আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাচর্ুয়াল আলাপচারিতা: বাংলার খাঁটি হীরে অথবা খাঁটি হীরের মত দেশ (রেফারেন্সও ভাচর্ুয়াল)

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

নিরাশাবাদী বলে দুর্নাম আছে বহুদিনের। বিশেষত নৃবৈজ্ঞানিক বন্ধুদের আড্ডায় ও আলাপচারিতায়। তত্ত্বাবধায়কের "দারুণ" তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীা দিচ্ছি।

এমনি এক পরীা শেষ করে বেরিয়ে এসে শুনি মিলিটারী হঠাৎ এসে জরুরী মতা আইনে লম্বা চুলের সুমন ভাইকে রীতিমত অপদস্থ করেছে। নিরাশাবাদী বলেই কিনা জানি না, খুব আহত বোধ করলাম না তবে শংকিত হলাম ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা জলপাই পাহারাদারদের কীর্তিকলাপ শুনে। চুলের বিষয়ে অনেকদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন বন্ধুদের মায়েরা, নিশ্চয়ই স্নেহপ্রবণ হয়েই। চুল কাটাতে হবে নাকি নিজের ইচ্ছায় চুল কাটব এই দ্বন্দ্ব জলপাই বেয়নেটে এতটা প্রবল হয়ে উঠবে তা তত্ত্বাবধান ছাড়া বুঝতেই পারতাম না। প্রশ্নটা মাথার মধ্যে ঘুরছিল অনেক আগে থেকেই তবে রাসেলই প্রথম লিখে ফেলল, তত্ত্বাধায়কের তত্ত্বাবধান করবে কে? ক'দিন ধরেই সেভাবে পত্রিকা ঘাঁটা হচ্ছেনা এমনকি টিভিতে যে রুইকাতলাবোয়ালেরা জেলে ঢুকছেন এবং দিকে দিকে ভেজালের উৎস সরঞ্জামের সন্ধান মিলছে তাতে যে একাত্ম হয়ে উল্লসিত হব সেই সুযোগও প্রায় হচ্ছেনা।

কাল পরীা নেই তাই শুক্রবারের পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছি। একদম শেষের পাতায় দারুন খবর, 'বাংলার খাঁটি হীরে'। নিউইয়র্ক থেকে ইব্রাহীম চৌধুরী জানাচ্ছেন ওসমান চৌধুরী নামক একজন প্রবাসী বাংলাদেশী ট্যাঙ্কি্যাব চালকের সততার গল্প। ওসমান তার ক্যাবে ভুল করে ফেলে যাওয়া কয়েক কোটী টাকার হীরার অলংকার মালিককে ফেরত দিয়েছেন এবং তিনি এজন্য তাঁর ক্যাব চালানো বন্ধ করে সেই মালিক কে খুঁজে বের করেছেন এবং তাকে পুরুষকৃত করার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন এবং বলেন সততাই স্বাভাবিক। খুব দ্রুত এই অনন্য সততার খবর সব গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছড়িয়ে পরার সাথে সাথে সেটি ওসমানের সাথে সাথে বাংলাদেশের মুখকে বিদেশের মাটিতে আরো উজ্জ্বল করে তোলে।

ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে যে অস্বস্তিতে প্রবাসী বাঙালীরা থাকেন এই ঘটনা তাদের আনন্দ ও গর্ব দুটোই বাড়িয়ে দিয়েছে। পত্রিকার পরিসরে তুলনায় এই প্রান্তিক খবর শেষ পাতায় প্রায় চাপা পড়ে গেলেও আমি দেখি বড়বড় করে অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার ছবি; এর পাশেই দুই প্রধান দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নেই, পণ্য খালাসে ঘুষ-বকশিশ, অযোগ্য অধ্যাপকদের চিহি্নত ও বিদায়ের প্রস্তাবনা, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী আটক, দুদকের মনিরউদ্দিনের ক েতালা ইত্যাদি নানা খবর। অথবা এরও একদিন বা তার আগে ইউনুসের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, দলগঠন, উপযুক্ত পরিবেশে রাজনীতি করতে আগ্রহ প্রকাশ ইত্যাদি বিষয়। খবরগুলো দেখার সাথে সাথেই একটা বিজ্ঞাপন আমার মনে পড়ে গেল, আর সেটি হল, এখন আলাল কথা বলবে, দুলালও পিছিয়ে থাকবেনা, এখন রাজু আর রানী সারাণ কথা বলবে, এমনকি মিসকল মফিজ সেও কথা বলবে, এখন সারা বাংলাদেশ কথা বলবে। এক দেশ এক রেট।

