আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মডারেট মুসলিম কারা? # আবুকার আরমান

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

(মডারেট মুসলিম নিয়ে আলোচনা এখন খানিকটা স্তিমিত। কিছুদিন আগেও এ নিয়ে বাঘা পত্রিকাগুলো এ নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখতো। তখন লেখাটা অনুবাদ করছিলাম। এখন এখানে তুলে দিলাম।

) ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ এর পর এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করা ইরাক যুদ্ধের সময় থেকে বলা হচ্ছে, মডারেট মুসলিমরাই চরম ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সবচেয়ে সক্ষম পক্ষ। এমএম ফ্যাক্টর (মডারেট মুসলিম) এখন মনোযোগের কেন্দ্রে। কোনো কোনো মহলে এটা গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। কিন্তু কারা এই মডারেট মুসলিম? কোন ভাবাদর্শ তাদের পরিচালনা করছে? তাদের যাচাই বাছাইয়ের মানদণ্ড কী? আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এ মানদণ্ডগুলোর ব্যাখ্যাই বা কে দেবে? এই প্রশ্নে নিরপে বিতর্ক শুরুর আগেই ডেনিয়েল পাইপসের মতো নিওকনজারভেটিভ কর্মীরা এমএম ফ্যাক্টর নিয়ে বিতর্কে বাগড়া দিতে শুরু করেছেন। নিজেদের সুবিধা মতো একটা তালিকা তৈরির জন্য বলে বসেছেন ইসলামবিরোধী মুসলমানরাই এমএম।

বিস্ময়কর নয় যে, এই তালিকায় আছেন পাইপসের বন্ধু, ভয়াবহ ইসলামবিরোধী, বিতর্কিত চরিত্র খালিদ দুরান ও টরোন্টো সিটির কুইন টেলিভিশনের উদ্যোক্তা ইরশাদ মানজি। আত্মস্বীকৃত নাস্তিক আযান হিরশি আলী। ইনি নিহত চলচ্চিত্র পরিচালক থিও ভ্যান গগ পরিচালিত মুসলমানের প্রতি আক্রমণাত্বক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই ব্যক্তিরা প্রকাশভঙ্গির স্বাধীনতা চর্চা করছেন এবং সমস্যার পরিধিতে অবস্থান করে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠমোতে আঘাত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু এই পদ্ধতি মুসলিম চরমপন্থাকে নরম করতে পারবে না।

ইসলামকে তার প্রকৃত অবস্থায় অর্থাৎ নবী মোহাম্মদের অনুসৃত মধ্যপন্থী পথে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে সহনীয় ও ন্যায়ভিত্তিক আলাপ-আলোচনার পথ। সমাজচ্যুত ব্যক্তিদের সমর্থন নিয়ে বা তাদের একত্রিত করলে পুরো এমএম ফ্যাক্টরই গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। গ্রহণযোগ্যতা আর আন্তরিকতাই এই খেলার শর্ত। যিনি সহনীয় কণ্ঠস্বর অবলম্বন করছেন তাকে যুক্তরাষ্ট্র বা বাইরের বৃহত্তর মুসলমানের কাছে নিজের কথাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে : ১. তার সমাজসেবার অতীত উদাহরণ আছে কি না। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও তার কোনো দূরবর্তী আকাক্সক্ষা নেই।

২. তিনি স্বাধীন মন সম্পন্ন একজন স্বাধীন মানুষ। ন্যায়বিচারের গতিপথের মতোই একজন ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ে কখনোই একই পক্ষ অবলম্বন করতে পারেন না। ৩. তিনি সহমর্মী সেতুবন্ধ তৈরির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান, যা আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইসলামের মৌল উৎস, যথা : কুরান ও সুন্নাহর দ্বারা তার মত সমর্থিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইসরাইল-প্যালেস্টাইন ইস্যুতেও নমনীয় মতগুলোর মধ্যে বৈপরিত্যময় অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

ইসরাইলের টিকে থাকার অধিকার আছে কিনা এ অমীমাংসিত প্রশ্নে বিতর্ক হয় না, হয় প্যালেস্টাইনি জনগণের আত্মঅধিকার, বঞ্চনা ও দখলের বিরুদ্ধে লড়াই করার অধিকার আছে কি না সেটা নিয়ে। আমেরিকার অধিকাংশ অত্যুৎসাহী মুসলমান ক্রমশ এই ধরনের লিটমাস পরীক্ষার সামনে দাঁড়াচ্ছেন। উদাসীন ও নিরুদ্বেগ মুসলিম চিন্তক ও কর্মীরা অথবা মডারেট পরিচয় বরণে প্রস্তুতরা তকমাটিকে মেনে নিয়েছেন। অন্যরা নিজেরা কতটা মডারেট বা লিবারেল তা বিবেচনা না করেই নিজেদের র‌্যাডিকাল বা সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আরও একটি চিন্তার বিষয় হলো, ইউসুফ ইসলামের মতো গুরুপূর্ণ মুসলিম অ্যাকটিভিস্টের ধারাবাহিক হয়রানি।

শান্তির পক্ষে সঙ্গীত চর্চা ও তৎপরতার জন্য বিখ্যাত এই শিল্পী পূর্বে ক্যাট স্টিভেনস নামে পরিচিত ছিলেন। হয়রানির শিকার হচ্ছেন, ব্যাপকভাবে সন্মানীত মডারেট মুসলিম পণ্ডিত ইউসুফ আল-কারাদওবি। তিনি চরমপন্থা ও র‌্যাডিক্যাল লিটারালিজমের বিরুদ্ধের প্রচারক বলে পরিচিত। হয়রানির শিকার হচ্ছেন, লিবারেল চিন্তাবিদ তারিক রমাদান। তিনি ইসলামিক মূল্যবোধ ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মধ্যে সেতু তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনের জন্য খ্যাত।

এই তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ অজুহাতে বাধা পেয়েছেন। সম্প্রতি কায়রোর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আল আজহার ফতোয়া কমিটির প্রধান আব্দুল হামিদ আল আতরাশকে এন্ট্রিভিসা দিতে অস্বীকার করেছে। কথা ছিল, রমজান উপলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইসলামিক সেন্টারে বক্তৃতা দেবেন। পরিহাস হলো : প্রাচীনতম ও সন্মানীয় আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে সবচেয়ে মডারেট মুসলিম শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিখ্যাত ও প্রকৃত মডারেট মুসলিমদের উপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা উল্লম্ফন, আমেরিকা-বিরোধিতা ও চরমপন্থাকেই বাড়িয়ে তুলবে।

আইডিয়ার বাজারে চরমপন্থাকে পরাজিত করতে হলে মুসলমানদের (যাদের ধর্ম চরমপন্থীদের দ্বরা অধীকৃত হয়ে গেছে) ও আমেরিকা (যাদের নীতি কনজারভেটিভদের দ্বারা হাইজ্যাকড হয়েছে) উভয়কেই প্রকৃত মুসলমানদের সমর্থন দিতে হবে। আর কারা মডারেট মুসলিম তার সংজ্ঞা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত খামখেয়ালি পররাষ্ট্রনীতির জটিলতাই তৈরি করবে। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.