আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেডরুমে উঁকি দেবে গুগল?!



আর কদিন পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাক ঝেড়েছেন তো মরেছেন, দিন না ফুরোতেই কে বা কারা আপনার সেই নাক ঝাড়ার ছবি ছাপিয়ে দেবে কোনো এক ওয়েবসাইটে। সেই ছবি তরতাজা থাকবে বছরের পর বছর। তারপর থেকে আপনার নামের সঙ্গে নাসিকা সংশ্লিষ্ট কোনো এক অর্বাচীন শব্দ স্থায়ীভাবে গেঁথে যেতে পারে। না, কোনো পাপারাজ্জি সেই ছবি তুলবে না। ছবি সাপ্লাইয়ের মহত (!) দায়িত্বটা পালন করবে ই-দুনিয়ার যাদুর চেরাগ ‘গুগল’।

ঘষা দিতেই বের করে দেবে শহরের কোন রাস্তায় কার বাড়ি, কার জানালা দিয়ে কী কী দেখা গেল, রাস্তায় কারা কারা কলার খোসায় পিছলে পড়লো ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাইভেসি শব্দটা আপাতত তাই ডিকশনারিতে তুলে রাখুন। সোর্স কোড গোপন রেখে দিনের পর দিন একচেটিয়া ব্যবসা করে মাইক্রোসফট এখন অভিযোগের তোয়াক্কা করে না। সেই রোগ এখন ইন্টারনেট মুঘলখ্যাত গুগলের ঘাড়েও চেপেছে। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি দিয়ে (গুগল আর্থ) গোটা দুনিয়াটাকে ‘ফ্রি’ করে রাষ্ট্রের অনেক নীতি-নির্ধারকেরই ঘুম হারাম করে দিয়েছিল গুগল।

বাস্তব ম্যাপ দেখে সন্ত্রাসীদের জন্য হামলার ছক তৈরি যেমন দুধভাত হয়ে গেল, তেমনি শত্রু দেশের কাছেও প্রকাশ পেয়ে গেল, কোন দেশের ঠিক কোন অঞ্চলটায় রয়েছে সামরিক ঘাঁটি। হাঁটে হাড়ি ভেঙেছে অনেক নিউকিয়ার গবেষণারও। তবু নির্বিকার গুগল। বিনোদনের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা অগণিত অনলাইন প্রেমীদের কথা ভেবে শেষতক গাড়ির ছাদে ক্যামেরা বেঁধে রাস্তায় নামতে বাধ্য হলো কম্পানিটি। রাস্তার ত্রিমাত্রিক ছবি ও ভিডিও ফুটেজ তুলে বিশেষ সফটওয়্যারের সাহায্যে তারা বানাচ্ছে গুগল স্ট্রিট ভিউ।

ঘরে বসেই দেখা যাবে শহরের রাস্তায় কী কী ঘটেছে। পাওয়া যাবে ত্রিমাত্রিক স্বচ্ছ ছবি। সেই ছবি ও ফুটেজ চাইলে ইচ্ছেমতো যেকোনো সাইটে আপলোডও করা যাবে। গুগলের ভ্যানটা আপাতত নিউইয়র্ক ও সান ফ্রান্সিসকোতে পরীক্ষামূলকভাবে ছবি তুলে যাচ্ছে। অল্প সময়েই আরো অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়বে।

একসময় হয়তো গোটা দুনিয়ার অলিগলিতেও ঘুরে বেড়াবে গুগলের ক্যামেরা। এরই মধ্যে উঠেছে বেশকটি অভিযোগ। তবে প্রাইভেসির খাতিরে মামলা করার সাহস এখনো কেউ দেখাননি। কারণ তাতে লাভ নেই। শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন গুগলের কাড়ি কাড়ি ডলারের কাছে ওসব মামলা-অভিযোগ নস্যি।

এতোবড় গুগল আর্থ যেখানে দিব্যি ব্যবসা করছে, সেখানে এই রাস্তার ছবি কী এমন দোষ করলো! কিন্তু সেই ছবিতে যখন কারো অন্দরমহল স্পষ্ট দেখা যায়, কাউকে সূর্যস্নান করতে দেখা যায়, তখন? গুগল এসে নিশ্চয় স্যরি বলবে না। প্রযুক্তির ব্যবহার অপব্যবহার দুইই সমান সমান। তবু এ যুগে প্রযুক্তি আমাদের একান্ত আপন। অনলাইন প্রেমীরা গুগল ছাড়া একদিনও চলতে পারবে না। এ ঘনিষ্টতার সুযোগ নিয়ে গুগল যে ক্রমেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে তাও স্পষ্ট।

‘গুগল আর্থ’-এর জন্য আপনার বাড়ির ছাদের ছবি তুলতে গুগল যেমন দ্বিধা করেনি, তেমনি কারো জানালা দিয়ে ক্যামেরা হাতে উঁকি দেয়াটাকেও বোধহয় তারা খারাপ কিছু ভাববে না। বিশ্বটাকে হাতের মুঠোয় পেয়ে অন্যের বেডরুমে উঁকি দেয়াটা নিশ্চয়ই সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।