আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গান্ধীজির মানবিক অভিসার

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

অক্টোবর 1919, লাহোর এখন গান্ধীর জীবনের এমন কিছু ঘটেছে যা তিনি চাননি। তিনি রামভুজ দত্ত চৌধুরীর 47 বছর বয়স্ক স্ত্রীর প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করছেন। রামভুজ লাহোর জেলে থাকার সময় গান্ধী তার বাড়িতে আতিথ্য বরণ করেছেন। সরলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগি্ন।

কবির বোন স্বর্ণকুমারী দেবীর মেয়ে তিনি। সরলা দেবী তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে হিন্দুসত্দান পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করতেন। গান্ধী হয়তো 18 বছর আগে 1901 সালে সরলা দেবীকে দেখে থাকবেন। তখন সরলা দেবী কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সূচনা সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। তিনি ওই গানটিতে সুর করেছিলেন এবং 58 জন সঙ্গীসহ সেটি অধিবেশনে গেয়েছিলেন।

গান্ধী ওই গান নিয়ে কোনো মনত্দব্য করেছিলেন কি না তার কোনো সূত্র নেই। কিন্তু 1940 সালে সরলা দেবীর লেখা একটি বইয়ে উলেস্নখ করা হয়েছে যে, 1901 সালে গান্ধীর সঙ্গে তার সাৰাৎ হয়েছিল। ভারতী পত্রিকার একটি প্রবন্ধে সরলা তাকে ইনডিয়ান স্বাধীনতা আন্দোলনে একজন সাউথ আফৃকান কন্টৃবিউটর হিসেবে উলেস্নখ করেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল 29। তখন তাদের মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না তার কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই।

তবে 1925 থেকে 1929 সালের মধ্যে লেখা গান্ধীর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, 1901-এ তিনি সরলার বাবা ও কংগ্রেসের একজন সম্পাদক জানকীনাথ ঘোষালের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছিলেন। গান্ধী উলেস্নখ করেছেন, ঘোষাল খুবই ব্যসত্দ ছিলেন। তাকে তার সঙ্গে খেতে বলেছিলেন। গান্ধী লৰ্য করেছিলেন ঘোষাল খুবই বাচাল এবং গান্ধীর ইতিহাস (সাউথ আফৃকার আন্দোলন) জানার পর বিব্রত বোধ করেছিলেন। কেননা তিনি তাকে কিছু কেরানির কাজ দিয়েছিলেন।

সরলার সঙ্গে 1901 সালের সাৰাৎ খুব উলেস্নখযোগ্য কিছু না-ও হতে পারে। কিন্তু এটা সম্ভব যে, ওই ঘটনার কথা তার মনে পড়েছে। সরলার গ্র্যাজুয়েশনের খুব আকর্ষণীয় একটি ফটোগ্রাফ পাওয়া গেছে। একজন অসাধারণ সুরকার ও লেখক হয়েও সরলা বাংলার সহিংস আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। এভাবে তার ওপর পুলিশের চোখ পড়েছিল।

এর আগে তিনি ছিলেন বিবেকানন্দের শিষ্য। স্বামী চেয়েছিলেন তার পশ্চিম ভ্রমণের সময় সরলা তার সঙ্গী হোন। 1905 সালে বঙ্গভঙ্গের উত্তাল সময়ে তার সঙ্গে আর্য সমাজের প্রতিনিধি পাঞ্জাবের রামভুজ দত্ত চৌধুরীর বিয়ে হয়। এর আগে দুইবার রামভুজের বিয়ে হয়েছিল ও তিনি পত্নীহারা হয়েছিলেন। সরলা এই বিয়ে করেছিলেন বাবা-মার আগ্রহে।

