আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রর্দশনী প্রসঙ্গে প্রাথমকি ভাবনা/শাওন আকন্দ



প্রদর্শনীর মৌসুমকে সামনে রেখে লেখাটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। ) প্রর্দশনী প্রসঙ্গে প্রাথমকি ভাবনা শাওন আকন্দ আপাত দৃষ্টিতে 'প্রর্দশনী' একটি নিরীহ শব্দ। যদিও এই শব্দটির ব্যাপ্তি ও পরসির অনকে দুর র্পযন্ত বিস্তৃত। আমরা, আমাদের চারপাশে যত ধরণের প্রর্দশনীর আয়োজন হতে দেখি এবং আকাশ-সংস্কৃতরি বদৌলতে যত ধরণের প্রর্দশনীর খবর পাই - তাতে মাঝে মাঝে আমোদিত হই, কখনো বিরক্ত হই, কখনো ভালো লাগে, আবার কখনো হয়তোবা তা আমাদের র্স্পশই করে না। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকম হতে পারে।

কিন্তু আমরা সচরাচর ভেবে দেখিনা যে, 'প্রর্দশনী' বলতে আমরা এখন যা বুঝি - এই ধারনাটি কীভাবে তৈরি হলো? আর কীভাবেই-বা এই ধারনাটি বিস্তার লাভ করলো? সমস্যা হলো, প্রর্দশনী নানা রকমের হতে পারে। পুস্প কিংবা বৃক্ষ, চিত্র কিংবা ভার্স্কয, মোটর গাড়ি কিংবা মৃৎপাত্র, বস্ত্র কিংবা সমরাস্ত্র, নানা বর্ণের র্পোষাক কিংবা নারী-পুরুষের বচিত্রি প্রেমপত্র নিয়ে প্রর্দশনী হবার সংবাদ আমরা জানি। (বলাই বাহুল্য, এই তালিকা আরো র্দীঘ হতে পারে) এগুলো একধরণের প্রর্দশনী। আবার আরেক ধরণের প্রর্দশনী হয়ে থাকে যার আওতায় নাটক, থিয়েটার, সিনেমা, যাত্রা ইত্যাদি অর্ন্তভূক্ত। ফ্যাশন শোগুলোও এক ধরণের প্রর্দশনী যেখানে তরুণ-তরুণীরা পোষাক নাকি শরীর প্রর্দশন করে সেই মীমাংসায় পৌছানো মুশকলি।

এর বাইরেও আরেক ধরণের প্রর্দশনীর সংবাদ আমরা পাই- যেখানে ঔপনবিশেকি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষজন ইউরোপে ও আমেরিকায় আমদানি করা হতো র্দশকদের তামাশা দেখানোর নিমিত্তে। এই সব প্রর্দশনীতে মানুষজনকে বলা হতো 'প্রকৃত' (আসলে নির্মিত) গ্রামে তারা কিভাবে জীবনযাপন করে তা অভিনয় করে দেখাতে, যা দেখে র্দশকরা মজা পাবে। রাজনৈতিকভাবে নির্ভরশীল এইসব মানুষদের প্রর্দশনী হিসেবে আনা হতো যাতে র্দশকরা ভিন্ন জগতের স্বাদ পেতে পারে। ১৮৫০ থেকে ১৯২৫ র্পযন্ত এই ধরণের প্রর্দশনী ইউরোপে ও আমেরিকায় বড় বড় শহরে একাধিক বার অনুষ্ঠিত হয়েছে। (১) নৃবিজ্ঞানীরা বলনে, এভাবে আসলে মানুষ নয়Ñ প্রর্দশন করা হয়েছিল ক্ষমতা।

