আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শহীদ আজাদের মা(মা-আনিসুল হক)

ঘুমিয়ে পড়ার আগে......

মা, কেমন আছ?..দোয়া করো। তোমার দোয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই। আমি নিজে কী ধরনের মানুষ আমি নিজেই বুঝতে পারি না। আচ্ছা তুমি বল ত সব দিক দিয়ে আমি কী ধরনের মানুষ। আমি তোমাকে আঘাত না দেওয়ার অনেক চেষ্টা করি।

তুমি আমার মা দেখে বলছি না;তোমার মত মা পাওয়া দুর্লভ। এই বিংশ শতাব্দীতে তোমার মতো মা আছে কেউই বিশ্বাস করবে না। আমি এগুলি নিজ হৃদয় থেকে বলছি,তোমার কাছে ভাল ছেলে সাজবার জন্য নয়। যদি আমি পৃথিবীতে তোমার দোয়ায় বড় বা নামকরা হতে পারি,তবে পৃথিবীর সবাই কে জানাব তোমার জীবনী,তোমার কথা। ... ইতি তোমার অবাধ্য ছেলে আজাদ(পৃষ্ঠা-২৫৯) [আনিসুল হকের লেখা-'মা'বইটি নিয়ে কিছু লেখার মত যোগ্যতা আমার হয় নি।

তবে শহীদ আজাদের ইচ্ছে ছিল তার মায়ের কথা সবাই জানুক,তাই আমিও শহীদ আজাদের ইচ্ছে অনুযায়ী সামান্য চেষ্টা করলাম...'মা' বই এর অল্প কিছু অংশ নকল করলাম] .. .. .... .. .. .. .. .. .... .. .. .. .. .. কিন্তু সে(আজাদ) তার বাবা কে ছেড়েছে শুধু তার মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য.. সে ছেড়েছে তো সব। প্রথম প্রথম অসুবিধা হয়েছে। কিন্তু মেনে কি সে নেয়নি?মা,এর মধ্য দিয়েই আমার বলা হয়ে গেছে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। মা, তুমি কি তা বুঝেছ। মা,আমি যদি আর ছাড়া না পাই,তাহলে তোমার আর কি থাকবে মা?..(পৃষ্ঠা-২২০) .. .. .... .. .. .. .. .. .... .. .. .. .. .. আবার প্রচন্ড জোরে মার।

দড়ির মতো করে পাকানো তার দিয়ে...আজাদ ওরে বাবা রে ওরে মা রে বলে কেঁদে উঠে। তখন তার নিজেরই বিস্ময় লাগে। যে বাবাকে সে দুই চোখে দেখতে পারে না...তাকে কেন তার মহান মায়ের সাথে এক করে ডাকল। তার উপর দিয়ে মারের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। যাক।

আজাদ এসব কথা মনে করবে না। সে তার মাকে ভাববে। তার মায়ের মুখ মনে করবে। তার মা দেখতে খুব সুন্দর..(পৃষ্ঠা-২১৯) .. .. .... .. .. .. .. .. .... .. .. .. .. .. রািএবেলা। গরাদের এপারে আজাদ।

ওপারে তার মা। ছেলেকে দেখে মায়ের সর্বান্তঃকরণ কেঁপে উঠে। কেঁদে উঠে। কিন্তু তিনি ছেলেকে কিছু বুঝতে দিতে চান না। আজাদের চোখ মুখ ফোলা।

ঠোঁট কেটে গেছে... ... ...কিন্তু তাঁর ছেলেকে তিনি রাজসাক্ষী হতে বলবেন?অন্যের ছেলেদের ফাঁসানোর জন্য?মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য? মুক্তিযোদ্ধাদের অসএগুলো পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য? ছেলে তাঁর যুদ্ধে যাওয়ার পরে একদিন বলে,মা,তুমি কিন্তু আমাকে কোনদিন ও মারো নাই..সে ছেলেকে ওরা কী মারটাই না মেরেছে! তিনি আর যা-ই হন না কেন,বেইমান হতে পারবেন না। ছেলেকে যুদ্ধে যেতে তিনিই অনুমতি দিয়েছেন। আজাদ বলে,মা কী করব?এরা তো খুব মারে.. ....বাবা রে,যখন মারবে,তুমি শক্ত হয়ে থাকো। সহ্য কোরো। কারো নাম যেন বলে দিও না।

