আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষ্যাপাটে জড়ভরত

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)

আঙ্গুলের মাথা দিয়ে কী-বোর্ডের বোতামগুলো আলতো করে স্পর্শ করে রেখে ভাবছিলাম, কীভাবে লেখাটা শুরু করা যায়। মধ্যে বেশ লম্বা একটা বিরতি ( ঠিক বিরতি বলা যায় না এটাকে )-র পর আজকে আবার নিয়মিত (আমার জন্য যা দুই একদিন পরপর খটখট করে কয়েকটা শব্দ লিখে পরিতৃপ্তি পাওয়ার মত একটা ব্যাপার ) লেখার ব্যাপারে আজ বেশ বদ্ধ পরিকর হলাম। আচ্ছা, তাহলে প্রথমের কাজ প্রথমে। দেরি হলো এর মাঝে বেশ ক'দিন, বাসা থেকে হল, হল থেকে বাসা করছিলাম মাঝে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটা জুড়ে। হলে আমার অতি প্রিয় এক বন্ধু আমার প্লেসে থাকছে।

রুমে বাকিগুলা সব জুনিয়র। হলের প্রোভস্ট একদিন আমাকে ডেকে বললেন যে তোমার প্লেসে নাকি বহিরাগত থাকছে বলে শুনলাম ( ব্যাটা স্টুপিড দারোয়ান!!)। এসব তো ঠিক না। ভাগ্যিস ঐ দিনই আমি তল্পিতল্পা নিয়ে সশরীরে আবার হলে ফিরেছি। বুক চেতিয়ে বললাম, না স্যার, হতেই পারে না, আমি নিজেই তো আমার প্লেসে থাকি! ইত্যাদি।

এই মাসে কী হলো, বাসায় নতুন কাজের লোক রাখা হলো যে কিনা সঙ্গে করে মুরগি-বসন্তের বীজাণু নিয়ে এসেছে। বাসায় আম্মা ছাড়া আর কারোরই আগে এই বিচ্ছিরি রোগটা হয়নি। আমরা সবাই ক'দিন ভয়ে ভয়ে থাকলাম। যেদিন মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছি যে কারো মধ্যে ছড়ায়নি, সেদিনই বাবা জ্বরে পড়লেন, আর তার পরদিন আমার বোন। বাসার মধ্যে দুই দুইটা রোগি, আমি হয়ে পড়লাম একঘরে! কী আজব দুনিয়া! শেষমেষ আম্মা ঠেলে সেই হলেই পাঠিয়ে দিলেন।

এবার হলে আমি নিজেই পরবাসী টাইপ। সারা সপ্তাহে তিনটা মাত্র ক্লাস। ক্যাম্পাসে যাই, টুপ করে পিছন দিক দিয়ে ক্লাসে ঢুকি, স্যার শেষ করে বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমিও ওইখান থেকে উধাও। রুমে এসে একদম কিছুই করার নেই। সারাদিন নেট-এ বসে বসে কাহাতক আর ভালো লাগে।

মনে হচ্ছে সারা দুনিয়া বন্‌বন্‌ করে ঘুরছে, দৌড়াচ্ছে, হাঁপাচ্ছে, দম ফেলার কারো তিলমাত্র সময় নেই। খালি আমার হাতেই অফুরন্ত ক্লান্তিকর সময়। ক'দিন খুব ডিভিডি কিনে একটানা মুভি দেখলাম, কয়েকটা ইংরেজি সিরিয়ালের সিজন কিনে এনেও দেখা শেষ। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছে ততই বিরক্তি চরমে উঠছে। হলে আমার রুমটা অনেক কোলাহলময়।

জুনিয়র গুলার সাথে খুবই দহরম মহরম। এতে করে সমস্যা যেটা হয়েছে যে চুপচাপ শান্ত পরিবেশ কখনোই পাইনা। সবসময় হাউকাউ লেগেই আছে। এর মধ্যে কে যেন আবিষ্কার করলো জেফ ডানহাম নামক এক ভেন্ট্রিলোকুইস্টের কতগুলো ক্লিপ। পেটে খিল ধরানো দম আটকানো হাসির এক একটা ধামাকা যেন! নিজেরা সবাই একবার একবার করে দেখার পরে আসল বিপদ শুরু।

এক একজন রুমে ঘুরতে আসে আর সবাইকে ধরে ধরে ঐ কয়েকটা ক্লিপ বারবার দেখানো হয়। লেবু কচলে তিতা হয়ে গেল কিন্তু জেফ ডানহাম বাবাজি আর থামে না! শেষ পর্যন্ত যখন জিনিসটা দেখতে দেখতে সবারই চোখ, কান ঝালাপালা তখন গিয়ে এই মধুর অত্যাচার বন্ধ হলো। কী বলতে বলতে কী কাসুন্দি ঘাটছি! লেখা না লেখার কথা বলছিলাম। আমার এক বন্ধু অনেক করে ধরেছিল একটা আনন্দের কবিতা লিখে দিতে, এখানে তুলতে। বেচারার অনুনয় বিনয়ের চাপে মোটামুটি মগজ চিপড়ে তিন কি চার লাইন বের হলো, আদ্যোপান্ত ছাইপাশ।

ওকে আর আশায় আশায় না রেখে রণে ভঙ্গ দিলাম। বললাম যে পারব না, আর যুক্তি দিতে গিয়ে বললাম যে হয়তো আমার জীবনে দুঃখ এত বেশি, কষ্টগুলো এত তীব্র যে মোহময়ী আনন্দের সেবা বেশিদিন উপভোগ করতে পারি না। বায়বীয় সুখগুলো হারিয়ে যায় বাস্তবতার ঝড়ো ঝাপটায়। এমনভাবেই বলছিলাম, যে নিজের কানে শুনতেই বুঝে যাচ্ছিলাম যে এটা অত্যন্ত বাজে আর খোঁড়া একটা অজুহাত। পলায়নপর মানসিকতার পরিচয়, হয়তোবা।

এমনকি এই লেখালেখি বা পড়াশোনার মূল্যই বা কতটুকু?? পুরো মিথস্ক্রিয়াটা তো ঘটছে মাথার কতগুলো সিন্যাপ্স আর নিউরণের মধ্যে রাসায়নিক ভারসাম্যতার প্রয়াস হিসেবে। এর থেকে যে অনুভুতি তৈরি হচ্ছে তার গুরুত্ব হয়তো আমার কাছে অনেক, কিন্তু তার দ্বারা আমার পাশের মানুষটি তো একটুও প্রভাবিত হচ্ছে না, আর হলেও তার তীব্রতা অনেক ট্রিভিয়াল (এই মুহূর্তে শব্দটার বাংলা মনেই পড়ছে না, ক্ষমাপ্রার্থী)। এই প্রশ্নগুলোই আঙ্গুলগুলোকে আটকে রাখছিল, সেই প্রশ্নটার গলা মুখ চেপে ধরে এই লেখাটার জন্ম হচ্ছে....কোন তাৎপর্য কি আদৌ আছে তার?? নাহ্‌, জড়ভরত আজ সত্যি ক্ষেপে গেছে মনে হচ্ছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।