সেই হিসাবে, এগুলোকে ক্ষমতার প্রর্দশনীও বলা যেতে পারে। নৃবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ একথাও বলনে যে, এই তামাশাকরণ প্রক্রিয়া এখনো ঘটে, তবে ভিন্ন প্রক্রিয়ায়। যাই হোক, আসলে আপাত নিরিহ মনে হলেও যে কোন প্রর্দশনীর সঙ্গেই ক্ষমতা কাঠমো ও জ্ঞানকান্ডের সুক্ষè কিন্তু ল্যাপ্টাল্যাপ্টি সর্ম্পক বিদ্যমান। যেহেতু 'প্রর্দশনী' শব্দটির পরিসর অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। ফলে পুরো বষিয়টি বোঝার সুবিধার্থে আমরা এবার শুধু শল্পি(২) প্রর্দশনী নিয়ে আলোচনা করবো।

প্রাচীনযুগে মানুষ ঠিক কী কী কারণে মৃৎপাত্রে কিংবা গুহাভ্যন্তরে চিত্র রচনা শুরু করছেলি তা নিয়ে অনেকগুলো মতবাদ প্রচলতি আছে। সেই বিতর্কে না জড়িয়েও আমরা বলতে পারি যে, ইউরোপে যেরকম, তমেনি ভারতবর্ষেও, গোত্রভিত্তিক আদি মানুষ যে কোন কারণেই হোক শিল্প রচনায় প্রবৃত্ত হয়ছেলি; কিন্তু সেই সময় এই সব গুহাচত্রি কিংবা মৃৎপাত্ররে নকশা কিংবা ভার্স্কয দিয়ে কোন প্রর্দশনীর আয়োজন করা হয়েছিল Ñএমন তথ্য জানা যায় না। (৩) তবে এই অনুমান নিশ্চয় করা যায় যে, শিল্পকলার এই সব উদাহরণ কোন না কোন ভাবে কম বেশি প্রদর্শিত হতো। কেননা যেকোন শিল্পর্কম সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই তা কোন না কোন ভাবে প্রর্দশতি হবার সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায়। পরর্বতীকালে রাজনৈতিক ও র্ধমীয় পুরোহিতদের যোগসাজসে প্রথমে রাজ্য এবং ক্রমে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও বিস্তার লাভ করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে রাজার গৌরব ও র্ধমীয় মহিমা প্রচারের উদ্দেশ্যে যে সকল মাধ্যমকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তার একটি হলো শিল্পকলা। ইউরোপে ও ভারতর্বষেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আর একথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পৃথিবীর শিল্পকলার একটি বড় অংশই র্ধমীয় কাহিনী/মিথ/র্দশন নির্ভর এবং এগুলো মঠ, মন্দির, র্গীজার পৃষ্ঠপোষকতায়, নির্দেশে ও তত্ত্বাবধায়নে নির্মিত হয়েছে। রাজার গৌরব বা র্ধমীয় মহিমা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে রচিত/নির্মিত এসব শিল্পকলা অবশ্যই কোন না কোনভাবে প্রর্দশিত হতো তবে সেগুলো এখন আমরা প্রর্দশনী বলতে যা বুঝি, ঠিক তা ছিল না। আবার মুঘল সম্রাটদের অনেকেই যে শিল্পকলার গুণাগ্রাহী ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তা এখন সকলেই জানেন।

কিন্তু মুঘল সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত অর্পূব সব শিল্পর্কম দেখার সুযোগ সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। সম্রাটের অনুগ্রহপ্রাপ্ত কিংবা পারিষদদের কেউ কেউ কিংবা বিশেষ সম্মানিত অতিথিরা এই শিল্পর্কম দেখার সুযোগ পেতেন। ফলে মুঘল সংগ্রহশালাকেও আমরা এখন প্রর্দশনী বলতে যা বুঝি, তা বলতে পারছিনা। তবে, এর বাইরেও একটি ধারা ছিল। লোকায়ত পটশিল্পীরা গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, রাস্তায় চিত্রিত পট প্রর্দশন করেছেন গান গেয়ে গেয়ে।