তারা ভেবেছিলেন, মেয়ে লাহোরে থাকলে কলকাতা পুলিশের নাগালের বাইরে থাকবে। 33 বছর বয়সে সরলা তার সময়ের গৃহবধূদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। তার স্বামী মাঝে মধ্যে তাকে 'ভারতের মহত্তম শক্তি' বলে আখ্যায়িত করতেন। 1901 থেকে 1919 পর্যনত্দ সময়ে সরলার জীবন সম্পর্কে গান্ধী কতোটা ওয়াকিবহাল ছিলেন তা স্পষ্ট নয়। 1909 সালে গান্ধীর জোহানেসবার্গের বন্ধু ও সাংবাদিক হেনরি পোলাক সরলা ও তার স্বামীর আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন।

অনেকেই সে সময় তাদের আতিথ্য বরণ করতেন। কিন্তু জানা যায় না গান্ধীর পরামর্শেই পোলাক সেখানে গিয়েছিলেন কি না। 1919 সালের 27 অক্টোবর আহমেদাবাদে অনসূয়াবীনকে লেখা একটি চিঠিতে গান্ধী বলেছেন, 'সরলা দেবীর সানি্নধ্য খুবই প্রীতিকর। তিনি ভালোভাবে আমার দেখাশোনা করছেন। ' পরের মাসগুলোতে তাদের মধ্যে একটি অসংজ্ঞায়িত সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

1920 সালে সম্পর্কটি পরিবর্তিত হলে গান্ধী একে অসংজ্ঞায়িত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি শুধু এ বিশেষ সম্পর্কটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেননি। যে অর্থই করা হোক, তিনি সরলা দেবীর সঙ্গে একটি 'আধ্যাত্মিক বিবাহের' সম্ভাবনার কথাও ভেবেছিলেন। সরলার বয়স তখন 47। তার উপস্থিতি হয়তো কোনো দৈহিক প্রলোভন জাগায়নি।

কিন্তু তিনি গান্ধীর প্রতি এমন এক নান্দনিক ও রাজনৈতিক আবেদন তৈরি করেছিলেন যাতে প্রেমের দেবতা ওত পেতে ছিল। ইনডিয়ান ও পশ্চিমি উভয় কেতায় বেড়ে ওঠার ফলে তিনি লেখা ও বলায় ছিলেন সপ্রতিভ। গান্ধীর ভাষায় তার ছিল এক মেলোডিয়াস কণ্ঠ। রাজনৈতিক দিক থেকে সরলা শুধু ঠাকুর পরিবারের আভিজাত্যের প্রতীকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির প্রতিনিধি।

এছাড়া তিনি ইনডিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের সহিংস ধারারও প্রতিনিধিত্ব করতেন। সরলার ভেতরের কোনো চিতা হয়তো গান্ধীকে সর্বভারতের মন জয় করে সত্যাগ্রহের দিকে টেনে নিয়েছিল। এ বিবেচনা হয়তো গান্ধীর মনে কাজ করেনি। কিন্তু সম্ভবত এগুলো তাকে প্রভাবিত করেছিল। 1933-এ তিনি ফাদার উইলিয়াম ল্যাশ ও ই স্ট্যানলি জোনসকে বলেছেন, 'নরকের অগি্নকু-' থেকে তিনি রৰা পেয়েছেন।

কস্তুরা বাইয়ের চিনত্দা ও ছেলে দেবদাস, মহাদেব দেশাই, আরেক তরম্নণ নিকটাত্মীয় মথুরাদাস ত্রিকামজী ও সৎবোনের নাতি মুলিবেনের পরামর্শে। 1935 সালে মার্গারেট স্যাঞ্জারকে তিনি কস্তুরা বাইয়ের নিরৰরতা উলেস্নখ করে বলেছিলেন, উচ্চ শিৰিত ও সাংস্কৃতিক পরিম-লের এক নারীর সঙ্গে পরিচয়ের পর তিনি প্রায় প্রেমে পড়তে বসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি ওই মোহগ্রসত্দতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তার আত্মজীবনীর শেষ পৃষ্ঠার লেখা বাক্য_ 'আকাঙ্ৰা আমার অবচেতন অনত্দরে লুকিয়ে থাকে', বাক্যটি হয়তো 1919-20 সালের ঘটনাবলীরই প্রতিধ্বনি। এখানে আরেকটি উপাদান হয়তো কাজ করেছিল : ওই প্রীতিপ্রদ নারী ও সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি তাকে ভালোভাবে দেখাশোনা করেছিলেন এবং তাকে আনত্দরিক সাহস যুগিয়েছিলেন।

