আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অল্প বয়সে পিরীতি করিয়া...



--এই, তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে? --না, নেই। --ও গড! তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই? --তোমার আছে মনে হচ্ছে? --হ্যাঁ, আছেই তো! আমাদের ক্লাসের অনেকেরই আছে। --সেটা জানি। কিন্তু এটা তোমার কত নম্বর বয়ফ্রেন্ড? --বেশ একখানা খোঁচা দিলে! রুপন্তী, ইশিকাদের গিয়ে একটু দেখো না! আজ এর সাথে তো কাল তার সাথে কেমন ডেটিং করে বেড়াচ্ছে! --আচ্ছা, তাহলে এটা বোঝা গেল যে, তুমি ওদের চেয়ে কম ডেটিং করেছ। হা হা হা।

বল না, এটা তোমার কত নম্বর বয়ফ্রেন্ড? --ও আমার মাত্র সেকেন্ড বয়ফ্রেন্ড। --আগেরজনের সাথে সমস্যা কী ছিল? --ধুর ভাল্লাগে না। কেমন আনস্মার্ট! খালি বারবার হাত দিয়ে মাথার চুল আঁচড়ায়। তাই বাদ দিয়ে দিয়েছি। --আর এখনকার জন? --এই রিলেশন তো মাত্র কিছুদিন আগে শুরু হলো।

এখনো তেমন কিছু চোখে পড়েনি। --পড়ো তো মাত্র ক্লাস এইটে! এখনই দু’টো প্রেম করে ফেললে? ভার্সিটিতে ওঠা পর্যন্ত অন্তত অপেক্ষা করতে পারতে! --তুমি না এখন কথা বলছ আমার মায়ের মত। এজন্যই ভাল লাগে না। তুমি জানো? আমেরিকায় আমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের জিএফ/বিএফ না থাকলে বাবা-মায়েরা রীতিমত টেনশন করেন। আমার তো এখন তোমার জন্যই টেনশন হচ্ছে।

কৈশোরের প্রথম প্রথম ভাললাগা, প্রেম নতুন একটি মাত্রা যোগ করে জীবনে। আবেগ, কৌতুহল বা হরমোনের পরিবর্তন কারণ যাই হোক না কেন, কৈশোরকালে হঠাৎ কাউকে ভাল লেগে যাবার অনুভূতি তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। আর এই অনুভূতির দুর্দান্ত স্মৃতি প্রায় সবাইকেই একসময় নস্টালজিক করে তোলে। সেইসব ভাললাগা, ভালবাসা, প্রেম কারো জীবনে কখনো পূর্ণতা পায়, আবার অনেক সময় পায় না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর আত্নজৈবনিক গ্রন্থ ‘অর্ধেক জীবন’-এ বলেছেন, খেলাধুলো, গানবাজনা, শিল্পরুচি বিকাশের সুযোগ ছিল তো বটেই, ছেলেমেয়েরা সমানভাবে মিশত বলে কৈশোরিক প্রেমের উদগমও হত এখানেই।

সেটাও আমার মতে স্বাস্থ্যকর। পাড়ার রকে বসা, শিস-দেওয়া, মেয়েদের দিকে কদর্য ইঙ্গিত করা বখাটে ছেলেদের সংগে মণিমেলা বা এই ধরনের সংস্থার ছেলেদের ছিল স্পষ্ট তফাত। প্রেমে পরলেই ছেলেরা সব মেয়েদের প্রতিই সৌজন্য দেখাতে শেখে। অপ্রেমই তো যত সমস্যার মূল! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কৈশোরকাল আর এখনকার কিশোর-কিশোরীদের সময়ে আকাশ পাতাল পার্থক্য। তাদের ভাললাগা, ভাললাগার প্রকাশ, প্রেম সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা, একটি প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাবার ধরন ধারনে এসেছে বিস্তর পরিবর্তন।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, মিডিয়া, চলচ্চিত্র, প্রযুক্তির ব্যবহার, বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া এসব কিছুই তাদের ভাললাগা, ভালবাসা,প্রেমে প্রভাব ফেলে। নিম্নবিত্ত ও অসচেতন বহু পরিবারে কিশোর-কিশোরীদের বিয়েই দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও দেশের আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের ও ২১ বছরের নিচে ছেলেদের বিয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। একদিকে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে আবার অন্যদিকে আরেকশ্রেণীর কিশোর-কিশোরী নিজেদের আবেগিক, মানসিক, শারীরিক চাহিদা চটজলদি মেটানোর জন্য অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে। তারা ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম সম্পর্কে।

