আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোকাবাবু দশম মূল : আনটোয়ানী ডে সা এক্সউপেরী



খোকা ৩২৫, ৩২৬, ৩২৭,৩২৮, ৩২৯ এবং ৩৩০ নম্বর আস্টেরইডের এলাকায় পৌঁছল। সে একে একে সে গ্রহগুলি পরিদর্ষন করতে লাগল। নতুন কিছু যানা হল সময়টাও কাটল। প্রথম আষ্টেরইডে ছিল এক রাজা। রাজা একটা সাধারন অথচ খুব রাজকীয় সিংহাসনে বসে রাজত্ব করতেন।

খোকাকে দেখেই রাজা বলেউঠলেন এই যে একজন প্রজা এসেছে। খোকা ভাবল আমাকেতো রাজা মহাষয় আগে কখনো দেখেননি, তবে চিনলেন কেমন করে? খোকা যানতো না যে, রাজার কাছে পৃথিবী খুবই সহজতর একটা ব্যাপার। এখানে সবই প্রজা। কাছে আস তোমাকে একটু ভাল করে দেখি। বলে খুব র্গব বোধ করলেন রাজামহাষয়।

অন্ততঃ একজনের রাজা তো হতে পারলাম। খোকা একটু বসার যায়গা খুজছিল, কিন্তু পুরো গ্রহটাই রাজার রাজকীয় আলখাল্লায় ঢাকা। খোকা দাড়িয়েই রইল। ক্লান্তিতে সে হাই তুলল। রাজার সামনে হাই তোলা নিষেধ, আমি তোমাকে হাই দিতে নিষেধ করলাম।

তথমথ খেয়ে খোকা বলল: আমি চেপে রাখতে পারছিনা, অনেক দূর থেকে এসেছিতো ঘুমোতে পারিনি। ভীষন ক্লান্ত। তাহলে আমি তোমাকে হাই তোলার আদেশ দিচ্ছি। অনেক দিন হল আমি কাউকে হাই তুলতে দেখিনি। ব্যাপারটা আমার সামনে খুব কদাচিৎ ঘটে।

নাও শুরু কর। আর একবার হাই তোল। এটা আমার হুকুম। খোকা তোতো করে কোন রকমে বলল: ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। হাই আসছেনা।

হুম: ঠিক আছে, তবে তোমাকে অচিরেই হাই তোলার হুকুম দিলাম। রাজা একটু বিরক্ত হলেন। কারণ: তিনি সব সময় চাইতেন, তার আদেশ যেন অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। আদেশের বরখেলাফ রাজা বরদাস্ত করতেন না। তিনি ছিলেন একজন খানদানী বাদশাহ্।

কিন্তু তিনি খুব দয়ালু রাজা ছিলেন। তাই র্সবদা সহজ সাধ্য আদেশ দিতেন। তিনি বলেন: যদি আমি একজন সেনাপিকে গাংচিল হওয়ার আদেশ দেই, এবং সেনাপতি সেই আদেশ পালনে ব্যার্থ হয়। তবে সেটা সেনাপতির দোষ নয়, আমার দোষ। মহারাজ আমি বসতে পারি? ভয়ে ভয়ে খোকা জিজ্ঞেস করল।

আমি তোমাকে বসার হুকুম দিলাম। বলতে বলতে রাজকীয় কায়দায় আলখাল্লাটা নিজের দিকে টেনে খোকাকে একটু বসবার জায়গা করে দিলেন। কিন্তু খোকার বিষ্ময় কাটলনা। এত ছোট একটা গ্রহ! রাজা কার উপড় রাজত্ব করেন! সে বলল: মহারাজ! গোস্তাগি মাফ করবেন, আমার একটা প্রশ্ন ছিল। রাজা তারাতারি বলরেন: আমি তোমাকে প্রশ্ন করার আদেশ দিলাম।

রাজা মহাষয়, আপনি কার উপর রাজত্ব করেন? রাজা সহজ ভাবে জবাব দিলেন। সব কিছুর উপড়। সব কিছুর উপড়! খোকা অবাক হল। রাজা অর্থপূর্ণ ভঙ্গিতে তার নিজের গ্রহ, আশেপাশের গ্রহ এবং আকাশের তারা গুলির প্রতি ইঙ্গিত করলেন। এই সব কিছুর উপর! হ্যাঁ, এই সব কিছুর উপর।

খুব সহজ ভাবেই জবাব দিলেন রাজা। এবং বললেন: তিনি শুধু রাজাধিরাজই নন বরং বিশ্ব ব্রহমন্ডের অধিকর্তা। আকাশের তারকারাজিও আপনার হুকুম তামিল করে? নিশ্চই। অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। আমি কোন রকম অবাধ্যতা বরদাস্ত করিনা।

কী অসীম ক্ষমতা! খোকা অবাক হল। মনে মনে ভাবল: তার নিজের যদি এত ক্ষমতা থাকত, তাহলে শুধু তেতাল্লিশ বা বাহাত্তর বার নয়, দৈনিক শতবার সূর্য্যাস্ত দেখতে পারত। নিজের গ্রহ ছেড়ে আশায় খোকা খুব মর্মাহত ছিল। এবং তার সূর্য্যাস্ত দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল। তাই রাজাকে অনুরোধ করল: মহারাজ! আমি একটা সূর্য্যাস্ত দেখতে চাই।