সমগ্র বাংলাদেশ যখন কথা বলতে শুরু করেছে তাদের ভেতরের ভেজাল বিষয়ে; তখন তত্ত্বাবধায়ক হয়ে উঠছে সেই ম্যাজিক রিয়েলিটি যা রিয়েলিটিকে ছাপিয়ে যেয়ে আবার সবকিছু ঠিকঠাক করে দেবে। তত্ত্বাবধায়ক যেন হয়ে উঠছে এপোলো হাসপাতালের সেই একটা ম্যাজিকাল ফোনকল। কিন্তু তারপরও আমার নিরাশাবাদী বেয়াদপ মন ভয়ে ভয়ে থাকে আর অজান্তেই হাত চলে যায় চুলের কাছে। অবৈধ স্থাপনার সাথে সাথে চুলও কি অবৈধ হয়ে উঠবে, প্রশ্নটা এত সরল আর থাকে না, বরং যে প্রশ্নটা সামনে আসে তা হল এই তত্ত্বাবধায়কের তত্ত্বাবধানে কে রয়েছে? প্রথম বিশ্বের সাথে তৃতীয় বিশ্বের ভূরাজনৈতিক যোগাযোগের যে ইতিহাস তা ঔপনিবেশিক ইতিহাসেরই অনর্্তগত। মনে পড়ে যায় আন্দ্রে গুন্দার ফ্র্যাঙ্ক এর ;'অনুন্নয়নের উন্নয়ন' এর কথা।

বর্তমান সময়ে দণি আমেরিকার যে রাষ্ট্রগুলো সবচেয়ে দরিদ্র্য একসময় তাদের সাথেই ঔপনিবেশিক শক্তির যোগাযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি। ধরণে গঠনে আকৃতিতে রূপ বৈচিত্রে ঔপনিবেশিক নর্তকী আরো শাণিত ও মোহময়ী যেমন হয়ে উঠেছে, তেমনি হয়ে উঠেছে শব্দহীন ও প্রায় অদৃশ্য। কেবলমাত্র ইউনুসের মত মেধাবীরাই তাকে ছুতে পারে আর স্পর্শের সাথে সাথে মোহজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি তো এমন মেধাবী কেউ নই তাই মনে না করতে চাইলেও দলিত এই মনে বারবার উঁকি দেয় ষঢ়যন্ত্রবাদী ইতিহাস। তত্ত্বাবধায়ক দারুনভাবে রুইকাতলাবোয়াল শিকারে নেমে পড়েছেন, জনমনে দেখা দিচ্ছে স্বস্তি বেড়ে যাচ্ছে প্রত্যাশার পরিধি।

সুশীলেরা আরো সুবোধ ও জোরালো কন্ঠস্বর নিয়ে হাজির হচ্ছেন। জঙ্গীবাদী শেকড় পলাতক, শিবির জামাত একেবারেই যেন স্তব্ধ। বাৎসরিক 12000 কোটি টাকার বা তারচেয়েও অনেক বেশি মূলধন আর যেখানেই থাকুক বাংলাদেশের রিজার্ভ ব্যাংকে নেই। খালেদা আপার মেকাপে চিড় ধরেছে হাসিনা খালাম্মার বাচাল মুখটাও দেখা যাচ্ছে না। ফেনা তোলা জলিল, ভুল উচ্চারনের ভূইয়া, শান্ত সমাহিত তারেক, এবার আমি কই যাই এরশাদ, ফ্যাশফ্যাশে গলার মেনন চৌদ্দ মহা এক চার তিন সব জোটেরা গেল কই? মানুষের মনে অনেকদিন পর স্বস্তির আভা, ফার্মগেটের হকার পর্যন্ত জায়গা বদলে ব্যস্ত।