গান্ধী নিজের জগতে ছিলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি সবসময় আত্মদানে প্রস্তুত। খুব কমই প্রাপ্তির আশা ছিল কিন্তু দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন সর্বদা। অথচ তিনি বা তার অনুসারীরা তার নিজের চাহিদা থাকতে পারে এটা ভাবেননি। এ সয়ম্ভূ স্থপতি ও সত্যাগ্রহের সর্বাধিনায়কের শরীরেও অনেক বেদনা জমা হয়েছিল। তার পাশর্্ববর্তী লোকেরা যা বুঝতেন তার চেয়ে বেশি ছিল সে বেদনার ভার।

যদি ইনডিয়া ও সত্য তার প্রতি সুবিচার করে তবে তিনি শেষ পর্যনত্দ একজন মানুষই আবার একই সঙ্গে ছিলেন উৎসর্গীকৃত আত্মা। মার্টিন গৃন একমাত্র গবেষক যিনি গান্ধীর জীবনের এ পর্বের সন্ধান পেয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, 'সামনের খোলা দরজা বন্ধ করে গান্ধী ও সরলা দু'জনেই অভূতপূর্ব রাজনৈতিক সংহতির পরিচয় দিয়েছিলেন। ' গৃনও এ সম্পর্কের অস্থিরতা ও সরলা দেবীর ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য খেয়াল করেছিলেন। তিনি সব সময় অপ্রশংসিত থেকে গেছেন এমন একটি ভঙ্গি ছিল।

তার চরিত্রে একই সঙ্গে ছিল সৰমতা ও সিদ্ধানত্দহীনতা, চলমানতা ও অনত্দমর্ুখিতা, নারীবাদ, পুরম্নষ আকর্ষী ইত্যাদি বৈপরীত্যময় গুণ। কিছু ৰেত্রে তিনি ছিলেন স্বেচ্ছাচারী নারীবাদী। প্রথম স্ত্রী ইনফার্টাইল হলে তিনি বহুগামিতাকে সমর্থন করেছেন। এ বিষয়ে গান্ধী তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। তর্ক করেছিলেন সরলা দেবীর সঙ্গে।

স্যাঞ্জারকে এমন ইঙ্গিত তিনি দিয়েছিলেন। 1919 সালের অক্টোবরের শেষ থেকে 1920 সালে ফেব্রম্নয়ারির মাঝামাঝি সময়ে গান্ধী দিলিস্নতে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন। বাকি সময়ের অনেকটাই তিনি পাঞ্জাবে ব্যয় করেছিলেন। খাদি বিষয়ে তদনত্দ ও খাদি প্রসার অভিযানের সময় তিনি লাহোরের চৌধুরী বাড়িতে থেকেছেন। সরলা দেবী প্রায়ই পাঞ্জাবে গান্ধীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।

সভায় বক্তব্য দিয়েছেন বা গান করেছেন। খাদি কাপড় পরেছেন ও এর প্রচার করেছেন। সত্যাগ্রহের অর্থ উপলব্ধি করার জন্য পাঞ্জাবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সরলা ও গান্ধী উভয়েই ওই প্রদেশে অনেকে নিগ্রহ মাথা পেতে নিয়েছে বলে হতাশ বোধ করেছিলেন। ডিসেম্বরের শেষ দিকে রামভুজ দত্ত চৌধুরী জেল থেকে ছাড়া পান।

