আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নামের ফাজলামো নাকি আমাদের মহান শহীদ দিবস ?

.এই ব্লগে যে কয়টি পোস্ট আছে, সেগুলোর মন্তব্য সরাসরি প্রকাশিত হবে না। এই অক্ষমতার জন্য অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী।

গত কয়েকবছর ধরে হুটহাট করে একটা বিষয় আমাদের সামনে চলে এলো , সেটা হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । ছোটবেলা থেকে শুনে আসছিলাম ২১ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে আমাদের শহীদ দিবস , এই দিন ভাষার জন্য প্রান দিয়েছেন সালাম-বরকত-রফিক , এই দিন আমাদের চেতনাকে শানিত করে , আমাদের নিরন্তর সংগ্রামের ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানায় । সেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে ছিনতাই করলেন আমাদের " ভাষাকন্যা (!) " শেখ হাসিনা ।

সেটাকে বানিয়ে ফেললেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । উহু , উনি বানান নি , বানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো অথবা জাতিসংঘ , কিন্তু সে সময় চামচা মিডিয়াদের শোরগোল শুনে মনে হচ্ছিল শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে বুঝি মাথা নত করেছে পৃথিবীর সবগুলো দেশ । পৃথিবীতে এই সব দিবস টিবসের কোন লেখাজোখা নেই । ( একবার গিয়াস ভাই ভোরের কাগজে একটা কার্টুন ছেপেছিলেন যেখানে এক লোক ক্যালেন্ডার খুঁজে দেখছে বছরের কোন দিন খালি আছে কি না , সেই দিনে সে একটি দিবসবিহীন দিবস বানাতে চায় । ) মাতৃ দিবস , মাতৃদুগ্ধ দিবস , এইডস দিবস , নারী দিবস , ডায়বেটিক দিবস ...হরেক রকম দিবসের ছড়াছড়ি ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তেমনই একটি দিবস মাত্র । তার সাথে একুশের চেতনার কোন সম্পর্ক নেই । মাতৃভাষা দিবস মানে হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে ছোট ছোট উপভাষাগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে , সেগুলো সংরক্ষনে সবাইকে সচেতন করা । আমাদের দেশেই বেশ কিছু পাহাড়ী ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে , এরকম হাজার হাজার ভাষা বিভিন্ন দেশে বিলুপ্তির মুখে চলে যাচ্ছে । ভাষার উদ্ভব , ভাষার বিকাশ , ভাষার বিলুপ্তি ..সব কিছুই সময়ের দাবী ।

যে ভাষা বাইরে ব্যবহার করা যায় না , সেই ভাষা ধীরে ধীরে তার শক্তি হারাবে এটাই স্বাভাবিক । সেই বিপন্ন ভাষাগুলোর জন্য মমতা প্রকাশ করা যায় , ভাষা বিজ্ঞানীরা সেগুলোকে নিয়ে গবেষনা আর সংরক্ষন করতে পারেন , কিন্তু সেগুলোর সাথে বাংলা ভাষা বা একুশের কোন সম্পর্ক নেই । স্মরণাতীত কাল থেকেই একুশ আমাদের মানে এই জনপদের বাঙালিদের দ্রোহ ও ক্ষোভের উৎস । একুশ মানেই পাড়ায় পাড়ায় ফুলচুরি , কাকভোরে প্রভাতফেরি , পাচঁ দশটাকা দামের সংকলন , পাড়ার মোড়ে মাইক ঝুলিয়ে অনুষ্ঠান ...পুরো বিষয়টির মাঝেই বাঙালির সংগ্রামের একটা প্রতিফলন । সেই একুশকে মুছে দেয়ার চেষ্টা চলেছে সেই পাকিস্তান আমল থেকেই ।

একুশকে মুছে ফেলা মানে আমাদের চেতনাকে স্থবির করে দেয়া , আমাদের লড়াইয়ের স্পৃহাকে মুছে ফেলা । পাকিস্তানের পরে এদেশের সবগুলো স্বৈরশাসকই একুশকে ভয় করে চলেছে , কিন্তু মুছে ফেলতে পারেনি । জেনেই হোক আর না জেনেই হোক , সেই কাজটি করে ফেলেছেন শেখ হাসিনা । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষনার জন্য একটা দিন খোঁজা হচ্ছিল , তখন দুই বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারির ভাবগাম্ভীর্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এধরনের একটা প্রস্তাব পেশ করেন ইউনিসেফে , যেটি নানা কাঠখড় পুড়িয়ে এবং বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে উত্থাপিত হয় । স্বাভাবিক ভাবেই যেখানে একটা দিন হলেই হয় , সেখানে একুশে ফেব্রুয়ারি তার ইতিহাসের কারনেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হয় ।

কিন্তু বাংলাদেশের সাধারন মানুষ আর মূর্খ মিডিয়ার কর্মকান্ড দেখে মনে হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষনা করা মানে হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাসকে পৃথিবীর সব জাতি বুঝতে পেরেছে । এখন দুনিয়ার সব দেশে শহীদ মিনার বানিয়ে প্রভাত ফেরি হচ্ছে । কী অদ্ভুত মিডিয়া প্রচারনা । একুশ ফিরে আসুক তার চেতনা নিয়ে । একুশ ফিরে আসুক পথের মোড়ের সংকলনে, রাতের ফুল চুরিতে , ভোরের প্রভাত ফেরিতে ।

অসাধু রাজনীতিবিদদের নোংরা হাতের স্পর্শ এড়িয়ে , মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর রঙিন বিজ্ঞাপনের ছোবল বাচিঁয়ে , মূর্খ মিডিয়ার দুই কলাম হেডিং সরিয়ে , আমাদের মহান একুশ চির জাগ্রত থাক শহীদ দিবস হিসেবে ; আর আমাদেরকে শানিত করুক বারবার ..সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.