আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপালি পর্দার ব্যাটম্যান

পরের অংশটা কিন্তু একটি ইতিহাস তৈরির গল্প। ডার্ক নাইট বা কেইপ্ড ক্রুসেডর যে নামেই তাকে ডাকুন না কেন, ইতিহাসের পাতায় আমরা তাকে বরাবরই দেখেছি অশুভের বিরূদ্ধে যুদ্ধে নামা এক মহানায়ক হিসেবে। ছোটবেলার সেই কমিক বইগুলো, কার্টুন সিরিজগুলো কিংবা রূপালি পর্দার চমকজাগানো কাহিনিচিত্রগুলোতে-- সবখানেই ‘ব্যাটম্যান’কে আমরা পেয়েছি এক সেলিব্রেটি সুপারহিরো হিসেবে ।
সুপারহিরোদের মধ্যে সবসময় কিছু অতিপ্রাকৃত ব্যাপার থাকে। ব্যাটম্যান অবশ্য সেদিক থেকে একটু ভিন্নই বটে।

ব্যাটম্যানকে নিয়ে প্রকাশিত হাজার হাজার কমিক বই, ভিডিও গেম, টিভি সিরিয়াল, আর ক্রমবর্ধমান চলচিত্রের সংখ্যা প্রমাণ করে সুপারহিরো তৈরি হয় তার চরিত্রের বৈচিত্র্য আর অন্যায় প্রতিরোধের দুর্দান্ত মানবীয় ইচ্ছাশক্তি দিয়ে। অতিমানবীয় সুপারপাওয়ারই তাই সুপারহিরোদের জন্য শেষ কথা নয়।
ব্যাটম্যান সৃষ্টির গল্পটা কিন্তু অসাধারণ। সুপারম্যানের আকাশছোঁয়া  সাফল্য  ডিসি কমিক্সকে বাধ্য করে নতুন আরেকটি হিরো তৈরি করতে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৩৯ সালে বব ক্যান তৈরি করেন ব্যাটম্যান।


প্রথম দিকে কিছুটা শ্লথগতিতে এর জনপ্রিয়তা বাড়লেও তারপর থেকে ব্যাটম্যান হয়ে দাঁড়ায় বিনোদনজগতের সোনার ডিমপাড়া হাঁস। কমিকজগতের অন্যতম প্রিয় এই চরিত্রকে নিয়ে এখনও চলছে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন। এখনও চলচিত্রপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এই সিরিজের নতুন সিকুয়েল। টুইটার, ফেইসবুকের মতো সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সাধারণ মানুষ থেকে সেলিব্রিটি সবাই তর্কে মশগুল হয় এর নতুন গল্প কিংবা নায়কের নির্বাচন নিয়ে।
ব্যাটম্যানের জনপ্রিয়তার এই ধারাবাহিকতাই রূপালি পর্দার নির্মাতাদেরও বারবার উদ্বুদ্ধ করেছে এই সুপারহিরোকে নিয়ে সিনেমা তৈরিতে।

কখনও রবিন, কখনও-বা ক্যাট ওম্যানকে সঙ্গে নিয়ে আবার কখনও একাই  আবির্ভূত হয়ে ব্যাটম্যান রূপালি পর্দাকে করেছেন মহিমান্বিত।
এইবার আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ব্যাটম্যান নিয়ে তৈরি উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র ।
 

 
ব্যাটম্যান (১৯৪৩)
১৫ অধ্যায়ের এই টিভি মুভি সিরিয়ালে ব্যাটম্যান চরিত্রে অভিনয় করেন লুইস উইলসন এবং রবিন হিসেবে আবির্ভূত হন ডগলাস ক্রফট ।
 
 

 
ব্যাটম্যান (১৯৬৬)
সমসাময়িক ব্যাটম্যান টেলিভিশন সিরিজের উপর ভিত্তি করে তৈরি সিনেমা; ব্যাটম্যান হিসেবে অভিনেতা অ্যাডাম ওয়েস্ট, রবিন হিসেবে বারট ওয়ার্ড, জোকার হিসেবে সেজার রোমেরো, রিডলার হিসেবে ফ্রাঙ্ক গরশিন, পেঙ্গুইন হিসেবে মারেডিথ, এবং ক্যাটওম্যান হিসেবে লি মেরিওয়েদার অভিনয় করেন।
 

 
ব্যাটম্যান (১৯৮৯)
টিম বার্টন পরিচালিত ‘ব্যাটম্যান’; ব্যাটম্যান চরিত্রে মাইকেল কিটন, জোকার হিসেবে জ্যাক নিকলসন এবং ভিকি ভ্যালে চরিত্রে কিম বাসিঙ্গার এতে অভিনয় করেন।


 

 
ব্যাটম্যান রিটার্নস (১৯৯২)
টিম বার্টন পরিচালিত ‘ব্যাটম্যান রিটার্নস’; ব্যাটম্যান হিসেবে এবারও মাইকেল কিটন, ক্যাটওম্যান হিসেবে মিশেল পাফিফার, পেঙ্গুইন হিসেবে ড্যানি ডেভিটও আসেন রূপালি পর্দায়।
 

