আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাযায়েলে আমালের ওপর কিছু অভিযোগ পর্যালোচনা- অভিযোগ ২- ‘হিকায়াতে সাহাবার একটি ভ্রমাত্মক বর্ণনা’

আগের পর্ব-ফাযায়েলে আমালের ওপর কিছু অভিযোগ পর্যালোচনা- অভিযোগ ১- ফেরেশতাদের ‘ভুল’ জনাব মুরাদ বিন আমজাদ এবং 'সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব' এর প্রচারণার কিছু নমুনা- ১/View this link ২/View this link ৩/View this link ৪/View this link ৫/View this link ৬/View this link ৭/View this link যাহোক, ‘সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব’ এর আরেকটি অভিযোগ (পৃষ্ঠা ৮৫,৮৬)- আমাদের মনে হয়, এক্ষেত্রেও বইটির লেখক, প্রুফ রিডার (যিনি বাংলাদেশ আহলে হাদিস আন্দোলনের মুখপাত্র মাসিক আত-তাহরীক এর সহকারী সম্পাদক- পৃষ্ঠা ৯ দ্রষ্টব্য) এবং প্রচারক ভাইদের জানা নেই যে, ২০০১ সালে (অর্থাৎ এই বইটির ১ম সংস্করণ প্রকাশের ৪ বছর আগে এবং ৩য় সংস্করণ প্রকাশের ১০ বছর আগে) দারুল কিতাব কর্তৃক প্রকাশিত ফাযায়েলে আমালে ঘটনা দুটির রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি অথবা তাঁর সহকর্মীরা (যাঁরা বইটি লেখায় সাহায্য করেছেন ) অথবা তাঁর বই পড়ে যাঁরা (তাঁদের নিজস্ব ধারণা অনুযায়ী) সহীহ পথের পথিক হচ্ছেন, তেমন পাঠকদের কেউই কি বইটির ১ম সংস্করণ প্রকাশের গত ৬ বছরে ব্যাপারটি খেয়াল করেননি? আশ্চর্যজনক বিষয় হল, ফাযায়েলে আমালে উল্লেখিত দুটি ঘটনাই বহুল বর্ণিত ও প্রসিদ্ধ। ইসলামের ইতিহাসের শীর্ষস্থানীয় হাদিস গ্রন্থসমূহ এবং (অন্তত) আহলে হাদিস/সালাফি আলিমদের লিখিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনী পড়েছেন- এমন ব্যক্তির দুটি ঘটনাই খুব ভালোভাবে জানা থাকার কথা। ‘তাবলীগী’রা না হয় (তাঁদের বিরোধীদের ধারণা অনুযায়ী) ফাযায়েলে আমাল ছাড়া আর কিছু পড়ে না, তাই তাঁদের জ্ঞান কম হতে পারে। কিন্তু সাধারণ আহলে হাদিস ভাইরা তো বুখারী/মুসলিম এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি নিয়মিত পড়ার দাবিদার।

সেক্ষেত্রে যাঁদেরকে তাঁরা ‘শায়খ’ এর মর্যাদা দেন, তাঁদের ব্যাপারে তো কথাই নেই। অথচ সে রকমই একজন ব্যক্তি এমন দুটি ঘটনাকে ভ্রমাত্মক বর্ণনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যার একটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, অপরটি বহু নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থের উহুদ যুদ্ধের অধ্যায়ে পাওয়া যাবে। অথচ তাঁর সমমনা পাঠকেরা এবং বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁর সহযোগীরা সবাই মিলে ৬ বছরেও ‘ভুল’টি ধরতে পারেননি। তাবলীগ জামাতের ‘সংশোধনের উদ্দেশ্যে’ লিখিত বইটির লেখক ও তাঁর অনুসারীদের বোধহয় জানা নেই যে, মুনাফেকীর ভয় সংক্রান্ত ঘটনার হানযালা (রাযি) আর উহুদ যুদ্ধে শহীদ হওয়া হানযালা (রাযি) দুজন ভিন্ন ব্যক্তি। মুনাফেকীর ভয় সংক্রান্ত ঘটনার হানযালা (রাযি) হলেন হানযালা বিন রাবি আল উসাইদী (রাযি) আর উহুদ যুদ্ধে শহীদ হওয়া হানযালা (রাযি) হলেন হানযালা বিন আবি আমির আল রাহিব (রাযি)।

