আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফতোয়া ১৫ - প্রসঙ্গ : তাড়াহুড়া করা শয়তানের কাজ

"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "

প্রশ্ন : দু'টি কথা সাধারণত আমরা মানুষের মুখে শুনি, এই দুটি কথা একটি অপরটির বিপরীত। প্রথম কথা হচ্ছে তাড়াহুড়া করা শয়তানের কাজ। অন্য কথা হচ্ছে, সর্বোত্তম নেকী সেটি যা তাড়াতাড়ি করা হয়। উভয় কথা কি হাদীসের বাণী? যদি হয়ে থাকে তবে উভয় কথার মধ্যে সমন্বয় সাধন কিভাবে সম্ভব? যদি হাদীস না হয় তবে এর মধ্যে কোন কথা সত্য কোন কথা মিথ্যা? উত্তর : প্রথম কথাটি হাদীসের অংশ।

পুরো হাদীসটি হচ্ছে, 'আল আনাতু মিনাল্লাহি ওয়ার উজলাতু মিনাশ শাইত্বান'। ^ ধীরে ধীরে ভালোভাবে কাজ করা আল্লাহর গুণ। তাড়াহুড়া করা শয়তানের বৈশিষ্ট্য। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তাড়াহুড়া করাকে সকল যুগে সকল কওম অপছন্দের দৃষ্টিতে দেখেছে। পক্ষান্তরে ধীরে সুস্থে ভালো ভাবে কাজ করার প্রশংসা সকল যুগের সচেতন লোকেরা করেছেন।

এই বিষয়ের বিখ্যাত একটি কথা হচ্ছে, 'ফিত্তানিছ ছালামাতি ওয়া ফিল উজলাতিন নাদামাতি'। ধীরে সুস্থে কাজ করার মধ্যে প্রশংসা রয়েছে, আর তাড়াহুড়ার মধ্যে লজ্জা রয়েছে। ইবনে কাইয়েম বলেছেন, তাড়াহুড়াকে শয়তানের কাজ বলার কারণ হচ্ছে, তাড়াহুড়া করে যে ফয়সালা করা হয়, ওতে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ক্রোধ এবং উত্তেজনা শামিল থাকে। এর ফলে বান্দা আত্মমর্যাদা ব্যক্তিত্বশীলতা থেকে দূরে সরে যায়। এর ফল সবসময়ই খারাপ হয়।

রসূল (স.)-এর একটি হাদীসে রয়েছে, 'ইসতিজাবুত তাআব্বুদি মা-লাম ইয়াতায়াজ্জাল'^^ অর্থাৎ বান্দার দোয়া কবুল হয় যদি সে তাড়াহুড়া না করে। অপর কথাটি হাদীস নয়। তবে হযরত আব্বাস (রা.) থেকে একই রকমের একটি বক্তব্য জানা যায়। তিনি বলেন, ভালো কাজ তখনই পূর্ণতা পায় যখন সে কাজ তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করা হয়। এই বক্তব্যে ভালো কাজ তাড়াতাড়ি করার কথা বলা হয়েছে।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নেকী এবং কল্যানের কাজে তাড়াহুড়া করা এবং সে কাজে দ্রুত অগ্রসর হওয়া একটি পছন্দনীয় এবং প্রশংসনীয় গুণ। আল্লাহ তায়ালাও এ রকম লোকদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, '(সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ, যারা নেকীর কাজে সদা তত্পর থাকে; (উপরন্তু) তারা (সবার চাইতে) অগ্রগামীও। ' (সূরা মোমেনুন, আয়াত ৬১) অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'অতএব তোমরা (আসল) কল্যানের দিকে অগ্রসর হবার কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো। ' (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৪৮) অতএব উপরোক্ত বক্তব্য অর্থ এবং তাত্পর্যের দিক থেকে সঠিক।

যদিও এটি হাদীস নয়। এই বক্তব্য এবং হাদীসের মধ্যে অর্থ এবং তাত্পর্যের দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। কাজেই সমন্বয়েরও প্রয়োজন হয় না। আলেমরা তিনটি শর্তে ধীরে সুস্থে কাজ করাকে প্রশংসনীয় এবং তাড়াহুড়া করাকে নিন্দনীয় বলেছেন। ১. প্রথম শর্ত হচ্ছে সেই কাজটি যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য ও কল্যাণ, যে কাজ নেকীর আওতায় পড়ে সে কাজে তাড়াহুড়া করা শুধু প্রশংসনীয়ই নয় বরং এটাই প্রত্যাশিত।

রসূল (স.) হযরত আলী (রা.)-কে বলেছিলেন, হে আলী, তুমি তিনটি কাজে কখনো দেরী করবে না। এক. নামাযের সময় হলে নামায আদায় করার ক্ষেত্রে। দুই. জানাযা সামনে এনে হাজির করা হলে দাফনের কাজে। তিন. কুমারী মেয়ের জন্যে (উপযুক্ত) বর পাওয়া গেলে তার বিবাহে দেরী করবে না। ^^^ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আবুল আইনাকে কেউ একজন তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করলে তিনি বলেন, যদি এ রকমই হয় তবে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহকে বলতেন না, 'আমি তোমার কাছে আসতে তাড়াতাড়ি করলাম, যাতে করে মালিক তুমি আমার ওপর সম্তুষ্ট হও।

' (সূরা ত্বাহা, আয়াত ৮৪) ২. দুটি ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করা নিন্দনীয়। কোনো কাজ চিন্তা ভাবনা না করে করা। কোনো কাজের ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা এবং পরামর্শ করা হলে সে কাজে টালবাহানা করা প্রশংসনীয় নয়। এ রকম করা অলসতার নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'কাজ কর্মের ব্যাপারে এদের সাথে পরামর্শ করো।

অতঃপর (সেই পরামর্শের ভিত্তিতে) একবার যখন সংকল্প নিয়ে নেবে তখন (তার সফলতার জন্যে) আল্লাহর ওপর ভরসা করো। ' (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯) ৩. ধীরে সুস্থে কাজ করার অর্থ এটা নয় যে, মানুষ এতোটা দেরী করবে যে, উদ্দেশ্য নষ্ট হয়ে যাবে অথবা প্রত্যাশিত কাজ হবে না। কারণ সময় চলে গেলে আফসোস করে কোনো লাভ হবে না। তথ্যসূত্রঃ ^ তিরমিযী শরীফের বর্ণনা। হাদীসটি হাসান গরীব।

মুনযেরী বলেছেন, এই হাদীসের রাবী ছেকা অর্থাৎ বিশ্বস্ত। ^^ বোখারী ও মুসলিমের বর্ণনা। মূল বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত আবু হোরায়রা (রা.)। ^^^ তিরমিযীর বর্ণনা। শেখ শাকের বলেছেন, এই হাদীসের সনদ সহীহ।

*** জবাব দিয়েছেন শায়খ ইউসুফ আল কারদাওয়ী *** *** অনুবাদ করেছেনঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ ***

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।