আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ষার আগেই বর্ষার বৃষ্টি

ঋতুচক্রের হিসাবে এখনো বর্ষা আসেনি। বর্ষার উৎস মৌসুমি বায়ু এখনো মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন উপকূল ধরে এগোচ্ছে। টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে এর আরও ১০ থেকে ১৫ দিন লাগতে পারে। কিন্তু তার আগেই যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা যেন বর্ষাকেও হার মানায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার শুধু রাজধানীতেই ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

সকাল সাতটা থেকে নয়টা—দুই ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৬ মিলিমিটার।
গত বুধবার দিবাগত রাত থেকেই আকাশ নিকষ কালো করে মুষলধারে বৃষ্টির আভাস দিয়েছিল। ভোর থেকে মেঘমালা বৃষ্টিকণা হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। সকালের অঝোরধারার বৃষ্টিতে ভিজে গেল বাড়িঘর। ভেসে গেল অলি-গলি-সড়ক।

দুপুরের দিকে বৃষ্টির আঁচ কমে গেলেও আকাশ সারা দিন মুখ গোমড়া করেই ছিল। মেঘে ঢাকা আকাশ থেকে মাঝে মাঝে হালকা ঝোড়ো হাওয়াসহ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের ধরনে বদল আসছে। বর্ষা শুরুর আগেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ মে মাস থেকেই বৃষ্টিপাত বাড়তে শুরু করেছে।

অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে, আর বাকি সময় বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকছে। এতে রাজধানীর সড়কগুলো দ্রুত জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) যে পানিনিষ্কাশনক্ষমতা রয়েছে, তা সর্বোচ্চ ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতজনিত পরিস্থিতি সামলাতে পারে। তার চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পুরো মে মাসের স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ৩৩৯ মিলিমিটার।

কিন্তু মাস ফুরোনোর আগেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৫০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে টাঙ্গাইলে, ৮২ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রাক্-বর্ষা মৌসুমে, অর্থাৎ মে মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রমাগতভাবে এই সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে। গত ৩০ বছরে মে মাসের গড় বৃষ্টিপাত প্রতিবছর ২ দশমিক ৭ মিলিমিটার হারে বাড়ছে। তবে বর্ষার ভরা মৌসুমে আবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে।

এতে নগরগুলোতে জলাবদ্ধতাসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্রফটের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সংস্থাটি ঢাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব হিসেবে অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়া রীতিমতো একটি দুর্যোগের আভাস।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিসের (বিসিএএস) গবেষক আবু সায়ীদের পিএইচডি গবেষণায় রাজধানীতে বর্ষার আগে ও পরের মাসে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।

তাঁর মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে বৃষ্টিপাতের ধরনে যে বদল আসছে, তার কারণে রাজধানীতে অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে।
আবহাওয়া দপ্তর বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত হয়েছে। লঘুচাপটি বর্তমানে ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে আজও ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় এবং খুলনা ও সিলেট বিভাগের বেশ কিছু স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কয়েকটি স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে আসবে। আগামীকাল থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। ’ চলতি মাসের বৃষ্টিপাতের সম্ভাব্য পরিমাণের চেয়ে ইতিমধ্যেই বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে সে অনুযায়ী পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট রাজধানীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

২০০৯ সালের ২৭ জুলাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৫৬ সালের ১৪ জুলাই ৩২৬, ১৯৬৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ২৫৭, ১৯৭১ সালের ২২ জুলাই ২৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তবে মে মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১৯৭২ সালের ২৫ মে, ২৩১ মিলিমিটার। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।