দয়া করে আমাকে এই আনন্দটুকু দান করুন। সূর্য্যকে ডুবে যেতে আদেশ দিন। যদি আমি কোন জেনারেলকে প্রজাপতির মত ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াতে বলি বা একটা বিয়োগান্তক নাট্য রচনা করতে বলি অথবা গাংচিল হতে বলি, এবং সেই জেনারেল যদি তা না পারে, তবে সেটা কার দোষ? আমার না জেনারেলের? আমনার দোষ মহারাজ। সুনিশ্চিৎ জবাব খোকার। উওর সঠাক।

কার কাছ থেকে শুধু ততটুকুই চাইতে হয় যতটুকু তার দেয়ার ক্ষমতা আছে। বললেন রাজা। ক্ষমতা বিচক্ষনতার উপড় নির্ভশীল। প্রজাদের সমুদ্রে ঝাপ দেওয়ার আদেশ দিলে তারা বিদ্রহ করবে। আমার হুকুম তামিল হয় সব সময় মানা হয়, তার করণ: আমি পালন করা সম্ভব নয়, এমন আদেশ কখনো দেই না।

আমি কি সূর্য্যাস্ত দেখতে পাব? একটা প্রশ্ন একবার করলে খোকা তা কখনো ভূলেনা। তুমি তোমার সূর্য্যাস্ত দেখতে পাবে। আমি আদেশ জারি করব। কিন্তু আমি শ্বাষণ কার্য্যে খুব অভিজ্ঞ, তাই আদেশ জারির আগে, অনুকূল পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করব। সেটা কখন হবে? অধীর হয়ে খোকা সুধাল।

হুম্: একটা দিনপূন্জীতে চোখ রেখে রাজা বললেন; হুম্: এটা হবে আজ সন্ধ্যায়..... হুম্... সাতটা হুম... সাতটা চল্লিশে। এবং তখন তুমি দেখবে, কি ভাবে সবাই অনুগত ভৃত্যের মত আমার আদেশ পালন করে। খোকা হাই তুলল। অচিরেই সূর্য্যাস্ত দেখার আশা নেই। সেজন্য একটু মন খারাপ বৈকি।

আর একটু একঘেয়েও লাগছে। তাহলে আমি এখন যাই। এখানে আমার আর কিছু করার নেই। একজন প্রজা পেয়ে রাজা খুব খূশী হয়েছেন। তাই বললেন: যেও না।

আমি তোমাকে মন্ত্রীর পদ দান করব। কি মন্ত্রী? রাজাঃ বিচার মন্ত্রী। খোকাঃ কিন্তু এখানে তো কেউ নেই, কার বিচার করব? রাজাঃ কে জানে, হয়ত থাকতেও পারে। আমার রাজ্যটা এখনো ঘুড়ে দেখা হয়নি। আমি খুব বৃদ্ব।

জায়গার অভাবে একটা গাড়ীও রাখতে পারিনা। হেটে চলাফেরা করাও সম্ভব হয়না। একটু অন্য পাশটা দেখে খোকা বলল; আমি দেখেছি ওখানেও কেউ নেই। রাজাঃ তাহলে তুমি তোমার নিজের বিচারই করবে। এবং এটাই সব চেয়ে কঠিন।

অন্যের বিচার সবাই করতে পারে, নিজের বিচারটাই কেউ করতে পারেনা। যদি নিজেই নিজের বিচারক হতে পার তবেই তুমি একজন সত্যিকারের জ্ঞানী মানুষ। খোকাঃ নিজের বাচারক, আমি যেখানে যাই, সেখানেই হতে পারি। তার জন্য এখানে বিচার মন্ত্রী হওয়ার প্রয়োজন নাই। রাজাঃ হুম! মনে হয়, আমার গ্রহে একটা বৃদ্ব ইঁদুর আছে।

প্রায় রাতেই আমি তার চলাফেরার শব্দ পাই। এই বুড়ো ইঁদুরটার বিচার তুমি করতে পার। তুমি তাকে মৃত্যু দন্ড দিতে পার। তাহলে তার জীবন তোমার বিচারের রায়ের উপড় নির্ভর করবে। কিন্তু প্রতিবারই তুমি তাকে ক্ষমা করে দেবে।

যাতে তাকে আবার মৃত্যুদন্ড দিতে পার। কারন ইঁদুরতো একটাই। খোকাঃ আমি মৃত্যুদন্ড পছন্দ করিনা। আমার মনে হয়, এখন আমার যাওয়াই ভাল। রাজা বললেন: না, যেওনা।

যাওয়ার সব রকমের প্রস্তুতি শেষ করেও খোকা গেল না। কারন বৃদ্ব রাজাকে তার আদেশ অমান্য করে খোকা আঘাত দিতে চায়নি। মহারাজ যথাসময়ে আপনার আদেশ পালিত হয়, এই যদি আপনার ইচ্ছা, তবে এক মিনিটের মধ্যে আমাকে এই গ্রহ ত্যাগ করার আদেশ দিন। মনে হয় পরিস্থিতি তার অনুকূলে। রাজা কিছু বললেন না দেখে খোকা একটু অপেক্ষা করল।

কিন্তু তার পর এক লাফে পংখিরাজের পিঠে চড়ে বসল। রাজা, জিনি ক্ষমতা খুব ভালবাসেন, তারাতারি বললেন: আমি তোমাকে আমার রাষ্ট্রদূত বানালাম। যেতে যেতে খোকার মনে হল: বড় মানুষ গুলি খুব অদ্ভূত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.