হাসছেন, সামনে আসছেন এবং পদত্যাগ করছেন দুদক, একজন তো আবার অফিসে তালামেরে রেখেছেন যাতে ধোয়ামোছা উনি নিজের হাতেই করতে পারেন। আনর্্তজাতিক স্বচ্ছতা সংস্থা বাংলাদেশকে একেবারে ইলেকট্রণ মাইক্রোস্কোপে স্বচ্ছ করে দেবে। পলিসি ডায়লোগ এবার অধ্যাপকদের শয়তানীকে সামনে আনার চেষ্টা করছে। সারা বাংলাদেশ যেন নবান্নের নতুন উৎসবে মেতে উঠেছে এবং প্রধান কৃষিঋণদানকারী এবার যেন প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তারপরও আমার নিরাশাবদী মন আশাবাদী হতে ভয় পায়; কেন যেন মনে হয় একটি নির্দিষ্ট ধরণের ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দেশের মানুষকে দেশের নেতানেত্রী দিয়েই দেয়ালে পিঠ ঠেকাতে বাধ্য করার পর হঠাৎ এক অদৃশ্য ত্রাণকর্তা কানে কানে এসে বলছে তাহলে এসব নষ্টদের বের করে দেই? জনগন বলছে আবার জিগ্গেস।

সে আরো বলছে দেখতো এই নেতা বা সংস্থাগুলোই কি ভালো নয় যারা নোবেল আনে যারা মোবাইল দেয় যারা ঋণ দেয়, যারা ধর্মভিত্তিক হানাহানি বন্ধ করা কথা বলে, যারা জবাবদিহিতার কথা বলে। জনগনের তো ভাত চাইনা মা কুত্তা সামলা অবস্থা...সে বলে কিছু একটা করা দরকার। তারা বলে তাহলে ভোটের মাধ্যমেই তোমরা বল। এই অদৃশ্য আবার জাতি সংঘের দেবতা সম্মেলনে গিয়ে বলে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, আমরা কেবল বুদ্ধি পরামর্শ দেই আর বিপদে পড়লে মাঝে মাঝে ত্রাণ দেই। তারপরও আমার মূর্খ সন্দেহটা দূরীভূত হয়না।

বারবার ওসমান চৌধুরী আর ইউনুসের কথা মনে পড়ে। প্রথমজন পুরষ্কারই নিতে চায় না আর দ্বিতীয়জন......। তবে তারচেয়েও বেশি মনে পড়ে, কারা বলে দেয়, কারা স্বীকৃতি দেয়, কখন দেয়, কারা মুক্তিযুদ্ধে লাভ হবে না বলে পাশে থাকে না আবার গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে বিশ্ব জুড়ে দুষ্টুমী করে কোটি কোটি মানুষ মারে। যখন জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে, যখন সাধারন মানুষ, লেখক, শিক মরে তখন তো তারা ম্যাজিক দেখায় না। কিন্তু এখন তো বোঝা যায় তাদের ম্যাজিক এত বড় যে রুইকাতলাবোয়াল টেরও পায়নি যে তারা হাঙ্গরের পেটে আছে।

তারমানে কি আর রুইকাতলাবোয়াল দেখা যাবে না? উহু নিশ্চয়ই দেখা যাবে তবে অন্য রকমের রুইকাতলাবোয়াল, হয়তো হাইব্রিড হয়ত নতুন প্রজাতি হিসেবে। ওসমান চৌধুরী নি:সন্দেহে বাংলার খাঁটি হীরে...কিন্তু হীরে হতে তাকে আমি নিষেধ করব কেননা হীরে কেনা যায়। অন্যদিকে আবার হীরে না হলেও চলেনা তা না হলে লোকে কি করে বুঝবে যে তোমারও কিছু আছে। যাই হোক এমনতর ফাঁকাবুলি আওরাতে আওরাতে হঠাৎ ফুকোর কথা মনে পড়ে যায়, মতা কখনই কেন্দ্রীভূত নয় আবার মতা প্রতিষ্ঠিতও হয় এর ক্রমশ অদৃশ্য ও 'স্বাভাবিক' হবার মধ্য দিয়ে। টাকপড়া সমকামী এই লোকটা কি যে এসব বলে, তারপরও ভালো লাগে।

তবে কেমন যেন ভয়ও লাগে, গুড গভর্ানেন্স, পিআরএসপি, এমডিজি.....এত বড় বড় বিষয়ের কিছুই তেমন বুঝিনা। তবে একটা কথা বুঝি.. আমার চুল আমি কিভাবে কাটব এর নাপিত কে হবে, চুল রাখব না ফেলে দেব এর সিদ্ধান্ত নেবার মতাটা আমারই থাকা উচিৎ। তারপরও ভয় লাগে যদি কোন তত্ত্ববধায়ক মাথার উপরে চুইংগাম লাগিয়ে দিয়ে বিনয়ের কেউ এসে বলে "বাবা!! এইবার কই যাবা?"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।