আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমাজতন্ত্রে মুক্তির উপায়/ প্রতি শ্রদ্ধেয় দিন মজুর

One of the things I keep learning is that the secret of being happy is doing things for other people.

(আপনার সব লিখা গুলোই পড়েছি। কাজের ব্যস্ততায় আলাদা মন্তব্য করা হয়নি। আজও বেশীক্ষন থাকা হবেনা। আমার মন্তব্য এখানে লিখলাম) আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি-People are not altruistic ,by nature। চিরায়ত প্রকৃতির ঘাত-প্রতিঘাতে জীবনের এ অমীমাংসিত দ্বন্ধ্বে যেখানে টিকে থাকাই মুখ্য সেখানে-আপন অধিকারের মৃত লাস বহন করবে কে?কিন্তু এ অধিকার যদি শুধুমাত্র এক টুকরো রুটির বিনিময়ে অবারিত স্বাধীনতাকে অবলোপিত করা হয়,তাহলে সমাজ তন্ত্রের প্রতি কোনো বিরুপতা নেই।

তারপরও,কথা থেকে যায়-সেই কথা আমি একটি ছোট গল্পের মাধ্যমে শেষ করবো। সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়-রুটি বন্টনের আইন হয়েছে, একেবারে যথাযথ। তবে শাসক সে রুটি দেয় কি? নাকি শুধু আইন করে। "The Politics of Servitude " বইয়ে Etire চমতকার এক উপসংহার টেনেছেন The government Under USSR comes in the name of justice,but frequently ends in injustice. কিন্তু কীভাবে এ অবিচার হয়-তা এবার একটু অন্বেষন করি। আপনি নিশ্চয়-Robert Lefevre(লাস্ট নেমের বানান ভুল হতে পারে,সরি)এর বিখ্যাত বই "The bread is mine" বইটি পড়ে থাকবেন।

সেখানে মূল কথাটি হলো-আমার মাথার ঘামের পরিশ্রান্ত কষ্টে উপার্জিত রুটিতে শুধু আমারই অধিকার থাকবে। অথবা,আমার পরিপূর্ণ ইচ্ছা আছে ইচ্ছানুযায়ী স্বীয় উতপাদন বন্টনের। যেমন-এ রুটির ভাগ আমার বাপ পাবে কি ভাই পাবে,অথবা কোনো ক্ষুধার্তের ক্ষুধা মিটাবে তার একমাত্র অধিকার উতপাদকের। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়-তা একটু ভিন্ন বৈকি। এ রুটির উপর কর্তৃত্ব থাকবে একচেটিয়া সমাজের।

এক্ষেত্রে আমি -মোল্লা আর পাদ্রি সম্প্রদায়কে দূরে রাখলাম-কারন তাদের মতে ,শ্রষ্টার ক্ষুধা থাকুক বা না থাকুক রুটির একমাত্র মালিকানা শ্রষ্টার। যাই হোক, আলোচনা সোসালিজমেই সীমিত রাখি। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ রাস্ট্রীয় ব্যবস্থা চালিত হয় আবার-একচেটেয়া ক্ষমতায়ীদের দ্বারা। Nomenklatura নামে এ দলটি Political monopoly লাভ করেছিলো শাসনের একবারে শুরুতেই। ঠিক সে সময়ে নাগরিক অধিকার কতুটুকু ছিলো তা নাই বা বললাম।

শুধুমাত্র একটি রুটি না ,সমস্ত প্রোডাকশন সিজড করা হয়েছিলো নতুন সমাজ বিনির্মানের নামে। রুটি বাদ দিয়ে এবার একটু শ্রম আর পুঁজির দিকে দৃষ্টিপাত করি। অর্থনীতিরএই দুটি জিনিস শ্রম আর পুঁজি যা অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা-মানুষের মেধা প্রকৃতির অনন্য দান।

যাই ,বলি না কেন-এই মেধাকে স্বীকার করতেই হবে,এবং এর যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। ইউরোপিয়ানরা যখন আমেরিকা আসে তখন এখানকার মোট জনসংখ্যা এক মিলিয়নের বেশী ছিলোনা। মেধা কাজে লাগিয়ে সেই জনসংখ্যা আজ শত মিলিয়নে ছাড়িয়ে গেলেও শ্রম ,পুঁজি আর মেধার মাধ্যমে সম্পদের প্রতিনিয়ত প্রবাহের ধারায় তা এখনো সুন্দর ভাবেই টিকে আছে। আমেরিকাকে আমরা কথায় কথায় বেঘোর গালাগালি করি, বিশ্ব পুলিশ বাহিনী হিসাবে এ গালাগালি একবারে অযাচিত ও নয়। তবে শুধু প্রাইভেট কন্ট্রিবিউশন যদি বিবেচনা করেন-তবে ফাইনান্সিয়ার এক্সপ্রেস ম্যাগাজিনের ডাটা অনুযায়ী-আমেরিকানরাই সবেচেয় বেশী চ্যারিটি কন্ট্রিবিউটর।

