আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাপুরুষদের কথা অমৃত সমান: ঋণপ্রাপ্তিকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত - ড. মুহাম্মদ ইউনূস

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে আপ্লুত হন নি, এমন মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে নেই। এমন সৌকর্য, এমন অপরূপ রূপ, চাঁদনী রাতের মোহময় জগতে তাজমহল যখন সামনে দাঁড়ায়, নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকার কথা ভেবে সৌন্দর্যকে আপন করে নেন নি, এমন কোনো মানুষের কথা কি আমরা জানি? দারিদ্র্য, ক্ষুধিত পেট কিংবা সামাজিক বৈষম্য নিয়ে যে মানুষটি কাজ করেন, তিনিও তাজমহলের সামনে এসে সৌন্দর্য আর প্রেমের বাইরে কিছু ভাবতে চান না। অথচ এই একটি তাজমহল বানাতে কত লাখ লাখ মানুষকে পেট অভুক্ত রেখে খাজনার অর্থ যোগান দিতে হয়েছে, ইতিহাসবিদরা কখনোই সেই তথ্যের সন্ধান পাবেন না। সেই যুগের তাজমহলের সাথে আজকের যুগের ক্ষুদ্রঋণ বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর হাইরাইজ ভবন সৌন্দর্য কিংবা সৌকর্যের দিক থেকে তুলনীয় নয় সত্যি; কিন্তু কত মানুষের শারীরিক শ্রমের আর্থিক রূপ অবশেষে এরকম ভবন দাঁড় করায়- সে হিসেব আধুনিক সিএ পাশ করা অ্যাকাউনটেন্ট বা অডিট কমিটি করতে পারবে না। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কত মানুষের দিশেহারার প্রতীক এই ভবনগুলো- তা আমরা কেউই উপলব্ধি করতে সক্ষম নই।

অথচ আমরা তাদের নিয়ে মশকরা করে চলি প্রতিনিয়ত। শুকনো হাড্ডিসার গাভীগুলোর মাঝে মোটাতাজাকরণ বড়ি খাইয়ে নির্দিষ্ট একটি গাভীকেই বারবার টেনে আনি ক্যামেরার সামনে। খালিমুখে জাবর কাটাগুলোকে রেখে দিই ক্যামেরা চলে গেলে হালচাষের জন্য। আমাদের অনেক ঐতিহ্য! আর বোধহয় সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক ঐতিহ্য আমাদের দারিদ্র্য। এটি পরিমাণে এতো বেশি যে, চাইলেই আমরা এখন শত শত দারিদ্র্যের জাদুঘর বানাতে পারি।

অবশ্য এর জন্য সময় লাগবে কিছুটা- আপাতঃ লক্ষ্য ২০১৫ সাল। এর মধ্যে একটি হাইরাইজ জাদুঘর বানাতে যে টাকা লাগবে, সেই টাকা যোগাড় করতে হবে ক্ষুদ্রঋণের সুদ থেকেই। সারা পৃথিবীর পর্যটকরা এসে দেখবে সেই জাদুঘর, দারিদ্র্যতা প্রদর্শনীর নিখুঁত কর্মযজ্ঞের কারণে আরো বিখ্যাত হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। হয়তো এই দারিদ্র্য জাদুঘর উদ্বোধনীর দিন আরেকটি হতদরিদ্র জাদুঘর তৈরির প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসবে। অসম্ভব ব্যতিক্রম এই আইডিয়ার জন্য আরেকবার পৃথিবীবিখ্যাত পুরষ্কারটি জমা হবে আমাদের কোনো ব্যষ্টিক কোষাগারে।

তো আমরা জেনেছি, দারিদ্র্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে টাকা লাগবে। টাকা আসবে কোত্থেকে? ঋণের সুদ থেকে। সুতরাং প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই ঋণ নিতে হবে। রাষ্ট্র কিংবা সমাজ কিংবা ব্যক্তিমানসিকতা যেনো আগলে না দাঁড়ায়, সে জন্য আমরা এখন নিত্যনতুন উপায় খুঁজে বের করছি। বলছি ‘ঋণপ্রাপ্তিকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত’।

কারণ ‘সমাজের দরিদ্র মানুষ হচ্ছে পদ্ধতির ত্রুটির ফসল’। সুতরাং দরিদ্র মানুষ যেনো প্রতিনিয়ত পদ্ধতির শিকার হতেই থাকেন, আমাদের সে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতেই হবে। আমরা কখনোই পদ্ধতি বদলাবো না; বরং পদ্ধতি যেনো টিকে থাকে, সহনীয় হয় আরো, সেজন্য ঋণপ্রাপ্তিকে শুধু অধিকার নয়, শুধু মৌলিক অধিকার নয়, শুধু মানবাধিকার নয়, একেবারে পুরোপুরি মৌলিক মানবাধিকার করতে হবে। পদ্ধতি বদলে ফেললে যে মানুষ আর দরিদ্র থাকবে না! সেদিকে এগুলো ক্ষুদ্রঋণ দর্শনে হারাম। ‘প্রচলতি ধ্যনধারণা হচ্ছে ব্যবসা মানেই সর্বোচ্চ মুনাফা’।

প্রচলিত কাজ হচ্ছে, দারিদ্র্য নিয়ে ব্যবসা করা। প্রচলিত কৌশল হচ্ছে সাহস করে সত্য কথাটি না বলে সেটিকে মানবতার কল্যাণের পোশাক পরিয়ে বলতে চেষ্টা করা। সবকিছুই করতে পারি আমরা। ঘাটতি কেবল একটি জায়গায়- ঋণ দিয়ে চড়া সুদ আদায় করাকে কারো কারো জন্য মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত- কথাটি মুখ ফসকেও বলতে না পারা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসদের মতো মহাপুরুষদের কাছ থেকে প্রতিনিয়তই এই জিনিসগুলো আমরা শিখে রাখছি।

অবশ্য তাতে কোনো সমস্যা নেই। ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট’, তাহলে প্রজেক্ট পেপার জমা দিয়ে ব্যবসায় সমৃদ্ধি বাড়ানো কোনো সমস্যাই নয়; ‘বিশ্বাস হৃদয়ে’ থাকলে দেবী লক্ষ্মী ভাগ্যবানদের সাথেই থাকেন; সুতরাং কোনো না কোনোভাবে ঋণব্যবসায়ীদের পরস্পরের সাথে ‘দেখা হবে বিজয়ে’।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।