আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উইলিয়াম ডারলিম্পলের দি লাস্ট মোগল থেকে ( পর্ব-১ )

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

যুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জনক হিসেবে সুপরিচিত ‘দি টাইমস’ এর সাংবাদিক উইলিয়াম হাওয়ার্ড রাসেল ১৯৫৮ সালের জুনে দিল্লির ধ্বংসাবশেষে গিয়ে পৌছেছিলেন। ইনডিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অবরোধের পর বৃটিশরা তখন দিল্লিকে দখল করে নিয়েছিল। রাস্তায় তখনো মাথার খুলি ছড়ানো-ছিটানো ছিল। নগরীর মিনারগুলো তখন ছিদ্রপূর্ণ গুহার মতো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মোগলদের রাজপ্রাসাদ রেড ফোর্টের দেয়ালের প্রাচীর তখনো চমতকার দেখাচ্ছিল।

‘আমি নিজে সেখানে অধিকতর তাতপর্যপূর্ণ পরিস্থিতি দেখতে পেরেছি। ’ এমনটাই নিজ ডায়রিতে লিখেছেন রাসেল। তিনি আরো লিখেন, উজ্জ্বল রেড ওয়াল-এর বৃহ পরিসীমা আমাকে রাজপ্রাসাদটির শেষ অংশ সম্পর্কে মনে করিয়ে দেয়। রাসেলের শেষ গন্তব্যস্থানের তুলনায় অন্য সবই কম আকর্ষণীয় ছিল। রেড ফোর্টের মধ্য দিয়ে একটি অন্ধকার এবং নোংরা পেছনের গলি পার হয়ে রাসেল একটি সেলে পৌছে যান।

সেখানে তিনি ৮৩ বছর বয়স্ক রোগা একজন বৃদ্ধকে দেখতে পান। এই ব্যক্তিকেই বৃটিশদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালের বিশাল বিদ্রোহের পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তখন পর্যন্ত এ বিদ্রোহ ছিল বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের জন্য পশ্চিমি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক কর্মকান্ড। ‘তার ছিল ঝাপসা, অন্যমনস্ক চোখ। স্বপ্নালু বৃদ্ধটির নিচের ঠোটটি যেন নিস্তেজভাবে ঝুলে আছে।

দাতহীন মাড়িও দেখা যায়। ’ এমনটাই লিখেছেন বিস্মিত রাসেল। একটি কথাও তার ঠোট দিয়ে বের হয়নি; রাত-দিন তিনি চুপ হয়ে বসে ছিলেন। চোখ দিয়ে কেবল মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। যে শর্তে তিনি অন্তরীণ তা নিয়েই হয়তো লোকটি ভাবতেন।

খুবই বৃদ্ধ বয়সেও তার তীক্ষè একটা চাহনি ছিল। কেউ কেউ তাকে তার লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে কথা বলতে শুনেছে। আবার পোড়া কাঠি দিয়ে দেয়ালে কবিতা লিখতেও দেখেছে। কারাগারে আটক লোকটিই শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকারী এবং আকবর, জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহানের বংশধর।

রাসেল নিজে তাকে দেখেছেন। তার উপকারকারীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য তাকে অকৃতজ্ঞ বলা হতো। কোনো সন্দেহ নেই তিনি দুর্বল এবং উদাসীন বৃদ্ধ ছিলেন। অকৃতজ্ঞ বলার ব্যাপারটি অন্য প্রসঙ্গ। তার কাছ থেকে ক্রমাগত পিতৃপুরুষদের সম্পত্তি দখল করে নেয়া হয়েছিল।

তিনি শুধু উপাধিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন। তারচেয়ে শূন্য ছিল সরকারি অর্থভান্ডার। প্রাসাদ ছিল কপর্দকশূন্য রাজকন্যাদের দ্বারা পরিপূর্ণ। এটি আসলেই সত্যি ঘটনা ছিল।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.