 
ব্যাটম্যান ফরএভার (১৯৯৫)
জোয়েল শুমেখার পরিচালিত ‘ব্যাটম্যান ফরএভার’। ব্যাটম্যান হিসেবে অভিনয় করে এবার লাইম লাইটে আসেন ভ্যাল কিল্মার। চেজ মেরিডিয়ান হিসেবে নিকোল কিডম্যান, রবিন হিসেবে ক্রিস ওডোনেল, টু ফেইস হিসেবে এবং রিডলার হিসেবে জিম ক্যারি বেশ আলোচনায় আসেন।
 

 
ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন (১৯৯৭)
জোয়েল শুমেখার পরিচালিত এই সিরিজের দ্বিতীয় সিনেমা ‘ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন’।

ব্যাটম্যান হিসেবে এবার অভিনয় করেন এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা জর্জ ক্লুনি। ব্যাটম্যান মুভি সিরিজের সবচাইতে বিতর্কিত এবং অসফল এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেন আর্নল্ড সোয়ার্জনেগার ও উমা থারমান ।
 

 
ব্যাটম্যান বিগিন্স (২০০৫)
ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘ব্যাটম্যান বিগিন্স’। ব্যাটম্যান হিসেবে এবার অভিনয়ের জন্য ডাক পান ক্রিস্টিয়ান বেল। আগের কয়েকটি সিনেমার ব্যর্থতায় যখন এই সিরিজের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছিল রূপালি পর্দা থেকে, ঠিক তখনি যেন ‘ব্যাটম্যান বিগিন্স’-এর মাধ্যমে পুনর্জন্ম ঘটল ব্যাটম্যানের।


আগের সব সিনেমার চেয়ে কিছুটা ডার্ক থিম নিয়ে নির্মিত ‘ব্যাটম্যান বিগিন্স’-এর মাধ্যমে আবারও সবার প্রিয় সুপারহিরোর স্থানে অধিষ্ঠিত হলেন ব্যাটম্যান। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৭২ মিলিয়ন ডলার আয় করা এই চলচ্চিত্রে আরও অভিনয় করেছেন লিয়াম নিসন, মরগ্যান ফ্রিম্যান, কেটি হোমস প্রমুখ।

দ্য ডার্ক নাইট (২০০৮)
ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমা ‘দ্য ডার্ক নাইট’; ততদিনে ব্যাটম্যান ক্রিস্টিয়ান বেল সকলের প্রিয় মুখ হয়ে গিয়েছেন। মরগ্যান ফ্রিমান, মাইকেল কেইন, গ্যারি ওল্ডম্যান ফিরে আসেন আরও একবার। তবে নতুন এই পর্বে সুপারভিলেন ‘জোকার’ চরিত্রে অভিনয় করে বিশ্ব কাঁপান হিথ লেজার।

প্রায় বিশটির মতো পুরস্কার ঘরে তোলেন প্রয়াত এই অভিনেতা, যার মধ্যে আছে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতার একাডেমি, বাফটা, গোল্ডেন গ্লোবের মতো সব পুরস্কার। জনপ্রিয়তায় এবং ব্যবসার দিক দিয়েও এই সিনেমা আগের সব ব্যাটম্যান মুভিকে হার মানায়। জোকার খলনায়ক চরিত্রের জনপ্রিয়তার তুলনা করা যায় কেবল অ্যান্থনি হপকিন্স অভিনীত ‘সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস’-এর  সিরিয়াল কিলার হ্যানিবল দ্য ক্যানিবলের সঙ্গেই ।

দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস (২০১২)
ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ডার্ক নাইট সিরিজের সর্বশেষ পর্ব ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’। অধিকাংশ মূল অভিনেতাই তাদের স্ব-স্ব চরিত্রে ফেরত আসেন।

ক্রিস্টিয়ান বেল অভিনীত সর্বশেষ ওই ব্যাটম্যান সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন অ্যান হ্যাথওয়ে, টম হার্ডি এবং ম্যারিওন কোর্টিলার্ড। প্রায় ১ বিলিওন ডলার আয় করা ওই সিনেমা বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ আয়কৃত চলচিত্র।
শেষকথা
২০১৫ সাল। অনেক সমালোচনার পরও সুপারম্যানকে নিয়ে পরিচালক জ্যাক স্নাইডারের তৈরি ‘ম্যান অফ স্টিল’-এর সিকুয়েলে ওই বছরই ব্যাটম্যান চরিত্রে অভিষেক ঘটবে বেন অ্যাফ্লেকের। সারা দুনিয়ার ব্যাটম্যানপ্রেমীদের মধ্যে কাজ করছে টানটান উত্তেজনা।

পারবেন তো বেন অ্যাফ্লেক? হাজার হোক কমিক বইয়ের সেই ব্যাটম্যান যে এখন রূপালি পর্দারও সুপারহিরো। কোটি কোটি দর্শকের প্রত্যাশার বোঝা এখন তারই কাঁধে। সেই প্রত্যাশা কতটুকু মেটাতে পারবেন নির্মাতা হিসেবে দুবার অস্কারজয়ী এই অভিনেতা-- দেখার বিষয় এখন সেটাই।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।