আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই লেখাটি নিরপেক্ষতা নিয়ে

'... আমাদের আশার কোনো পরকাল নাই'

আমাদের দেশে নিরপেক্ষতা নামক শব্দটার মনে হয় গন্ধ খুব কম। তা না হলে কুকুরের মতোন এমন শুঁকতে শুঁকতে মানুষকে তার তালাশ করতে হতো না। এই দেখুন না, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষতা খুঁজতেই আমাদের কীভাবে না নাজেহাল হতে হচ্ছে! উঁহু, ঠিক নাজেহাল হতে হচ্ছে না, আমরা নিরপেক্ষতা খোঁজার ভার আসলে অন্যের কাঁধে গছিয়ে খোঁজার ভানটুকু করছি। সেই দায়িত্ব অবশ্য পালন করছেন আমাদের মতিউর রহমান সাহেবেরা। তারা নিরপেক্ষতা শুধু খুঁজছেনই না, তাদের নিজেদের পত্রিকায় তারা নানান কায়দায় চোখে আঙুল দিয়ে পা-ফাটা মানুষদের বোঝাতে চাইছেন, নিরপেক্ষতা কী।

বস্তুটা কী আসলে? খুবই সোজা। সময় ও সুযোগ বুঝে প্রচলিত ধারাগুলোকে সমানে ফর্দাফাই করা। তাহলেই আসলে আপনি নিরপেক্ষ। আরে ভাই, মোশাররফদের দেখা না মেলায় আফগানে হামিদ কারজাইরা তো সেটাই করেছিলো। ওয়া ওয়া কেয়া বাত।

প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় দলগুলো যে পচে গেছে, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ চোখের প্রয়োজন নেই। আমরা জানি, চোর-জোচ্চোর-লুটেরা-কালোটাকাওয়ালা-সন্ত্রাসী আর বাটপারের সমন্বয়েই এখনকার রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি গড়ে উঠেছে। মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতির মাঠে এরা নেমেছে। দলগুলো নিজেদের চরিত্র হারিয়েছে, দেশের মানুষকে বিকিয়ে দিতেও এদের নূ্যনতম কুণ্ঠা হবে না। আমরা মানি এর সবই।

স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলন করেছিলেন যারা সেই নেতারাই আজ এরশাদকে পেতে গদগদ। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই রাজনৈতিক চর্চা কোনো সুস্থ ভবিষ্যত বয়ে আনতে পারে না। মানুষ এই উপলব্ধিতে চলেই এসেছে। কিন্তু এরপরের যে উপলব্ধি সেটিই সবচেয়ে জরুরি। সেই উপলব্ধিই আসলে ঠিক করে দেবে আমাদের ভবিষ্যত।

কাজেই মানুষ যে কমন উপলব্ধিতে এসে পৌঁছেছে, সেটিকে কাজে লাগানোই এখন সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ বটে। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেই উপলব্ধি কাজে লাগিয়ে সেটিকে নির্দিষ্ট গতির দিকে প্রবাহিত করার দায়িত্ব অনেকেই নিয়ে নিয়েছেন। আগেই বলেছি, স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞানে আমিও বুঝছি, এই পচা রাজনীতির অবসান প্রয়োজন। কিন্তু তারপরের ভবিষ্যত কী? ভঙুর গণতন্ত্র আসলে কারা টসটসে করে তুলবে? একটি রাজনৈতিক সংকটের মোকাবেলা কি কখনো সর্বব্যাপী রাজনৈতিক তৎপরতার বাইরে সম্ভব? পৃথিবীর ইতিহাসে কি এর নূ্যনতম সম্ভাবনা উপস্থিত? আমাদের দেশের দিকেই যদি তাকানো যায় তবে বোঝা যায়, একের পর এক সরকার এসেছে, তারা ক্ষমতায় থেকেছে, সে গণতান্ত্রিক বলি আর বঙ্গবন্ধুর তথাকথিত সমাজতন্ত্রী কিংবা জিয়া-এরশাদের মতো চকরাবকরার শাসনই বলি, দেশের পরিস্থিতির কি কোনো উন্নতি হয়েছে? দিনে দিনে কি কেবলই সংকট বাড়েনি? পরনির্ভরশীলতা আর লুটপাটের মনোবৃত্তি কি আমাদের দিনে দিনে পঙ্গু করে দেয়নি? এখন এই রাষ্ট্রশাসন সেনাবাহিনীর হাতে গেলে সেখানে কি আরেক জিয়া কিংবা এরশাদের জন্ম হবে না? কারণ যে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোই শোষণকেন্দ্রীক সেখানে তা আটকানোর জন্য যদি বন্দুকের নল ব্যবহার করা হয়, তাহলে জানা কথা, বন্দুকের বাঁটটা যার গালের কাছে, লুটপাটের পথটা তার জন্যই সবচেয়ে বেশি খোলা। আচ্ছা, তারা যদি না-ই নেয়, তাহলে বিকল্প কী? সুশীল সমাজ? আমাদের দেশে এই সুশীল সমাজ ব্যাপারটাও আবার একটি নতুন প্ল্লাটফরম তৈরি করে দিয়েছে।