অভিভাবকেরাও পড়ে যাচ্ছেন দুশ্চিন্তায়। বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েরা হরমোন দিয়ে যতটা চালিত হয়, যুক্তি দিয়ে ততটা নয়। একটি সম্পর্ক সুন্দরভাবে চালিয়ে যাবার মত পরিপক্কতা সবার মধ্যে সমানভাবে আসে না। সম্পর্কের টানা পোড়েন তাই তারা অনেক সময় সামলাতে পারে না। ফলাফল বিচ্ছেদ ও চরম হতাশা।

পরবর্তীতে নতুন সম্পর্ক তৈরিতে তাদের মনে ভীতি জন্ম নিতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের পছন্দ স্থির থাকে না প্রায় সময়ই । খুব সামান্য কারণে কাউকে ভাল লেগে যায়, আবার সেই ভাললাগা কেটে যেতেও কারণ লাগে খুব সামন্যই। তাই কারো কারো মধ্যে একের পর এক সম্পর্ক তৈরি ও ভাংগতে দেখা যায়। এগুলোও তাদের মধ্যে স্ট্রেস তৈরি করে ও পড়ালেখায় প্রভাব ফেলে।

কেউ কেউ প্রেমের ব্যাপারটিকে পুরোপুরি খেলা, বিনোদন বা সময় কাটানোর উপায় বলে মনে করে। তারাও একের পর এক সম্পর্ক পরিবর্তন করে থাকে। ফেসবুকে তাদের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। এরা প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে নিজের বন্ধু, পরিবারের সদস্যের থেকেও দূরে সরে যায়। এমন কি নিজের পড়ালেখাতেও দিন দিন অমনোযোগী হয়ে থাকে।

ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ডেটিং-এ যাবার ব্যাপারে তারা বেশি উৎসাহী হয়ে উঠে। পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ হয় না। এরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃংখলাও ঠিকমত মেনে চলে না। প্রেমিক/প্রেমিকা একজন আরেকজনের টাকা-পয়সা, মোবাইল, নেট মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করতে পারে। তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে অনেক সময় শারীরিকভাবে একে অপরকে আক্রমন করতে পারে।

সম্পর্কের শুরুতে যেহেতু ওরা বুঝতে পারে না যে সে সঠিক সংগী/সংগীনী বাছাই করতে পেরেছে কি না, তাই পরে তারা আবেগিক, শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, এমন কি যৌন নির্যাতনেরও শিকার হতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যৌনতা সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞান, সচেতনতা প্রায় থাকেই না। তাই তাদের মধ্যে বিভিন্ন যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়া, গর্ভধারণ করে ফেলার আশংকা অনেক বেশি। বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের প্রেম সব সময়ই যে খুব কুফল বয়ে আনে তা নয়। এমন সম্পর্কের অনেক ভাল দিকও আছে।

একটি সুন্দর সম্পর্ক কিশোর-কিশোরীদের সবসময় আনন্দিত রাখে, ফলে তারা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারে। তারা দুজন দুজনকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। তাদের দুজনের মধ্যেই যদি সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে তবে পরবর্তীতে তা দুজনের জীবনেই সফলতা নিয়ে আসে। একটি সম্পর্ক কিভাবে চালিয়ে যেতে হয় তা নিয়ে ওরা পরিপক্ক হয়ে উঠে। ওদের আবেগিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

বিপরীত লিংগের বিভিন্ন গুণ সম্পর্কে জানতে পারে, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠে। কৈশোরকালীন সময়ে বিপরীত লিংগের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ, ভাললাগার বিষয়গুলোর ভালো ও মন্দ সবধরনের দিকগুলো সম্পর্কে অভিভাবকেরা সন্তানদেরকে সচেতন করে দিতে পারেন। নিজের পড়ালেখা, ভবিষ্যত ক্যারিয়ার ঠিক রেখে, বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্কের সীমানা রক্ষা করে কিভাবে চলতে হয় তা ওদের বুঝতে সাহায্য করতে হবে। তাহলেই ওদের মধ্যকার সচেতনতা অনেক অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে পারবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।