23 জানুয়ারি নবজীবন পত্রিকায় একটি রিপোর্টে গান্ধী লেখেন, 'ইতিপূর্বে আমি এক নারীকে দেখেছিলাম যিনি স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী জীবনযাপন করছিলেন, যেন এক সিংহীর প্রতিমূর্তি। আজ আমি এক সুখী দম্পতিকে দেখলাম। ... আমি শ্রীমতী সরলা দেবীর মুখে এক উজ্জ্বল আভা দেখতে পেলাম। যেখানে ছিল যত্নের রেখা সেখানে আনন্দের আভা। ' ওই সময় রামভুজ-সরলা দম্পতির সনত্দান দীপককে শবরমতি আশ্রমে পাঠানো হয়েছিল।

দীপকের জন্য গান্ধীর আগ্রহ নিয়ে তখন প্রশ্ন উঠেছিল। 1920-এর মার্চে সরলা দেবী আশ্রমে আসেন। সে সময় তার সঙ্গে গান্ধীর কথোপকথন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। 1920 সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যনত্দ প্রায় চার থেকে পাচ মাস গান্ধী সরলার ব্যক্তিত্বে মোহমুগ্ধ ছিলেন এবং এ সময়েই ইনডিয়াকে নতুনভাবে সাজানোর স্বপ্ন তার মধ্যে আকার পেতে শুরম্ন করে। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, তাকে নিয়ে প্রায়ই স্বপ্ন দেখেন তিনি।

তিনি যেন এক মহান শক্তির দেবী। 1920-এর ফেব্রম্নয়ারিতে ইয়ং ইনডিয়া পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় সরলা দেবীর একটি গান ও নবজীবন পত্রিকায় গান্ধীর মনত্দব্যসহ একটি কবিতা ছাপা হয়। গান্ধী মনত্দব্য করেছিলেন এটি 'যথার্থ'। কিন্তু তার ছেলে দেবদাস ও অন্যরা (দেশাই, মথুরাদাস, সি রাজাগোপালচারী) সে সময় তার পাশে ছিলেন। তারা তাকে কস্তুরা বাইয়ের ওপর এর প্রভাব কি হবে তা নিয়ে গান্ধীকে ভাবতে বলেছিলেন।

এর বিশেষ সম্পর্ক চলতে থাকলে তাদের ও গান্ধীর ওপর এর প্রভাব নিয়ে ভাবতে বলেছিলেন। 'এই ছিল তাদের ভালোবাসার বন্ধন যা আমাকে শক্তভাবে শৃঙ্খলিত করেছিল এবং বাচিয়ে দিয়েছিল। ' গান্ধী ফাদার ল্যাশকে বলেছিলেন এ কথা। পরে সরলা দেবী একটি আত্মজীবনী লিখেছিলেন। কিন্তু এতেও তাদের সম্পর্কের কোনো উলেস্নখ নেই।

গান্ধীর কোনো চিঠি বা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এর কোনো উলেস্নখ পাওয়া যায়নি। স্যাঞ্জারকে তিনি বলেছেন, 'এটা এতোই ব্যক্তিগত ব্যাপার যে, আত্মজীবনীতে এ কথা আমি উলেস্নখ করিনি। ' রামভুজ দত্ত চৌধুরী 1923 সালে মারা যান। সরলা দেবী ও তার ছেলে দীপক আত্মজীবনী লেখার সময় ভালোভাবেই বেচে ছিলেন। গান্ধী তাদের আঘাত না করে আত্মজীবনীতে এ প্রসঙ্গ লিখতে পারতেন না।

সম্পর্কটা আগের কথামতো চলবে না, গান্ধী এ কথা সরলা দেবীকে বলার পর তিনি প্রচ- আঘাত পেয়েছিলেন। সম্ভবত এ বিচ্ছেদ 1920 সালের জুন মাসে ঘটেছিল। 12 জুন গান্ধীর কাছ থেকে একটি টেলিগ্রাম পাওয়ার পর সি রাজাগোপালচারী তাকে লিখেছিলেন : 'আপনার টেলিগ্রাম পেয়েছি। শব্দগুলো আমাকে ভেঙেচুরে ফেলেছে। আমি আশা করি আপনি আমাকে ৰমা করবেন।

