আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনাদের পাড়ার রাজাদা (কাহিনী - ২২)



এ পর্যন্ত একুশজন রাজাদার চরিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। এই রাজাদারা আমার আপনার পাড়ায় প্রায়শই দেখা যায় । তারা পরোপকারী । পরের জন্য কিছু করতে পারলে বর্তে যায় । কে কি বললো তা দিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই ।

তাদেরকে আমরা ভালবাসি। তাদেরকে আবার না হলে আমাদের চলেওনা । জানিনা এইসব রাজাদারা আপনাদের মনোরঞ্জন করতে পেরেছে কিনা । তবে যে রাজাদার গল্প আজ বলবো তিনি অনবদ্য । এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি ।

আমার ছোড়দাদায় ভাল ক্যারাম খ্যালে। আর এই ক্যারাম খেলা লইয়াই হইছিল বিপত্তি। কান্নি মাইরা গুটি মারতে গিয়া পইড়া এক্কেবারে অজ্ঞান । হাসপাতালে লইয়া গেলে ডাক্তারে কইল হৃদপিন্ডে গন্ডগোল - পেসমেকার বসাইতে হইবো। আমাগো এইখানে তখন পেসমেকার বসানোর সুবিধা ছিলনা ।

কোলকাতায় লইয়া যাইতে হইল। আমিতো কোলকাতার কিছু চিনিনা । কোলকাতায় গিয়া ফাপড়ে পড়ুম এই চিন্তায় আছিলাম । আমার ছোড়দাদার আবার রুলিং পার্টির বড় বড় নেতাগো লগে ওঠবস ছিল । আমাগো বিধায়ক সাহেব কইলো চিন্তা কিসের ।

তুমি গিয়া কোলকাতায় আমার সরকারী আবাসনে ওঠবা। বড় হাসপাতালে আমি কইয়া দিমু। সব ঠিক হইয়া যাইবো। কপাল ঠুইক্কা এ্যাম্বুলেন্সে কইরা যাওনের দিন রাজাদাও কইল, তোর দাদা আমগোও দাদা, আমিও যামু চল। আমিতো হাতে চাঁদ পাইলাম।

কোলকাতায় যাইয়া দেখি আমাগো বিধায়ক সাহেব সব ঠিক কইরা রাখছিল। যাওয়া মাত্র আমার ছোড়দাদায় কোলকাতার সব চাইতে বড় হাসপাতালে এক নম্বর বেড পাইয়া গেল। এশিয়ার এক নম্বর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা হইতে লাগলো । আমি আর রাজাদা দেখভাল করতাছি। যথাসময়ে একদিন অপারেশন কইরা পেসমেকার বসাইয়া দিল।

যেদিন পেসমেকার বসাইলো, ডাক্তারে কইলো আইজ আপনাগো দাদার পাশে রাইত কাটাইতে হইবো। আপনে টিকিট কইরা লইয়া আসেন। আমি আর রাজাদা টিকিট কাইটা হাসপাতালের অতীব সুন্দর বাগানে ঘুইরা বেড়াইতাছি । এমন সময়ে হাসপাতালের মাইকে জরুরী ঘোষণা হইল যে, অমুক লোকের আত্মীয় স্বজন কে আছেন, শীঘ্রই অপারেশন থিয়েটারে দেখা করেন। বার বার ঘোষণা হইতেছে দেইখ্যা, হঠাৎই রাজাদা কইলো হ্যারে, অমুক লোকটাতো তোর দাদার বেডের পাশের বেডেই আছিল, আমার লগে আলাপ হইছিল, জলপাইগুরির লোক কইছিল।

চলতো দেইখ্যা আসি। গেলাম দেখতে । হ রাজাদা যা কইছে, হেই লোকটাই । কোনো আত্মীয় স্বজনের দেখা নাই তখনো, অথচ এখ্খনি অপারেশন না করলে লোকটারে বাঁচানো যাইবোনা । রাজাদা ডাক্তারের কাছে যাইতেই ডাক্তার রাজাদারে টাইনা ভিতরে লইয়া গিয়া একখান কাগজ আগাইয়া দিয়া কইলো এইখানে সই করেন ।

আমি না কইবার আগেই রাজাদা কিছু না বুইঝাই সই কইরা ফালাইলো। ডাক্তার লম্বা একখান ফর্দি ধরাইয়া দিয়া কইল এই ওষুধগুলি আইনা দেন আর লগে চাইর বোতল ফ্রেশ ব্লাড লাগবো। আমি কিছু কইবার আগেই রাজা কইলো, টাকা দে, ওষুধগুলি কিন্না দি, আর সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে যাওন লাগবো, ব্লাড আনতে হইবো। আমি কইলাম, ছোড়দাদার যদি আবার টাকা লাগে তখন টাকা পাইমুনে কই আর ব্লাড ব্যাঙ্কইবা কই তুমি খামাকা ঝামেলায় জড়াইতাছো। ঝামেলা ?, রাজাদা আমার উপর ক্ষেইপা গেল।

