আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রসিকতা নয়, সন্ত্রাস। প্রসঙ্গঃ র‍্যাগিং।

রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের নামে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা সহ্য করা হবে না। ইদানীং একটি বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি হলো র‍্যাগিং। খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় যে এক শ্রেণীর লোক একে নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে রসিকতা বা মজা কিংবা ফ্রী হওয়ার মাধ্যম বলে মনে করছেন। তারা একে অবৈধ বলে মানতে নারাজ।

কিন্তু আমার মতে র‍্যাগিং সন্ত্রাস বৈ আর কিছুই নয়। আপনারা এটা কি বলেন? র‍্যাগিং ছাড়া কি নতুনদের সাথে ফ্রী হওয়া যায় না? আমি র‍্যাগিং কে কেন সন্ত্রাস বলে অভিহিত করলাম তার প্রমাণ নিচে দিচ্ছি। যা ত্রাস সৃষ্টি করে তাই সন্ত্রাস। র‍্যাগিং এর ফলে একজন নতুন ছাত্র বা ছাত্রী এই মনে করে সবসময়ই আতংকবস্থায় বা উৎকণ্ঠায় থাকে কখন যে কি হয়ে যায়। যেখানে একজন ছাত্র বা ছাত্রী নতুন ভর্তি হয়ে নতুন পরিবেশ, নতুন শিক্ষা কারিকুলামের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালায় এবং নানামুখী চাপে থাকে সেখানে র‍্যাগিং নামের এক নতুন চাপ এসে যুক্ত হয় সেই শিক্ষার্থীর জীবনে।

র‍্যাগিং শুধু প্রচলিত অর্থে একটি সন্ত্রাস নয়, বহুমুখী সন্ত্রাসের একটি নাম হলো র‍্যাগিং। বহুমুখী সন্ত্রাস বললাম কারণঃ র‍্যাগিং এর সময় যদি কোনো শিক্ষার্থী উক্ত কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায় তবে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় যা একটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এমন কি অনেক সময় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুবরণ করে যা একটি স্পষ্ট হত্যাকান্ড। অনেক সময় সিনিয়র ব্যাচের ছাত্র কর্তৃক জুনিয়র ব্যাচের ছাত্রী র‍্যাগিং এর শিকার হয়। এতে অশ্লীল বাক্য ছুঁড়ে দেয়া হয় ঐ ছাত্রীটির উপর যা স্পষ্ট ইভটিজিং।

আর র‍্যাগ দেয়ার সময় সিনিয়র ছাত্রদের কথা না শুনলে অনেক সময় ছাত্রীরা ধর্ষনের শিকার পর্যন্ত হয় কিংবা মারধর করা হয় যা স্পষ্টভাবে নারী নির্যাতন। উপরের এই অপরাধ গুলো ছাড়াও নিত্য নতুন পদ্ধতিতে নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হয় অসহায় ও নিরাপরাধ নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের উপর। যারা বলেন র‍্যাগিং মানে রসিকতা কিংবা নতুনদের সাথে ফ্রী হওয়ার একটি মাধ্যম আসলে তারা একটি বহুমুখী সন্ত্রাসকে বৈধ করে নিতে চাচ্ছেন। র‍্যাগিং না করেও ফ্রী হওয়া যায়। আমাদের এক বড় ভাইকে দেখেছি।

তিনি তো কাউকে র‍্যাগ দেয়া দূরে থাক কারো সাথে কোনো দিন তুই বলেও কথা বলেননি। কিন্তু তাকে দেখলেই সকল ছাত্র এগিয়ে গিয়ে কথা বলতো। পড়ালেখা থেকে শুরু করে পারিবারিক সব সমস্যার কথা ছাত্ররা তার সাথে শেয়ার করতো একেবারে ফ্রী ভাবে। কই তিনি তো কাউকে কোনো দিন র‍্যাগ দেননি। সুতরাং বুঝা যায় র‍্যাগিং কোনো ফ্রী হওয়ার মাধ্যম নয়।

আবার অনেকে মনে করে নিজ দলের রাজনীতিতে ভিড়াতে র‍্যাগিং একটি অন্যতম হাঁতিয়ার। ভুল ভেবেছেন। সে সাময়িক ভয়ে হয়তো আপনার দলে যোগ দিবে কিন্তু তার মনের মধ্যে যে ক্ষোভ চাপা দিয়ে রেখেছে তা হয়তো একদিন উথলে পড়বে আপনারই উপর। আপনি নতুন শিক্ষার্থীর সাথে ভালো ব্যবহার করুন, তার সমস্যার খোঁজ খবর নিন, আপনার সাধ্যমতে তার সমস্যার সমাধান করুন, নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বুঝতে সহায়তা করুন দেখবেন সে আপনাকে ছাড়া আর কিছু বুঝবে না। নিজের বড় ভাই কিংবা বোনের মত শ্রদ্ধা করবে আপনাকে।

শেষে একটা কথা বলি, আপনি একটা নতুন, ভদ্র, ভালো শিক্ষার্থীকে র‍্যাগ দিলেন মানে আপনি আগামীর একটা বেয়াদপ, সন্ত্রাসী তৈরী করে দিলেন। কারণ আজকে সে ভালো কিন্তু র‍্যাগিং এর ফলে সে একটি খারাপ বিকৃত রুচি আয়ত্ব করলো। আর সে রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটবে আপনারই কোনো আত্নীয় বা আত্নীয়ার উপর। সুতরাং র‍্যাগিং বন্ধ হোক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।