আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফতোয়া ৭ - প্রসঙ্গ : একটি আয়াতের ব্যাখ্যা

"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "

প্রশ্ন : নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করুন। 'এই রাজা বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে (বিজয়ীর বেশে) প্রবেশ করে তখন তাকে তছনছ করে দেয়, সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অপদস্থ করে ছাড়ে, (তোমরা দেখবে) এরাও (ঠিক) তাই করবে। ' (সূরা আন নামল, আয়াত ৩৪) উত্তর : এই আয়াতের ব্যাখ্যা যদি এটা নেয়া হয়, যে, 'কোনো বাদশাহ কোনো জনপদে বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করার পর সেই জনপদ ধ্বংস করে দেন এবং অভিজাত শ্রেনীর লোকদের অপমান করেন,' তবে ভুল ব্যাখ্যা করা হবে। এই আয়াতের অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষিতে দেখা যায় যে, এই আয়াত সাবার রাণী বিলকিসের কাহিনীর প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে।

হুদহুদ হযরত সোলায়মান (আ.)-কে এই খবর দিয়েছিলো যে, 'আমি সেখানে এক রমনীকে দেখেছি, তাদের ওপর সে রাজত্ব করছে, (তাকে দেখে মনে হলো) তাকে (দুনিয়ার) সব কয়টি জিনিষই (বুঝি) দেয়া হয়েছে, (তদুপরি) তার কাছে আছে বিরাট এক সিংহাসন। ' (সূরা আন নামল, আয়াত ২৩) হযরত সোলায়মান (আ.) বিলকিসের কাছে একখানা চিঠি দেন। সেই চিঠিতে তাকে ইসলাম গ্রহনের দাওয়াত দেয়া হয় এবং কোনো বিদ্রোহ না করে স্পষ্ট আনুগত্যের আদেশ দেয়া হয়। বিলকিস তার দরবারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে এক পরামর্শ সভায় মিলিত হন। হযরত সোলায়মান (আ.) এর চিঠির কি জবাব দেয়া যায় এটাই ছিলো আলোচ্য বিষয়।

সভাসদরা বললেন, আমাদের যথেষ্ট শক্তি রয়েছে, ভয়ের কোনো কারণ নেই। রাণী যে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা সবাই সেটাই সমর্থন করবো। এ কথা শোনার পর সাবার রাণী উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। রাণী তার সভাসদদের জানান যে, কোনো বাদশাহ যখন অন্য কোনো দেশ অধিকার করেন এবং বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করেন তখন সেই জনপদের পরিণাম এ রকম হয় যে, বিজয়ী বাদশাহ সেই জনপদ ধ্বংস করেন। সেই দেশের অভিজাত লোকদের অপমান করেন।

ইতিহাসে সাক্ষ্য রয়েছে, যখনই কোনো শক্তিশালী বাদশাহ কোনো দেশে বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করেছে তখন সেখানে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছে এবং সেই জনপদের পরিণতি ওরকমই হয়েছিলো, উপরোক্ত আয়াতে সে বিবরণ দেয়া হয়েছে। তবে এ কথার অর্থ এটা নয় যে, সকল বাদশাহ ওরকমই হন। অধিকৃত রাজ্যে সবাই একই রকম আচরণ করেন না। কারণ বাদশাহদের মধ্যেও ভালো-মন্দ থাকে। শাসনক্ষমতা যখন ভালো লোকদের হাতে থাকে তখন সেই বাদশাহ গঠনমূলক এবং সংস্কারের কাজ করেন।