প্রায় আড়াই হাজার বছর র্পূবে অর্থ্যাৎ খ্রীষ্টর্পূব ৫০০ অব্দেও এই ধারা প্রচলতি ছিল বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের বৌদ্ধগ্রন্থাকার বুদ্ধঘোষের লেখা থেকে জানা যায় যে গৌতম বুদ্ধ স্বয়ং একটি চরণ-চিত্র দেখে বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। চরণ-চিত্রের র্বণনা দিতে গিয়ে বুদ্ধঘোষ লিখেছেন যে এই ধরনের চিত্রে একটি ছবির নিচে আরেকটি ছবি আঁকা হয়Ñ যেমনটি দেখা যায় বাংলার পটচিত্রে। (৪) আবার বানভট্ট রচিত র্হষচরিত-এ র্বনিত হয়েছে যে যুদ্ধত্রেক্ষ থেকে থানেশ্বর নগরে প্রবেশের মুখে র্হষর্বধন একজন 'পট্টিকার'(পটুয়া) কে দেখলেন যে এক ভয়ানক চেহারার মোষের উপর উপবিষ্ট যমের কথা বলতে বলতে তিনি (পটুয়া) ডান হাতে ধরা একটি লাঠি দিয়ে বাঁ হাতে ধরা এক ঝুলন্ত ছবির দিকে নির্দেশ করছনে। (৫) পতঞ্জলির মহাভাষ্যে উল্লিখিত হয়েছে যে, লোকশিল্পী পথের ধারে জনতাকে আঁকা পটের সাহায্যে কংস বধ পালা শোনাচ্ছনে।

(৬) এ ছাড়া খ্রিস্ট র্পূবর্বতী সংস্কৃত সাহিত্যে যেমন, অভিজ্ঞান শকুন্তলা, মাল বিকাগ্নিমিত্রম, উত্তর রামচরতি, মুদ্রারাস প্রভৃতি গ্রন্থে প্রাচীন উপমহাদেশের চিত্রকারদের র্বণনা পাওয়া যায়। পটুয়া এবং পটচিত্র প্রর্দশনের এই ধারা বিভিন্ন ক্রম বির্বতন ও পরির্বতনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সাধারণ মানুষই এই পট সংগ্রহ করতেন। কখনো কখনো অভিজাত র্বগের পৃষ্ঠপোষকতাও পটুয়ারা পয়েছেনে। তবে পটুয়াদের এই প্রর্দশন রীতিকেও আমরা এখন যাকে চিত্র প্রর্দশনী বলি তা বলতে পারছিনা।

আবার মন্দিরের র্গভগৃহে (কিংবা অন্য কোথাও) বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা র্ধমীয় কারণে বিভিন্ন উৎসবে, পূজা-র্পাবণে প্রর্দশিত ও ব্যবহৃত হতো । কিন্তু সেটাও এখন আমরা প্রর্দশনী বলতে যা বুঝি তা নয়। তাহলে চিত্র প্রর্দশনী বলতে আমরা এখন যা বুঝি- অর্থ্যাৎ এক বা একাধিক ফ্রেমেবন্দী বেশ কিছু শিল্পর্কম সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে/ ঝুলিয়ে রাখা, যেখানে অবশ্যই র্পযাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। হতে পারে কক্ষটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ব্যক্তিগত কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আয়োজিত প্রর্দশনীতে শিল্পর্কম বেচাবিক্রির ব্যবস্থা থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে।

আর র্দশকরা যাতে শিল্পর্কমগুলোকে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারে সেজন্য নেপথ্যে মৃদু সঙ্গীতের ব্যবস্থাও থাকতে পারে। চিত্র প্রর্দশনীর এই ধারনাটি আমাদের ভেতরে কিভাবে উদ্ভব হলো? শুনতে ভালো লাগুক আর নাই লাগুক- একথা বলতেই হচ্ছে যে, চিত্র প্রর্দশনীর এই ধারনাটিও, আরো অনেক কিছুর মতো আমাদরে দেশে পশ্চিম থেকে আমদানি করা হয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে এই ধারণাটি আমাদের এখানে প্রর্বতিত ও প্রচলতি হয়েছে। তবে কি ব্রিটিশরা এই ধারনাটি উদ্ভব করেছে? না, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। মজার বিষয় হচ্ছে, ব্রিটিশরা এই ধারনাটি ধার করেছিল ফরাসী ও ইতালীয়দের কাছ থেকে।