কারন কি- পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়-always rewards hard workers. অন্যদিকে Socialism punishes hard work by talking away from those who earn more. এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই , মানুষের কর্মচান্চল্য কমে আসে , যেখানে কোনো ইনসেনটিভ কাজ করেনা। জীবন নির্বাহে যদি প্রতিনিয়ত ওয়েলফেয়ারের দিকে থাকিয়ে থাকতে হয়,তবে অন্যের চ্যারিটি করাতো দূরের কথা। আর যে কথাটি আমি আলোচনার শুরুতেই বলেছি-By nature -people are not altruistic. পুঁজিবাদের যে কোনো চ্যালেন্জ নেই তা কিন্তু না। Nomenklatura যে সমস্ত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন ঘটিয়েছিলো সীমিত মানুষের হাতে ,তাই মানুষের বেঁচে থাকার স্পন্দন কেই রোধ করেছিলো। পুঁজিবাদ বলি আর সমাজবাদ বলি-মূল সমস্যা হলো আসলে ঐ করাপশানে।

নীতি যতনা আমাদের ক্ষতি করে,নীতির অন্দর মহলে লুকায়িত দূর্নীতি তা করে তুলে আরো প্রকট। আর এ করাপশান আসে ঠিক তখনি-যখন আমরা দেখি too much power in the hand of too few people. এটা রাশিয়ার লাল দরজার অন্দরে যেমন সত্য , ঠিক তেমনি বাংলাদেশের হাওয়া ভবনের ক্ষেত্রেও সত্য। একটি পুরো সমাজব্যবস্থার অবক্ষয়ে যখন বেঁচে থাকার সব চাহিদা শুধু ভোগের রুটি হয়ে যায়, আর পুঁজিবাদী আর সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার দূর্নীতি যখন দুটি নেকড়ে হয়ে তার কর্তৃত্বে ছুটে আসে- তখনই গরীব আরো গরীব হয়, ভুখা নাংগা মানুষ না খেয়ে মরে। তাই ,একচেটিয়া ভাবে শুধু সমাজতন্ত্রকেই Creeping Virus বলে অভিহিত করা যায়না। মূল সমস্যা হলো-মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাকে অবদমিত করার গ্লানি,সমাজতন্ত্র এখনো যা বহন করে চলছে।

আর এটা করতে গিয়ে সুস্পষ্ট দুটো ধারার সৃষ্টি হয়- 1.The Rules 2.The Ruler যেখানে,শাসিতরা মনে করে - someone will take care of them. আর এখানেই অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে। লক্ষ্য করুন-আনইকুয়াল ইফর্টের জন্য কেউ ইকুয়াল কমপেনসেশন পেতে পারেনা, যেটা হলো পুরোপুরি অবিচার। ভোক্তার সমতা কেবল মাত্র দুঃখ আর মৃত্যুতেই হতে পারে,তবে বেঁচে থাকার সংগ্রামে কোনো সমতা আসতে পারে কি?। অর্থনীতির মূল ফিলোসফিতে দেখি -there are three P's 1.Prices, 2.Profit and loss, 3.Private property. সমাজের সমতা বিধান করতে গিয়ে এই তিনটি মূলনীতিকেই অস্বীকার করা হয় সোসলিজমে। আর কাজের প্রতি উদ্দীপনার কথা আগেই বলা হয়েছে।

আসলে ,এ আলোচনার কোনো শেষ নেই। যে পর্যন্ত না স্টপ সাইন অথবা ডেড এন্ড আসে। এবার প্রনব আচার্যের কিউবা সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে বলি-এটি একটি বাস্তব উদাহরন -ইতিহাসের পাতা থেকে নেয়া। হাইতি থেকে-মাত্র ৫০ মাইল দূরে কিউবা ,আর আমেরিকার দূরত্ব ৫০০ মাইল। এ সুদীর্ঘ উর্মিমালা পাড়ি দিয়ে জীবন বাজি রেখে একটি সাধারন ভাসমান বোটে হেইটিসরা মাত্র ৫০ মাইল দূরে কিউবা না গিয়ে আমেরিকা আসলো কেন?কারন কি- Land of the oppurtunity?এ গেলো ইতিহাসের উদাহরন।

