আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইভরিকোস্টের নীলগিরিতে একদিন

সুখি হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় বিবেক হীন হওয়া।
কবি বলেছেন- দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু। কবিদের পংত্তিগুলো মানুষের জীবনের লব্দ অভিজ্ঞতা উদ্ভূত বলেই কোন কোন ক্ষেত্রে তা বাস্তবের সাথে মিলে যায় একেবারে অক্ষরে অক্ষরে। উপরে বর্ণিত কবিতার চরণ চারটি সেরকম এক অমোঘ বানী বলেই মনে হয় আমার কাছে। দেশের অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আমার এখনো দেখার বাকি।

এর মধ্যে অন্যতম বান্দরবানের নীলগিরি। ইচ্ছে থাকলেও নীলগিরিতে এখনো যাওয়া হয়ে উঠেনি। কিন্তু আইভরিকোস্টের ‘ মান’ শহরে আমার নীলগিরি না দেখার সাধ মিটেছে অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতই। পাহাড় পর্বতে ঘেরা আইভরিকোষ্টের বিভাগীয় শহর ‘ মান’; এ শহরে নীলগিরির থ্রিল পাওয়ার মত একটা স্পট আছে- কথাটা লোকমুখে শুনে আসছিলাম বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু এ স্পট ভ্রমণের জন্য শীতকাল হল আদর্শ সময়।

বর্ষাকালে বিপদজনক চড়াই উৎরাই ও বাঁক পেরিয়ে গাড়ি চালিয়ে ওখানে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। একদল টুরিস্ট কিছুদিন আগে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। কারন রাস্তার উপর বিশাল একটা গাছ পড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সব গল্প শুনে আমি দিন গুনতে থাকি কবে আসবে আমাদের আফ্রিকান নীলগিরি ভ্রমণের সেই কাংখিত শুভক্ষণ। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটে শীতের এক সকালে।

সদলবলে আমরা বের হয়ে পড়ি পশ্চিম আফ্রিকার নীলগিরি অভিমুখে। উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় উঠার অভিজ্ঞতা কম থাকায় আমার মধ্যে রোমাঞ্চের মাত্রাটা একটু বেশিই ছিল। আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে তংপি চূড়া অভিমুখে। এ দেশে বড় বড় পাহাড় - পর্বতকে বলা হয় তংপি। তংপি চুড়ায় এদেশের টেলিফোন ও মোবাইল অপারেটরগন টাওয়ার বসিয়েছে নেটওয়ার্ক কাভারেজ বাড়ানোর জন্য।

নীলগিরির আমেজ পেতে চুড়ায় পৌঁছে ওই টাওয়ারেই উঠতে হবে আমাদের। কারন নীলগিরির মত এখানে সেরকম কোন রিসোর্ট বা স্থাপনা নেই। এ কারনে আমার এ ভ্রমণকে তুলনা করেছি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর সাথে। উঁচু নিচু পাহাড়ের দুই পাশের ঘন জঙ্গল ফুঁড়ে একেবেকে চলা সরু রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে এক সময় আমরা পৌঁছে গেলাম কাংখিত গন্তব্যে। পথিমধ্যে বাঁশঝাড়সহ নাম নাজানা অনেক বুনো গাছের তোরণ আর বৃক্ষরাজির বৃক্ষ বন্ধন ( মানব বন্ধনের অনুরূপ রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছের মেল বন্ধন) দেখে মুগ্ধ না হয়ে কোন উপায় ছিল না।

আমাদের দেশে স্কুলের বাচ্চারা যেভাবে হাতে হাত ধরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভিআইপিদেরকে অভিবাদন জানায়, পাহাড়ি গাছগুলি যেন একইভাবে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল আমাদের। তংপি চুড়ায় উঠে খানিক বিশ্রাম সেরে নিলাম। এর পর একে একে অসংখ্য সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম একেবারে টাওয়ারের চূড়ায়। এতগুলি সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে কেউ কেউ হাঁপিয়ে উঠল। কিন্তু টাওয়ার চূড়ায় উঠে আশেপাশের দৃশ্য দেখে দারুণ রোমাঞ্চকর আর অভূতপূর্ব অনুভূতিতে সব কষ্ট মিলিয়ে গেল নিমিষে।

পেঁজা তুলোর মত মেঘ আমাদের আশে পাশেই উড়ে যাচ্ছিল। পাহাড়, ঘন অরণ্য আর মেঘ মিলে যেন তৈরি করেছে শিল্পীর পটে আঁকা দারুণ সব চিত্রকর্ম। চলুন এক পলকে দেখে নেওয়া যাক আফ্রিকার নীলগিরির কিছু ছবি।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।