আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ষার বিষাদ মাখা বাদলও দিনের ফুল..(চতুরভূজ)

ধুলো থেকে আগমন আবার ধুলোতেই প্রত্যাবর্তন

রুপকথার সেই প্রিন্সেস সিনড্রেলা থেকে শুরু করে আধুনিক এই পৃথিবীর সকল মেয়েরাই স্বপ্ন দেখে কোনো এক প্রিন্স চার্মিং এসে তাকে পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়িয়ে স্বপ্ন দেশে নিয়ে যাবে, এরপর সুখে শান্তিতে অতিবাহিত করবে বাকিটা জীবন তার প্রিয়তমের সাথে। কিন্তু পৃথিবীর সকল মেয়ের জীবনেই কি সেই প্রিন্স চার্মিং সত্যি সত্যি আসে যে কেবল তাকেই ভালবাসবে সকল কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে? হয়ত স্বামীর আগমন ঘটে কিন্তু সেকি পারে সেই মেয়েটির স্বপ্নকুমারের স্থানে নিজেকে অবস্থিত করতে? বাংলাদেশের কয়টা মেয়ের জীবনে তার রাজকুমার সম্পর্কিত স্বপ্ন সত্য হয়েছে আমার জানা নেই। তবে আজ আমি আমার খুব কাছের কারও হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার কাহিনী বর্ণনা করতে চাই- ১৮ বছর আগে কোনো এক ঝড় বৃষ্টি ময় রাতে আমার গল্পের নায়িকার জন্ম। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান বলে অতি আদর করে তার নাম রাখা হয় বর্ষা। ঘুম ছিল তার অতিপ্রিয়-মা এইজন্য নাম রাখতে চেয়েছিলেন ঘুমকুমারী।

কিন্তু বাবার দেয়া নামই টিকে গেল। নাম বর্ষা হলেও তার জীবনে বর্ষার ছিটেফোটা লাগতে দেয়নি পিতা মাতা, যদিও অতি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ছিল সে। মাস শেষে বাবার সাড়ে সাত হাজার টাকা বেতনের বেশ অনেক খানি অংশই ব্যায় করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে যেতে ইন্টারমিডিয়েটে স্ট্যান্ড করে বসে আমাদের বর্ষা। মায়ের খুব শখ ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু বাধ সাধলো বাবার পেনশন! চাকরীর বয়স শেষ আর সংসারের খরচের দ্বীগুণ বোঝা তাঁকে ধীরে ধীরে সংসার বিমূখ করে দিল, মেয়ের বিয়ে দিয়ে সে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যেতে চায়।

বাকি রইল আরও এক ছেলে। সে খুব ছোট বলে তার কথা এখনও ভাবছেননা তিনি। আর তাছাড়া, সুন্দরী বর্ষার জন্য হরহামেশাই পাত্র ওয়ালা বাবারা ভীড় করেন। বর্ষার বাবা ভাবেন এই সুযোগ। অতি কষ্টের মাঝে বেড়ে উঠার চাইতে স্বামীর ঘরে গিয়ে সুখ করুক, আমি দেখে তৃপ্তি পাই।

পাড়ার বখাটে ছেলেপেলেদের বিরক্তিও কমে যাবে। প্রতিদিন ভয়ে থাকতে হয় দিনকাল খারাপ বলে, কখন আবার কি ঘটে বসে এরপর মান সন্মান নিয়ে টানাটানি! তার আগে আগে ভালয় ভালয় মেয়ের বিয়েটা সেরে ফেললেই দায়মুক্ত! যেই ভাবা সেই কাজ। অনেক পাত্রের মাঝখান থেকে তিনি মেয়ের জন্য নির্বাচন করলেন ৬ ফিট উচ্চতার দারুণ হ্যান্ডসাম এক যুবক! শ্যামলা বরন মাথাভর্তি সিল্কী ঘন চুল তাকে আরও যেন পুরুষ করে তোলে! যদিও লেখাপড়ায় কম তবুও অর্থের অভাব নেই, খুব ছোট বেলায় পাড়ি দেয় জাপান এরপর ওখান থেকেই এত বৈভবের মালিক হয় সে। ঢাকায় দুটি বাড়ি, গাড়ি , জমিজমা কি নেই তার! তার উপর জাপানের রেসিডেন্স সে! যখন তখন মেয়েকে নিয়ে জাপান পাড়ি দিতে পারবে, একি কম কথা! আর আমাদের বর্ষা? বর্ষা তো মা-বাবার অতি বাধ্য মেয়ে। যখন সে শুনলো তার লেখাপড়া চালিয়ে যাবার অনুমতি দিয়েছে বর পক্ষ তখন সে অমত করলনা বিয়ের পিঁরিতে বসতে, হয়ে গেল মালা বদল।

