আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান : সমস্যা ও উত্তরণের উপায়। পর্ব- ৮; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় - ২

যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!

বেশ কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার লিখছি। এর আগের পর্বগুলিতে যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে গত পর্বে দুটি প্রস্তাব রেখেছিলাম। আজ আরো দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় - ২ -------------------------------------------------- ৩ # টিউশন ফি বৃদ্ধি বর্তমান নামমাত্র টিউশন ফি এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা লাভের ট্রাডিশন পরিবর্তন করে টিউশন ফি বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

সস্তায় নিম্নমানের শিক্ষা দেবার পরিবর্তে টিউশন ফি বৃদ্ধি করে গবেষণাধর্মী উচ্চমানের শিক্ষাদান দেশের সার্বিক উন্নয়নে অনেক বেশী প্রয়োজনীয়। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে গবেষনা ও উচ্চমানের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরীর জন্য দরকারি তহবিল দিতে সক্ষম নয় তাই টিউশন ফি বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিজস্ব তহবিল গড়ে তুলতে হবে। এই বর্ধিত তহবিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গুণগত মানসম্পন্ন পরিকাঠামো তৈরী ও গবেষণা উপযোগী গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করবে। এর ফলে উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনীয় শিক্ষাদানের মত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষার মানের যে বিস্তর ফারাক তা কমে আসবে। প্রস্তাবটি বিতর্কিত কোন সন্দেহ নাই এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া এর বাস্তবায়ন করা ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশেষ করে বর্তমানেই যেখানে সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান উচ্চশিক্ষার সুযোগ এর ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। আমি এখন এই বর্ধিত টিউশন ফি এর ব্যাপারটি কিভাবে কাজ করবে সেটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি, আশা করি তারপর প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য মনে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির rank এর ভিত্তিতে টিউশন ফি ঠিক করবে যেটি ন্যূনতম ২৫,০০০ টাকা প্রতি শিক্ষাবছর থেকে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা এর মধ্যে হবে। কোন ছাত্র ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সুযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যাংক থেকে তার টিউশন ফি এর সমপরিমান অর্থ শিক্ষাঋণ হিসাবে পাওয়ার জন্য কোয়ালিফাই করবে। এটি ছাত্রদের জন্য ঐচ্ছিক থাকবে, যারা অবস্থাসম্পন্ন তারা নিজেদের অর্থে টিউশন ফি দিলেও অপেক্ষাকৃত নিম্নআয়ের পরিবারের ছাত্ররা শিক্ষাঋণ এর মাধ্যমে টিউশন ফি পরিশোধ করবে।

এই শিক্ষাঋণ সুদবিহীন হবে বা নামমাত্র সুদে ছাত্রদের দেওয়া হবে এবং তারা শিক্ষাজীবন শেষ করার পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে এটি কিস্তিতে শোধ করবে। সরকারকে এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে বা প্রয়োজনে শিক্ষাঋণ এর জন্য পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা গেলে দেশে ব্যবসা করা বিদেশী ব্যাংকগুলি এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। এর ফলে সামাজিক বা আর্থিক অবস্থান উচ্চশিক্ষায় অন্তরায় হতে পারবেনা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্বনির্ভর হয়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। সেই পদক্ষেপগুলি কি কি হবে তা পরবর্তী পর্বগুলিতে আলোচনা করব কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থশক্তি ছাড়া কোন পদক্ষেপই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

৪ # বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সাথে কোলাবরেশন করতে হবে। এর মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষক বিনিময় প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনুকরণ করে, সার্ক দেশসমূহের মধ্যে এটি চালু করা যেতে পারে। এ ছাড়াও Undergraduate লেভেলে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ২-৩ মাসের জন্য শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রম চালু করতে হবে। এর ফলে শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অভিজ্ঞতা লাভ করবে যা তাদের শিক্ষায় বৈচিত্র আনবে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করবে।

উদাহরনস্বরূপ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ২-৩ মাসের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করবেন। এক্ষেত্রে হোষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তার থাকার ব্যবস্থা করবে বিভিন্ন ছাত্রবাসে। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.