আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হালালিকাঃ ভিনদেশী হালাল



আমাদের ব্লগারুরা অনেকেই দেশ ছেড়ে এদিক সেদিক ছিটকে পড়েছেন, বা বিদেশে থাকতেই ব্লগের নেশা ধরেছেন। তাই প্রায়শঃই দেশ আর বিদেশের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, রাজনীতি, ধর্মীয় সীমানা ইত্যাদি আলোচনায় চলে আসে। এর মাঝে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হালাল আর হারামের সমস্যা। যারা দেশ ছেড়ে ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়াতে পাড়ি জমিয়েছেন তাদের জন্য বিষয়টা অনেক সময়েই কনফিউজিং, হতাশাজনক, বিব্রতকর। আমি আমার নিজের পক্ষ থেকে অল্প কিছু শেয়ার করতে পারি।

আমাদের ডাইল আর ফেন্সী জেনারেশনের অনেকেই আছে যারা খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে অত্যান্ত উদার। যাহাই রসনায় রুচে তাহাই স্বাগত। এছাড়াও এক দুই পার্সেন্ট আছেন যারা হালালের বাউন্ডারী একটু প্রশস্ত করার জন্য বেশ চেষ্টা করেন, তাদের বাদ দিলে বাকি সাধারণ জনগণের জন্য এই পোস্ট। আমার পছন্দের মাংস (গরু,ছাগল,মুরগী) বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে জবাই করে কেটেকুটে দিবে আমার হালাল মাংসের চাহিদা বলতে গেলে মোটামোটি এইটুকুই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, সাবধান না হলে দেশেও মরা মুরগী, ছাগলের নামে ভেড়া ছাড়া অন্য কিছু বা কলেমা না পড়েই জবাই করা মাংস নিয়ে ধরা খাবার ভাল সম্ভাবনা আছে।

তাই পরিচিত দোকান বা নিজে সামনে দাঁড়িয়ে জবাই করানো গোশত কিনতেই বেশী স্বচ্ছন্দ্য বোধ করি। বিদেশে হালাল গোশতের চাহিদা দুই রকমের হতে পারে। একটা হল অফিসে বা ভ্রমণের সময়ে অন দা গো রেডীফুড আর দ্বিতীয়টা হল বাড়িতে রান্না করার জন্য সাধারণ গ্রোসারীর মিট। প্রথম প্রয়োজনের জন্য এবং সাধারণ ভাবেই আমার কাছে মনে হয় পশ্চিমা দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য প্রধান বন্ধু হল ভেজিটেরিয়ান মুভমেন্ট। অল্প কিছু আধপাগলা পাবলিকের হাউকাউয়ের চোটে এখন যেকোন দোকানে বা সুপারমার্কেটে গেলে একগাদা ভেজিটেরিয়ান লেবেল দেয়া খাবার পাওয়া যায়।

আর এদেশে চেকিংএর ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি করা হয় বলে আশা করা যায় যে, ভেজিটেরিয়ান লেবেল দিলে সেখানে প্রাণীজ প্রোটিন বা ফ্যাট থাকবে না। অতএব নিশ্চিন্তে কামড় বসাই। এছাড়া এগ ক্রীস স্যান্ডউইচ বা টুনা সুইটকর্ণ স্যান্ডউইচ আরামসে খেয়ে নেয়া যায়। দ্বিতীয় ধরণের প্রয়োজন হল নিয়মিত এবং সাধারণত বড়মাপের, কারণ রোজ বাজার করার মত বিলাসিতা করা যায় না অনেক সময়েই। আর ভিনদেশী হয়ে হটাৎ ভাল হালাল দোকান বোঝা মুশকিল।

একশ কোটির ওপর মুসলিম জনগোষ্ঠীর খাদ্যচাহিদার বাজারের আয়তন অবিশ্বাস্য রকমের বড়। এখানে ভাগ বসানোর জন্য যেকেউ মহানন্দে এগিয়ে আসবে তাতে অবাক হবার কিছুই নাই। তাই সবখানেই আজকাল অসংখ্য হালাল ফুড, হালাল দোকান গজিয়ে উঠেছে। তাই আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কাছের মসজিদ বা মুসলিম সেন্টার খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। তারপর সেখানে একটু খোঁচাখুচি করে জেনে নেই কোনগুলো বিশ্বাসযোগ্য।