গান্ধীর টেলিগ্রামের ভাষা জানা যায় না। কিন্তু এটি ওয়াকিবহাল একজন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন উপলব্ধি বিষয়ে আলোচনার ইঙ্গিত বহন করে। পরিবর্তন সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে 16 জুন সি রাজাগোপালচারী গান্ধীকে শক্ত একটি চিঠি লেখেন। সম্বোধন করেন 'মাই ডিয়ারেস্ট মাস্টার' বলে। চিঠিতে বলেন, সরলা দেবী ও কস্তুরা বাইয়ের মধ্যে তুলনা হলো কেরোসিনের বাতি ও সকালের সূর্যের মধ্যে তুলনা করার মতো।

গান্ধী একটি ভয়াবহ প্রলোভনকে লালন করেছেন_ এটা বলে সি আর বলেন, 'স্বর্গীয় আত্মা এখন মাংসের খাচায় বন্দি ... তারপরও আমি বর্ম সংগ্রহ করছি আপনাকে সতর্ক ও সমালোচনা করার জন্য। ফিরে আসুন ও আমাদের জীবন দান করম্নন। এৰুনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ছাড়িয়ে আনুন। ' বিচ্ছেদ ঘটানো হয়েছিল দেবদাস লিখেছেন, সম্ভবত 1920 সালের গ্রীষ্মে যখন তিনি বেনারসে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন তখন তার বাবা সহসা তার সামনে দাড়ান ও গভীর মমতায় তার কপালে চুমো খান। গান্ধী এর মাধ্যমে ভালোবাসা নয়, 20 বছর বয়সী সনত্দানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।

আগস্টে তিনি ক্যালেনবাখকে লেখা একটি চিঠিতে বলেন, 'দেবদাস আমার সঙ্গে আছে। সে সর্বদিকে ও সর্বপ্রকারে বেড়ে উঠছে। ' 23 আগস্ট সরলা দেবীকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি বলেন, মথুরাদাস ও তার অন্য সঙ্গীরা সঠিক অবস্থানে আছে 'তার চরিত্রের আদর্শ অংশ' নিয়ে ঈর্ষাকাতর হয়ে। তাদের এ প্রকৃত ও স্বার্থহীন ভালোবাসার স্বার্থে তিনি সরলাকে জগতের প্রতি উৎসর্গীকৃত হতে পরামর্শ দেন। সরলা দেবী অভিযোগ করেন, নিজের সব আনন্দ আর জাগতিক সুখকে একদিকে রেখে অন্যদিকে তিনি বাপু আর তার নিয়মকে রেখেছিলেন।

বেছে নিয়েছিলেন পরের ভাগটি। তিনি বিচ্ছেদের ব্যাখ্যা দাবি করেছিলেন। গান্ধী 1920 সালের ডিসেম্বরে তাকে চিঠি লেখেন : 'আমি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাকে বিচার করে দেখছি। আমি আধ্যাত্মিক বিয়ের একটি সংজ্ঞা উপলব্ধি করেছি। এটি বিপরীত লিঙ্গে দুই মানুষের মধ্যকার এমন এক অংশীদারিত্ব যাতে শরীর সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।

ফলে এটি ভাই ও বোন, বাবা ও কন্যার মধ্যেও সম্ভব। দুই ব্রহ্মচারীর মধ্যে চিনত্দায়, বাণী ও কর্মেও এটি সম্ভব...। ' 'আমাদের কি সেই পরম শুদ্ধতা, শুদ্ধ দৈব, শুদ্ধ ঐক্য, আদর্শের পরিচয়, আত্মবিস্মরণ, উদ্দেশ্যের ঐক্য ও ওই সত্যভাষিতা আছে? আমি তোমার সঙ্গে ওই ধরনের সম্পর্ক গড়তে অপারগ। ... এটাই আমার কথা দেয়া সেই বড় চিঠি। প্রিয়তম ভালোবাসার সঙ্গে, যা আমি এখনো বহন করি।

