আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্যের কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া ও আল্লাহতে পূর্ণ ঈমান স্থাপনের গোপন রহস্য

"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "

- হারুন ইয়াহিয়া প্রগাঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহর শক্তি ও নৈকট্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা যাদের আছে আল্লাহতে পূর্ণ ঈমান তাঁদেরই একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতে ঈমান স্থাপনের অনুষঙ্গী কতিপয় গোপন রহস্য ও নিয়ামত রয়েছে। আল্লাহতে ঈমান স্থাপনের তাত্পর্য হচ্ছে আল্লাহর প্রতি অবিচল আনুগত্য এবং তাঁর ওপর ও তিনি যে ভাগ্য গড়ে দেন তার ওপর নির্ভরশীল হওয়া। আল্লাহ সকল সত্তার স্রষ্টা - মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা ও জড়বস্তু সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন তিনি।

সকল সৃষ্টিরই একটা নিজস্ব উদ্দেশ্য ও ভাগ্য বিধান রয়েছে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, সমুদ্র, হ্রদ, বৃক্ষলতা, ফুলফল, ক্ষুদ্র একটি পিপীলিকা, পতনশীল একটি বৃক্ষপত্র, আপনার ডেস্কের ওপর একটি ধূলিকণা, যে উপখন্ড মাড়িয়ে আপনি হোঁচট খেলেন, বছর দশেক আগে আপনি যে জামাটি কিনেছিলেন, আপনার রেফ্রিজারেটরে রক্ষিত পীচফল, আপনার মা, আপনার বাবা, আপনার আত্মীয়-স্বজন, আপনার স্কুল জীবনের বন্ধুবর্গ, এবং স্বয়ং আপনি - সকল জীব ও জড় বস্তুরই নিজস্ব ভাগ্যলিপি রয়েছে যা লক্ষ-কোটি বছর আগে আল্লাহর দৃষ্টিতে পূর্বনির্ধারিত। প্রত্যেকের ভাগ্যলিপিই লেখা আছে একটি কেতাবে, কুরআনে যাকে বলা হয়েছে উম্মুল কেতাব বা 'কেতাবের মা'। মৃত্যুর মুহূর্ত, পাতাটি ঝরে পড়ার মূহুর্ত, আপনার ফ্রীজে রাখা পীচফল নষ্ট হতে শুরু করার মূহুর্ত এবং আপনি যে শিলাখন্ডে হোঁচট খেলেন সেটির, সকল স্তরের বর্ণনা সংক্ষেপে, ক্ষুদ্র-বিশাল নির্বিশেষে সকল বস্তু ও বিষয়ের ভবিষ্যতই লেখা আছে এই কেতাবে। ঈমানদাররা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন।

তাঁরা জানেন আল্লাহ তাঁদের যে ভাগ্য নির্মাণ করেছেন তাঁদের জন্যে তাই শ্রেষ্ট। সে কারণেই তাঁদের জীবনের প্রতি মুহুর্তেই তাঁরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখেন। তাঁরা জানেন আল্লাহ সবকিছুই সৃষ্টি করেন একটা বিশেষ উদ্দেশ্য অনুসারে, এবং আল্লাহর সকল সৃষ্টিতেই কল্যাণ নিহিত। দৃষ্টান্তস্বরূপ, দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়া নির্মম-নিষ্ঠুর শত্রুর সম্মুখীন হওয়া, নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া, অথবা কল্পনাতীত ভয়ঙ্করতম পরিস্থিতিতে নিপতিত হওয়ার মতো প্রাণান্তকর দুর্বিপাকেও তাঁরা থাকেন অবিচলিত। কোন রকম ভয়ভীতি তাঁদের চিত্তবিক্ষেপ ঘটাতে পারে না।

