া রসিকতা করি...তাতে আমরা আরো জটিলতায় আক্রান্ত হই।

প্রশ্নহীনতারে নিজেগো আদর্শ হিসাবে নেওনের ধান্দা করি...এই অবস্থা আর ধর্মীয় মৌলবাদের পার্থক্য কি কেউ নিরূপন করবার পারবেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.