একটি বিশেষ সামাজিক, র্অথনতৈকি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইউরোপে বিশেষ করে ইতালী ও ফ্রান্সে চিত্রপ্রর্দশনীর এই ধারণাটি উদ্ভব ও বিকাশ লাভ করেছিল যাতে ব্রিটিশদের কোন ভূমিকাই ছিলনা। বিষয়টি বোঝার জন্য সংক্ষেপে সেই প্রেক্ষাপটটা একবার আলোচনা করা যাক। রেনেসাঁ র্পূবকালে ইউরোপের রাজা মহারাজা ও র্ধমীয় পুরোহিতদের ক্ষমতার মূল উৎস ভূমিরাজস্ব ও কৃষি পণ্যের উপর নির্ভরশীল ছিল। পনের- ষোল শতকে ইতালীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সূত্র ধরে আরেকটি নতুন শ্রেনীর আবির্ভাব ঘটে যারা ব্যবসা-ব্যাংক-বীমা ইত্যাদিতে টাকা খাটিয়ে প্রভূত অর্থ ও সম্পত্তরি মালিক হয়ে উঠে। যারা ভূমি বা কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল না।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, এসময় র্সবপ্রথম ইউরোপে পুঁজিবাদের সঞ্চার ঘটেছিল বানিজ্যিক পুঁজিকে কেন্দ্র করেÑ যা সাবেকী কৃষিভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে আঘাত করে । এই পুঁজিপতিরা এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে রাজারাও কখনও কখনও এদের কাছ থেকে ধার/ঋণ নিতেন। এমনই এক পুঁজিপতি পরিবার ছিল মেদেসি পরিবার। রেনেসাঁ যুগের অনেক বিখ্যাত শিল্পী এই পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে মিকেল অ্যাঞ্জেলো ও লিওর্নাদো দ্য ভিঞ্চির নাম উল্লেখ করা যায়।

মেদেসি পরিবার থেকে কেউ কউ রাজা কিংবা পোপ র্পযন্ত হয়েছিলেন। যেখানে পুঁজির সমাবেশ ও বিকাশ ঘটে সেখানে পৃষ্টপোষকতার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। সাধারণত: বিকশিত পুঁজির একটি উপচিত অংশ সংস্কৃতির পৃষ্টপোষকতার কাজে ব্যয় হয়। ইতালীতে ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটেছিল। রাজা ও র্গীজার বাইরে নতুন এই পৃষ্ঠপোষক শ্রেণী যে কারণে শিল্পকলায় পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এসেছিল তা কিন্তু নতুন কিছু নয়।

মূলত নাম মাহাত্ম ও আত্মগরিমা প্রচারের নিমিত্তে এই নব্য পুঁজিপতি শ্রেণী শিল্পকলায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। আর এই নতুন পৃষ্ঠপোষক শ্রেণীর সহযোগিতায় তৎকালীন শিল্পীরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অবস্থান উন্নত করে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। মনে রাখতে হবে যে, এর আগে ইউরোপে শিল্পীদের সামাজকি অবস্থান মোটেও সম্মানজনক ছিল না(একই পরিস্থিতি ছিল ভারতর্বষেও)। সেই সময় ইউরোপে সমবায় প্রথায় পরিচালিত গিল্ড বা কারখানাগুলোতে নানা ধরনের কাজ করা হতো। যেমন- হাড়ি কলসী নির্মান, পাথর কাটা, বিভিন্ন ধরণের নকশা কিংবা খোদাইয়ের কাজ, ঘোড়ার নাল তৈরি,পদকের ডিজাইন, র্মূতি বা ভার্স্কয নির্মান, ছবি আঁকাÑ সবই একই মাপের ও মানের কাজ বলে বিবেচিত হতো।