এমি যেই এলাকায় থাকি, সেখানে বেশকিছু হালাল ফাস্টফুড শপ আছে, চিকেন চিপস আর ডোনার কাবাবের। পরে খবর নেয়ার পর, এখন এক দুইটা ছাড়া বাকিগুলো থেকে আর কিছু কেনা হয় না। ইংল্যান্ডের বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানোর জন্য সারাদেশে অসংখ্য হালাল ফাস্টফুড আর মাংসের দোকানে ভর্তি। তার একটা বড় অংশেই চলে হালালের নামে হাবিজাবি বিক্রি। এরা হয়ত পুরোপুরি নিয়ম ভাঙ্গে না কিন্তু হালালের সাথে যদি কিছু এদিক সেদিকও হয়ে যায়, সেটাও চালিয়ে দেয়া হয়।

সাবধানী ক্রেতারা, ভন্ড বিক্রেতাদের চাপে ত্যাক্ত হতে হতে শেষ পর্যন্ত এইচএমসি র জন্ম। মোটামুটি সবগুলো হালাল দোকানেই বিদঘুটে আরবীতে লেখা সার্টিফিকেট দেখা যায় যার উৎস বা নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে কোন গ্যারান্টি নাই। সেদিক থেকে এইচ এম সি অনেক স্ট্রিক্ট। এক দুই লাইন লিখছি তার সম্পর্কে। হালা মনিটরিং কমিটি বা এইচ এম সির সদস্য হতে গেলে একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফী দিয়ে হতে হয়।

এবং এই কমিটির সদস্য হিসাবে থাকতে চাইলে প্রতিমাসে সদস্যপদ নবায়ন করতে হয়। ফলে সদস্য হবার সময়ে ঠিকঠাক মত থেকে পরে ওই সার্টিফিকেট বেচে ২০ বছর পার করে দেবার উপায় নাই। কমিটির পক্ষ থকে প্রতি ১-২ দিন পরে পরে মূল জবাইখানায় ইন্সপেকশন করা হয়। এবং কখনো অনিয়ম পেলে সাথে সাথেই সদস্যপদ বাতিল করা হয়, এবং দোকান থেকে সার্টিফিকেট সরিয়ে ফেলা হয়। আমিও দেখেছি এক দুইটারে ধরা খাইতে।

কমিটির ব্যাবস্থাপনায় সদস্যদের বেশিরভাগই ওলামায়ে কেরাম এবং তারা সব সময়েই উৎসাহিত করেন ক্রেতাদের মাঝে মধ্যে শহর থেকে দূরে হলেও জবাইখানায় গিয়ে নিজে অবস্থা যাচাই করার জন্য। আমি নিজেও এক দুইজনকে চিনি যারা পরিদর্শক হিসাবে কাজ করেছেন বা এখনো করছেন। কমিটির ওয়েবসাইটে বেশ দরকারী অনেক তথ্যই আছে, এবং সবচেয়ে ভাল হল, অনলাইনেই আপনার এলাকার আশেপাশে কোন দোকানে নির্ভরযোগ্য গোশত পাওয়া যাবে তা খুঁজে বের করা যায়। যদিও এই সার্টিফিকেশন ওয়ালা দোকানের মাংস অনেক সময়েই অন্যান্য দোকানের চেয়ে কিছুটা দামী হয় কিন্তু নিশ্চিন্তে কিনে ফেলা যায়। নিচে ওদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিলাম।

অন্যান্য দেশে কি অবস্থা কমেন্টে বা সম্পুরক পোস্টে জানাতে পারেন। !@@!590506 !@@!590507 !@@!590508 !@@!590509 আমাদের এলাকার একটা হালাল দোকানের সীল আর খাবারের ছবি খুঁজে পেলাম। লোভ লাগলে কি হবে। কিনতে পয়সা লাগেঃ(

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.