আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্নীতিবাজকে নয় দুর্নীতিকে ঘৃণা করুন



পুঁজিবাদি অর্থনীতির স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দুর্নীতিকে আমরা খারাপ বলতে পারি কি? তাত্ত্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন হতে দুর্নীতির অর্থনিতীর কোন সুসম্পর্ক আছে কি না আমার জানা নেই। তবে ইতিহাস ও ঐতিহাসিকগণ দুর্নীতির সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোন বৈরিতা খুজে পাননা। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন দুর্নীতির পথ ধরেই পুজিবাদের বিকাশ। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনের পেছনে বিপুল কালটাকার মালিক বনে যাওয়া দুর্নীতিবাজদের গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে অনেকে মনে করেন। বর্তমান ইউরোপ ও আমেরিকার পুজির বিকাশ ঘটেছিল লুন্ঠন আর দুর্নীতির উপর ভর করেই।

লুন্ঠন করা প্রাথমিক পুজি থেকে সম্পদশালী হওয়া (যারা দস্যু কুবের নামে পরিচিত) বা উনবিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় পর্যায়ের ব্যাপক দুর্নীতির কথা আমরা জানি। এত সবকিছুর পরও ইউরোপ আমেরিকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেমে থাকেনি। এসবতো গেল ইউরোপ আমেরিকার কথা, আমাদের দেশের কথায় আসি। আজ আমরা দেশে যেসব ঝক-ঝকে তক-তকে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো দেখি এগুলোর মালিক কারা এবং তারা কিকরে এসবের পুজি সংগ্রহ করেছেন তা আমরা সবাই কম বেশি জানি। ডাকাতরাই ব্যাংক স্থাপন করে বলে যে প্রবাদ ছিল; এসব ব্যংকগুলো এদখলে তা আর উড়িয়ে দেওয়া যায়না।

বাংলাদেশের বর্তমান মিডিয়ায় বিনিয়োগের বিপুল টাকা যে দর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত তা কে না জানে। টি.আই.বি.(জার্মানভিত্তিক দুর্নিতী অনুসন্ধাকারী সংস্থা) এর রিপোর্টে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এতসবকিছুর পরও বাংলাদেশের অর্থনিতী ভাল করছে। জিডিপিতে গ্রোথ রেট ৬.৭, যা বিশ্বের অন্যতম দ্রুত হার। জানি বলবেন অর্থনিতী ভাল হচ্ছে রেমিটেন্সের জন্য, গার্মেন্টের জন্য, ফি-বছর ফসলের বাম্পার ফলেনর জন্য; হয়ত এও বলবেন দুর্নীতি না থাকলে জিডিপির গ্রোথ ১০এর মত হতে পারত।

কিন্তু আমিতা পুরোপুরি মেনে নিতে পারিনা। আমি বলব ব্যাংক, মিডিয়া ও যোগাযোগে কাল টাকার বিনিয়োগ কি জিডিপিতে অবদান রাখছেনা। আমি বলতে চাই, ৫০জন লোকের যদি ৫০০ টাকা থাকে আর তা যদি সুষমভাবে বন্টন করা হয় প্রেত্যেকে ১০ টাকা পাবে যা পান-বিড়ি খেয়েই শেষ কিন্তু যদি ১জনই পুরো টাকা পায় সে পান-বিড়ির ব্যাবসা করে চলতে পারবে। হ্যাঁ; স্পষ্টতই এখানে সম্পদ কুক্ষিগত করার কথা বলা হচ্ছে, বলা হচ্ছে অন্যকে বন্চিত করতে। কিন্তু এছাড়া কিবা করার আছে এটাই কি পুজিবাদ নয়? পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটাই এমন যে এর মধ্য দিয়ে সমাজের এক অংশ সম্পদের পাহাড় গড়বে অন্য অংশ দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হবে।

পুঁজিবাদীরা অবশ্য আমাদের ইউনূসের গ্রামীণ-ঋণের প্রয়োগ দেখে হাত তালি দিচ্ছে বলছে; ঐ দেখ পুঁজি শুধু ধনীর কেন এটাতো গরীবেরও হতে পারে। নিসন্দেহে গ্রামীন ঋণ পুঁজিবাদীদের সামান্য হলেও একটা নৈতিক ভিত্তির উপর দাড় করিয়েছে। কিন্তু এর সুদের হার এত বেশি যে এখন পর্যন্ত এটা শোষণের এক অভিনব হাতিয়ার। আর তাই দুনিয়ার সমস্ত পুজিবাদীদের শ্যেণ দৃষ্টি এখন গ্রামীণ-ঋণ এর দিকে, দ্রুত অর্থ শোষণের জন্য তাদের লালায়িত দৃষ্টি সংবরণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে তা সহযেই অনুমেয়। সে-যাহোক, সরাসরি বলা যায়--বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় শুধু ব্যাক্তগত নয় এমনকি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দুর্নীতির প্রয়োজন আছে।

এ পসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শক হান্টিংটন বলেন- "অতি কেন্দ্রিভূত সৎ আমলাতন্ত্রের চেয়ে অতি-কেন্দ্রিভূত ঘুষখোর আমলাতন্ত্র শ্রেয়"। আমি এপর্যন্ত বস্তুগত দৃষ্টিকোণ থেকে দুর্নীতির কথা বলেছি কিন্তু সভ্যতা পিরামিডের চূঁড়া বা টুইন টাওয়ারের ওপর দাড়িয়ে থাকেনা। সভ্যতা থাকে মানুষের অনুভূতিতে; যার বহিপ্রকাশ ঘটে নজরুলদের কবিতায়, বরি-ঠাকুরের সোনার তরী যাকে বহন করে। তাই দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। তা না হলে সকল অর্জনই বিফলে যাবে।

দুর্নীতি জন্ম দেবে সামাজিক বৈষম্যের, অনৈতিকতার। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।