আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালবাসা চিরকালের

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

এবারের বসন্ত একটু অন্যরকম। প্রতিবার যেমন উষ্ণতার ছোঁয়া নিয়ে আসে ঠিক তেমনটি নয়। খনা'র সেই বিখ্যাত বচন, "যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পূণ্যি দেশ"- এবারের বসন্তকে একটা ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। প্রাণের আকুতি মেশানো এবারের বসন্ত বাহারি রঙের ফুলে ফুলে সেজেছে বটে তবে তার সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে মেঘলা শাড়ীর আঁচলে ঢাকা ধূসরঘন আকাশ, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির ছন্দের কোমল নৃত্য, হালকা হিমেল হাওয়ার চকিত ঝাপটা- কেঁপে ওঠে শরীর। সব মিলিয়ে এক অনুপম ভাললাগার রেশ।

শীত চলে গেলেও শীতের আলসে ভাবটা এখনও কাটেনি। বসন্ত দিনের সূচনালগ্নে দিনভর বৃষ্টি অথচ জল থৈ থৈ অবস্থা নয়। তেমনটা হলে, ছোট্ট একটা ডিঙ্গি নিয়ে কিশোর বেলার সেই নাবিক হবার চেষ্টাটা আবার করা যেত। কিন্তু তাতো হবার নয়, হবার কোন সুযোগও নেই। সময় এবং বয়স সবকিছুকে দূরে ঠেলে দেয়।

পুরোনো স্মৃতিগুলো তাই শুকনো পাতার মত মনের আঙ্গিনায় যত্রতত্র পরে থাকে। সুর কেটে গেলে যেমন গানের মূচ্ছর্ণার আমেজটা আর আগের মত থাকেনা, ঠিক তেমনই জীবনের সুর কোথায় কেটে গেলে বেঁচে থাকার আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। চলার পথে কেমন স্থবিরতা এসে যায়। ইচ্ছাশক্তি কমে যায়। কান্তির ছায়া নেমে আসে।

বিষন্নতা পেয়ে বসে অকারণে। কারও প্রতি নির্ভরতা আগল সঁপে দিতে মন চায়। "আমি কোনদিন কিছু ছিলাম না এবং আমার কোন অভিলাষ ছিল না। অথচ আমার ভেতরে পৃথিবীর তাবৎ স্বপ্ন----" আমার প্রতিদিনের স্বপ্নগুলো যদি অবারিত দিগন্ত ছুঁযে যেতে পারতো, আমার ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো যদি রঙিন সূতোয় ফুলতোলা রুমালের মত ভালবাসার চিহ্ন হয়ে যেত, আমার চেনা-জানা ভাললাগাগুলো যদি ময়ূরী আকাশের নীচে সন্ধ্যা প্রদীপ হয়ে জ্বলতো এবং আমার চারিপাশের মানুষের হৃদিক সম্পর্কগুলো যদি বহতা নদীর মত চির স্রোতস্বীনি হতো- তবে কী আমরা শ্রাবণের মেঘের মতো প্রতিদিন ভেতরে ভেতরে এরকম ঝরে যেতাম? তবে কী আমাদের হৃদপিন্ড এরকম গলে যাওয়া বরফের মত ক্ষয়ে যেত- দুঃখ, কষ্ট আর বেদনা বিন্যাসে? প্রগাঢ় ভালবাসা আর অগাধ মমত্বে সবাই যদি এক সূতোয় গাঁথা হতাম তবে হয়তো আমাদের জীবন ও ভাবনা এমনটা কুয়াশাচ্ছন্ন কখনোই হতোনা। স্পর্ধিত মধ্যাহ্নের মতই জীবন একসময় ডুবে যায় মহাকালের অতলে।

প্রজ্জ্বলিত সূর্য ডুবে যায় কোন এক দূর দেশে কিংবা কোন এক মেরুতে। আমরাও তেমনি হারিয়ে যাই পৃথিবীর পথে প্রান্তরে নয়তো মাটির অভ্যন্তরে। এই যে বেঁচে থাকা সেতো একগুচ্ছ রক্তজবার মতোই সময়ের সূতোয় জীবনকে বেঁধে রাখা, আর মনের মায়াবী বাঁধনে অন্যদের জড়িয়ে থাকা। জীবনের ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে আসা বিষন্নতা, নিঃসঙ্গতা কখনও কখনও গাংচিল হয়ে নির্জন উপকুলে কান পেতে বসে থাকে ভালবাসার শিলাপাত শোনবার ব্যকুল আশায়। সেখানেও ক্ষীপ্রগতির বিদ্যুৎ ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় আমাদের মনে লালিত কোমল অনুভূতিগুলো, লালিত স্বপ্নগুলো।

কেঁপে ওঠে হৃদয় সমুদ্র। আশার তটে হতাশার প্রবল ঢেউ আছড়ে পরে। নিরন্তর মনের পাড় ভাঙ্গতে থাকে। আহত হই, বিপর্যস্ত হই সময়ের কাছে। অগ্নীকোণ থেকে ছুটে আসা প্রবঞ্চক হাওয়া এলোমেলো করে দেয় আমাদের নাক্ষত্রিক প্রেম-ভালবাসা।

বুঝতে পারি জীবন মানেই ভাঙ্গা-গড়ার নীরব খেলা। তবুও আমরা ভালবাসি। পাই ঈশ্বরের ভালবাসা। পলিমাটির সৌরভ পাই মৃত্তিকা গভীরে। মরুদ্যান পাই বিস্তির্ণ মরু-প্রান্তরে।

সবুজ পাতার বনভূমি জমা করে সজল মেঘরাশি। আকুল হাহাকারে ভরা খরা ভূমি জেগে ওঠে বৃষ্টির ছন্দে, ফসলে, নানা বর্ণে। নবান্নের ডাক শুনি কৃষকের হাসি মুখে। শিশির এবং রৌদ্রের নমনীয়তায় আবারও উচ্চারণ করি সুবচন। আমাদের হৃদপিন্ডের ডান-বাম অলিন্দে আবারো কর্ষণ করি মানুষের জন্য ভালবাসা।

বেঁচে থাকা যদি জীবন হয় আর জীবন মানে যদি হয় ফুল ফোটানোর খেলা- তবে সেই কারণেই অজস্র প্রতিকুলতা সত্ত্বেও আমরা রোপন করি ভালবাসা। ফোটাই ভালবাসাকে বরণ করার অজস্র গোলাপ আর মন রাঙানোর জন্য অসংখ্য শিমুল. পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া। বিষন্নতার অর্গল ভেঙ্গে কাছে টানি প্রিয় কোন মানুষকে-- যাকে ভালবাসি, ভালবাসি এবং শুধুই ভালবাসি।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.