কোন উচুঁ-নীচু ভেদ ছিল না। নতুন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগিয়ে শিল্পীদের কেউ কেউ কারখানার নিগড় থেকে বেরুতে চাইলেন। এজন্য তারা যে কাজটা করলেন- তাহলো একাডেমি স্থাপন। (৭) এতদনি র্পযন্ত প্রচলতি একত্রীভূত বিষয় থেকে একাডেমির জন্য তিনটি বিষয় আলাদা করা হলোÑএগুলো হলো চিত্রকলা, ভার্স্কয ও স্থাপত্য। এই তিনটি বিষয়কে বেছে নেয়ার কারণ হলো, তাঁরা বলতে চাইলেন, এই তিনটি মাধ্যমে করা শিল্পর্কম হয় অনন্য ও অদ্বিতীয়।

একই জিনিস বারবার গড়া হয়না, যেমনটি হয় হস্তকলার অন্যান্য মাধ্যমে। আর তাছাড়া এগুলো দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগেনা কিন্তু বিত্ত ও বৈভব প্রকাশের উপায় হতে পারে। এভাবে হস্তিশল্পের অন্যান্য বিষয় থেকে এই তিনটি বিষয়কে আলাদা করে একাডমি প্রতষ্ঠার পেছনে শিল্পীদের সহায়ক হিসেবে অত্যন্ত র্কাযকর ভূমিকা পালন করেছিল পুঁজিপতি গোষ্ঠী। পুঁজিপতি গোষ্ঠীর/পরিবারের সহায়তা ছাড়া শিল্পীদের পক্ষে কখনই একাডেমি প্রতিষ্ঠা সম্ভব ছিলনা। একাডেমি প্রতিষ্ঠায় শিল্পীদের ভূমিকার পাশাপাশি পুজিপতিদের ইতিবাচক অবস্থানও কোন ভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

তবে একাডেমী স্থাপনে শিল্পীদের সামাজিক অবস্থান উন্নতির আকাঙ্খা নাকি পুঁজিপতি গোষ্ঠীর ক্ষমতা ও বৈভব প্রর্দশনের বাসনা কোনটা বেশি গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করেছিল Ñতা নিয়ে অবশ্য র্তক চলতে পারে। বিশেষ কোন ঘোষণা বা প্রচারপত্র বিলি করে তো একাডেমির প্রতিষ্ঠা হয়নি! ষোল শতকের শেষার্ধে ইতালীর বিভিন্ন শহরে ও রাজ্যে একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রবণতা ল্যক্ষ করা যায়। যেমন, ১৫৬২(মতান্তরে ১৫৬৩) খ্রিস্টাব্দে ফ্লোরেন্সে গ্রান্ড ডিউক, মেদেচি পরিবারের প্রথম কোসিমোর সহায়তায় ভাসারি অ্যাকাদেমীয়া দেল ডিজাইঞো(অপপধফবসরধ ফবষ উরংবমহড়) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে রোমে জুচ্চারির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যাকাদেমীয়া ডি সান লুকা(অপপধফবসরধ ফর ঝধহ খঁপধ) ইত্যাদি। আর ভাসারির একাডেমীর হাত ধরে, এখানকার ছাত্রদের কাজ নিয়ে, ইতালীতে প্রর্দশনীর সূত্রপাত হয় ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে।

(৮) লক্ষনীয় যে, প্রায়শই,এই প্রর্দশনীগুলো হতো র্ধমীয় উৎসবের অনুষঙ্গে। কিন্তু সতের শতকে পরিস্থিতি আবার পাল্টে গেল। ফরাসীরা তখন ইউরোপের প্রবল পরাক্রান্ত শক্তি। ফ্রান্সের রাজা চর্তুদশ লুই রোম-ফ্লোরেন্স-ভেনিস থেকে ইউরোপীয় শিল্পর্চচার রাজধানী পারিতে স্থানান্তরিত করলেন। সতের শতকে চর্তুদশ লুই-এর পৃষ্ঠপোষকতায় স্থাপতি হলো রাজকীয় সাহিত্য একাডেমী (১৬৩৩)।

