আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

নিজের জাতি আর মানুষের কল্যাণেই শান্তি পাই।

বিশ্ব-ঐতিহ্যের অন্যতম এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নানাভাবে তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এখানকার সমৃদ্ধ উদ্ভিদরাজি ও জীব-বৈচিত্র্য বিনাশের পাশাপাশি বনাঞ্চলের আয়তনও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। প্রান্তিক এলাকায় বনের জমি দখলের প্রবণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আর এর অন্যতম কারণ সুন্দরবনের রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষীয় উদাসীনতা ও অবহেলা।

বৃক্ষ ও প্রাণী সম্পদে সমৃদ্ধ সুন্দরবন সুরক্ষা যে কত জরুরি, তা বোঝা যাবে সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে। এই গবেষণার বিবরণে বলা হয়েছে, ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত সুন্দরবন নানাজাতের গাছ-গাছালি আর জীব-জন্তুতে সমৃদ্ধ। এই বনে ৬৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২শ’র বেশি প্রজাতির মাছ, ৪২ রকমের স্তন্যপায়ী, ২৩৪ ধরনের পাখি, ৫১ ধরনের সরীসৃপ, ৮ রকমের উভচর, অসংখ্য অমেরুদন্ডী প্রাণী রয়েছে। ৫ লাখের বেশি মানুষ জীবন-জীবিকা ও আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত সুন্দরবনে যায় জীবিকার রসদ যোগাড় করতে।

গত প্রায় দুই দশক ধরে সুন্দরবনের আয়তন, পরিবেশ রক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার তাগিদ বারবার উচ্চারিত হয়েছে। বনজ ও প্রাণিজ সম্পদ পাচার করে বনদস্যু গ্রুপগুলো কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এদের অবাঞ্ছিত পদচারণায় বিশ্বখ্যাত রয়েলবেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণসহ নানা স্থলজ, জলজ প্রাণী ও পাখিকুলের অভয়ারণ্য চরম বিনষ্টির কবলে পড়েছে। বহির্বিশ্বে দুর্লভ রয়েলবেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। প্রতিবেদনে এ কথাও বলা হয়েছে, দক্ষিণের জেলাগুলোতে প্রতিবছর ১ হাজার ১৭২ হেক্টর জমি নতুন করে লবণাক্ততা গ্রাস করছে, যাতে সুন্দরবনের প্রাণী-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

এই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সুন্দরবন দখল করে চিংড়ি ঘের, চাষাবাদ বা ঘরবাড়ি তৈরির জায়গা বানানোর এই তৎপরতা জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে বনের যে জমি বেহাত হয়ে গেছে, তা উদ্ধারের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সুন্দরবনের ভূমি দখলকারীরা যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জবরদখলের তৎপরতা চালাতে পারছে, তাদেরও শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বনখোকো, বনদস্যু ও অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে এদের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বাঘ ও হরিণ শিকারী দুর্বৃত্তদের হাত থেকে এই অভয়ারণ্যের সুরক্ষার কোন বিকল্প নেই। এক শ্রেণীর বন কর্মকর্তার যোগসাজশে সুন্দরবনে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, গাছ-কাটা, প্রাণী শিকারের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- যেমন চলছে, তেমনি বনের জমিদখলের তৎপরতাও চলছে। এই শ্রেণীর বনকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।