আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অহেতুক রোমন্থন এবং একটি অনুধাবন...

হৃদয়ে প্রলয়... তবু আমি এক নির্বাক মহীরুহ...

এতটা বছর ধরে বন্ধু আমরা... হেসেছি, খেলেছি, গান গেয়েছি, আনন্দোন্মুখ হয়ে ভেসেছি তারুণ্যের জোয়ারে- কখন যে বাঁধা পড়ে গেছি বন্ধুত্বের বিনিসুতোয়... জানা নেই; শুধু ধীরে ধীরে জেনেছি- তোর আর আমার মাঝেই ছিল অদৃশ্য কোনো ব্যবধান- অনেকটা শেষের কবিতার ঐ "বন্ধনহীন গ্রন্থি"-র মতোই... আমাকে যেমন বন্ধুত্বের বেড়াজাল থেকে বেরোতে দিস্ নি, তোকে-ও তেমনি মুক্তি দিতে পারিনি ভালোবাসার বৃত্ত থেকে... অবশ্য পুরো ব্যাপারটাই অনেক ধোঁয়াশা, অলিখিত, অনুচ্চারিত.... আর একপাক্ষিক তো বটেই....... অন্তত আজ পর্যন্ত! আজ হঠাৎ করেই অব্যক্ত কথাগুলো খাঁচা-ছাড়া হয়ে পড়েছে... বুকের নিরেট প্রাচীর ভেদ করে ওষ্ঠাগত যেন সব জমে থাকা অভিমানগুলো। এখনো মনে পড়ে- ক্যাফে-তে আড্ডা দিয়েছি ঘন্টার পর ঘন্টা, উন্মুক্ত চত্বরে দলবেঁধে হেঁটেছি ভরদুপুরে, সন্ধ্যায়, এমনকি মধ্যরাতেও... চারুকলার সামনে গলা ছেড়ে গান ধরেছি সমস্বরে-... ফ্রেন্ডশিপ ডে, ভ্যালেন্টাইনস ডে আর পহেলা বৈশাখে হারিয়ে গেছি উন্মাতাল জনস্রোতে... পাগলের মতো সারারাত নেচেছি বাচ্চুর কনসার্টে; তবুও দেখতে পাস্ নি হৃদয় জুড়ে অনুভূতির প্রলয় নাচন... একটি বারের জন্যেও! মনে আছে, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কলা পাতায় গরম তেহেরী খেয়েছি, অবসরে লনে পা ছড়িয়ে, বাদামের খোসা জমিয়ে ঘাসের উপর ছোট ছোট টিলা বানিয়েছি আর তারই ফাঁকে মজার মজার গল্প ফাঁদা... শুধু রাগ হতো যখন গ্রুপের ডানপিটে হাসান-টা খেলাচ্ছলে তোর বেনী ধরে টান দিত আর মজা পেয়ে খিল-খিল হাসতি তুই; কিংবা রাস্তা পেরোতে গিয়ে রবি-টা যখন আলগোছে তুলে নিতো তোর হাত.... বিশ্বাস কর্... কি এক ঈর্ষাকাতরতায় আক্রান্ত আমি তখন- এতো কাছের হাসান-কে মনে হতো দু'চোখের বিষ, রবি হয়ে যেত যেন চক্ষুশূল.. আর ঐ বেনী? কোমল হাত? মনে হতো শুধু আমার... আমারই অধিকার... যে অধিকার ছেড়ে দিয়েছি... বহু কষ্টে.... বিদীর্ণ অন্তরে.... প্রচন্ড অনিচ্ছায়। মনে আছে তোর? মেয়েদের হলের সামনের ফুটপাতের আড্ডায় যখন হাসতে হাসতে এলিয়ে পড়তি আমার কাঁধে? একবার-ও কি টের পেয়েছিস বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি? কিংবা লাইব্রেরির সামনে যখন বসতো আমাদের গানের আসর- সুমনের গিটারের হালকা সুরে আমাদের মাথা দোলানো? তোর এলোচুল পড়ন্ত বিকেলে আমার গাল ছুঁয়ে যেতো... তোর অজান্তেই...। কই, বুঝিস নি তো কোনো এক হৃদয়ের অনুরণন-... না, ছয়-তারের গিটারে নয়, বরং দমকা বাতাসে ওড়া একগোছা চুলের স্পর্শে! অবশ্য বলবার কি-ই বা ছিল আমার? রবি যে দিন তোর হাতে চিরকুট গুঁজে দিয়েছিল সবার অলক্ষ্যে- আড়চোখে ঠিকই দেখেছিলাম... অতটা বুকে লাগে নি তখন, যতটা লেগেছিল তোর আরক্ত মুখ দেখে। কই, কখনো তো মুখ ফুটে বলি নি কিছই... কখনো তো বলিনি ভালোবাসি তোকে! কখনো কি শুনেছিস? টের পেয়েছিস, নীলা? এরপর কেমন যেন দূরে সরে গেলি তোরা- তুই আর রবি।

আমাদেরকে দেয়ার মতো সময় হতো না তোদের। যাও বা দিতি, তা যেন নিজদের কিছুটা পরখ করে নিতে কোলাহলের বৃত্তে। সারাটা সময় জুড়ে তোর আর রবির চঞ্চল, চকিত চাহনির নীরব কথোপকথন দৃষ্টি এড়াতো না আমার... শুধু আমার ছলছল চোখ তোর দৃষ্টি এড়িয়ে যেত... বার বার। তারপর থেকে নিজের মাঝেই ক্রমাগত গুটিয়ে গেছি আমি... সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। ব্যস্ততার নাম করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই যখন-তখন।

দেখলি না, তোর বিয়ের কার্ড দেয়ার জন্য-ও খুঁজে পেলি না আমায়! অন্তর্মুখী মানুষের আবার ভালোবাসা কি, বল্ তো? এদের ভালোবাসতে নেই... ভালোলাগা-ও ভুলে যেতে হয় অতি দ্রুত... নইলে কোন রাজপুত্র এসে জয় করে নেয় স্বপ্নের রাজকন্যাকে... দিন-দুপুরে... প্রেমময় দু'চোখের সামনে। বামুন হয়ে আমৃত্যু হৃদয়ে জ্বলতে থাকে বেদনার দাবানল... এটাই নিয়তি বুঝি! তোর তাতে কি? কখনো বুঝবি না... প্লাবিত কষ্টগুলোর উৎসই হলো জমাট-বাঁধা ভালোবাসা! হাসান সকালে বলে গেলো আজ তোর বিয়ে। সুখ থাক্ তুই। ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।