আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছিঃ ছিঃ তুমি এতো কাছে

যে মুখ নিয়ত পালায়......। । একসারি পাবলিক টয়লেট। শাখাওয়াত সাহেব দ্রুত এসে একটির দরজা ধরে টান দিলেন। দরজা খুলে গেল।

কিন্তু ভিতরে তাকিয়ে দেখেন এক যুবক দাঁড়িয়ে বাথরুম করছে। দরজা খোলায় সে পিছন ফিরে তাকাচ্ছে। শাখাওয়াত সাহেবের বয়স চল্লিশের মতো। তিনি সচরাচর পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেন না। আজ হঠাৎ প্রয়োজন পড়লো।

তাই আসা এখানে। দরজাগুলোর ছিটকিনির এই অবস্থা জানলে তিনি এভাবে টান দিয়ে লজ্জাজনক অবস্থায় পড়তেন না। দরজায় টোকা দিয়ে বলতেন, হ্যালো, ভিতরে কেউ আছেন? যুবক ছেলেটা পিছনে তাকানোর ফলে শাখাওয়াত সাহেবের চোখে চোখ পড়লো। দুঃখিত। আমি ভেবেছিলাম এটি খালি।

জানতাম না কেউ ভিতরে আছে। আমি সত্যিই দুঃখিত— এই কথাগুলো বলতে চাইলেন শাখাওয়াত সাহেব। কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হলো না। সরি বলার জন্য তিনি মুখ খুলেছেন কিন্তু কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। অত্যন্ত অপ্রস্তুত বোধ করলেন শাখাওয়াত সাহেব।

তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে তিনি পাশেরটাতে গিয়ে ঢুকলেন। খুব প্রস্রাব পেয়েছে। চেইন খুলে প্রস্রাব করতে করতে শাখাওয়াত সাহেব পুরো ঘটনাটা নিয়ে আবার চিন্তা করলেন। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। তার অবশ্যই সরি বলা উচিত ছিলো।

ছেলেটা কী মনে করবে। নিশ্চয়ই মনে করবে লোকটা কি অভদ্র। এই জেনারেশন সম্পর্কেই তার ভুল ধারণা হবে। ভাববে বুড়োরা খারাপ। সামান্য একটা ভুলের জন্য এই যুবক বুড়োদেরকে অবজ্ঞা করবে, অভদ্র বলবে, অসভ্য ভাববে! এটা ভয়ানক লজ্জার! বুড়োদের সব অর্জনকেও তার তুচ্ছ মনে হবে।

এটা তো হতে পারে না। বের হয়ে অবশ্যই ছেলেটার কাছে সরি বলতে হবে। শাখাওয়াত সাহেব অনেক উত্তেজনা নিয়ে বের হলেন। এই মুহূর্তেই তার ছেলেটার কাছে সরি বলতে হবে। তিনি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে আবার দরজাটা টান দিয়ে খুলে ফেললেন।

দরজা খুলেই বলতে শুরু করলেন, ‘স...’— তিনি শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই আটকে গেলেন। তার মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ বের হলো না। বাথরুমে ওই যুবকের পরিবর্তে এখন অতি বৃদ্ধ এক লোক। তিনি ও ওই যুবকটির মতো পিছন ফিরে তাকিয়েছেন দরজা খোলার শব্দে।

শাখাওয়াত সাহেবের সব গুলিয়ে গেল। তিনি আবার তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দ্রুত রাস্তার দিকে হাঁটা দিলেন। হাঁটতে হাঁটতে তার মনে হলো এই বৃদ্ধ লোকটাকেও তো সরি বলা হয় নি! বলা উচিত ছিলো। বুড়ো লোকটা কী ভাববে! নিশ্চয়ই মনে করবে তার পরবর্তী জেনারেশন অধঃপাতে গেছে। বিন্দুমাত্র ভদ্রতা নেই এদের।

বড়দের সম্মান করতে হয় সেটাও জানে না। নিশ্চয়ই তিনি এই কথাটি তার বন্ধুদের সাথে আলাপ করবেন। বন্ধুরা আরো কিছু কথা যোগ করে সায় দিবেন। এই সামান্য ভুলের জন্য তার জেনারেশনের অনেক অর্জনকেই তুচ্ছ জ্ঞান করবেন এরা। অনেক বড় ভুল হয়ে গেল।

শাখাওয়াত সাহেব ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলেন। রাস্তার দিকে কোনো খেয়ালই ছিলো না তার। হঠাৎ তার ভাবনায় ছেঁদ পড়লো হলুদ রঙের একটা বিশাল ট্রাকের গর্জনে। ট্রাকটা মোটামোটি মানের গতি নিয়ে তার দিকেই আসছে। কয়েকহাত মাত্র দূরত্ব।

ট্রাকটির দিকেই তাকিয়েই শাখাওয়াত সাহেবের মনে হলো খুব ছোটবেলায় তিনি এরকমই একটা ট্রাকের পেছনে লেখা দেখেছিলেন— ছিঃ ছিঃ তুমি এতো কাছে! শিল্প ও সাহিত্য- বাংলানিউজ২৪ ডট কম  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।