আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হৈমন্তী - গল্পে এবং নাটকে

হেথায় কিছু লিখব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা লেখার থাকল প্রয়োজন!

রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী - এক অসাধারণ ছোট গল্প। গত পরশুদিন একুশে থেকে এর নাট্যরূপটা দেখলাম। অনিন্দ্য আউয়ালের নাট্যরূপে নাটকটি পরিচালনা করেছেন ফাল্গুনী হামিদ। অভিনয় - হৈমন্তী চরিত্রে তনিমা এবং অপু চরিত্রে মাহফুজ। গল্পের 17 বছর বয়সী হৈমন্তীর চরিত্রে নাটকে এর প্রায় দ্বিগুণ বয়সী তনিমা একটু বেমানান মনে হলেও করার কিছু ছিল না।

কারণ অল্প বয়সী অন্য যেসব অভিনেত্রী বর্তমানে আছে তারা এই চরিত্রে সম্ভবত আরো বেশি বেমানান হতো। অবশ্য নতুন মুখ যে পরিচালকরা কেন নেয় না, কে জানে। অপু চরিত্রে মাহফুজকে খুব একটা বেমানান মনে না হলেও সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছি হৈমন্তীর বাবার চরিত্রে বুলবুল আহমেদকে দেখে। বুলবুল আহমেদের পোশাক-আশাক, চেহারা কোনটাই পাহাড়ী এলাকার মানুষের মতো মনে হয় নি। যেসব গল্প সাহিত্য হিসেবে সফল অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর নাট্যরূপ খুব একটা সফল হয় না।

এর কারণ হয়তো বা যথেষ্ট স্বাধীনতার অভাব অথবা পরিচালকদের অপরিপক্কতা। তাছাড়া অনেক গল্পের ক্ষেত্রেই দেখা যায় এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো লেখকের বর্ণনাতে ফুটে উঠে, চরিত্রদের পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে নয় - যাকে নাট্যরূপ দেওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। হৈমন্তী নাটকেও একই ঘটনা ঘটেছে। গল্পের বর্ণনামূলক অংশগুলোকে প্রকাশ করার জন্য নাট্যরূপ প্রদানকারী কখনও সংলাপ তৈরি করেছেন, কখনও অপু বা হৈমন্তীর মনোলগ (স্বগত বচন) ব্যবহার করেছেন। আবার পুরো নাটকটি কথ্য ভাষায় হলেও দুইবার এরকমও দেখা গেছে, অপু মূল গল্পের হুবহু কিছু অংশ সাধু ভাষায় মনে মনে বলছে - যা পুরো নাটকটাকে হযবরল করে ফেলেছে।

নাট্যকলা সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই। তবুও একজন সাধারণ পাঠক এবং দর্শক হিসেবে আমার মনে হয়, নাটকটা আরো বেশি সুন্দর ও সার্থক হতো যদি পুরো নাটকটাই অপুর জবানিতে বা কল্পনাতে দেখানো হতো। গল্পটা যেরকম সবগুলো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অপুর জবানীতে লেখা হয়েছে, সেরকম নাটকটা দেখানো যেতে পারত এভাবে যে, অপু দুঃখভারাক্রান্ত মনে পুরো কাহিনীটা লিখছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে পুরো ঘটনাটা ভাবছে। তার ভাবনার মধ্য দিয়েই ফ্ল্যাশ ব্যাক হিসেবে ঘটনাগুলো দেখানো যেত।

এরকম হলে যে ঘটনাগুলো বর্ণনামূলক অর্থাত্ চিত্রায়ন করা সম্ভব নয়, সেগুলো যদি অপু মনে মনে মূল গল্প থেকে হুবহু চলিত ভাষায় বলত, তাহলে সেটা মোটেই বেমানান হতো না। কারণ যে কারো পক্ষে নিজের জীবনের ঘটনা লেখার সময় মনে মনে এ ধরনের বিস্তারিত ভাবনা ভাবাটাই স্বাভাবিক। তাই না?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.