টাকা দিবি কিনা ক ? আমি কইলাম চল টাকাতো দিমু । আগে ব্লাড ব্যাঙ্কে চল । ঐ রাইতের বেলায় একখান ট্যাক্সি লইয়া আমি আর রাজাদা সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলাম । মানাষের রক্ত লইয়া কানাগলির খেলা চলে, রাজাদাও জানেনা, আমিতো জানিইনা । হতাশ হইয়া রাজাদা কইলো কি করি কতো ? আমি কই - ছাড়ান দাও রাজাদা, ছোড়দাদাতো সুস্থ আছে, আমরা কাইটা পড়ি।

রাজাদা দার্শনিকের ভঙ্গিতে কইলো - আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে - শেষ দেইখা আমি ছাড়ুম - আমার নাম রাজা । ট্যাক্সিয়ালারে রাজাদা কয় - তুম কোনো ব্লাড ব্যাঙ্ক জানতা হ্যায়, যাহা রক্ত মিলতা হ্যায় । ট্যাক্সিয়ালা কয় - হ্যাঁ বাবু, জানতা হ্যায়, লেকিন ওতো ব্লাড দেনে কে বাদ আপকো ব্লাড মিলেগা । জল্দি চলো । ট্যাক্সিয়ালা তাড়াতাড়ি আমাগো একখান ব্লাড ব্যাঙ্কে লইয়া গেল যেইখানে রক্ত আপনি পাইবেন তবে আপনি যত বোতল রক্ত দিবেন তত বোতলই পাইবেন - মানে exchange আর কি।

রাজাদা গিয়া ডাক্তারের কাগজ দেখাইয়া কইল - তাড়াতাড়ি চাইর বোতল রক্ত দেন আর আমাগো থেইকা চাইর বোতল রক্ত নেন। একজনের থেইকাতো এক বোতল রক্তই নেওয়া হয়। আপনি দুবোতল দিলে দুবোতল রক্তই পাইবেন। হ্যারা গম্ভীর হইয়া কইল। রাজাদা নাছোরবান্দা।

চাইর বোতলই চাই। চেচামেচি শুইনা শেষমেশ ট্যাক্সিয়ালা কইল - হামভি একবোতল খুন দেগা, তব তিন বোতল হোগা । দেওয়া হইল তিন বোতল, রাজাদাই প্রথমে দিল । সবশেষে আমি। তবু রাজাদা কয়, না চাইর বোতলই নিমু।

আমি আরেক বোতল রক্ত দিমু। শেষমেশ রাজাদা আরেক বোতল মানে রাজাদা একাই দুবোতল রক্ত দিল। তাড়াতাড়ি আমরা হাসপাতালে ফিরা আইলাম। রক্ত দিলাম । ওষুধ দিলাম আট হাজার টাকার ।

আর আমি মনে মনে কই রাজাদারে লইয়া কি বিপদেই যে পরছি। আজাইরা কামে রাজাদার জুরি নাই। অপারেশন সাকসেসফুল । লোকটা বাঁইচা গেল। পরদিন সকালে আমি, রাজাদা আর ট্যাক্সিয়ালা ঝিমাইতাছি (ট্যাক্সিয়ালা পয়সা লয় নাই - কারন রাজাদার মতো মহান পরোপকারী ব্যাক্তি নাকি ট্যাক্সিয়ালা ইতিপূর্বে দেখে নাই) - হঠাৎ সাইরেনের চিৎকারে আমাগো ঝিমুনি কাইটা গেল।

লাল বাত্তির ঝলকানি। শুনি চীফ মিনিষ্টার আইছে, আইছে হেল্থ মিনিষ্টার হেই লোকটারে দেখতে। আমাগো বিধায়কও আইছে । হেই লোকটা নাকি রুলিং পার্টির হোমরা চোমরা । ব্যস রাজাদা, ট্যাক্সিয়ালা আর আমি মহান হইয়া গেলাম।

পরদিন রুলিং পার্টির দৈনিক কাগজে আমাগো তিনজনের ছবি সহ সাত কাহন প্রকাশ হইছে। যদিও আমার অনেক টাকা গেছে, তবে রাজাদার লেইগা আজো আমার গর্বে বুক ভইরা যায়। আপনাগো পাড়াতেও এইরকম রাজাদা আছে নিশ্চয়, খুঁইজা দেখেন পাবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.