এবার নিজের চাক্ষুস উদাহরনের কথা বলি। আমাদের গ্রামের এক কামিল পাশ হুজুর যিনি বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে প্রতি শুক্রবারে-মার্কিন সাম্রাজ্য নিপাত যাক শ্লোগান দিতে দিতে বেহেস্তি টিকেট লাভ করেছেন,সেই হুজুর ডিবি ভিসায় আমেরিকা এসে ভিসা আর মাস্টার কার্ডের সুদের জালে আটকা পড়ে বহাল তবিয়তে জীবন যাপন করছেন। আর এখন পুঁজিবাদের সুদ ওনার টুপি পর্যন্ত স্পর্শ করেছে। এবার একটা গল্প বলেই শেষ করছি- জনৈক জেলে প্রতিদিন সকালে মাছ ধরতে যায়, আর সন্ধ্যার বাড়ী ফিরে মাছ নিয়ে। একজন অলস প্রতিবেশী লোক তার আগমন পথে দাঁড়িয়ে থাকে।

জেলে বাড়ী ফিরার পথে অলস লোকটিকে কিছু মাছ দেয়। এভাবেই চলে , অলস লোকটি আরো অলস হয়। সমাজের বোঝা বাড়ে। কিন্তু, এখানে উচিত ছিলো অলস লোকটিকে মাছ না দিয়ে ,কেমন করে মাছ ধরতে হয়,তাই শিখিয়ে দেয়া,তার মধ্যে ইনসেটিভিটি সৃষ্টি করা। তাহলে কর্মের সংস্থান হত,উতপাদন বাড়ত,সমাজের বোঝা লাঘব হত,সর্বোপরি অর্থনীতির চাকা সচল হতো।

সমাজতন্ত্রে ওয়েলফেয়ারের ফানুসে চড়ে ভুক্তভোগী আকাশে পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু সময়ের কষ্টিপাথরে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় যখন নাটাইয়ে টান পড়ে ,তখন মহাউল্লাসে উড্ডীন ফানুসের পতন ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। Los Angels Time Syndicate থেকে আরেকটি গঠনার কথা উল্লেখ করি। উদাহরনের প্রথম অংশ সবার জানা। সম্পূরক করেছি-কল্পনাকে টেনে নিয়ে।

চমতকার গোলটেবিলে ঘিরে বিখ্যাত দুজন বোদ্ধা বসে আছেন। টেবিলের উপর স্বচ্ছ একটি গ্লাস। সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মানে আশা আর নৈরাশ্যের বাদানুবাদ চলছে। আশাবাদী, নৈরাশ্যবাদীকে বললেন-আপনার চিন্তাধারা সবসময় ৃনাত্বক-ঠিক এ স্বচ্ছ গ্লাসের পানির মতো-আপনি গ্লাসের অর্ধেক সবসময় খালিই দেখবেন। আর আমি দেখবো গ্লাসটি অর্ধেক পানিতে ভর্তি।

পাশে দাঁড়ানো সার্ভারকে ওনারা বলেন-তুই কী দেখিস বলতো। ও বললো-এটা নির্ভর করে ক্রিয়ার উপরে। যে পানি পান করবে -তার জন্য গ্লাস অর্ধেক ভর্তি, আর যে গ্লাসে পানি ঢালবে তার জন্য অর্ধেক খালি। ঠিক সে সময় পাশ দিয়ে কিচেন বয় যাচ্ছিল-সে মনে মনে বললো,আহারে!তোমাদের আলোচনাই সার, তবে ফাইনাল কথা হলো-এঁটো গ্লাসটি আমাকেই ধুঁতে হবে। তা না হলে-ভাগ্যে আমার রুটি ও নাই , অন্ন ও নাই।

পুঁজিবাদ বলি আর সমাজবাদ বলি-ধনীদের জন্যই সব আইন। শ্রমিকের রক্ত আর ঘাম ইট পাথরের সাথে মিশে রোমান,পারস্য ,বায়জান্টাইন সাম্রাজ্যের ভীত তৈরী করেছে। আর্জেন্টাইন বিখ্যাত কবি-ক্রিস্টিনা আজকোনা তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে যখন অশ্রুপাত করছিলেন-তখন পুরানো বন্ধু জানতে চান -অপরুপ রুপের সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে তোমার এ অশ্রু কি নতুন কোনো ভালোবাসার কথা বলছে? বিষাদময় কন্ঠে আজকোনা বলেন-তাজমহলের সৌন্দর্য্য শুধু নয়ন ভরে আমরা দেখেছি ,কিন্তু শ্রমিকের দীর্ঘশ্বাস কারো হৃদয় স্পর্শ করেনি। আমার অশ্রু সে কথাই বলছে। সরি, অনেক লম্বা হয়ে গেলো।

যারা এ পর্যন্ত কষ্ট করে পড়লেন ,বিনীত সাধুবাদ। এ আলোচনা এখানেই শেষ করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।