ফেরেশতারা তাঁকে গোসল দিয়েছিলেন বলে তাঁকে হানযালাতুল গাসীল বলা হয়। সাহাবায়ে কেরামের জীবনের বিস্তারিত বর্ণনা আছে এমন আরবী বই সমূহে ভিন্ন ভিন্ন এ দুজন সাহাবীর আলোচনা আছে। চাইলে কোন আলিমের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। আর যদি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে চান, এই screenshot গুলো সহায়ক হবে -(প্রথম দুটি স্ক্রীনশট যে ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে সেখানে অনেক মনীষীর জীবনী আলোচনার ক্ষেত্রে ভুল ত্রুটি রয়েছে। তাই সেখানকার তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য আলিম দ্বারা যাচাই করে নেবেন) ১/View this link ২/View this link ৩/View this link সহীহ মুসলিম থেকে হযরত হানযালা বিন রাবি আল উসাইদী (রাযি) এর ঘটনা সহীহ মুসলিম [বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত]-৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮০,২৮১ যেহেতু হযরত হানযালা বিন রাবি আল উসাইদী (রাযি) এর মুনাফেকীর ভয় সংক্রান্ত ঘটনা সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, তাই আশা করি এ ঘটনার ব্যাপারে কারো সংশয় নেই।

হযরত হানযালা বিন আবি আমির আল রাহিব (রাযি) এর উহুদ যুদ্ধে জানাবাতের অবস্থায় শরীক হওয়া এবং তাঁর শাহাদাতের পর ফেরেশতা কর্তৃক গোসলপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে বহু গ্রন্থে। সর্বপ্রথম আমরা যে বইটির কথা উল্লেখ করব সেটি হল আর-রাহীকুল মাখতুম। কারণ- শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ) একজন বিশ্ববিখ্যাত আহলে হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর এ বইটি আরব-অনারব সকল দেশে, আহলে হাদিস সহ সকল মহলে সমাদৃত। আমাদের বাংলাভাষী সালাফি ভাইয়েরাও তাঁদের ওয়েবসাইট সমূহে এটির ব্যাপক প্রচার করে যাচ্ছেন।

বাংলাতে আর-রাহীকুল মাখতুম অনেকগুলো প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। আমরা তাওহীদ পাবলিকেশন্স কর্তৃক প্রকাশিত সংস্করণটি ব্যবহার করব। কারণ- ‘সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব’ এখান থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। আর বাংলা সালাফি ওয়েবসাইটগুলোতেও এই সংস্করণটিই প্রচারিত হচ্ছে। ১/আর-রাহীকুল মাখতুম (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) থেকে ক)পৃষ্ঠা ৩০৪ খ)পৃষ্ঠা ৩২৩ রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- আর যাদুল মাআদ এর রচয়িতা ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ)।

২/ বিশ্ববিখ্যাত সীরাত ইবন হিশাম থেকে বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ১৮১ ৩/ইমাম ইবন কাসীর (রহ) এর আল বিদায়া ওয়া আন নিহায়া থেকে খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৯ ৪/ সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রহ) রচিত ‘তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন’ থেকে বাংলা সালাফি ওয়েবসাইট গুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত আরেকটি গ্রন্থ ‘তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন’। ‘তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন’-৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯০- ৫/ প্রখ্যাত সালাফি আলিম শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ এর islamqa.net থেকে-View this link তাঁর বক্তব্যের মর্মার্থ- হানযালা (রাযি) জানাবাতের অবস্থায় শহীদ হয়েছিলেন এবং ফেরেশতারা তাঁকে গোসল দিয়েছিলেন। তাঁর ঘটনা প্রসিদ্ধ এবং ইবন ইসহাক (রহ) এবং অন্যান্যরা তা বর্ণনা করেছেন, যেমনটা আল-হাফিয ইবন হাজার বলেছেন তাঁর ‘ফাতহ আল বারী’তে। ৬/ বাংলাদেশ আহলে হাদিস আন্দোলনের মুখপাত্র মাসিক আত-তাহরীক থেকে মজার ব্যাপার হল, মাসিক আত-তাহরীক এর সহকারী সম্পাদক ‘সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব’ এর প্রুফ দেখেছেন (পৃষ্ঠা ৯ দ্রষ্টব্য)। সুতরাং, তিনি নিশ্চয়ই এই অভিযোগটি পড়েছেন।

