আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার আপুনি

স্বপ্নিল সময়ের সন্ধানে..

৩১.০১.৯৫ বিকাল;৪টার কাছাকাছি,হঠ্যাৎ খবর এলো...খালামনির টুইন্স বেবী(মেয়ে) হয়েছে। খুশি হলেও খুব বেশি হইনি। কারন নানুর পরিবারে এতদিন ৬ নাতি বনাম একমাত্র নাতনি হওয়ার কারনে আমিই ছিলাম সবার চোখের মনি। এমন কি খালামনি তার ৩ ছেলের চাইতে বেশি আদর করতো আমাকে। আর আমি ভাবতেই পারিনি যে ১৪ বছর বয়সে আমার দুই দু জন প্রতিদ্বন্ধীর আবির্ভাব হবে(আম্মাআআ) ।

সন্ধ্যায় ক্লিনিকে যেয়ে বুঝলাম বেবী দুটোর অবস্হা আশংকাযুক্ত। কারন আমার খালামনির হাই প্রেসার থাকার কারনে ডেলিভারী ডেট এর প্রায় দেড় মাস আগেই সিজার করা হয়েছে। দুটা বেবীকেই ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। গ্লাস ডোরের বাহিরে থেকে মাত্র এক পলকের জন্য দেখেছিলাম পিচ্চি দুটোকে। এতো ছোট!!!!!!!!! খুব খুব মায়া লেগেছিলো।

মনে পড়ে,বাসায় এসে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহকে বলেছিলাম"plz GOD save them"। (আম্মাআআ) আম্মু তো ২৪ঘন্টাই ক্লিনিকে। day by day they was improving। সপ্তাহখানেক পর শুনলাম দুটো বেবীর মধ্যে একজন বেশি WEAK। তাই ওকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত ওকে স্পেশাল কেয়ারে রাখতে হবে।

আব্বু ,আম্মুকে বললো"আমরা বরং ওকে নিয়ে নেই আপাতত,পুতুল(খালা)নিজে অসুস্হ,ওর ৩ ছেলে নিয়ে ১টাকেই সামাল দিতে পারবে না। " ব্যসসস ক্লিনিক থেকেই ১মাসের মাথায় এলো একটা টুকটুকে গোলাপি পরী। আমি ওদের নাম দিলাম "মনিষা আর আনিষা" মনিষা আমাদের কাছে থাকে। দিন দিন আমাদের "জান" হয়ে উঠলো ও। ওর বয়স যখন ১ বৎসর ,একদিন আমার খালাতো ভাই ঝগড়ার সময় বলেছিলো"মনিষা আমার বোন,তোমার খালাতো বোন"।

শুনে মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিলো। ওকে মেরে তক্তা করে দিয়েছিলাম আর কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলছিলাম"আমার বোন ও,শুধু আমার"। আমরা যখন খালার বাসায় বেড়াতে যেতাম,আমার খালাতো ভাইগুলো মনিষাকে উল্টা-পাল্টা কথা বলতো। তাই আমি পারতপক্ষে যেতাম না খালার বাসায়। কিন্তু আস্তে আস্তে বড় হলো আমার সোনামনি।

দুজনকে একই স্কুলে ভর্তি করা হলো। এক একদিন স্কুল থেকে এসে এক এক প্রশ্ন "আপুনি,যমজ মানে কি?আমি আর আনিষা যমজ হলাম কিভাবে?teacher খুব বোকা। " "আপুনি,আচ্ছা আমার fathers name-এ খালুজীআব্বুর নাম কেন?" উফফ,ওর এক একটা প্রশ্ন জর্জরিত করতো আমাকে। এখন আমার জান অনেক বড়ো হয়ে গেছে। ক্লাস ফাইভে পড়ে।

সব বুঝে। কিছুই বলে না। কেউ কিছু বললে একা একা কাঁদে। আমাকেও বুঝতে দেয় না। একই teacher পড়ায় দুজনকে।

তাই স্কুল থেকে খালার বাসায় যাওয়া শুরু। প্রথম প্রথম প্রতিদিন রাতে পড়া শেষে নিয়ে আসতাম। একদিন খুব বৃষ্টি ছিলো বলে যেতে পারিনি। রাত ১ টায় খালুজী নিয়ে এসেছিলো। তার কান্নায় ঐ বাসার সবাই অতিষ্ট।

গত ১ বৎসর থেকে আস্তে আস্তে ঐ বাসায় ১রাত,২ রাত করে থাকতে থাকতে,এখন শুধু ছুটির দিনগুলোতে আসে। সমস্ত ঘরে তখন আনন্দের ঢেউ খেলে। গত কয়েকদিন আগে ওকে বলেছিলাম"আচ্ছা মনি,আমি মরে গেলে তুই কি করবি?" ব্যসসসস শুরু হলো কান্না। আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে দিতে "আপুনি,কি হইছে?তুমি এইভাবে কেন বললা?তুমি ছাড়া আমার কে আছে?তুমি মরে গেলে আমার কি হবে?আমি তো তোমার আপন বোন না,তাই এইভাবে বললা তুমি?আপন বোন হলেকোনদিন পারতা না আমাকে রেখে মরার চিন্তা করতে। " ওর শেষের কথা দুইটা আমাকে বুঝিয়ে দিলো,আমার ছোট্ট BARBEE DOLL এখন বড় হয়ে গেছে।

আজ সকালে স্কুলে গেছে,ওখান থেকে ঐ বাসায় যাবে। আমি ইচ্ছে করে ঘুমের ভাণ করে পড়ে থাকি। ওর চলে যাওয়া সহ্য পরতে পারি না। প্রতিবার একই কাজ করি। আর ও যাবার আগে আস্তে করে আমার গালে বা কপালে আলতো একটা চুমু দেবে,পাছে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।

বড়ো বেশি ভালোবাসি তোকে বাবু সোনা,আমার মষা(আদর করে মনিষা থেকে নি বাদ দেই মাঝে মাঝে,খুব আভিমান করে,বলে"আমি (খাইয়ালামু) মশা?") বি:দ্র: ছবি:১ মাস আগে। লাল শাড়ি;মনিষা আর সাদা শাড়ি;আনিষা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.