আল্লাহ তাঁদের জন্যে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তাকে তাঁরা স্বাগত জানান। বিশ্বাসীরা যে সব পরিস্থিতি মোকাবেলায় আনন্দ পান অবিশ্বাসীরা সেগুলোতে ভীতিবিহ্বল কিংবা হতাশাগ্রস্থ হয়। কারণ পূর্বে ভয়ঙ্করতম পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তাঁদের পরীক্ষা করার জন্যে। এই সকল পরিস্থিতিতেও আল্লাহর প্রতি যাদের একাগ্রতা অবিচলিত থাকে, আল্লাহতে ঈমান অটুট থাকে এবং তাদের জন্য আল্লাহ যে ভাগ্য নির্মাণ করেছেন প্রসন্ন চিত্তে তা বরণ করেন তাঁরা আল্লাহর ভালবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন করেন। তাঁরা চিরকালের জন্য বেহেশত হাসিল করেন।

সুতরাং ঈমানদাররা সারাজীবন আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপনের আনন্দ ও আরাম উপভোগ করেন। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (তাঁর ওপর) নির্ভরশীল মানুষদের ভালোবাসেন। - সূরা আল ইমরানঃ ১৫৯ । এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর মন্তব্যটিও স্মরণযোগ্য : আল্লাহর কোন বান্দাই প্রকৃত ঈমানদার হতে পারে না যদি না সে ভালো ও মন্দ উভয়দিকসহ ভাগ্যকে বিশ্বাস করে এবং যদি না সে পরিজ্ঞাত থাকে যে, তার ওপর আপতিত (ভালো বা মন্দ) কোনকিছুই সে নিরোধ করতে পারবে না এবং যা কিছু (ভালো বা মন্দ) তাকে এড়িয়ে যায় তা সে ধরতে পারবে না। আল্লাহতে ঈমান স্থাপনের প্রসঙ্গে কুরআনে আরেকটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছেঃ "ব্যবস্থাগ্রহণ"।

বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঈমানদাররা কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন সে সম্বন্ধে কুরআনে বলা হয়েছে। বহু আয়াতে আল্লাহ এই রহস্যটি উম্মোচন করেছেন যে ওই সব ব্যবস্থা এবাদতেরই একটি রূপ বলে আল্লাহ গ্রহণ করলেও সেগুলো ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না। নবী ইয়াকুব (আঃ) তাঁর পুত্রদেরকে শহরে প্রবেশের সময় কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন। কিন্তু পরে তিনি তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেন আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে। সংশ্লিষ্ট আয়াতটি নিম্নরূপঃ সে বললো, হে আমার ছেলেরা, তোমরা (মিসরে পৌঁছে কিন্তু) এক দরজা দিয়ে (নগরে) প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে (তাহলে তোমাদের দেখে কারো মনে হিংসা সৃষ্টি হবে না, মনে রাখবে), আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তোমাদের কোনো কাজেই আসবো না; বিধান (জারি করার কাজ) শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (নির্দিষ্ট); - সূরা ইউসুফঃ ৬৭ নবী ইয়াকুবের বক্তব্য থেকে প্রতিপন্ন হয় যে, বিশ্বাসীরা অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করেন, কিন্তু তাঁরা জানেন যে, আল্লাহ তাঁদের জন্য যে ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা তাঁরা পরিবর্তন করতে পারবেন না, দৃষ্টান্তস্বরূপ, একজন যান চালকের উচিত যান চলাচল বিধি মেনে চলা এবং অসাবধানে ড্রাইভ না করা।

এটি একটি উত্তম ব্যবস্থা এবং নিজের ও অন্যদের জীবনের জন্য এবাদতেরই একটি রূপ। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছে যদি এই হয় যে, গাড়ি দুর্ঘটনায়ই ঐ লোকের মৃত্যু হবে তাহলে কোন অবস্থাতেই তার অপঘাত মৃত্যু ঠেকাতে পারবে না। কখনো এমন প্রতীয়মান হতে পারে যে কোন বিশেষ কাজ বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থার ফলে নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে সে রক্ষা পেয়েছে, অথবা কোন ব্যক্তি বিশেষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে তার সম্পূর্ণ জীবনধারাই পাল্টে গেছে, অথবা কোন ব্যক্তি নিছক মনের জোর আর সহ্য গুণ দিয়েই কোন কালব্যাধির আক্রমণ থেকে আরোগ্য লাভ করেছে। কিন্তু এসবই হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছানুসারে। কেউ কেউ এসব ঘটনাকে ভুল বুঝে বলে "ভাগ্যকে অতিক্রম করা হয়েছে" বা "ভাগ্য পরিবর্তন করা হয়েছে" কিন্তু কেউ, জগতের বলবান ও পরাক্রান্ততম ব্যক্তিও আল্লাহর বরাদ্দ রদ করতে পারে না।