আচ্ছা। মা,ভাত খেতে ইচ্ছে করে। দুই দনি ভাত খাই না। আচ্ছা ,কালকে যখন আসব,তোমার জন্য ভাত নিয়ে আসব। -(পৃষ্ঠা-২৩০) [এই ছিল আজাদের সাথে মা,এর শেষ দেখা।

আজাদের এই জীবনে আর ভাত খাওয়া হয় না,তাই আজাদের মা ও মৃত্যু পর্যন্ত ১৪ বছর আর ভাত খান নি। ] .. .. .... .. .. .. .. .. .... .. .. .. .. .. বার বার মনে হয় (জায়েদের) ৭১এর আগস্টের সেই দৃশ্যটা,আজাদ দাদা দরজার চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে আছে,মগবাজারের বাড়িতে,ঘরভরা আজাদের খালতো ভাই বোন,মা তাদের পাতে ভাত তুলে দিচ্ছে,রাত্রিবেলা,ইলেকট্রিসিটির হলুদ আলোয় পুরোটা ঘরের সব কাটা মানুষ যেন ভিজছে,কোন প্রসঙ্গ ছাড়াই আজাদ বলে,মা,তুমি কিন্তু মা আমাকে কোন দিনও মারো নাই....(পৃষ্ঠা-৩৪) .. .. .... .. .. .. .. .. .... .. .. .. .. .. খাওয়ার পরে,শোয়ার সময় তিনি আর খাটে শোন না;মাহুয়া,কচি,টিসু অবাক হয়ে দেখছে গত দু রাত ধরে আম্মা মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুইছেন। তারা বিস্মিত হয়ে,বলে,আম্মা,এইটা কি করেন,আপনে মাটিতে শুইলে আমরা বিছানাই শুই কেমনে,কিন্তু আম্মা কোন জবাব না দিয়ে মেঝেতেই শুয়ে পড়েন। মাথায় বালিশের বদলে দেন একটা পিঁড়ি। তখন কচি,১১ বছর বয়স,মাহুয়াকে বোঝায়,আম্মা যে দেখছে রমনা থানায় দাদা(আজাদ) মেঝেতে শুয়ে আছে,এই কারণে উনি আর বিছানায় শোয় না..[এর পরের ১৪ বছর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কোন দিন বিছানায় শোন নি।

](পৃষ্ঠা-২৩৫) .. .. .... .. .. .. .. .. .... .. .. .. .. .. ২৯ শে আগস্ট পেরিয়ে যায়। আসে ৩০ শে আগস্ট। আজাদের ধরা পড়ার ১৪ বছর পুর্ণ হওয়ার দিন। তিনি ভাগ্নে-ভাগ্নিদের ডাকেন। জায়েদ কে বলেন,শোন,আমার মৃত্যুর পর কবরে আর কোন পরিচয় লিখবে না,শুধু লিখবে-শহীদ আজাদের মা।

.. ..আজ ও যদি কেউ যায় জুরাইন গোরস্তানে,দেখতে পাবে কবরটা,আর দেখতে পাবে প্রস্তরফলকে উৎকীর্ণ মায়ের পরিচয়:মোসাম্মৎ সাফিয়া বেগম,শহীদ আজাদের মা। (পৃষ্ঠা-২৬১,২৬৬) .. .. .... .. .. .. .. .. .... .. .. .. .. .. করাচি থেকে লেখা আজাদ দাদার প্রথম চিঠিটা এত দিন পর পড়ে নানা কথাই মনে হয় জায়েদের। আজাদ কথার অর্থই তো স্বাধীন। আর দ্যাখো,তার আজাদ দাদা করাচিতে তার হোস্টেল দেখে প্রথমেই যেটা লক্ষ করল,তা হলো,চারিদিকের দেয়াল উঁচু,দেয়ালের ওপরে কাচ বসানো,গেট লোহার,আর পাশে ছোট। আশ্চর্য না?তার স্বাধীনতা যে এ হোস্টেলে থাকলে চলে যাবে,এটাই ছিল তার প্রথম চিন্তা--- আজাদরাই তো দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে আমাদের আজাদ করে গেল।

Click This Link (মা বই টা এই লিংক এ পাওযা যাবে--সুমি থেকে পাওয়া )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.