আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাবিব আলীর পতাকা পুরাণ

ভূল সময়ের মর্মাহত বাউল

হাবিব আলীর শখটা অনেক দিনের। বুকের মধ্যে যত্নে লালন পালন করতে করতে পুষ্ট শখ কখনও পুরন হবে কিনা এই নিশ্চয়তা না থাকলেও হাবিব আলী স্বপ্ন দেখার হাল ছাড়েনি। সে স্বপ্ন দেখেই যায়। শখ পুরনের স্বপ্ন। মানুষের সকল ইচ্ছা পূর্ন হয়না।

তবু মানুষ নতুন নতুন ইচ্ছা নিয়ে মেতে উঠে। অনেকেই পুরনো শখ ভুলে যায়। কিন্তু হাবিব আলী ভুলেনা। যতদিন যায় শখ বাড়তে থাকে, তাতে চেকনাই লাগে। শখের জেল্লা বাড়ে।

শখ পুরনের ফন্দি ফিকির আবিস্কারে ব্যয় হয় হাবিব আলীর রোজকার কিছুটা সময়। কিন্তু সফল লভেদী বুদ্ধি আবিস্কার করা হয়ে উঠেনা। অবশেষে এল বুদ্ধি। শানদার এক বুদ্ধি। যখনই এই বুদ্ধিটা মাথায় আসল তখনই শুরু হল সমস্যা।

নিজের মাথার চুল নিজেই ছেড়া শুরু করল হাবিব আলী। এই ব্যপারটা এতদিন ধরে ঘটছে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আর তার মাথায় কিনা এতদিন পরে আসল! নিজেকে সে কুৎসিত ভাষায় গালি দিতে লাগল। একসময় হাবিব আলীর মাথা ঠান্ডা হল। সে তার শখ, তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করতে বসল। কিন্তু সেটা মোটেই সহজ নয়।

দিব্যওচাখে নিজেন স্বপ্নের রুপায়ন দেখে তার মনের ডুগডুগি অবিরাম বাজতে থাকায় মন ও মগজকে পুরুপুরি শিতল করা যায়না। অবশেষে অনেক চেষ্টায় হাবিব আলী তার কর্মপর্যায় নির্দিষ্ট করতে সম হল। ১৯৯৯ সালের পহেলা মে। সকাল দশটা। হাবিব আলী তার বাড়ির সামনে সাত হাত লম্বা, আড়াই হাত পেট মোটা লাল একটা ব্যানার টাঙ্গালো যাতে সাদা হরফে লেখা “বিশ্বকাপে বঙ্গশার্দুল”।

মানুষজন এই ব্যানার দেখে পুলক অনুভব করল। বস্তুত: বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলছে, দেশের প্রতিটি মানুষ এই কথা জানে। এবং এজন্য সবসময় মনে আনন্দ অনুভব করে। তার উপর হাবিব আলীর এই ব্যানার সবার কাছে আরামদায়ক নিঃশ্বাসের মত মনে হল। সেদিন বিকেলেই হাবিব আলী বাড়ির ছাদে বাংলাদেশের একটি পতাকাও উড়িয়ে দিল।

মানুষের প্রিত অনুভব এতে আরও বেড়ে গেল। কিন্তু সেটা বিশ্বকাপ শুরুর দ্বিতিয় দিন পর্যন্ত! কারন তৃতীয় দিনেই অর্থাৎ ষোল মে সকালে হাবিব আলী তার দীর্ঘ দিন লালিত শখ পুরন করে ফেল্ল! সেদিন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং পাকিস্তানের খেলা। এই সুজুগে হাবিব আলী তার পেয়ারা পাকিস্তানের পতাকা বাংলাদেশের পতাকার ঠিক পাশেই উড়িয়ে দিল। বিদেশী পতাকা উড়ানোতে উস্তাদ মানুষের জন্য এই ঘটনা তেমন বিকারের নয়। কিন্তু এখানে এটি দৃষ্টি আকর্ষন করল।

কারণ পাকিস্তানের পতাকার পাশে বাংলাদেশের পতাকা! তাও আবার প্রায় একহাত ওপরে থাকা পাকিস্তানী পতাকাটা দৃষ্টিকটুই ঠেকছিল। হাবিব আলী পাকিস্তানী পতাকা ওড়ানোর পরেই প্রস্তুতি নিয়েছিল যেকোন রকম পরিস্তিতি মোতাবেলার। কিন্তু অবাক হয়ে গেল সে! পতাকার ব্যাপারে কথা বলার জন্য কেউ এলনা! দু’দিন পার হল, কেউ আসেনা। হাবিব আলী আবারও নিজেকে গালমন্দ করে। কেন সে এতদিন ভয় পেল! কেন ওড়ালোনা পেয়ারা পাকিস্তানের পতাকা! বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে বেশ ক’দিন হয়ে গেল।

বর্ষার বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে বাজে রঙে লেখা বিশ্বকাপে বঙ্গশার্দুল ব্যানার। বাংলাদেশের পতাকাও উড়ছে শোচনীয় অবস্থায়। আর কী আশ্চর্য পাকিস্তানী পতাকাটা এখনও টিকে আছে সকল সজিবতা নিয়ে! হাবিব আলী এখন এখন প্রায়ই উদাস হয়ে যায়। তার চেহারায় লেপ্টে থাকে বিষাদ। কিন্তু সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য নয়।

বিষাদমাখা মুখটায় হাসি ফুটে উঠে। হাবিব আলী অপার্থিব এক ভালোলাগায় নতজানু হয় চাঁদতারা খচিত পতাকার সামনে। ___________________________________________________ এই গল্পটা লিখেছিলাম ১৯৯৯ সালে। ছাপা হয়েছিল প্র.আ. বন্ধুসভায়। আরও অনেক লেখার মত এটিও হারিয়ে গিয়েছিল।

পরশু রাতে পুরনো কাগজের স্তুপ থেকে এর মূল কপি বেরিয়ে আসে। পড়ে মনে হল এখনও এই গল্পের দিন শেষ হয়ে যায়নি। কিছুটা বদলে দিয়ে দিলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.