কোন মানুষেরই সে শক্তি নেই। আল্লাহর ইচ্ছার সম্মুখে সব সৃষ্টিই দুর্বল। কিছু লোক তা বিশ্বাস করে না, তাতে সত্যের কোন অপলাপ ঘটে না। তারা যে ভাগ্যকে অস্বীকার করে সেটাও আল্লাহর ইচ্ছারই পরিপূরক। সে কারণেই যারা মৃত্যু বা কালব্যাধির কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বা যাদের জীবনধারা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে তাদের ভাগ্যলিপিতে অনুরূপ ভবিতব্যই লেখা ছিল, সুতরাং তা-ই ঘটেছে।

এ বিষয়ে আল্লাহ কুরআনে বলেছেনঃ (সামগ্রিকভাবে গোটা) দুনিয়ার ওপর কিংবা (ব্যক্তিগতভাবে) তোমাদের ওপর যখনি কোনো বিপর্যয় আসে, তা সংঘটিত হওয়ার (বহু) আগেই (তার বিবরণ একটি গ্রন্থে) লিখে রাখা হয়েছে, আর আল্লাহ তায়ালার জন্যে এ কাজ অত্যন্ত সহজ, (এজন্যে,) যাতে করে তোমাদের কাছ থেকে যা কিছু (সুযোগ সুবিধা) হারিয়ে গেছে তার জন্যে তোমরা আফসোস না করো এবং আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তাতেও যেন তোমরা বেশী হর্ষোত্ফুল্ল না হও; আল্লাহ তায়ালা এমন সব লোকদের ভালোবাসেন না যারা ঔদ্ধত্য ও অহংকার প্রদর্শন করে, - সূরা আল হাদিদঃ ২২-২৩ উদ্ধৃত আয়াতের বয়ান অনুসারে, যা কিছু ঘটে তা পূর্ব নির্ধারিত এবং আল্লাহর নজরে রক্ষিত কিতাবে পূর্ব লিখিত। তাই আল্লাহ মানুষকে বলেন যা হারিয়ে গেছে তার জন্য বেদনাবিদ্ধ না হতে। উদাহরণত কোন লোক যদি অগ্নিকান্ডে বা ব্যবসায় বিপর্যয়ে সর্বস্ব হারায় তাহলে বুঝতে হবে এটাই ছিল তার জন্যে বিধিলিপি; এটা রোধ করা বা এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য তার নেই। কাজেই এই ক্ষতির জন্যে ক্ষোভ হবে নির্বুদ্ধিতা। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পূর্ব নির্ধারিত ঘটনাবলী সংঘটন দ্বারা পরীক্ষা করেন।

এ রকম পরীক্ষাকালে যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাসে অটল থাকেন তাঁরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সপ্রেম করুণা লাভ করেন আর যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না তারা ইহকালে জীবরভর দুঃখ তাপে বেদনা অস্থিরতায় দীর্ণ হবে এবং পরকালে অনন্তজীবন শাস্তিভোগ করবে। এটা দিবালোকের মত পরিস্কার যে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপনে ইহকাল ও পরকাল উভয় ক্ষেত্রেই পরম শান্তি ও কল্যাণ লাভ হবে। ঈমানদারদের কাছে এসব রহস্য উম্মোচন করে আল্লাহ তাঁদের নানাবিধ সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের পথনির্দেশ করেছেন এবং ইহকালে তাঁদের পরীক্ষা সহজ করে দিয়েছেন। অনুবাদ করেছেনঃ আবুল বাশার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.