আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মডারেট মুসলিমের মন।

"ইসলাম শান্তির ধর্ম ...ইসলাম পরমত সহিষ্ণুতার ধর্ম। সঠিক ইসলামের চর্চার মাধ্যমে অস্থির বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বইতে পারে। ইসলামের আদর্শ সর্বজন গ্রহনীয়। " মডারেট মুসলিমরা এমন ধারা ভাবতে ,প্রচার করতে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চর্চা করতে সত্যি ভালোবাসেন তা নিয়ে আসলেই কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অতীত ও সাম্প্রতিক ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন সাক্ষ দেয়।

অতীত ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরানোর আগে বর্তমানের দিকে একটু দেখি, একটি তৃতীয় শ্রেনীর চলচিত্রকে কেন্দ্র করে মুসলিম রাস্ট্রগুলোতে ভয়াবহ সঙ্ঘাতে ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক মানব প্রজাতির মৃত্যু ঘটে গেছে। সরকারগুলো বাধ্য হয়েছে অন্তর্জালের গতি রোধ করতে। ইসলামের পয়গম্বরের সুনামের অবমাননার সুত্র ধরে উত্তেজিত মুসলিম সম্প্রদায় ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাংচুর,অগ্নি সংযোগে নিহতদের মধ্যে ৪ মার্কিন কুটনীতিক ও ১১ দক্ষিন আফ্রিকার নাগরিক ছাড়া বাকিরা সবাই মুসলিম। এমনকি একটি দেশের সরকার সংঘর্ষের জন্য রাস্ট্রিয় ছুটির ঘোষনা দিয়ে সুযোগ করে দিতে বাধ্য হয়েছে হয়েছে। দেশে দেশে ঐ সব ভয়াবহ অ্যানার্কিতে যারা মুখ্য ভুমিকা নিয়ে নেতৃত্বে ছিলেন তাদের একটা বৃহৎ অংশ সরাসরি ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত।

কোরান হাদিসে ইজমা কিয়াসে কস্ট সাধ্য গভীর জ্ঞান তারা দীর্ঘ সময় ধরে অর্জন করেছেন বা করার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এক কথায় তারা ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে একাডেমিক ভাবে প্রশিক্ষিত মানুষ। ইসলাম জাননেওয়ালা লোক বললে খুব একটা ভুল হবে না। তারা ইসলাম প্রচার প্রসার এর সাথে সরাসরি যুক্ত। সাধারনত মডারেট মুসলিমরা তাদের যথেস্ট সম্মানের চোখে দেখেন, ভালোবাসেন, নিজ বাড়িতে আপ্যায়ন করেন।

জন্ম থেকে শেষ বিদায়ে ক্ষন পর্যন্ত মডারেট মুসলিমের জীবনাচরনে তাদের ভুমিকা অপরিহার্য। আলেম নামে পরিচিত এই মানুষরা ইসলামিক জ্ঞানে জ্ঞানী বিধায় আপামর মুসলিম সম্প্রদায় প্রাত্যাহিক ইসলামিক জীবন চর্চায় তাদের প্রয়োজন অনুভব করেন। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বিশ্বব্যাপি আলেম সমাজ যখন ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে ব্যাপক ভাংচুর অগ্নি সংযোগ সহ উত্তেজিত বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে সংঘর্ষে লিপ্ত হন, মানুষের প্রান ও সম্পদহানীর কারন হয়ে দাঁড়ান তখন মডারেট মুসলিমরা অবলিলায় বলে উঠেন ইহা সঠিক ইসলাম নহে! ইহা সঠিক ইসলাম নহে!! সঠিক ইসলাম পরমত সহিষ্ণু মানবিক ধর্ম, সঠিক ইসলাম শান্তির ধর্ম , যারা ইসলামের নামে এইসব করছে তারা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ!!! চাই কি দু চার জন সঠিক ইসলামের(!) ইন্টার্প্রিটেশন সহ হাজির হন। নিজেকে এবং সমমনাকে প্রবোধ দেয়ার চেস্টা করেন এবং সব শেষে দলগত সিদ্ধান্তে উপনিত হয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন যে ইসলামের একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত ঐ কতিপয় দাড়ি টুপি পাগড়িধারীরা ইসলাম জানেন না!! ইসলাম কি বোঝেন না!! কি বিচিত্র এই অদ্ভুত বৈপরিত্ব? ক্যানো এই মানসিক দ্বন্দ..ক্যানো তারা নিজেদের মনের সাথে যুদ্ধ কোরে চলেছেন? তবে এটা কি মডারেট মুসলিম মানসের চিরাচরিত মধ্যবিত্তের ঝামেলা বিহীন সহ অবস্থানে থাকার মানসিকতা নাকি মনের অন্তস্থলে থাকা কোন হীনমন্যতা? তারা কি নিজেদের অজান্তেই অবচেতন মনে ১৪০০ বছরের পুরানো ঘুনে ধরা ইসলামকে বদলে দিতে চাইছেন? মডারেট মুসলিমের মন যাকে সঠিক ইসলাম হিসাবে সংজ্ঞায়িত করছেন না সেই আপাত ভুল(!) ইসলামী আচরনের বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাপী ইসলামের কোন অভিজ্ঞ স্বীকৃত আলেম ও স্কলারকে দেখা যাচ্ছে না অবস্থান নিতে, ঐ ম্যাস হিস্টিরিয়ার প্রতিবাদ করতে। অনেকেই প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ইন্ধন দিচ্ছেন সংঘাতে।