আর মন্দ লোকদের হাতে যখন শাসন ক্ষমতা যায় তখন তারা ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। কোরআনে দুই রকমের বাদশাহদের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। ভালো বাদশাহদের মধ্যে কোরআনে তালুত, হযরত দাউদ, হযরত সোলায়মান (আ.)-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ইউসুফ (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা বাদশাহী দান করেছিলেন, তখন তিনি এভাবে শোকরিয়া আদায় করেছেন। 'হে (আমার) মালিক, তুমি আমাকে (যেমনি) রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো, (তেমনি) স্বপ্নের ব্যাখ্যা (সহ দুনিয়ার আরো বহু বিষয় আসয়) শিক্ষা দিয়েছো, হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, তুমিই আমার একমাত্র অভিভাবক - দুনিয়াতে আখেরাতেও।

একজন অনুগত বান্দা হিসেবে তুমি আমার মৃত্যু দিয়ো এবং (পরকালে) তুমি আমাকে নেককার মানুষদের দলে শামিল করো। ' (সূরা ইউসুফ, আয়াত ১০১) সূরা কাহাফে বাদশাহ যুলকারনায়নের আলোচনা রয়েছে। তিনি ছিলেন একজন পুন্যবান বাদশাহ। বাদশাহ ও শাসক যদি ভালো মানুষ হন তবে মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ট মানুষে পরিণত হন। হাদীসে রয়েছে, রসূল (স.) বলেন, ইনসাফপ্রিয় বাদশাহর একদিন ষাট বছরের এবাদাতের চেয়েও উত্তম।

(তিবরানী) কোরআনে সেই সকল বাদশাহর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা যমীনে ফাছাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছিলো। যেমন হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সমসাময়িক বাদশাহ ছিলো নমরুদ। সে নিজেকে খোদা দাবী করেছিলো। সে ইবরাহীম (আ.) আনীত দ্বীন ইসলামের পথে বাধা সৃষ্টি করার জন্যে তারপক্ষে সম্ভব সবকিছু করেছিলো এবং হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ওপর যে রকম অত্যাচার করেছিলো ইতিহাস গ্রন্থে তার বিবরণ রয়েছে। হযরত মূসা (আ.)-এর সমসাময়িক বাদশাহ ছিলো ফেরাউন।

কোরআনে তার কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। সে প্রকাশ্যে বলতো, 'ফেরাউন বললো, হে আমার পরিষদরা, আমি তো জানি না যে, আমি ছাড়া তোমাদের আরও কোনো মাবুদ আছে !' (সূরা আল কাছাছ, আয়াত ৩৮) সূরা কাহাফে সেই অত্যাচারী বাদশাহর বিবরণ উল্লেখ রয়েছে যে বাদশাহ প্রত্যেক অচেনা মানুষের নৌকা নিয়ে নিতো। কোরআনে বলা হয়েছে, 'তাদের সামনেই ছিলো (এমন) এক বাদশাহর (এলাকা), যে বাদশাহ (ত্রুটিবিহীন) যে নৌকাই পেতো, তা বল প্রয়োগে ছিনিয়ে নিতো। ' (সূরা আল কাহফ, আয়াত ৭৯) বাদশাহী এবং শাসন ক্ষমতা কোনো খারাপ জিনিস নয়। যার হাতে এই নেয়ামত থাকে সেই ব্যক্তির ভালো বা মন্দ হওয়ার ওপরই বাদশাহীর ভালো-মন্দ নির্ভর করে।

যদি সেই ব্যক্তি এই ক্ষমতাকে নেয়ামত ভেবে উন্নতি ও সংস্কারের কাজে ব্যবহার করে তবে সকল মানুষের জন্যে নেয়ামতের কারণ হয়ে দেখা দেয়। যেমন হাদীসে রয়েছে, অর্থ সম্পদ যদি ভালো মানুষের মালিকানায় যায়, তবে কি যে ভালো কাজ হয়। (মোসনাদে আহমদ) বিপরীত অবস্থায় এই নেয়ামতই আযাবের কারণ হয়ে দেখা দেয়। উপরোক্ত আয়াতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে। যে আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন।

*** জবাব দিয়েছেন শায়খ ইউসুফ আল কারদাওয়ী *** *** অনুবাদ করেছেনঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ ***

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।