আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্গত এলাকার পাঁচালী - এক

মানুষ আমি খুঁজছি মানুষ আরো মানুষ হতে

দুর্গত এলাকা সয়লাব হয়ে যাচ্ছে এনজিওদের ত্রাণে। তার চেয়ে বড় খবর হলো এনজিওগুলো সহায় সম্বলহীন মানুষের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি ঠিকই আদায় করছে। এখন চলছে বিজয়ের মাস। একই সঙ্গে গত বছর থেকে এই মাসটি বাংলাদেশীদের শান্তি নোবেল গ্রহণের মাসও। ডিসেম্বরের ১০ তারিখে মাইক্রোক্রেডিট কনসেপ্টেÍ কথিত জনক ড. মুহম্মদ ইউনূস গ্রহণ করেন শান্তি নোবেল পুরস্কার।

ঠিক এই মাসেই যখন টেলিভিশনের খবরে উচ্চারিত হচ্ছে ঘুর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় ব্র্যাক, আশা, গ্রামীন ব্যাংকের মতো সংগঠন সর্বস্বহারা মানুষের কাছে ঋণের কিস্তির জন্যে ধন্যা দিচ্ছে, আর মানুষগুলো প্রাপ্ত ত্রাণ দিয়ে পরিশোধ করছে কিস্তি, তখন সত্যিই সবকিছুই গুলিয়ে যায়। সত্যিই সেলুকাস ! কি বিচিত্র এই দেশ। কি বিচিত্র আমাদের মাইক্রোক্রেডিট কনসেপ্ট! এই মাইক্রোক্রেডিট যেন জাতি হিসেবে আমাদের সমস্ত ‘ক্রেডিট’-এর কেন্দ্রবিন্দু! অনেক আগেই রাজনীতি ও অর্থনীতি সচেতনদের মন্তব্য শুনেছিলাম মহাজনী সুদের এই কারবার নিয়ে। ড. ইউনূসের মুখেও শুনেছি। তিনি বলেন, যারা বলার তারা বলবেই।

এগুলো নিছকই গুজব। ফিলিপিনের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে গত বছর ডিসেম্বরে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান ও আফগানরা তাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে ঋণের ব্যবসা করে আসছে দু’শ বছর ধরে। তারা এখনও সুদ নেয় ৬ শতাংশ। আর ড. ইউনূস ৩৫ শতাংশের ওপরে সুদ নিয়ে কিভাবে পেলেন শান্তি নোবেল তা মাথায় আসেনা।

ড. ইউনূস তার নোবেল বক্তৃতায় বলেছিলেন, দারিদ্রকে আমরা যাদুঘরে পাঠাবো। বাংলাদেশের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘুর্নিঝড়ের পর এই মাইক্রোক্রেডিট কনসেপ্ট যা দেখাচ্ছে, তা সত্যিই কাবুলিঅলাদেরকে প্রশংসিতই করে। কাবলিঅলারা ঢের ভালো ছিল, এর চেয়ে। দুর্গত এলাকা হওয়ায় বিষয়গুলো প্রতিযোগিতামূলকভাবে মিডিয়া তুলে ধরছে। এর চেয়ে করুণ অনেক গল্প রয়েছে যেগুলো অজানা।

উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা কবলিত এলাকায় ক্রেডিট প্রোগামের ক্যাপসুল বহুদিন ধরেই খাওয়াচ্ছে প্রতিষ্ঠিত এনজিও গুলো। তাদের ঋণের কিস্তি দেয়ার েেত্র রয়েছে অনেক দুঃখের ইতিহাস। ঘরের টিন কিংবা হালের গরু বিক্রি করে ঋণের কিস্তি দেয়ার অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। ঋণের টাকা দিতে গিয়ে সংসার ভেঙে গেছে এমন নজির রয়েছে ভুরি ভুরি। আমার এক নিকটাত্মীয় স্বনামধন্য একটি এনজিওতে চাকরি করেন।

পদবী প্রোগ্রাম অর্গানাইজার। তার চাকরির বয়স দুই বছর। তিনি জানালেন, মাসে বেঁধে দেয়া ঋন আদায়ের হিসাব পুরা না করতে পারলে সেই পরিমাণ অর্থ বেতন থেকে কেটে নেয়া হয়। ওই এনজিও’র একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, এটি পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্তটি অমানবিক হলেও কিছু করার নেই।

অর্থনৈতিক হিসাবটিই এমন। নদীর ভাঙা গড়ার মতো। একদিক ভেঙেই আরেক দিক গড়তে হয়। ঋণ দেয়ার নামে কাবলিঅলাদের নির্যাতন সেই আমলে অসহনীয় ছিল, কিন্তু আজকে তার ধারাবাহিকতায় দারিদ্রের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া বাংলাদেশের পে মহাজনী সুদের এই কারবার অনেকটাই সহনীয়। সে কারণেই এনজিও আর মাইক্রোক্রেডিটের জয়জয়কার।

যা হোক, ঘুর্নিঝড় সিডর আঘাত হানার পর উপকুলীয় অঞ্চলে ঋণের সুদ গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করে কোন কোন এনজিও। বিষয়টি পরিস্কার নয়। স্থগিত মানে সমস্যার সমাধান নয়। অর্থাৎ আজ না হলেও দুর্গত মানুষদেরকে একদিন ঠিকই সুদের হিসাব গুনতে হবে কড়ায় গণ্ডায়। এখন দুর্গত উপকুলবাসীর যখন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

স্বজন, সহায় সম্বল সব হারানোর পরও রয়ে গেছে এনজিওর খড়গ। এনজিও’র স্থানীয় কর্মকর্তাদের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে কোন নির্দেশনা নেই। তাই তারা ঠিকই ঋণের কিস্তির জন্য দুর্গত মানুষগুলোর গায়ের চামড়া খুলে নিতে চাইছে। চ্যানেল আইসহ টেলিভিশন চ্যানেগুলোকে ধন্যবাদ, খবরগুরো গভীর থেকে বের করে আনার জন্য। আর নয়, এনজিওগুলোকে কঠিন জবাবদিহিতার মধ্যে আনার কোন বিকল্প নেই।

উপকুলে ট্রলার ভর্তি এনজিওর ত্রাণ সহায়তা কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও সব আশার গুড়ে বালি করেছে এনজিওগুলোর মহাজনী চরিত্র। এমন সহায়তা উপকুলবাসী নিশ্চয়ই চায় না !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।