অথচ তাঁর পত্রিকাতেই ঘটনাটি কয়েকবার উল্লেখিত হয়েছে। ক/ http://www.at-tahreek.com/january2012/2-1.html খ/ http://www.at-tahreek.com/june2011/2-1.html গ/ http://www.at-tahreek.com/june2011/2-1.html ৭/ শায়খ আলবানি(রহ)র ‘সিলসিলাতুল আহাদীস আস সহীহাহ’ থেকে ডাউনলোড লিঙ্ক-(আরবী)-View this link এত উদাহরণও যদি আমাদের সালাফি ভাইদের জন্য যথেষ্ট না হয়, তবে চলুন দেখা যাক ফাজায়েলে আমালে উল্লেখিত উহুদ যুদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে শায়খ আলবানি (রহ) কী বলেন। শায়খ আলবানি (রহ) তাঁর সহীহ হাদিস সংকলন ‘সিলসিলাতুল আহাদীস আস সহীহাহ’য় (হাদিস নং- ৩২৬) ঘটনাটি সংকলন করেছেন - তাঁর বক্তব্যের সারকথা তাঁরই একজন ছাত্রের ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে একটু পরেই। ৮/ শায়খ উমর সুলাইমান আশকার (রহ) রচিত ‘The World of the Noble Angels’ থেকে ডাউনলোড লিঙ্ক- View this link আরেকজন সমকালীন সালাফি আলিম শায়খ উমর সুলাইমান আশকার (রহ), যিনি শায়খ বিন বায (রহ) ও শায়খ আলবানি (রহ) এর ছাত্র ছিলেন (তাঁর সম্পর্কে জানতে wikipedia য় দেখতে পারেন- View this link ), তাঁর বক্তব্য (তাঁর The World of the Noble Angels থেকে)- সুতরাং, শায়খ উমর সুলাইমান আশকার (রহ) ঘটনাটি বর্ণনা করে এটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে শায়খ আলবানি (রহ)র অভিমত উল্লেখ করেছেন এভাবে- •ইমাম হাকিম (রহ) ও ইমাম বায়হাকী (রহ) ঘটনাটির যে ইসনাদ (বর্ণনাসূত্র) বর্ণনা করেছেন তা হাসান পর্যায়ের। •ইমাম ইবন আসাকীর (রহ) ঘটনাটির যে ইসনাদ (বর্ণনাসূত্র) বর্ণনা করেছেন তা সহীহ।

৯/ঢাকার জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া’র ওয়েবসাইট থেকে View this link শেষকথা • বাংলাভাষী সালাফি ভাইরা তাঁদের ওয়েবসাইট সমূহের মাধ্যমে ‘আর রাহীকুল মাখতুম’ এবং ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’র ব্যাপক প্রচার করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা নিজেরা কি বইগুলো আসলেই পড়ে দেখেছেন? • এমনকি যে শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানি (রহ) কে তাঁরা গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ হাদিস বিশারদ হিসেবে অভিহিত করেন, তাঁর হাদিস পর্যালোচনা মূলক কিতাবসমূহ পড়তে মানুষকে উৎসাহিত করেন, তাঁর ‘সিলসিলাতুল আহাদীস আস সহীহাহ’ ও কি আমাদের লেখক সাহেব পড়েননি? • তাহলে তাঁদের নিয়মিত এ সমস্ত ইসলামী গ্রন্থাবলী পড়ার দাবি আর এর বিপরীতে আমাদের জাতিগত পঠনবিমুখতাকে শুধু তাবলীগ জামাতের ওপর চাপানোর চেষ্টা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? • আরও হাস্যকর ব্যাপার হল, আত-তাহরীকের সম্মানিত সহকারী সম্পাদক এ বইটির প্রুফ দেখেছেন। জানি না তিনি নিজের সম্পাদিত পত্রিকাটি পড়েন কি না। কারণ- তাঁর পত্রিকাতেই দ্বিতীয় ঘটনাটি কয়েকবার প্রকাশিত হয়েছে, যার উদাহরণ একটু আগে উল্লেখ করা হয়েছে। • অভিযোগের শেষে লেখক বলেছেন- তাই আমরাও একটি প্রশ্ন রাখতে চাই- আলোচ্য অভিযোগের ক্ষেত্রে ইতিহাস বিকৃতির উৎস কোনটি? ফাযায়েলে আমাল? নাকি সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব ? আগের পর্ব-ফাযায়েলে আমালের ওপর কিছু অভিযোগ পর্যালোচনা- অভিযোগ ১- ফেরেশতাদের ‘ভুল’ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।