বাসর রাতে ঘরে ঢুকে সেতো অবাক! দেখলো তার সবচেয়ে প্রিয় ফুলের মাতাল করা সুগন্ধে সারা ঘর যেন ম ম করছে, বিছানা ভর্তি তার প্রিয় ফুল! বর্ষার মনে হল এই বুঝি তার প্রিন্স চার্মিং! ঘোমটা তুলে পরম ভালবাসায় তার স্বামী তাকে চুমু খেল, আর বর্ষা কেঁপে কেঁপে উঠছিলো ভালবাসার তীব্রতা সইতে না পেরে, মনে মনে ভাবছিলো এত সুখ কি সত্যি আমার কপালে লিখা ছিল? মনে পড়ে গেল তার মধ্যবিত্ত জীবনের নানান স্বপ্নকথা। সারারাত সে যেন সুখের মাঝে ভাসছিলো, সে চাইছিলো যেন এ রাত আর ভোর না হয়। কিন্তু তবুও ভোর হোলো, চারদিক আলোকিত করে দিয়ে সূর্য্য উঠল। মনে মনে তার অতিপ্রিয় সূর্য্যকে তিরস্কার করতে করতে নিজ রুম থেকে দুই কদম বাইরে না যেতেই সে শুনতে পেল তার স্বামীর জাপানী ভাষায় কথোপকথোন টেলিফোনে। তার একটু পরেই স্বামী বেচারা এসে বলল আগামী পরশু তার চলে যেতে হবে! বর্ষা ভিষন রকম কষ্ট পেয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবো জনম জনম।

আমাদের প্রিন্স চলে যাবার ঠিক পরদিন এলো সেই টেলোফোন-এক যুবক বলল, "আপনার স্বামীযে জাপানে একটা বিয়ে করেছে সেটা কি আপনি জানেন? সে জাপানের রেসিডেন্স কিভাবে পেল এটা একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আপনার বাবা আপনার জীবন নষ্ট করেছে। " বর্ষা আর দেরী না করে সরাসরি তার শ্বাশুরী ও ননদকে জানালো টেলিফোনের কথা। শ্বাশুরী মাতা বললেন ওসব মিথ্যে। বর্ষার স্বামী প্রতিদিন ফোন করে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে কিন্তু সবসময় অস্বীকার করে ব্যাপারটা, বর্ষাও আর ঘাটাতে চায়না।

কিন্তু কিছুদিন পর যখন বর্ষা নিজেই বহু প্রমান পায় এবং পাড়ার সবাই বলাবলি করতে লাগলো তখন সে তার বাবা-মাকে জানাতে বাধ্য হোলো। তার অসহায় বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে আমিও শুনেছি এমন,সবাই বলছে জাপানে বিয়ে না করলে নাকি সিটিজেন হতে পারেনা। এরপর থেকে আমাদের বর্ষা আর ঘুমোতে পারেনা , সে আজও ঘুমোতে পারেনা। পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন- বর্ষার এখন কি করা উচিত? তার কি উচিত সেই স্বামীরই ঘর করা, নাকি তার উচিত একলা পথে পা বাড়ানো, মুক্ত বিশাল আকাশের কাছে আশ্রয় গ্রহণ!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।