এখন এর অর্থ কি দাঁড়ায় ....তবে কে সঠিক? সনাতন ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত বিশ্বের আলেম সমাজ ও তাদের অনুসারিরা? নাকি জীবনাচরনে আপাত দৃস্টিতে ধর্মবোধ দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মডারেট মুসলিম সমাজ? লজিক বিশ্লেষন করলে বলা উচিৎ কোরান হাদিসের প্রত্যক্ষ জ্ঞান সম্পন্ন প্রথম দল। কারন তারা দীর্ঘ একাডেমিক শিক্ষা ও ইসলামি আবহে থাকার কারনে ভালো ভাবেই জানেন ইসলাম কখন কি করা কে সমর্থন করে। কিন্তু আমি বলি সঠিক হচ্ছে দ্বিতীয় দল, মডারেট মুসলিম সমাজ। বিশ্বব্যাপি মডারেট মুসলিম সমাজ আজকে একটি নিরব বিল্পবের সামনে দাঁড়িয়ে। তাদের একবিংশ শতকের মন মননে আর সপ্তম শতকের আরব উপদ্বীপের ইসলাম পুরোপুরি দাগ কাটতে পারছে না ।

বিষয়টা তাদের অবচেতনে লুকায়িত এবং নতুনের প্রতি সহজাত মানবীয় ভয় সেটাকে মনের গভীর থেকে উঠে আসতে বাধা দেয়ার কারনেই তারা দলবদ্ধ ভাবে প্রতিদিন আত্মপ্রবঞ্চনা করছে অপরাধবোধে ভুগছেন। তারা চাচ্ছেন অতীতের প্রতিটি প্রজন্মের মতই নিজেদের জন্য কার্যকর ঈশ্বরের ইমেজ গড়ে নিতে। এক প্রজন্মে সৃস্ট ঈশ্বর ও তার আইন সম্পর্কিত ধারনা কালের বিবর্তনে অন্য প্রজন্মের মানুষের কাছে অর্থহীন হয়ে দাড়াতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমান আধুনিক মডারেট মুসলিম মনন। ঈশ্বর ভীরু ধার্মিক মনের এই পরিবর্তন চাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা কিন্তু অতীতে বহুবার ঘটেছে। ইতিহাসে অনেকবারই সময়ের সাথে বদলে গেছে ঈশ্বরের সংজ্ঞা, ঈশ্বরে বানী,ধর্মের ঠিক বেঠিকের সংজ্ঞা ।

ঈশ্বর ও মানুষ উভয়ের জন্য এটা নতুন কোন অভিজ্ঞতা না। মানব জাতি ও তার সাথে ধর্মের সম্পর্কের ইতিহাস তাই বলে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.