আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নবাবের প্রস্থান

রুপালি পর্দায় বহু চরিত্রেই তাঁকে দেখেছেন অগণিত দর্শক। তবে সব ছাপিয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা হিসেবেই বাঙালির মনের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন রোগভোগের পর চলে গেলেন সেই মুকুটহীন নবাব। চিরপ্রস্থান ঘটল বাংলা চলচ্চিত্র ও মঞ্চের কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের। ভরাট দরদি কণ্ঠ ছিল আনোয়ার হোসেনের।

সহজেই আলাদা করে চেনা যেত বহুজনের কথাবার্তার মধ্যেও। ‘বাংলা বিহার উড়িষ্যার মহান অধিপতি, তোমার শেষ উপদেশ আমি ভুলিনি জনাব...’নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিনেমায় তাঁর কণ্ঠনিঃসৃত এই সংলাপ এখনো অগণিত মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। চরিত্রের গভীরে গিয়ে তার বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতেন নিজের অসামান্য অভিনয়দক্ষতায়। প্রবল ব্যক্তিত্বময় ছিল তাঁর উপস্থিতি। বাংলা চলচ্চিত্রের সেই সাদাকালো যুগ থেকে রুপালি পর্দায় বা মঞ্চে যত দিন অভিনয় করেছেন, দর্শকদের আকর্ষণ ধরে রেখেছেন তাঁর প্রতি।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় অভিনয়শিল্পী আনোয়ার হোসেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। স্ত্রী নাসিমা আনোয়ার, চার ছেলে, এক মেয়েসহ বহু ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, পারকিনসনসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। কয়েক বছর ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন।

জীবনের শেষ পাঁচ-ছয় মাস হলো, তিনি বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেছিলেন। সর্বশেষ তিন সপ্তাহ ধরে তিনি স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। রাত আড়াইটায় কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁকে সিঙ্গাপুর অথবা ব্যাংককের কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। কিন্তু তিনি (আনোয়ার হোসেন) সেই সুযোগ আর দিলেন না। ’শুক্রবার সকাল আটটার দিকে আনোয়ার হোসেনের মরদেহ শেষবারের মতো তাঁর কলাবাগানের ক্রিসেন্ট রোডের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল নয়টার পর থেকেই আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, ভক্ত-অনুরাগী এবং চলচ্চিত্রজীবনের সহকর্মীরা সেখানে আসেন। শিল্পীর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চলচ্চিত্রাভিনেতা আহমদ শরীফ, চলচিত্রনির্মাতা শহীদুল ইসলাম, সোহানুর রহমান, শাহ আলম, অভিনেতা উজ্জ্বল, সুব্রত প্রমুখ।

সেখানে আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে শেষ বিদায় জানান। বাসভবন থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। সেখানে বাদ জুমা তাঁর জানাজা হয়। বেলা তিনটায় আনা হয় তাঁর দীর্ঘদিনের স্মৃতিবিজড়িত কর্মস্থল এফডিসি প্রাঙ্গণে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ এখানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন নায়ক রাজ্জাক, অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, আলমগীর, প্রবীর মিত্র, উজ্জ্বল, চলচ্চিত্রনির্মাতা আমজাদ হোসেন, সালাউদ্দিন জাকী, কাজী হায়াৎ, মহম্মদ হান্নান প্রমুখ।

শ্রদ্ধা জানায় প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি, সহ-ব্যবস্থাপক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিসহ চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর মায়ের কবরে তাঁকে দাফন করা হয়। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।