কারা যে আসলে এই সুশীল সমাজের অংশ, তা বুঝতে যে আর কতোদিন ব্যয় করতে হবে কে জানে তা! বিভাগীয় শহরে 2-3শ মানুষের সংলাপ কিংবা এমন আরো কিছুই তাদের ঝুলিতে আছে, সত্য। কিন্তু সত্য এটাও, এই কর্মসূচির কতোটা তৃণমূল মানুষকে স্পর্শ করে আর কতোটা অন্যকে তুষ্ট করতে তা ভেবে দেখলে এখান থেকে খুব ইতিবাচক কোনো সিগনাল আর অবশিষ্ট থাকে না। রাজনীতিকরা কালো টাকার মালিক- ইত্যাদি ইত্যাদি যে সুশীল সমাজের লোকজন বলেন, তাদের অনেকেই ফান্ড এনে যে এনজিও চালান সেখানে যে নির্যাতন, লুটপাট আর শ্রম-শোষণ হয় তা অন্যসব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। অথবা অন্যের টাকায় যে গবেষণাটা করেন, সেখানেও যে শ্রম-অস্বীকার করার প্রবণতা লক্ষ্যণীয় তা অনেকেই জানেন। তাহলে এই সিস্টেমের আওতায় কে টিকি বেঁধে আছেন আর কে প্যান্টের সংযুক্ত ফিতা দুই ঘাড়ের ওপর দিয়ে নামান আর কে যা কিছু ভালো তার সঙ্গে থাকার ঘোষণা দেন- এসব দিয়ে মুখ দেখে ভালো মানুষ বলে তাদেরকেই দেশ উদ্ধার করার সর্বশেষ রাস্তা বলে চিহ্নিত করলেও তাদের পুরানো রেকর্ড বলে, পুরো শোষণপ্রক্রিয়ায় নিজেদের উল্লম্ফনে তারাও কখনোই কম যাননি! একতার ঐক্য থেকে আলো ফোটা সকাল হওয়ার পথে যে লুকোচুরির কেচ্ছাকাহিনী আছে_ তা কখনো আলোচিত হয় না বলেই তারা ত্রাণকর্তা সাজতে চান।

হঁ্যা, মানছি, রাজনৈতিক দলগুলোকে রিং থেকে পুরোপুরি আউট করে দিয়ে হামিদ কারজাই মার্কা সরকার কিংবা তার চেয়ে অনেক গুণে ভালো সরকার বসলে মানুষ সাময়িক স্বস্তি পাবে। দেশটা কিছুদিনের জন্য হলেও নিস্তার পাবে দুই মুখরা রমণীর হাত থেকে। কিংবা বড় অর্থে অনেক অনিয়মতান্ত্রিক, অদ্ভূত রাজনৈতিক আচার আচরণ থেকে। কিন্তু সেই সংকট-উত্তরণ ক'দিনের জন্য? এর আগেও তো অনেককেই বসতে দেখেছি? কয় বছর ভালো থেকেছে দেশ? না কি এই সামান্য সময়টুকুই কারো প্রয়োজন, কোনো কিছু বাগিয়ে নেবার জন্য? তাই কি এতোসব আয়োজন? আমি আগের একটি লেখায় বলেছিলাম, গণতন্ত্রের মূল জায়গাটা হলো আস্থা। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, আমরা আমাদের গণতন্ত্রের কোথাও সেই আস্থা তৈরি করতে পেরেছি কি না।

কেনো পারলাম না সেই আস্থা তৈরি করতে? এ কি শুধু রাজনৈতিক নেতাদের দোষ? নাকি দোষটা প্রক্রিয়ায়। যদি প্রক্রিয়াতেই হয় তাহলে আরো নির্দিষ্ট করে কোন প্রক্রিয়ায়? মুক্ত অর্থপ্রবাহের নামে আমাদের আসলে যে অর্থনৈতিক বন্দীদশায় আটকে রাখা হয়েছে, তা থেকে বেরুতে না পারলে অর্থনীতি ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির উপলক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার হতে শুরু করবে। সেই ব্যবহার বাড়বে এবং চক্রের মতো একজনের উপলক্ষ্য অন্যের উপলক্ষ্য তৈরি করবে। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগানো হবে। হয়তোবা পচন ধরা রাজনীতি পরিবর্তনের নামে একটি অরাজনৈতিক চর্চার নামেই প্রথম আঘাতটা আসবে।

সেই আঘাত আসার আগেই কি সতর্ক হওয়া ভালো নয়?


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।