আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন্ত স্মৃতি :: মৃত স্মৃতিগুলো বারবার জীবন্ত হয় শুধু হারানোর বেদনায়

নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .

রাস্তার ওপাশেই বাসস্ট্যান্ড, এ পাশেই অনেকক্ষন ধরে দাড়িয়ে মাঝখানে সারিবদ্ধ গাড়ীর জ্যাম। অনেকটা কষ্টে রাস্তা পেরুনো গেলেও বাসের টিকিট লাইনে মানুষের দীর্ঘ সারি। এতে আক্ষেপ করেও লাভ নেই। আজকাল অফিস, বাসা সবখানেই ব্যস্ততার সাথে ক¤প্রমাইজ করতে করতে একদম হাপিয়ে উঠেছি। তখনও টিকিট কাটেনি, মাত্র পকেটে হাত রেখেছি চোখ দুটো আটকে গেল একটি মুখের দিকে, খুব পরিচিত মনে হচ্ছে, একটু অস্পষ্ট যদিও, আজ বছর ৫ পর দেখা।

চেহারায় একটু পরিবর্তন এসেছে তাই মনে হয়, আগে কেমন শুকনো ছিল এখন বেশ পরিপূর্ণ, উজ্জ্বলতাও বেড়েছে, শরীরে কিশোরীর বয়সটা পেরিয়ে যুবতীর ছাপ পড়ে গিয়েছে। টিকিট-টা হাতে নিয়ে সারির পেছনে চলে যায়, ওই অস্পষ্ট পরিচিত মুখের মানুষটি তখনও একই সারির সামনে। ইচ্ছে করেই ওর সামনে যেতে পারছিনা, নিজের পরিচয়টা আত্মগোপনে করে রেখেছি কোথাও একটা বাধা আটকে রেখেছে। ও মনে হয় আমাকে দেখেনি, দেখলে ঠিকই চিনতে পারত, আর অন্তত একবারের জন্য হলেও কাছে এসে “কেমন আছি” এই প্রশ্নটা করত। বাসের যে স্থানটিতে বসে আছি ঠিক তার কোনাকুনি ওর মুখটি দেখতে পাচ্ছি।

চুলগুলো বেশ ঘন হয়েছে, মনে পড়ে ছোটবেলায় যখন খেলার সাথী ছিল ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিই, মাথা কেটে গিয়েছিল, তারপর ওকে টাকু হতে হয়, সেই দু:খে আমার সাথে অনেকদিন রাগ ছিল, এখনও নিশ্চয় সেখানে কাটার দাগটা আছে। সবাই যে নামে ডাকত ও নামের শেষের অক্ষরটা বাদ দিত, বড় আহ্লাদি ডাক ছিল, স্কুলে যাবার পথে পাশাপাশি দুসিটে বসতাম, ওর কত টিফিন চুরি করে খেয়েছি। রেজাল্টে এগিয়ে থাকতাম বলে রেজাল্টের দিন ওর গোমড়া মুখের অপেক্ষায় থাকতাম। বড্ড অভিমানী ছিল, সহজে কিছু বুঝতে চাইতনা। দুজনের বাবার চাকরীর সুত্রতায় ছোটবেলা থেকেইে একসাথে বড় হয়েছি।

মাঝে একটা গ্যাপ ছিল তারপর আবার একসাথে ৫বছর কাটিয়েছি, তখন কিশোর-কিশোরী, আর যুবক-যুবতীতে পা দেয়ার পথে। সময় পেরিয়ে দুজনেই অর্ধ-পরিপূর্ণ। আবেগের বসবাসটা হৃদয়ের কোথাও স্থায়ী আবাস করে নিয়েছে। সেই সময়টা ছিল বিচ্ছিন্ন হবার, ও চলে যাচ্ছে। এক বিকেল-সন্ধ্যায় আমাকে ডেকে পাঠাল।

ওর সামনে যখন ওকে দেখছি অন্যসব থেকে সেদিন ওকে আলাদা লাগল, চোখের জলগুলোকে এক করতে পারছিলনা, জিজ্ঞেস করার সুযোগ দেয়নি কারণের, তার আগেই হাত দুটো ধরে জানতে চাইল একটি ‘সত্য’। নিরুত্তর ছিলাম, আমার মৌনতা ওর বিদায়কে আরো কষ্টময় করে তুলল, আমাকে ভুলে যাবার উপলক্ষ করে দিল। সময় গড়িয়েছে, সময়ের সাথে ওকে খোঁজার আকাঙ্খাটাও বেড়েছিল, কিন্তু সময় সে সুযোগ দ্বিতীয়বার আর দেইনি। চেষ্টা করেছি অনেক। অবশেষে একাই রয়ে গেলাম।

আজ আবার দেখা দুজনের দু-প্রান্তে। তখনও বাসে, স্মৃতির প্রবল আকর্ষনে চোখদুটো প্রায় বন্ধ ছিল, আচমকাই চোখ খুলে দেখি ও নেই, মানে ও নেমে গিয়েছিল বাস থেকে। এত কাছে পেয়েও আজ হারাতে হল, অন্তত নিজের পরিচয়টুকু দিতে না অক্ষমতা বারবার আঘাত করতে লাগল। ওতো এত অভিমানী ছিলনা, না দেখেও না দেখার ভন করল বা নিজেকে সামনে আনতে চাইলনা, বাধা তো আমার ছিল, ওর ছিলনা। ওকি আজ আবদ্ধ না মুক্ত, সে প্রশ্নই বারবার সামনে চলে আসে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।