ক্রমে স্থাপতি হলো স্থাপত্য ও বিজ্ঞান একাডেমী। ১৬৪৮ খ্রীস্টাব্দে স্থাপিত হলো রাজকীয় চিত্রকলা ও মুর্তিকলা একাডেমী। র্ধমের আঁতাত ছাড়াই এখান থেকে রাজার গরিমা সরাসরি প্রচার করা হতো। ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে রাজকীয় সনদ বলে এই শিল্পকলা একাডেমিকে একটি আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হলো। রাজা কিংবা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্যরা শিল্প প্রেমে মগ্ন ছিলেন এমন মনে করার কোন কারণ নেই।

মূলত রাজার মহিমা ও গৌরব প্রচারই ছিল এই প্রতিষ্ঠানের ল্যক্ষ ও উদ্দেশ্য। একদল শিল্পী সরকারের তাঁবেদারী করে পরিচালন র্পষদের র্কতাব্যক্তি হয়ে দেশের চারুশিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করলনে। বিখ্যাত শিল্পী দেলাক্রোয়া যখন একাডেমির সদস্যপদে নির্বাচিত হবার জন্য একাডেমীর অন্যতম সদস্য অ্যাঁগ্র'র সাহায্য র্প্রাথনা করেছিলেন তখন অ্যাঁগ্র তাঁকে যা বলেছিলেন তা শুনে তৎকালীন পরিস্থিতি সর্ম্পকে খানিকটা ধারণা করা যেতে পারে। দেলাক্রোয়াকে অ্যাঁগ্র বলেন,'জনাব, আপনি যে খুব ভালো আঁকিয়ে সে বিষয়ে তো কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনি এমন সব মত পোষণ করেন যা খুব বপিদজনক।

'(৯) উনিশ শতকের ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর অগস্ত্য রোদাঁ এই একাডেমির বিদ্যালয়ে র্ভতি পরীক্ষায় অকৃতর্কায হয়েছিলেন এবং সাত বছর ইমারত মিস্ত্রির কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। (১০) এরকম ছিল যে প্রতিষ্ঠানের চরিত্র সেই প্রতিষ্ঠানের আয়োজনেই রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ১৬৬৭(মতান্তরে ১৬৭৩) খ্রিষ্টাব্দ থেকে ফ্রান্সে শিল্প প্রর্দশনীর সূত্রপাত হয়েছিল। (১১) যেটি ক্রমে স্যাঁলো ডি পারি (ঝধষড়হ ফব চধৎরং) নামে বিশ্ববিখ্যাত হয়। তবে এর আগে একাদেমীর বিদ্যালয়(প্রিতষ্ঠা : ১৬৬৪) প্রতিবছর ২৫ অগাস্ট 'রোম পুরস্কার' উপলক্ষে ছাত্রদের কাজ নিয়ে একটি প্রর্দশনীর আয়োজন করা হতো। এক হিসাবে এটাকে ফ্রান্সের প্রথম প্রর্দশনী বলা যেতে পারে।

(১২) তবে গুরুত্বের দিক দিয়ে একাডেমীর র্বাষিক প্রর্দশনীর সঙ্গে এর তুলনা চলে না। উল্লেখ করা যেতে পারে, ইতালীর প্রর্দশনীর চেয়ে এই প্রর্দশনী(র্বাষিক স্যালোঁ) তুলনামূলক র্দীঘস্থায়ী ছিল(এক থেকে তিন সপ্তাহ)। আর প্রর্দশনীর স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল র্গীজার পরির্বতে হোটেল বা মিউজিয়াম। এবং এই তথ্যও গুরুত্বর্পূণ যে, দরবারী সংস্কৃতির প্রসারে তখন একাডেমীর র্বাষিক প্রর্দশনীই ছিল একমাত্র অনুমোদিত প্রর্দশনী। অন্যান্য সকল ব্যক্তিগত ও বেসরকারি প্রর্দশনী সেসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল।

(১৩) ফরাসী রাজা চর্তুদশ লুইয়ের শাসনামলেই ফরাসী আদব-কায়দা ও চালচলন সমগ্র ইউরোপে সমাজের উঁচুশ্রেণীর........

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.