তোমার এল জি। ' এল জি অর্থ ল গিভার। এ নামে সরলা ডাকতেন গান্ধীকে। একটি সাহসী পদৰেপ হলেও এ চিঠি সরলার অনুভূতিকে প্রশমিত করতে পারেনি। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি গান্ধীর সমালোচনা করেছেন।

তাকে অভিযুক্ত করেছেন অহিংসা থেকে হিংসায় প্রত্যাবর্তনের অপরাধে। বলেছেন_ গান্ধীর মনোগঠন যতোটা না হিন্দু তার চেয়ে বেশি খ্রিস্ট-বৌদ্ধ। যোগাযোগ এৰেত্রে ব্যাপার ছিল না। 1940-এর দশকে ইন্দিরা পাত্র হিসেবে গান্ধী দীপকের নাম প্রসত্দাব করেছিলেন জওহরলাল নেহরম্নর কাছে। ওই ঘটনাটি ঘটেনি।

কিন্তু সরলা দেবী ও গান্ধী উভয়ের মৃতু্যর পর দীপক মাঘনলাল গান্ধীর মেয়ে রাধাকে বিয়ে করেছিলেন। গান্ধী ও সরলা দু'জনই এ রোমান্সের খবর জানতেন। মেয়েদের শিৰার কাজে কিছু সময় ব্যয় করে সরলা আধ্যাত্মিক কাজে অনুরক্ত হয়েছিলেন। তিনি একজন গুরম্ন বেছে নিয়েছিলেন। 1945 সালে তার মৃতু্য হয়।

গান্ধী সরলা বিষয়ে কস্তুরী বাইকে কিছু বলেছিলেন কি না তা জানা যায় না। কিন্তু তিনি এ সম্পর্ক ও এর যাতনা অনুভব করেছিলেন। অন্যরাও তাকে বলতে পারে। বিশেষত দেবদাস, তিনি মায়ের ভীষণ ভক্ত ছিলেন। ধারণা করা যায়, এ সম্পর্ক তাকে আহত করেছিল এবং তার পরিপাশ্বর্ে তার মর্যাদা ৰুণ্ন করেছিল।

দুই বছরের ব্যবধানে আগস্ট 1920-এ ক্যালেনবাখকে লেখা চিঠিতে গান্ধী বলেন, 'মিসেস গান্ধী এখন আশ্রমে। তার অনেক বয়স হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো সবসময়ের মতো সাহসী। ' 12 বছর পর রামদাসকে লেখা চিঠিতে গান্ধী বলেন, তিনি চান না তিনি যে আচরণ স্ত্রীর প্রতি করেছেন তেমন আচরণ তার সনত্দানরা তাদের স্ত্রীর প্রতি করম্নক। 'কস্তুরা বাই আমার প্রতি রাগ করতে পারতেন না।

কিন্তু আমি তার প্রতি রাগান্বিত হতাম। আমি যে স্বাধীনতা ভোগ করতাম তা তাকে ভোগ করতে দিইনি। শবরমতিতে তার প্রতি আমার আচরণের কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর আমাকে নিয়ে তার ভয় পুরোপুরি না হলেও কিছুটা কেটেছিল। ' গান্ধী উলেস্নখ না করলেও এটা বোঝা যায় যে, সরলা দেবী পর্বই এখানে উলিস্নখিত হয়েছে, যা তাদের সম্পর্কের ওপর বহু বছর ধরে রেখাপাত করেছিল। এ সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগও নিতে হয়েছিল।

সূত্র : আউটলুক অনুবাদ ও গ্রন্থনা : মাহবুব মোর্শেদ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।